বাবরের জীবন থেকে ১৭ বছর কেড়ে নেয় ‘প্রথম আলো’

- আপডেট সময় : ১০:৪৪:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 4
লুৎফুজ্জামান বাবর। নেত্রকোনার জনপ্রিয় বিএনপি নেতা। ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির ভূমিধস বিজয়ের পর তাঁকে করা হয়েছিল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। টানা পাঁচ বছর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে আসে বিরাজনৈতিকীকরণ ষড়যন্ত্রের সরকার।
ড. ফখরুদ্দীন ও মইন উ আহমেদের নেতৃত্বে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার নিয়ন্ত্রিত এই সরকার লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করে। তারপর দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে এক নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন। যে সময় বাবর কারাগারে অন্তরীণ হয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৫০ বছর। দীর্ঘ ১৭ বছর মিথ্যা মামলায় নজিরবিহীনভাবে কারান্তরীণ থাকার পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
বাবরের বিরুদ্ধে করা সব মামলা যে ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক ছিল, তা সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রমাণিত হয়েছে। কারো দয়া বা অনুকম্পায় নয়, আদালতের নির্দেশেই মুক্তি পেয়েছেন বাবর। বাবরের জীবন থেকে ১৭টি বছর কেড়ে নেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশে বিরাজনৈতিকীকরণের মুখপত্র এবং দেশবিরোধী সংবাদপত্র প্রথম আলো। এক-এগারো আনার জন্য প্রথম আলো যেসব ব্যক্তিকে কলঙ্কিত করেছিল তাঁদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন অন্যতম।
এ সময় ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ বাবরের বিরুদ্ধে লাগাতার অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে। বাবরের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তথাকথিত প্রেক্ষাপট তৈরি করে প্রথম আলো। প্রথম আলোর উদ্দেশ্যমূলক এবং মতলবি প্রতিবেদনে জর্জ মিয়াকে প্রথম উপস্থাপন করা হয় এবং এই মামলায় বিএনপির কাল্পনিক সম্পৃক্ততা আবিষ্কার করে প্রথম আলো। মূলত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিক আবরণ দেওয়ার সব বানোয়াট তথ্য-উপাত্ত প্রথম আলোর আবিষ্কার। এসব কাল্পনিক রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতেই লুৎফুজ্জামান বাবরকে ফাঁসানো হয়।
সর্বোচ্চ আদালত ২১ আগস্ট মামলার রায়ে বাবরকে খালাস দিয়েছেন। চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়েছে, মামলায় যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেসব অভিযোগ কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। কিন্তু এই কাল্পনিক অভিযোগটি করেছিলেন প্রথম আলোর বিতর্কিত সাংবাদিক টিপু সুলতান। শুধু তাই নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও লুৎফুজ্জামান বাবরকে ফাঁসানো হয়েছিল প্রথম আলোর মাধ্যমেই। ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনাটিকেও সাজিয়েছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গোষ্ঠী। ভারতের আজ্ঞাবহ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার তাদের প্রতিবেদনটি এমনভাবে রচনা করেছিল, যেন মনে হতে পারে তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রথম আলোই বাবরের বরাত দিয়ে একটি ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘খালেদা জিয়ার সম্মতিতে বসুন্ধরার কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিলেন তারেক’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রিমান্ডে থাকাকালে নাকি বাবর এ কথা বলেছেন। সম্প্রতি বাবর মুক্তি পেয়ে এই বক্তব্যকে ‘ডাহা মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, একজন ব্যক্তি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কী বলবেন-না বলবেন সেটা সম্পূর্ণ গোপনীয়। এই গোপনীয় তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা শুধু অনৈতিক নয়, আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু প্রথম আলো এই দণ্ডনীয় অপরাধের কাজ করেছে। পরে যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
আর্কাইভ ঘেঁটে জানা যায়, ২০০৭ সালের ৫ জুন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার একযোগে বাবরের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘পুলিশ নিয়োগে দলীয়করণ ও অর্থের লেনদেন হয়েছে।’ বাবর এসব করেছেন বলেও প্রথম আলোর মনগড়া, বানোয়াট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রথম আলো যেন নিজেই আদালত, নিজেই রায় দিয়ে দেয়। প্রথম আলো ওই প্রতিবেদনে দাবি করেছিল, লুৎফুজ্জামান বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পুলিশের যেসব নিয়োগ হয়েছে, তাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদনে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রথম আলোর প্রধান কাজই ছিল বিএনপির চরিত্র হরণ। বিএনপির মন্ত্রী-এমপিদের নানা রকম দুর্নীতির কল্পকাহিনি প্রকাশ করা এবং বিএনপিকে জঙ্গিদের দোসর হিসেবে প্রমাণে আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে প্রথম আলো। শুধু তাই নয়, এই সময় তাদের মূল লক্ষ্য ছিল জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বিষোদগার রচনা। এখন আবার প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। তারা ভোল পাল্টে বিএনপিপ্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করছে। বেগম জিয়ার প্রতিও ‘মেকি সহানুভূতি’ দেখাচ্ছে। তাদের অতীত অপকর্ম যেন কেউ স্মরণ না করে সে জন্য।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের প্রথম আলোর সব প্রতিবেদন মুছে দেওয়া হয়েছে অনলাইন থেকে। তবে সচেতন পাঠকরা প্রথম আলোর অপসাংবাদিকতা এবং দেশবিরোধী ঘৃণ্য অপতৎপরতার কথা জানেন। তাঁদের অনেকেই সে সময়কার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ সংরক্ষণে রেখেছেন। তাঁরা মনে করেন, প্রথম আলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক হিসাব-নিকাশ এখনো বাকি রয়ে গেছে।