ঢাকা ১১:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নবাবগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সুযোগ্য কন্যা মেহেনাজ মান্নান ইলিশ ধরায় খরচ ৮৩০ টাকা, ভোক্তার গুনতে হয় অন্তত ২ হাজার নির্বাচন কে সামনে রেখে উত্তাল ঢাকা-১ দোহার-নবাবগঞ্জ আসন আটপাড়ায় কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর কেন্দুয়ায় মানবপাচার মামলার আসামীরা রিমান্ডে মাস্টারমাইন্ডের নাম প্রকাশ করেছে ‎ ‎কেন্দুয়ায় মানবপাচারের মামলায় চীনা নাগরিকসহ দুই আসামীকে কারাগারে প্রেরণ কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা; চীনা নাগরিকসহ আটক দুইজন কেন্দুয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৫ ‎কেন্দুয়ায় প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তের সময় হাতাহাতি: ইউএনও আহত কেন্দুয়ায় প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ জাল ধ্বংস ওসমান হাদী দাবিতে ঘনিষ্ঠ ভিডিও প্রচার, সামনে এলো আসল সত্য ব্লাড মুন দেখা যাবে রোববার, চাঁদ লাল হওয়ার কারণ কী? তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

বাতিল হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • / 149
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ভারত থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাতিল হতে যাচ্ছে। প্রকল্পটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে গ্যাস আনা বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যিকভাবে আর্থিকভাবে লাভজনক নয়। ভারতের গ্যাসের মান বাংলাদেশের চাইতে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের। প্রতিবেশী দেশটির গ্যাসের সালফার বেশি এবং হিটিং ভ্যালু (জ্বলন ক্ষমতা) কম। অর্থাৎ ওই গ্যাস পরিমাণে বেশি ব্যবহার করতে হবে। আবার ওই গ্যাস দেশীয় গ্যাসের চেয়ে পরিবেশের বেশি ক্ষতি করে। এছাড়া প্রকল্পটি বিশেষ আইনে বাস্তবায়ন করার কথা ছিলো। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ আইন স্থগিত করার কারণে এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কোন সুযোগ নেই।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দেশের গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি দূর করার যুক্তি দেখিয়ে ভারত থেকে এলএনজি আমদানি করতে বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ আইনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিলো। এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো অল্প সময়ে কম পরিবহন খরচে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এলএনজি আমদানি করার জন্য। কিন্তু ওই গ্যাসের হিটিং ভ্যালু কম হওয়ায় প্রকৃত অর্থে গ্যাস আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাবে। পরিবহন খরচে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা জ্বালানির সার্বিক দাম বাড়াবে। বর্তমানে কার্গো জাহাজে করে সমুদ্রপথে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পেট্রোবাংলা ২০২১ সালের ১৬ জুন ভারতীয় কোম্পানি এইচ-এনার্জির একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। এর আগে একই উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে প্রথম এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল পেট্রোবাংলা। চলতি বছর ২০২৪ সালেই চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। তিন-চারটি পয়েন্ট বাদের চুক্তির খসড়াও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

খসড়া চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ভারত থেকে এলএনজি আনতে মোট ৯৯ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল পেট্রোবাংলা। এরমধ্যে ভারতের ভুখেল ৪৭ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ ভুখেল ৫২ কিলোমিটার। ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন এই পাইপলাইন নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে প্রাথমিকভাবে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, ভারত থেকে এলএনজি আনতে যে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের কথা ছিল তা এখন আর হচ্ছে না। প্রকল্পটি বিশেষ আইনে গ্রহণ করা হয়েছিলো। আইন স্থগিত হওয়ার কারণে এটি আর হচ্ছে না। এছাড়া ভারতে যে গ্যাস তাতে সালফারের পরিমাণ বেশি। আমাদের গ্যাসের চাইতে নিম্নমানের। এছাড়া গ্যাসের হিটিং ভ্যালু কম। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে আর আগ্রহ দেখাচ্ছি না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে আনা হলে এই গ্যাস প্রাথমিকভাবে দেশের খুলনা অঞ্চলে ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। এই গ্যাসেই খুলনায় রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু ও চালু রাখার কথা ছিলো। কেন্দ্রটির কাজ শেষ হলেও গ্যাসের অভাবে এখন বসে আছে। অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রের-জনগণের অর্থের। এইচ-এনার্জি মহারাষ্ট্রের জয়গড় বন্দরে ভারতের প্রথম ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। কোম্পানিটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। ওই টার্মিনাল থেকেই বাংলাদেশে এলএনজি পাঠানোর পরিকল্পনা ছিলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বাতিল হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প

আপডেট সময় : ০৫:৫৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

 

ভারত থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাতিল হতে যাচ্ছে। প্রকল্পটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে গ্যাস আনা বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যিকভাবে আর্থিকভাবে লাভজনক নয়। ভারতের গ্যাসের মান বাংলাদেশের চাইতে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের। প্রতিবেশী দেশটির গ্যাসের সালফার বেশি এবং হিটিং ভ্যালু (জ্বলন ক্ষমতা) কম। অর্থাৎ ওই গ্যাস পরিমাণে বেশি ব্যবহার করতে হবে। আবার ওই গ্যাস দেশীয় গ্যাসের চেয়ে পরিবেশের বেশি ক্ষতি করে। এছাড়া প্রকল্পটি বিশেষ আইনে বাস্তবায়ন করার কথা ছিলো। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ আইন স্থগিত করার কারণে এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কোন সুযোগ নেই।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দেশের গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি দূর করার যুক্তি দেখিয়ে ভারত থেকে এলএনজি আমদানি করতে বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ আইনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিলো। এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো অল্প সময়ে কম পরিবহন খরচে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এলএনজি আমদানি করার জন্য। কিন্তু ওই গ্যাসের হিটিং ভ্যালু কম হওয়ায় প্রকৃত অর্থে গ্যাস আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাবে। পরিবহন খরচে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা জ্বালানির সার্বিক দাম বাড়াবে। বর্তমানে কার্গো জাহাজে করে সমুদ্রপথে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পেট্রোবাংলা ২০২১ সালের ১৬ জুন ভারতীয় কোম্পানি এইচ-এনার্জির একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। এর আগে একই উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে প্রথম এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল পেট্রোবাংলা। চলতি বছর ২০২৪ সালেই চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। তিন-চারটি পয়েন্ট বাদের চুক্তির খসড়াও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

খসড়া চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ভারত থেকে এলএনজি আনতে মোট ৯৯ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল পেট্রোবাংলা। এরমধ্যে ভারতের ভুখেল ৪৭ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ ভুখেল ৫২ কিলোমিটার। ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন এই পাইপলাইন নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে প্রাথমিকভাবে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, ভারত থেকে এলএনজি আনতে যে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের কথা ছিল তা এখন আর হচ্ছে না। প্রকল্পটি বিশেষ আইনে গ্রহণ করা হয়েছিলো। আইন স্থগিত হওয়ার কারণে এটি আর হচ্ছে না। এছাড়া ভারতে যে গ্যাস তাতে সালফারের পরিমাণ বেশি। আমাদের গ্যাসের চাইতে নিম্নমানের। এছাড়া গ্যাসের হিটিং ভ্যালু কম। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে আর আগ্রহ দেখাচ্ছি না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে আনা হলে এই গ্যাস প্রাথমিকভাবে দেশের খুলনা অঞ্চলে ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। এই গ্যাসেই খুলনায় রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু ও চালু রাখার কথা ছিলো। কেন্দ্রটির কাজ শেষ হলেও গ্যাসের অভাবে এখন বসে আছে। অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রের-জনগণের অর্থের। এইচ-এনার্জি মহারাষ্ট্রের জয়গড় বন্দরে ভারতের প্রথম ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। কোম্পানিটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। ওই টার্মিনাল থেকেই বাংলাদেশে এলএনজি পাঠানোর পরিকল্পনা ছিলো।