বাংলাদেশে মাজার ভাঙার ঘটনা: কেন এবং কারা এর পেছনে?
- আপডেট সময় : ১১:৩০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২২ বার পড়া হয়েছে
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ভাঙ্গার ঘটনা ঘটছে। মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে ঘিরে মানুষজন আহতও হয়েছে, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইভেন্ট খুলেও মাজার ভাঙ্গার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এর মাঝে নতুন করে আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলিস্তানে অবস্থিত গোলাপশাহ মাজার ভাঙ্গতে “গুলিস্তানে গোলাপশাহ মাজার ভাঙ্গা কর্মসূচি” শীর্ষক একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে, যাতে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ সাড়া দিয়েছে।
সাধারণত সুফি বা ধর্মীয় প্রচারকদের কবর কেন্দ্রিক মাজার গড়ে ওঠে। যেখানে অনেকে মনোকামনা পূরণের উদ্দেশ্যে মানত করে থাকেন। যদিও ইসলামিক রীতিতে মাজার ব্যবস্থা কতটা ধর্মসম্মত, তা নিয়ে স্কলারদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোয় অনেক সময় মাজার কেন্দ্রিক ব্যবসা, প্রতারণা, মাদক ব্যবহার বা অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।
তবে এভাবে হামলা করা গ্রহণযোগ্য নয় বলে ইসলামিক স্কলাররা বলছেন।
কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটছে? কারা ঘটাচ্ছে? এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী?
আগামী ৮, ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ মাজারে তিন দিন ধরে উরুস (ওয়াজ মাহফিল) অনুষ্ঠিত হবে।
“ওটাকে কেন্দ্র করে যত অসামাজিক কার্যকলাপ, যেমন মদের আসব বা নাচ-গান যেন না হয়, তাই এলাকাবাসী ও মাজারের খাদেম, সবাই একত্রিত হয়েই এটা করছে,” যোগ করেন তিনি।
এটাতে কোনও হামলা বা মাজার ভাঙ্গার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তবে সামাজিক মাধ্যমে অনেককে এসব মাজার ভাঙ্গতে ডাক দিতেও দেখা গেছে।
মাজার ভাঙ্গা যৌক্তিক?
মাজার ভাঙ্গা নিয়ে যে ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে, সেটিকে অন্যায় মনে করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এই সংস্থার হালাল সনদ বিভাগের উপপরিচালক মো. আবু সালেহ পাটোয়ারীর সাথে এ নিয়ে বিবিসি বাংলার কথা হয়। তিনি জানান, মাজার শব্দের অর্থ জিয়ারতের স্থান।
“কিন্তু আমাদের দেশে মাজার বলতে বোঝা যায়, যেখানে পীর-বুজুর্গর কবর। সেটিকে পাকা-টাকা করে অনেকে ওভাবে রাখছে। মানুষ সেখানে জিয়ারতের জন্য যায়।”
তবে ইসলামের মৌলিক বিধান অনুযায়ী কবরের পর সেটিকে পাকা করে “গম্বুজ করা বৈধ না, শরিয়তে অনুমতি নাই, কিন্তু আমাদের দেশে অনেকে করে এগুলা,” বলছিলেন তিনি।
এখন, ইসলামে বৈধ না বলে কেউ ওইসব স্থাপনার ওপর আক্রমণ করতে পারে না বলেও তিনি জানান।
“আমরা মাহফিলে, বক্তৃতায়, মসজিদে বলছি যে এগুলা বৈধ না। এখন কেউ যদি করে ইসলাম বিরোধী আচরণ করে, তাহলে এগুলোর (মাজার) ওপর আক্রমণ করাটাও বৈধ না।”
“আপনার-আমার কাজ হল, এগুলো বৈধ নাকি অবৈধ, সেটুকু বলা। নিজের আইন হাতে তুলে নিয়ে মাজারে আক্রমণ করার অনুমতি ইসলাম দেয় না,” তিনি যোগ করেন।
মাজার সংস্কৃতির কারণে যদি কারও “অনুভূতিতে আঘাত লাগে”, তবে আইনের দ্বারস্থ হতে হবে।
মাজার ভাঙার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান
কয়েকদিন ধরে টানা মাজার ভাঙ্গার ঘটনা ঘটায় সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তবে এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
আজ শনিবার মাজার ভাঙ্গা প্রসঙ্গে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গণমাধ্যমে বলেছেন, “আমরা এ ব্যাপারটি খুব সিরিয়াসলি দেখছি। এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।”
এই ঘটনাটি “গ্রহণযোগ্য না” উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন যে তাদের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে যেন কাজ করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।
“আমরা এর বিরুদ্ধে প্রথমদিন থেকে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বারবার বলছি, আমাদের প্রতি ফ্যাসিবাদী শাসকের পক্ষ থেকে যে আচরণ করা হয়েছিলো, সেই ধরনের আচরণ যেন কারো প্রতি কোনোভাবেই না হয়, সেটি নিশ্চিত করবো,” যোগ করেন মি. খান।
এদিকে এ ব্যাপারে আজ মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনও।
রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত আল মারকাজুল ইসলামি আস সালাফি মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “মাজার ভাঙ্গা হোক, মসজিদ ভাঙ্গা হোক, মন্দির ভাঙ্গা হোক; এগুলো গর্হিত কাজ। যেগুলো যেভাবে আছে, সেগুলো সেভাবে থাকা দরকার।”
“আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, আমাদের কম্যুনাল হারমোনি-ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট হওয়ার মতো কোনও ঘটনা যদি ঘটে, আপনারা আমাদের জানালে আমরা মুহূর্তের ভেতরে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।”
“ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উপাসনালয়ে যারা হামলা চালায়, তারা মানবতার শত্রু, তারা ক্রিমিনাল,” তিনি বলেন।