বিজনেস আইডিয়া পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এলিমেন্ট
আপনি কী ধরনের বিজনেস চালু করতে চাচ্ছেন সেটাতে আসলে বাঁধাধরা কোনো নিয়ম নেই। তবে হ্যাঁ, প্রতিটি বিজনেসেই কিছু এলিমেন্ট আছে যেগুলোর কারণে ব্যবসা সফল হতে পারে। চলুন জেনে নেই এলিমেন্টগুলো সম্পর্কে।
প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য ক্লিয়ার ডিমান্ড
যে কোনো বিজনেসের জন্য সাপ্লাই ও ডিমান্ড বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে। তবে এমন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করুন যেগুলোর মার্কেটে ডিমান্ড আছে। অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর জন্য সার্ভে করতে পারেন। আপনি যত ভালোভাবে অডিয়েন্সকে জানবেন, তত বেশি সফলতা আসবে। কাস্টমারের প্রয়োজনকে না বোঝার কারণে অনেক ব্যবসাই শুরু হতে না হতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শর্ট ও লং টার্ম গোল
যে কোনো ব্যবসাকে সফল করার জন্য ডিটেইল প্ল্যান করা প্রয়োজন। আপনার লং টার্ম ও শর্ট টার্ম প্ল্যান একসাথে আপনাকে ট্র্যাকে রাখতে পারে। SMART গোল সেট করতে পারলে লং টার্মে আপনি সফল হবেন এটা অন্তত নিশ্চিত।
পরিবর্তন মেনে নেয়া
আপনার বিজনেস আইডিয়া ডিপেন্ড করছে নতুন নতুন সব তথ্য ও অভিজ্ঞতার উপর। কখনো কখনো পরিবর্তন জরুরি। ব্যবসা বড় করার জন্য বর্তমান মার্কেট এবং কাস্টমারদের থেকে ফিডব্যাক নিতে হবে। সেই সাথে হতে হবে ফ্লেক্সিবল ও ওপেন মাইন্ডেড।
বিজনেস আইডিয়া খুঁজে পাওয়ার উপায়
যে কোনো উদ্যোক্তার জন্য বিজনেস আইডিয়া জেনারেট করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার আইডিয়া ভালো না হয়, তাহলে সেটি বন্ধ হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু আইডিয়া খুঁজে পাবেন কীভাবে? চলুন জেনে নেয়া যাক।
১) পরিবার ও বন্ধুদের জিজ্ঞেস করুন
যে কোনো উদ্যোক্তার জন্য নতুন বিজনেস আইডিয়া আসে তার নিজের নেটওয়ার্ক যেমন – বন্ধু ও পরিবার থেকে। কারণ এই মানুষগুলোই আপনাকে খুব কাছ থেকে চিনে এবং নতুন কাজে উৎসাহ দিবে। তাই এই মানুষগুলোর সাথে আইডিয়া শেয়ার করতে পারেন, পরামর্শ নিতে পারেন। অবশ্যই আপনার সাথে তাদের আইডিয়া সব সময় মিলবে তা নয়। এজন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দিনশেষে যেহেতু এ নিয়ে আপনাকেই ডিল করতে হবে তাই সিদ্ধান্তটাও আপনারই হবে। তবে আইডিয়া সিলেক্ট করার আগে বুঝতে হবে সে সম্পর্কে আপনি কতটুকু দক্ষ।
২) প্রতিদিনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করুন
প্রতিদিনের কোনো সমস্যাকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে সমাধান করতে পারাটা বেস্ট একটি আইডিয়া। কোনো বিষয় যদি আপনাকে অনেক বিরক্ত করতে থাকে, তাহলে বুঝে নিন আরও অনেকেই একই কারণে বিরক্ত। এমন ৮/১০টি সমস্যা নিয়ে আগে ভাবুন। এগুলর মধ্য থেকে অন্তত ৩টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন, যেগুলোর সমাধান এখনও কারো কাছে নেই। এগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারলে বিজনেসের সফলতা নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
৩) শখের কাজ করুন
আপনি জানেন রকেট বানালে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন, তাই বলে কি না জেনে এই বিজনেস আপনি শুরু করতে পারবেন? আর তাই তো নিজের পছন্দ ও শখের প্রতিও নজর দেয়া জরুরি। আপনি যে বিষয়ে প্যাশনেট সেগুলো নিয়ে কাজ করে বিজনেস দাঁড় করানোটা বেশ আনন্দের। ধরুন আপনি হাইকিং ভালোবাসেন, তাহলে হাইকিং ট্যুর কোম্পানি শুরু করতে পারেন। যদি গাড়ির প্রতি ভালোবাসা থাকে, তাহলে কার ডিটেইলিং বিজনেস বা ক্ল্যাসিক কার রিস্টোরেশন বিজনেসও চালু করতে পারেন।
৪) এক্সিসটিং প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাজ করুন
নতুন কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে বিজনেস করবেন, সেটা বুঝে উঠতে যদি সময় লেগে যায়, তাহলে মার্কেটে অলরেডি এক্সিস্ট করছে এমন কিছু নিয়েও আপনি শুরু করতে পারেন। এতে একদম নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে চলবে কি চলবে না, তা নিয়ে তেমন একটা ভাবতে হবে না। আপনি শুধু বিক্রির জন্য নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করবেন। প্রোডাক্ট বা সার্ভিস চলবে কিনা সেটা বোঝার জন্য নিজেই নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন- ‘আমার শহরে সার্ভিসটি কি এভেয়লেবল আছে?’ ‘এই প্রোডাক্টটি কি কম দামে পাওয়া যাবে?’ ‘এর কোয়ালিটি কি ভালো?’ ‘এটা ব্যবহার করা কি সহজ?’
কীভাবে বিজনেস ক্রিয়েট করবেন?
একবার যখন জেনেই গিয়েছেন বিজনেস কী নিয়ে করবেন, তখন সেটাকে বাস্তবেও তো রূপান্তরিত করতে হবে, তাই না? নিচে রইলো ব্যবসা শুরু করে পরিচালনা করার কয়েকটি উপায়-
১) মার্কেট রিসার্চ করা
আপনার কাছে যে আইডিয়াই থাকুক না কেন, সেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এমন হওয়া উচিত যেন লোকের প্রয়োজন পূরণ করা যায়। এজন্য সবার আগে মার্কেট রিসার্চ করতে হবে। এর ফলাফলই হবে কাস্টমার সার্ভিস ফিলসফির ফাউন্ডেশন। সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে আপনি আপনার চ্যানেলের মাধ্যমে কাস্টমারদের সার্ভ করবেন, ক্লায়েন্ট বেইজ সহজে কীভাবে তৈরি করবেন। কারণ কাস্টমারদের মূল সমস্যা যখন চিহ্নিত করতে পারবেন, তখনই তার সমাধান খুঁজে বের করতে পারবেন।
২) প্রয়োজন পূরণ করা
একবার যখন মার্কেট রিসার্চ করবেন, তখন নির্দিষ্ট সমস্যা খুঁজে বের করে সেটার সমাধান বিষয়েও ভাবতে পারবেন। যেমন- স্প্যানক্স ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সারা ব্লেইকলি তার শেইপওয়্যার নিয়ে কমফোর্ট ফিল করছিলেন না। তখনই তিনি নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এই ব্র্যান্ডের মার্কেটে প্রয়োজন ছিল। তিনি মেয়েদের জন্য তৈরি করেছেন আলাদা কমফোর্ট জোন। একবার যখন মার্কেটের প্রয়োজন বুঝে যাবেন, তখন আপনিও বুঝে যাবেন আপনাকে কী তৈরি করতে হবে।
৩) কাস্টমার বেইজ সার্ভে করা
বিজনেস সাকসেসফুল করার আরও একটি উপায় হচ্ছে কাস্টমার বেইজ সার্ভে করা। এটা আপনি করতে পারেন ইমেইল ক্যাম্পেইন, ওপেন ফোরাম বা অনলাইন সার্ভের মাধ্যমে। এটি ইফেক্টিভলি মার্কেটকে বুঝতে এবং কানেকশন বিল্ড আপ করে বিজনেসকে গ্রো করতে হেল্প করে।
৪) বাজেট তৈরি করা
যখন বিজনেস বাজেট করবেন, তখন মূল খরচগুলো যেন তালিকায় থাকে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করে নিবেন। এমন অনেক রিসোর্স আছে, যেগুলো আপনার খরচ কমাতে হেল্প করবে, যেমন – ওয়েবসাইট বিল্ডিং বা প্রোডাক্ট পেইজ ডিজাইন। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে। যেমন –
- প্রোডাক্ট প্রোডাকশন/ম্যানুফ্যাকচারিং
- স্টোর বা অফিসিয়াল রেন্টাল
- স্টাফ
- প্রমোশনাল ম্যাটারিয়াল
- স্টোরেজ বা প্রোডাকশন স্পেস রেন্টাল
- ইন্টেরিওর ডিজাইন
৫) প্রয়োজনে ইনভেস্টর খোঁজা
বাজেট ঠিক করার পর, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ইনভেস্টর খুঁজে বের করুন যিনি আপনার ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে হেল্প করবেন। নতুন ব্যবসা ফাইন্যান্সিয়ালি এসট্যাব্লিশ করার জন্য ইনভেস্টর খুব চমৎকার একটি রিসোর্স।
৬) ফ্লেক্সিবল থাকা
মনে রাখবেন, বিজনেস আইডিয়া সবসময় পরিকল্পনামতো হবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে শুরু করার জন্য পরিকল্পনা করুন, বাজেট বানান এবং নতুন নতুন আইডিয়াও জেনারেট করুন। লাস্ট মিনিটে যদি কোনো পরিবর্তন হয়েও যায়, চেষ্টা করবেন ফ্লেক্সিবল থাকতে এবং পরিবর্তন মানিয়ে নিতে।
বিজনেস আইডিয়া কীভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে তা নিয়ে শুরুতেই অনেকে বেশ কনফিউশনে পড়ে যান। আশা করি কনফিউশন কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হয়েছে। এবার তাহলে নতুন বিজনেস শুরু করতে আর দেরি কেন? ব্যবসা শুরু করার জন্য সাহস রাখা প্রয়োজন। ভয় পেয়ে পিছপা হয়ে গেলে কাজ শুরু করা হবে না। তাই ভয় না পেয়ে সামনে এগিয়ে যান।