বিচার হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে: ড. ইউনূস
- আপডেট সময় : ০৯:০১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৮০ বার পড়া হয়েছে
টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বাগত জানানো হবে। তবে তার আগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার পাবে। যারা অপরাধী নয়, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন।’
‘তাদের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে আমরা রাজনৈতিক ভিত্তিতে লড়াই করব,’ যোগ করেন ড. ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ঢাকার রাস্তার প্রতিটা দেয়ালে প্রকাশ পেয়েছে আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের উদযাপন। মাইলের পর মাইল দেয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে বিদায় নেয়া এই শাসকের কার্টুন।’
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, কাউকে খুঁজে নাও। কিন্তু পরে বললাম, ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের জীবন দিয়েছো, তোমার বন্ধুরাও তাদের জীবন দিয়েছে; তাই আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব।’
শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়া প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন,
তিনি শুধু ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তা-ই নয়, সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো তিনি যে কথা বলছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ভারতে বসে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও প্রভাবশালী ভারতীয় আমেরিকানরা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে লবিং করছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ড. ইউনূস এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারবেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা বিনামূল্যে টাকা চাইছি না। আমরা একটি ব্যবসায়ী অংশীদার চাই। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।’
তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের ‘ধীরগতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন,
কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এটি একটি খারাপ এবং স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ।
দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমা এবং রোডম্যাপ প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন ওয়াহিদুজামান।
তবে সরকার এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতে চায় না উল্লেখ করে ড. ইউনূস টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন,
আমার কোনো তারিখ দিইনি। প্রথমে আমাদের রেলগুলো ঠিক করতে হবে যাতে ট্রেন সঠিক পথে চলে।
অন্যদিকে টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ), যাদের অন্তত এক সময় ব্যাপক জনসমর্থন ছিল- তাদের বাদ দিয়ে সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য সম্ভব না-ও হতে পারে। আর বর্তমানে বাংলাদেশে থাকা আওয়ামী লীগের সদস্যরা বলছেন, তাদের ‘সম্মিলিত শাস্তি’ দেয়া হচ্ছে।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জাহিদ মালেক গোপনে থেকেই টাইমকে বলেছেন, তিনি ‘ষড়যন্ত্রের অভিযোগের’ জবাব দিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ তিনি হৃদরোগে ভুগছেন এবং তার জামিন না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি একজন অসুস্থ মানুষ। আমি চার মাস ধরে আমার পরিবারকে দেখিনি।’