ফেসবুকে বাঙালির ‘ইলিশ বাটপারি’
- আপডেট সময় : ১০:১৯:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৫০৩৯ বার পড়া হয়েছে
মাত্র দেড় হাজার টাকায় ৫ কেজি ইলিশ! মাছ হাতে পেয়েই পরিশোধ করা যাবে দাম। তবে কুরিয়ার খরচটা দিতে হবে অগ্রিম। অবিশ্বাস্য এই অফার মিলছে ফেসবুকে। তবে অর্ডার করলেই সর্বনাশ! ফাঁদে পড়ে খোয়া যেতে পারে বড় অঙ্কের টাকা।মাত্র দেড় হাজার টাকায় ৫ কেজি ইলিশ! মাছ হাতে পেয়েই পরিশোধ করা যাবে দাম। তবে কুরিয়ার খরচটা দিতে হবে অগ্রিম। অবিশ্বাস্য এই অফার মিলছে ফেসবুকে। তবে অর্ডার করলেই সর্বনাশ! ফাঁদে পড়ে খোয়া যেতে পারে বড় অঙ্কের টাকা।
ফেসবুক পেজে কম দামে ইলিশের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
কথায় আছে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। আর অতুলনীয় স্বাদের কারণে মাছের রাজা ইলিশ আছে বাঙালির প্রিয় খাবারের তালিকায়। তাই দাম যাই হোক এর কদর কমেনি কখনও। এই চাহিদাকে পুঁজি করেই প্রতারণা করছে বিভিন্ন চক্র। অনলাইনে ছাড়সহ বিভিন্ন অফারে কম দামে ইলিশ বিক্রির প্রলোভনে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা!
রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা তৃষা পাল ফেসবুকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে একটি ফেসবুক পেজে মাত্র ১ হাজার ৫৫০ টাকায় ৫ কেজি ইলিশের লোভনীয় অফার দেখতে পান। পেজে দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে বলা হয়, অর্ডার কনফার্ম করতে ৩০০ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। টাকা দেয়ার পরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় সেই নম্বর। এমনকি ফেসবুক পেজ থেকেও তাকে করা হয় ব্লক।
অনলাইনে এমন আরও কয়েকটি পেজ থেকে ইলিশ কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন ঢাকার বাসিন্দা আবু জাহান রিফাত, আসলাম হোসেনসহ অনেকে। তাদের সবার অভিযোগও একইরকম। টাকা পাওয়ার পরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল নম্বর। পাশাপাশি ফেসবুক থেকেও ব্লক করে দেয়া হয়।
এদিকে আবার অনেককে অর্ডার কনফার্ম করার পর কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ফোন দিয়ে বাকি টাকা চাওয়া হয়। পাশাপাশি মোবাইলে পাঠানো একটি ওটিপি চাওয়া হয়। তবে একবার ওটিপি বা বাকি টাকা পেলেই খেলা শেষ। আর যোগাযোগ করা যাবে না সেসব নম্বরে।
ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, অনলাইনে ইলিশ বিক্রির জন্য রয়েছে অসংখ্য পেজ। সেসব পেজে দেয়া হয়েছে নানা অফার।
ফেসবুকে ইলিশ বেচাকেনার জন্য রয়েছে অসংখ্যা পেজ, যার অধিকাংশই ভুয়া
আবার এক নামেই রয়েছে একাধিক পেজ। তবে কোনটি আসল পেজ সেটি বোঝা মুশকিল। প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করতে কয়েকটি পেজে দেয়া হয় মেসেজ। প্রথমেই সাড়া মেলে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামের একটি পেজের। কথা চলতে থাকে পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে।
মাছ কিনতে আগ্রহ দেখালে পেজটির এডমিন জানান, 01994864992 / 01976477289 (বিকাশ নগদ পার্সোনাল) নম্বরে অগ্রিম ৫৫০ টাকা দিতে হবে। টাকা সেন্ড করার পর যে নম্বর থেকে টাকা সেন্ড করা হয়েছে, সেই নম্বরের লাস্টের চারটা সংখ্যা অথবা একটি স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে হবে।
প্রতারক চক্রের সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট
কথামতো দেয়া হয় অগ্রিম ৫৫০ টাকা। টাকা পাঠানোর পর প্রমাণ দিলে বলা হয়, ‘অর্ডার কনফার্ম হয়েছে। বাকি টাকা কুরিয়ার সার্ভিসে বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে ক্লিয়ার করতে হবে। ওখান থেকে ডেলিভারি বয় আপনাকে হোম ডেলিভারি করে দিয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে দেখেশুনে আপনার পছন্দ না হলে আপনি রিটার্ন করতে পারবেন। আপনাকে সম্পূর্ণ টাকা ডেলিভারি বয় দিয়ে চলে আসবে।’
প্রতারক চক্রের সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট
তবে টাকা পাওয়ার পরই পেজ থেকে ব্লক করে দেয়া হয় সময় সংবাদের প্রতিবেদককে। বন্ধ পাওয়া যায় প্রতারকদের মোবাইল নম্বরটি। কিন্তু টাকা পাঠানোর পরদিন সাভারের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের নাম ব্যবহার করে ফোন করা হয়। বলা হয়, বাকি টাকা বিকাশ করার জন্য। চাওয়া হয় মোবাইলে পাঠানো একটি ওটিপিও।
ফোনের ওপার থেকে জানানো হয়, টাকা ও ওটিপি পেলেই হোম ডেলিভারি করা হবে ইলিশ মাছ। তবে সময় সংবাদের প্রতিবেদক সরাসরি কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে এসে মাছ নিতে চাইলে শুরু হয় গড়িমসি। এক পর্যায়ে প্রতারকরা কল কেটে দেয়। এরপর থেকে বন্ধ পাওয়া যায় ফোনও।
এদিকে পেজগুলোতে থাকা ঠিকানার খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফেসবুকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দেয়া হয়েছে ভুয়া ঠিকানা। এমন একটি পেজে দেয়া চাঁদপুরের ঠিকানায় সময় সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঠিকানাটি ভুয়া।
এ রকম অসংখ্য প্রতারক পেজ প্রতিদিন লুফে নিচ্ছে গ্রাহকদের হাজার হাজার টাকা। মানুষকে ধোঁকা দিতে পোস্টগুলো বুস্টও করা হচ্ছে। পেজে পোস্ট-কমেন্টের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে পণ্য পৌঁছে দেয়ার ছবিও এবং ক্রেতাদের ফিডব্যাকের ভুয়া স্ক্রিনশটও।
ভোক্তারা প্রতারিত হয়েছেন এমন পেজগুলোর প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ পেজ ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে খোলা হয়েছে। কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে নামও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন,
কিছু কিছু পেজ বা প্রতিষ্ঠান ঠিকানা বা আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার ব্যবহার করে না। এগুলো মূলত প্রতারণার জন্যই খোলা হয়। ফলে অনেক সময় এসব পেজ বা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া ও মামলা নিষ্পত্তি চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এসব অনলাইন পেজের বিষয়ে সতর্ক থেকে লেনদেন করতে হবে। প্রতারিত হলে স্থানীয় থানায় শিগগিরই যোগাযোগ করতে হবে। পুলিশ এতে দ্রুত প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করতে পারবে।
প্রতারণা ঠেকাতে ভোক্তাদের সচেতন হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছে না ই-ক্যাব। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর শোভন বলেন, ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। কোনো কিছু অর্ডার করার আগে পেজটির বয়স, রিভিউ ও পেমেন্ট সিস্টেম যাচাই করে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট বাদে লেনদেন করা যাবে না। কারণ, পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট দিয়ে প্রতারণা বেশি হচ্ছে।