ঢাকা ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে ব্যান্ডউইথ নেয়ার উদ্যোগে ‘না’

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:২৮:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 110
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে ভারতের ব্যান্ডউইথ নেয়ার সিদ্ধান্তে না করে দিয়েছে বিটিআরসি।দেশের দুই ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্ট্রেরিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স এবং ফাইবার এট হোম ভারতের টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছিল।এ বিষয়ে এরআগে বিটিআরসি অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল। যা টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত হয়ে যেতো। এরআগে ভারতী এয়ারটেল এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি টেলিযোগাযোগ বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে পাঠায়, যা বিভাগ বিটিআরসিকে পাঠিয়েছিল।এবার বিটিআরসি এ সিদ্ধান্তে সরাসরি না করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে ট্রানজিটের অনুমতি দেয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো চিঠিও বাতিল করেছে।টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি টেকশহর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।যেভাবে এই ট্রানজিটের পরিকল্পনা ছিল :ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়কে সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। এই সেভেন সিস্টার্সে দ্রুত গতির ইন্টারনেট দিতে ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) সেবা চালুর এই উদ্যোগ, যার ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার হবে।সামিট, ফাইবার এট হোম ও ভারতী এয়ারটেলের মধ্যে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, আখাউড়া এবং ভারতের আগরতলার নো-ম্যানস ল্যান্ডে আন্তসংযোগ পয়েন্টের মাধ্যমে এই সংযোগ হওয়ার কথা ছিল। সামিট ও ফাইবার এট হোম আখাউড়া সীমান্তে টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন (টিসিএলএস) স্থাপন করতো। এরপর এই টিসিএলএস হতে ফাইবারের মাধ্যমে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডি স্টেশনে সংযোগ দেয়া হতো, যার মাধ্যমে এই আইপিএলসি সেবা সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতো।ভারতের কেনো আগ্রহ :এখন ভারতের সেভেন সিস্টার্স হতে চেন্নাই সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশনের দূরত্ব ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। বর্তমান নেটওয়ার্কে ভারতের সিঙ্গাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৮ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। সেভেন সিস্টার্সের পথের এলাকা দুর্গম পর্বতের হওয়ার ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি ও নেটওয়ার্ক ঠিক রাখা বেশ কঠিন। আর দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ল্যাটেন্সি হয় ৫৫ মিলিসেকেন্ড, এটি সিঙ্গাপুর পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় ৮৭ মিলিসেকেন্ড। বাড়ায় খরচও। ফলে মানসম্মত সেবা দেয়া চ্যালেঞ্জিং।অন্যদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এই ট্রানজিট নেটওয়ার্কের কারণে দূরত্ব কমে যাবে ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার আর সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ল্যাটেন্সি কমে যাবে ৩৭ মিলিসেকেন্ড।বিটিআরসির না করার কারণ :বিটিআরসি বলছে, এ ট্রানজিটের কারণে আঞ্চলিক হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দূর্বল হবে এবং ভারত এখানে শক্তিশালী হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা বলছে, আইপিএলসি ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রাথমিক কোনো আলোচনাও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এর যৌক্তিকতা, আইনি ও বাণিজ্যিক বাস্তবতা, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষপট ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।এছাড়া গুগল, আকামাই, অ্যামাজন, মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এজড পপ ভারতের কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে হওয়ায় আইপিএলসি ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের টেলিকম অপারেটরগুলো সেভেন সিস্টার্সে সহজে ও গতিময় ইন্টারনেট দিতে পারবে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে এজড পপ ও ডেটা সেন্টার করে সেভেন সিস্টার্স, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মিয়ানমারে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি-ইন্টারনেট সেবা দেয়ার সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে।আইটিসিগুলো এখন দেশের ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথের চাহিদা পূরণ করে আর বিএসসিপিএলসি করে ৪০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানটির ৭ হাজার ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা থাকলেও তারা মাত্র ২ হাজার ৩০০ জিবিপিএস কাজে লাগাতে পেরেছে। এখন এই দুই প্রতিষ্ঠানকে ট্রানজিটের এই অনুমোদন দেয়া হলে বিএসসিপিএলসির বিপুল এই ব্যান্ডউইথ কাজে লাগানো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি দেখছে, এ বিষয়ে নীতিগত জায়গা হতে আইটিসি গাইডলাইনেও বিদেশের গ্রাহকদের সেবা দেয়া কিংবা বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের কোনো বিধান নেই।উদ্যোক্তারা যা বলছেন :ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে সাউথ-ইস্ট ইন্টারনেট হাব হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করতো। এই রিজিয়নে ঢাকাকে সেন্টার করে ফাইভ টু টেন মিলিসেকেন্ডের ভেতরে ৫০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে। এটা সিগনিফিকেন্ট।তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর একটি ইন্টারনেট হাব। তারা ব্যান্ডউইথের ৯০ ভাগ কনজিউম করে না। ট্রান্সমিট করে দেয় বিভিন্ন দেশে। আর এখন আমরা ৯০ ভাগ দেশের ভেতরে কনজিউম করি। এজন্য আমাদের প্রচুর টাকা আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউথের জন্য খরচ করতে হচ্ছে। তখন সরকারি-বেসরকারি সাবমেরিন ক্যাবল, আইটিসিগুলোর ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিট হতো।’মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এই হাব কনসেপ্ট তৈরি হলে আকামাই, গুগল, ফেইসবুক, টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে আসতো। কারণ হাব তৈরি হলে বাংলাদেশের ডেটা ফ্লো বাড়বে অনেক। তখন তাদের এখানে আসার সম্ভাবনাও বাড়বে।’‘রেগুলেটর একটু ওপেন মাইনন্ডেড হলে ঢাকাকেই এই জায়ান্টরা বেছে নেবে। এটা বিজ্ঞানসম্মতভাবেও যৌক্তিক। তারা তাদের গ্রাহকদের বেটার এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারবে’ উল্লেখ করেন এই প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী।সামিট কমিউনিকেশন্সের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।খাত সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা যেভাবে দেখছেন :বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আসলাম হোসেন টেকশহর ডকটমকে বলেন, ‘তারা যেটা করতে যাচ্ছিল, কলকাতা দিয়ে ইন্ডিয়ার ব্যান্ডউইথ নেবে, সেটা আমার দেশের ভেতর দিয়ে নিয়ে ওই ব্যান্ডউইথই সেভেন সিস্টার্সে পাঠাবে। এটা ইলিগ্যাল ট্রাফিকিং।’‘সামিট কিংবা ফাইবার এট হোম ট্রানজিট ক্যাবল দিয়ে যেটা করতে চেয়েছিল সেটা অবৈধ ছিল। তারা আমাদের সাবমেরিন ক্যাবল হতে ব্যান্ডউইথ কিনতে চাইলে সেটা আমরা এক্সপোর্ট করবো, সরকারকে ইনফর্ম করে আমরা ইন্ডিয়াতে ব্যান্ডউইথ এক্সপোর্ট করতেই পারি। আমরা ত্রিপুরাতে রপ্তানি করেছি, আসামও আলোচনা চালাচ্ছে।’ উল্লেখ করেন তিনি।আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এই ট্রানজিটে বাংলাদেশের কোনো লাভ হতো না। লাভবান হতো দুই আইটিসি অপারেটর। তারা কৌশলে এমন একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে যেতো যেখানে আইটিসি হিসেবে ভারত হতে ব্যান্ডউইথ কেনা এবং এই ট্রানজিটের চার্জ নিয়ে কোনো লেনদেন হতো না। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাতো।’এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপনিক) এর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সদস্য, ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সুমন আহমেদ সাবির টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এই নেটওয়ার্কের কারণে বাংলাদেশ লাভবান হতো। এটি দিয়ে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ যাক কিংবা ভারতের ব্যান্ডউইথ, সবদিকেও বাংলাদেশের লাভ। এটা না করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসলে যতটা না ব্যবসায়ীক তারচেয়ে বেশি আবেগী।’তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট হাবে পরিণত হতো।’বেসরকারি খাতের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি সিডিনেট কমিউনিকেশন্সের সিইও মশিউর রহমান টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এটা অনেক আগে হতেই ইন্ডিয়া চেষ্টা করছিল যে, ইন্ডিয়ান ব্যান্ডউইথ ইন্ডিয়ায় যাবে বাংলাদেশের উপর দিয়ে। কিন্তু ওরা বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ নেপাল ভুটানে নিতে দিচ্ছে না। তারা বলছে, তোমরা আমাদের কাছে বিক্রি করো, আমরা রিসেল করবো। ট্রানজিট কিন্তু আমাদেরও দিচ্ছে না। তাহলে আমরা কেনো তাদের দেবো। তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢোকাবে আবার সিলেট কিংবা ব্রাক্ষণবাড়িয়া দিয়ে বের করবে।’‘এমনিতেই এখন বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ভারত হতে আসছে। আর এই ট্রানজিট হলে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ খাতের ব্যবসা আরও ঝুঁকিতে পড়বে। এই ট্রানজিট দিলে খুবই ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত হতো।’ উল্লেখ করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে ব্যান্ডউইথ নেয়ার উদ্যোগে ‘না’

আপডেট সময় : ০৭:২৮:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশকে ট্রানজিট করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে ভারতের ব্যান্ডউইথ নেয়ার সিদ্ধান্তে না করে দিয়েছে বিটিআরসি।দেশের দুই ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্ট্রেরিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স এবং ফাইবার এট হোম ভারতের টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছিল।এ বিষয়ে এরআগে বিটিআরসি অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল। যা টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত হয়ে যেতো। এরআগে ভারতী এয়ারটেল এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি টেলিযোগাযোগ বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে পাঠায়, যা বিভাগ বিটিআরসিকে পাঠিয়েছিল।এবার বিটিআরসি এ সিদ্ধান্তে সরাসরি না করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে ট্রানজিটের অনুমতি দেয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো চিঠিও বাতিল করেছে।টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি টেকশহর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।যেভাবে এই ট্রানজিটের পরিকল্পনা ছিল :ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়কে সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। এই সেভেন সিস্টার্সে দ্রুত গতির ইন্টারনেট দিতে ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) সেবা চালুর এই উদ্যোগ, যার ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার হবে।সামিট, ফাইবার এট হোম ও ভারতী এয়ারটেলের মধ্যে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, আখাউড়া এবং ভারতের আগরতলার নো-ম্যানস ল্যান্ডে আন্তসংযোগ পয়েন্টের মাধ্যমে এই সংযোগ হওয়ার কথা ছিল। সামিট ও ফাইবার এট হোম আখাউড়া সীমান্তে টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন (টিসিএলএস) স্থাপন করতো। এরপর এই টিসিএলএস হতে ফাইবারের মাধ্যমে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডি স্টেশনে সংযোগ দেয়া হতো, যার মাধ্যমে এই আইপিএলসি সেবা সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতো।ভারতের কেনো আগ্রহ :এখন ভারতের সেভেন সিস্টার্স হতে চেন্নাই সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশনের দূরত্ব ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। বর্তমান নেটওয়ার্কে ভারতের সিঙ্গাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৮ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। সেভেন সিস্টার্সের পথের এলাকা দুর্গম পর্বতের হওয়ার ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি ও নেটওয়ার্ক ঠিক রাখা বেশ কঠিন। আর দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ল্যাটেন্সি হয় ৫৫ মিলিসেকেন্ড, এটি সিঙ্গাপুর পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় ৮৭ মিলিসেকেন্ড। বাড়ায় খরচও। ফলে মানসম্মত সেবা দেয়া চ্যালেঞ্জিং।অন্যদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এই ট্রানজিট নেটওয়ার্কের কারণে দূরত্ব কমে যাবে ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার আর সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ল্যাটেন্সি কমে যাবে ৩৭ মিলিসেকেন্ড।বিটিআরসির না করার কারণ :বিটিআরসি বলছে, এ ট্রানজিটের কারণে আঞ্চলিক হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দূর্বল হবে এবং ভারত এখানে শক্তিশালী হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা বলছে, আইপিএলসি ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রাথমিক কোনো আলোচনাও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এর যৌক্তিকতা, আইনি ও বাণিজ্যিক বাস্তবতা, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষপট ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।এছাড়া গুগল, আকামাই, অ্যামাজন, মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এজড পপ ভারতের কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে হওয়ায় আইপিএলসি ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের টেলিকম অপারেটরগুলো সেভেন সিস্টার্সে সহজে ও গতিময় ইন্টারনেট দিতে পারবে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে এজড পপ ও ডেটা সেন্টার করে সেভেন সিস্টার্স, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মিয়ানমারে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি-ইন্টারনেট সেবা দেয়ার সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে।আইটিসিগুলো এখন দেশের ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথের চাহিদা পূরণ করে আর বিএসসিপিএলসি করে ৪০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানটির ৭ হাজার ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা থাকলেও তারা মাত্র ২ হাজার ৩০০ জিবিপিএস কাজে লাগাতে পেরেছে। এখন এই দুই প্রতিষ্ঠানকে ট্রানজিটের এই অনুমোদন দেয়া হলে বিএসসিপিএলসির বিপুল এই ব্যান্ডউইথ কাজে লাগানো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি দেখছে, এ বিষয়ে নীতিগত জায়গা হতে আইটিসি গাইডলাইনেও বিদেশের গ্রাহকদের সেবা দেয়া কিংবা বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের কোনো বিধান নেই।উদ্যোক্তারা যা বলছেন :ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে সাউথ-ইস্ট ইন্টারনেট হাব হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করতো। এই রিজিয়নে ঢাকাকে সেন্টার করে ফাইভ টু টেন মিলিসেকেন্ডের ভেতরে ৫০ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে। এটা সিগনিফিকেন্ট।তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর একটি ইন্টারনেট হাব। তারা ব্যান্ডউইথের ৯০ ভাগ কনজিউম করে না। ট্রান্সমিট করে দেয় বিভিন্ন দেশে। আর এখন আমরা ৯০ ভাগ দেশের ভেতরে কনজিউম করি। এজন্য আমাদের প্রচুর টাকা আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউথের জন্য খরচ করতে হচ্ছে। তখন সরকারি-বেসরকারি সাবমেরিন ক্যাবল, আইটিসিগুলোর ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিট হতো।’মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এই হাব কনসেপ্ট তৈরি হলে আকামাই, গুগল, ফেইসবুক, টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে আসতো। কারণ হাব তৈরি হলে বাংলাদেশের ডেটা ফ্লো বাড়বে অনেক। তখন তাদের এখানে আসার সম্ভাবনাও বাড়বে।’‘রেগুলেটর একটু ওপেন মাইনন্ডেড হলে ঢাকাকেই এই জায়ান্টরা বেছে নেবে। এটা বিজ্ঞানসম্মতভাবেও যৌক্তিক। তারা তাদের গ্রাহকদের বেটার এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারবে’ উল্লেখ করেন এই প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী।সামিট কমিউনিকেশন্সের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।খাত সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা যেভাবে দেখছেন :বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আসলাম হোসেন টেকশহর ডকটমকে বলেন, ‘তারা যেটা করতে যাচ্ছিল, কলকাতা দিয়ে ইন্ডিয়ার ব্যান্ডউইথ নেবে, সেটা আমার দেশের ভেতর দিয়ে নিয়ে ওই ব্যান্ডউইথই সেভেন সিস্টার্সে পাঠাবে। এটা ইলিগ্যাল ট্রাফিকিং।’‘সামিট কিংবা ফাইবার এট হোম ট্রানজিট ক্যাবল দিয়ে যেটা করতে চেয়েছিল সেটা অবৈধ ছিল। তারা আমাদের সাবমেরিন ক্যাবল হতে ব্যান্ডউইথ কিনতে চাইলে সেটা আমরা এক্সপোর্ট করবো, সরকারকে ইনফর্ম করে আমরা ইন্ডিয়াতে ব্যান্ডউইথ এক্সপোর্ট করতেই পারি। আমরা ত্রিপুরাতে রপ্তানি করেছি, আসামও আলোচনা চালাচ্ছে।’ উল্লেখ করেন তিনি।আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এই ট্রানজিটে বাংলাদেশের কোনো লাভ হতো না। লাভবান হতো দুই আইটিসি অপারেটর। তারা কৌশলে এমন একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে যেতো যেখানে আইটিসি হিসেবে ভারত হতে ব্যান্ডউইথ কেনা এবং এই ট্রানজিটের চার্জ নিয়ে কোনো লেনদেন হতো না। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাতো।’এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপনিক) এর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সদস্য, ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সুমন আহমেদ সাবির টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এই নেটওয়ার্কের কারণে বাংলাদেশ লাভবান হতো। এটি দিয়ে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ যাক কিংবা ভারতের ব্যান্ডউইথ, সবদিকেও বাংলাদেশের লাভ। এটা না করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসলে যতটা না ব্যবসায়ীক তারচেয়ে বেশি আবেগী।’তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট হাবে পরিণত হতো।’বেসরকারি খাতের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি সিডিনেট কমিউনিকেশন্সের সিইও মশিউর রহমান টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘এটা অনেক আগে হতেই ইন্ডিয়া চেষ্টা করছিল যে, ইন্ডিয়ান ব্যান্ডউইথ ইন্ডিয়ায় যাবে বাংলাদেশের উপর দিয়ে। কিন্তু ওরা বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ নেপাল ভুটানে নিতে দিচ্ছে না। তারা বলছে, তোমরা আমাদের কাছে বিক্রি করো, আমরা রিসেল করবো। ট্রানজিট কিন্তু আমাদেরও দিচ্ছে না। তাহলে আমরা কেনো তাদের দেবো। তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ঢোকাবে আবার সিলেট কিংবা ব্রাক্ষণবাড়িয়া দিয়ে বের করবে।’‘এমনিতেই এখন বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ভারত হতে আসছে। আর এই ট্রানজিট হলে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ খাতের ব্যবসা আরও ঝুঁকিতে পড়বে। এই ট্রানজিট দিলে খুবই ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত হতো।’ উল্লেখ করেন তিনি।