বিজনেস আইডিয়া:ফুড কার্ট
- আপডেট সময় : ০৫:১১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 40
তাহসিন আহমেদ: নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে ভাসমান খাবারের দোকানের চাহিদা। তৈরি হচ্ছে সম্ভাবনাময় ব্যবসার পরিসর। এমনই একটি লাভজনক ব্যবসা ফুড কার্ট বা খাবারের গাড়ি। এটি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রেতা ও উদ্যোক্তা উভয় পক্ষের কাছে। বিশেষ করে নারী ও স্বল্পপুঁজির মানুষের আয়ের ক্ষেত্র তৈরিতে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে ফুড কার্ট ব্যবসা।
ফুড কার্টে চাহিদাসম্পন্ন খাবার
ফুড কার্টে বেশি চাহিদাসম্পন্ন খাবার হচ্ছে বার্গার, পিৎজা, হট ডগ, চিপস, হট কফি, কোল্ড কফি, ফলের জুস, নুডলস, স্যুপ, চটপটি, ফুচকা, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, নাগেটস প্রভৃতি।
খাবার নির্বাচন
ফুড কার্টের ব্যবসা করতে চাইলে শুরুতে খাবার নির্বাচন করতে হবে। এজন্য স্থানীয় ফুড কার্ট ব্যবসায়ীদের খাবারের আইটেম সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এরপর এ আইটেমগুলো আপনার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারেন। কেননা, ভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে শুরু করলে প্রতিযোগিতার মুখে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। প্রচলিত খাবারের বাইরে ভিন্নধর্মী আইটেম থাকলে সহজে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা যায়।
স্থান নির্ধারণ
উপযুক্ত স্থান নির্বাচন ফুড কার্ট ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উপযুক্ত স্থান না পেলে ক্রেতাসমাগম কম হবে। কার্টটি অবশ্যই ক্রেতার নাগালে থাকতে হবে। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি স্থানে গ্রাহকের ভিড় থাকে। এছাড়া আবাসিক এলাকার মোড়েও বসাতে পারেন।
মূলধন
কার্ট বা ভ্যান তৈরি করতে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া প্লেট, চুলা, প্লাস্টিক চেয়ার, আলোকসজ্জা ও কার্টের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে। এর বাইরে দরকার হবে কর্মচারী খরচ ও প্রতিদিনের বাজার খরচ। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মূলধন হলেই যথেষ্ট।
খাবারের মূল্য
সাধারণ ক্রেতার আয়ত্তের মধ্যে রাখতে হবে খাবারের মূল্য। এজন্য পার্শ্ববর্তী ফুড কার্টগুলোর খাবারের দাম কেমনÑসে বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। খাবারের দাম ৩০ টাকা থেকে শুরু করতে পারেন। সব সময় ব্যবসার দেখভাল করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভাংতি টাকা রাখতে হবে। কর্মচারীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও পারিশ্রমিকের পাশাপাশি বোনাস দিতে পারেন। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নতুন খাবারের পদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যবসায় নতুনত্ব
ব্যবসায় নতুনত্ব আনতে বিকাশ কিংবা রকেটের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাসায় খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। কেমন হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেসবুক পেজ চালু করলে?
ষষ্ঠ ব্যাচ
দিন ৩৭…..
সেশন ৩৯….
দারুণ একটা বিজনেস আইডিয়া !
ষ্ট্রীট ফুড ভ্যানের এই প্রকল্পটি আপনারা যে কেউ যারা উদ্যোক্তা হতে চান, যারা কোন কাজকে ছোট মনে করেন না এবং যাদের ২৫,০০০ টাকা থেকে ১০০,০০০ টাকা মূলধন আছে শুরু করতে পারেন। এটাই হতে পারে আপনার এগিয়ে যাবার একটা উপায়।
ভ্রাম্যমান গাড়ির খাবার/ ফুডকার্ট..
রাস্তার খাবার বলে তাচ্ছিল্য করার আর উপায় নেই। এখন রাস্তায় মিলছে মজার মজার স্বাস্থ্যকর দেশি-বিদেশি খাবার। এখন প্রায় সব দেশের শহরের বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে প্রায়ই চোখে পড়ছে ভ্রাম্যমাণ খাবারের গাড়ি, যাকে বলে ফুডকার্ট।
ফুডকার্ট হচ্ছে খাবারের চলন্ত গাড়ি, যাতে নানা রকম খাবার সাজিয়ে রাখা হয় বিক্রির জন্য। গাড়ির ভেতরের দিকে আছে খাবার গরম রাখার চুলা। তার ওপর খাবারের ট্রে বসিয়ে খাবার সাজিয়ে প্লাস্টিকের শিট দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়। ক্রেতা অর্ডার দিলেই গরম খাবার সরবরাহ করা হয় প্যাকেটে। নিচের দিকে চাকা আর ওপরে ছাউনি দিয়ে ঢাকা। ফুডকার্টের ধারে দাঁড়িয়ে চটজলদি খাবার খেয়ে নেওয়া অথবা বাসায় নিয়ে যাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। চাকুরীজীবি, পেশাজীবি সহ তরুণদের কাছে এটি এখন নতুন আকর্ষণ। ভালো মানের খাবারের দোকানের চেয়ে ফুডকার্টের খাবারের দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহটা আরো বেশি।
ভ্যানে করে ফুচকা আর চটপটি বিক্রির রেওয়াজ এখানে অনেক দিনের। এবার এই দুটি আইটেমের বাইরেও নানা খাবার ফুডকার্টে বিক্রি করা যায় ।
ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকান/ ফুডকার্ট খাবার আইটেম এর ধারনা—
১. ফস্টফুড জাতীয় খাবার– মানসম্মত নুডলস, বার্গার, হটডগ, সিঙ্গারা, চমুচা , চিকেন সমুচা, বিশেষভাবে তৈরি পেঁয়াজু, সবজি পাকোড়া সহ ঝাল নাস্তা।
২. ঠান্ডা জাতীয় খাবার- দই চিড়া, দই মিষ্টি, সিরিয়াল, ফুড সাপ্লিমেন্ট, আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়।
৩. জুস জাতীয় খাবার– আঁখের রস, বিভিন্ন ফলের জুস, লেবুর শরবত, মিক্স মিক্সড ফ্রুট শরবত, এলাভ্যারা, পুদিনা বা হার্বাল জাতীয় শরবত।
৪. শুকনা জাতাীয় দানাধার খাবার – পপকর্ন, হাওয়াই মিঠাই, উন্নত মানের বাদাম, বুট, ছোলা বুট।
৬. ফ্রুট জাতীয় খাবার- সিজনাল ফ্রুটস এর মিক্সচার, যেমন- পেপে, আনারস, পেয়ারা, তরমুজ, আম, জাম, আমলকী। কিছু ফল কেটে প্লেটে পরিবেশন ইত্যাদি।
আমড়া, শশা, গাজর, আমলকী ইত্যাদি রাখা যায়।
৫. লাঞ্চ – ডিনার জাতীয় হেবি খাবার— বিরিয়ানি, গরুর চাপ, তেহারি, পরাটার সঙ্গে গরু বা মুরগির মাংসের ভুনা, কাবাব রোল, মোরগ পোলাও, চিকেন চপ, চিকেন কাঠি কাবাব।
৬. মুখরোচক খাবার- চটপটি, পুচকা, দই পুচকা, বিভিন্ন আচার।
৭. গরম পানীয় – ট্রি, ব্ল্যাক কপি, কপি উইথ মিল্ক, জিঞ্জার ট্রি, লেমন ট্রি, গ্রিন ট্রি, হার্বাল ট্রি। পান, শাহী পান, বিভিন্ন পদের পান। বিভিন্ন ফুড সাপ্লিমেন্ট।
৮. সর্ট মিল, দুপুরে খাবার – হরেক রকম ভর্তা, চাটনী, ডাল – ভাত, মাছ, মুরগী, মাংস। দুপুরের মিল।
৯. পিঠা ফুলি — হরেক রকম পিঠাফুলি, কেক, ডিম কেক, শীতকালিন বিশেষ পিঠা।
১০. খেলনা– সামগ্রীক স্কুল পড়ুয়া বাচ্চার খবার, খেলনা ইত্যাদি।
বিঃদ্রঃ – একই ভ্যান শীত সিজন, গরমের সিজনে তার পন্য পরিবর্তন করতে পারে। সকাল দুপুর এবং বিকালে ভিন্ন আইটেম বিক্রয় করা যেতে পারে। খাবার ভিন্ন, ভিন্ন গাড়ি এক।
বেশীর ভাগ আইটেম ডেলি সংগ্রহ করে ডেলি সেল।
দিন দিন ফুডকার্টের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর সঙ্গে জড়িতরা অধিকাংশই তরুণ। আর ফুডকার্টে সব বয়সের মানুষ খেতে আসে।
ফুডকার্টের বেশীর আইটেম ঘরে তৈরি, শুধু সামান্য প্রসেস করে বা গরম করে পরিবেশন করবে। কিছু খবার কার্টেই তৈরি করতে হবে। তবে বেশির ভাগ কার্টেই সবার সামনে বানিয়ে গরম গরম পরিবেশন করা হয়। কার্টে বিশেষ ধরনের চুলা, ভ্যাসিন বসানো থাকবে।
নতুন ফুডকার্ট চালু করার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
শুধু ব্যবসা করার আশায় ফুডকার্ট চালু করলে হবে না। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে ভালোলাগা, ফ্যাশন আর নতুন কিছু করার প্রত্যয়। ছোট পরিসরেও বড় বড় পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে। তাহলে শুধু ব্যবসায়িক লাভ-লোকসান নয়, ফুডকার্ট হয়ে উঠবে আপনার অভিজ্ঞতার খাতার সবচেয়ে সফল অধ্যায়। তৈরী হবে নিজের বলার মত একটা গল্প।
কার্ট তৈরির সময় থেকেই এর নকশার ব্যাপারে চোখ কান খোলা রাখুন। সবদিকে নজর দিতে হবে। কার্টের ছাউনি থেকে শুরু করে রঙ, বহন ক্ষমতা- সব। শুধু রঙচঙে আকর্ষণীয় হলেই হবে না। তা হতে হবে খোলামেলা এবং ছিমছাম। যেন ক্রেতা আর বিক্রেতাদের যোগসূত্র সহজেই ঘটতে পারে। এমন হতে হবে এর নকশা, যেন ক্রেতা দেখতে পারে কি করে তৈরি হচ্ছে তাদের খাবার আর বিক্রেতা যেন ক্রেতাদের অভিব্যক্তি বুঝতে পারে। মোট কথা, কার্ট শুধু ক্রেতাদের সঙ্গে খাবারের নয়, বিক্রেতারও একটা সম্পর্ক স্থাপন করবে।
সরঞ্জামে ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সাধারণত স্থানীয় নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারে নষ্ট হতে পারে আপনার খাবারের মান। প্রথম প্রথম মান ভালো হলেও, সরঞ্জাম পুরনো হতে থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে নষ্ট হতে পারে ফুডকার্টের সুনাম। তাই শুরুর সময় থেকেই চেষ্টা করুন সরঞ্জাম যেন হয় উন্নতমানের। নিম্নমানের সরঞ্জাম থেকে সাবধান থাকুন।
জাহাজের কিছু সারঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিজের কার্টটিকে আলাদা করার একটি মাত্র উপায় হলো, পরিবেশ, পরিবেশন, ড্রেসকোডে স্বাতন্ত্রতা। খাবারের, সসের ভিন্নতা, কিংবা পরিবেশনের ধরণে আনতে পারেন বৈচিত্র্য। ভিন্নতা যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন, মাথায় রাখবেন সেটা যেন আপনাকে অন্যসব কার্ট থেকে আলাদা করতে পারে। একই মেনু কিংবা একই আইটেমে আটকে থাকবেন না। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে মেনু তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। চেষ্টা করুন। নতুন কিছু না হলেও অন্তত পুরনো খাবারের মান বজায় থাকে।
ফুডকার্টেরই নামে নিজস্ব অনলাইন, ফেসবুক পেইজ থাকবে। ফেসবুকে কার্টের নাম লিখে অনুসন্ধান করলে যাতে পাওয়া যায়।
মুল কাঠামোর বাইরে আপনার বিনিয়োগকৃত মুলধনের ভিত্তিতে আপনার ভ্যান শুধু চাকার উপর করতে পারেন, কিংবা রিকশা ভ্যান, অথবা মোটর ভ্যান বা আরো গাড়ীতে ও এটা পরিচালনা করতে পারেন।
ভ্যানের ডিজাইন ও খাবারের আইটেম এর উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করতে হবে।
আগামী ৬ মাসে এই প্লাটফর্ম থেকে প্রতিটি জেলায় ও বিভাগীয় শহরে আমি অন্তত ১০০ ষ্ট্রীট ফুড ভ্যান উদ্যোক্তা চাই। শুরু হউক। এটাই হবে “নিজের বলার মতো একটা গল্প” এর ব্র্যান্ড আইডিয়া বিজনেস।