বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে

- আপডেট সময় : ০৫:১৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
- / 187
চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ হঠাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর পুলিশও তার কোনো হদিস পাচ্ছিল না। কিন্তু শেষমেশ তার স্ত্রী তামান্নার এর টিকটক ভিডিওর সূত্র ধরে পুলিশ একপর্যায়ে ‘ক্লু’ খুঁজে পায়।
শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে ঢাকার বসন্ধুরা সিটি শপিংমল থেকে ছোট সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ অবশেষে পুলিশের জালে আটক হন। সাজ্জাদ ঈদের শপিং করতে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়েছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও তাকে শেষমেশ ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
রোববার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালত সাজ্জাদকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তিনি পুলিশের প্রধান টার্গেটে পরিণত হন। তবে সিমবিহীন মোবাইল ব্যবহার ও চতুর চলাফেরার কারণে তাকে ধরতে পুলিশের সময় লেগেছে চার মাস।
সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্নার একটি ভিডিও টিকটকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশের হাতে আসে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। ভিডিওতে থাকা একটি গাড়ি শনাক্ত করে বিআরটিএ থেকে মালিকের তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ। এরপর চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী অক্সিজেন মোড় থেকে রাউজান গিয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।
গত ৫ ডিসেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় অভিযানে গেলে সাজ্জাদ পুলিশের সোর্সকে গুলি করে পালিয়ে যান। ছাদ থেকে ছাদে লাফিয়ে এবং কেয়ারটেকারকে গুলি করেও তিনি সরে যান। এরপর গা ঢাকা দিয়ে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন।
অবশেষে শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর গতিবিধি নজরদারি করে সিএমপির একটি টিম। একপর্যায়ে সাজ্জাদকে আটক করা হয় এবং প্রথমে শপিং মলের একটি কক্ষে রাখা হয়। পরে তাকে তেজগাঁও থানায় নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়।
পুলিশের দীর্ঘ পরিকল্পিত অভিযান এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে অবশেষে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এখন পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বড় সাজ্জাদের ছত্রচ্ছায়া
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সাজ্জাদ অক্সিজেন এলাকায় জোড়া খুন, চান্দগাঁওয়ে প্রকাশ্যে হত্যাসহ চাঁদাবাজি ও গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিত। দুবাইপ্রবাসী বড় সাজ্জাদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব অপরাধ চালাতো।’
স্ত্রীর চ্যালেঞ্জ
পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে তার স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্ত করবেন। বীরের বেশে ফিরবেন তার স্বামী।’
রোববার (১৬ মার্চ) সকালে তামান্নার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তামান্না বলেন, ‘আমার জামাই গতকাল (শনিবার) রাতে অ্যারেস্ট হইছে। মামলা যখন আছে, অ্যারেস্ট হবে। কিন্তু যারা ভাবছেন, সে আর বের হবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে জামিন করিয়ে আনব।’
তিনি আরও হুমকি দেন, ‘এখন যারা এই ঘটনা ঘটাইছে, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষে বীরের বেশে ফিরবে, তখন খেলা শুরু হবে।’
অপরাধজগতে উত্থান যেভাবে
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর শিকারপুর এলাকার মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ ধীরে ধীরে চাঁদাবাজি, হত্যা ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, খুলশী এবং জেলার হাটহাজারী ও রাউজান এলাকায় তার ছিল ত্রাসের রাজত্ব।
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ডাবল মার্ডারসহ একাধিক হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে তাহসিন নামে এক যুবককে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। এছাড়া গত বছর ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে দুজনকে হত্যা করেন তিনি।
গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে হুমকি দেন সাজ্জাদ। পরে পুলিশ তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে।