বিদায়ী বছরে কী কী দেখল বাংলাদেশ
- আপডেট সময় : ০৮:৫০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 38
বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সাল ছিল পরিবর্তন আর উত্তেজনায় ভরা এক বছর। সব ঘটনাকে ছাপিয়ে যায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও রাজনৈতিক পালাবদলের অধ্যায়। হঠাৎ বন্যা, শীত, গরমের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামাজিক অস্থিরতাও জনজীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
বছর শুরু হয় শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দময় এক যাত্রার মাধ্যমে। জানুয়ারির প্রথম দিন দেশের স্কুলগুলোতে আয়োজন করা হয় ‘বই বিতরণ উৎসব’, যেখানে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন পাঠ্যবই।
এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় এসএসসি পরীক্ষা, যা কোভিড মহামারির পর প্রথমবার পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ সময় এবং পূর্ণ নম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে অনেকটা আগের ধারাবাহিকতায় ফেরে এ পাবলিক পরীক্ষা।
ভোটের রায়
জানুয়ারির ৭ তারিখ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয় তার সরকার।
প্রতিকূল দিনের স্মৃতি
বছরের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহ ও এপ্রিলে তাপপ্রবাহ শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঘোষণা দেয়, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
একইভাবে এপ্রিলে তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠলে ২০ তারিখে দেশের সব স্কুল-কলেজে এক সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বিপদের ছায়া
বছরের প্রথম বড় ধাক্কা আসে ২৯ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণ যায়।
মার্চ মাসে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হয়। এতে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক জিম্মি হন। কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর নাবিকরা মুক্তি পান।
মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে আঘাত হানে, যার প্রভাবে সাত জেলায় ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
অগাস্টের শেষদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী।
আন্দোলনের জোয়ার
হাই কোর্ট ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করলে পরদিন শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে। তাদের এই বিক্ষোভ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা বড় আকারের আন্দোলন শুরু করে। ১৫ তারিখ থেকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সহিংসতা। ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিশ্বের যোগাযোগ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে সরকার দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে প্রতিবাদের ঢেউ এতটাই বেগবান হয় যে, তুমুল গণআন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা ৫ অগাস্ট ভারতে চলে যান; টানা ১৫ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
সরকারবিহীন তিন দিন
সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশুমার হামলার জেরে তারা প্রায় উধাও হয়ে যায়। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেয়।
জনসাধারণ ডাকাত আতঙ্কে লাঠিসোঁটা নিয়ে নিজ উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করে। দেয়ালগুলোতে আন্দোলনের সময় লেখা স্লোগান মুছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে আঁকে নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
নতুন নেতৃত্ব
নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ৮ অগাস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কারে কাজ করছে উপদেষ্টা পরিষদ, গঠন করা হয়েছে ১১টি সংস্কার কমিশন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অক্টোবরে ‘ট্রাফিক পক্ষ’ আয়োজন করে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও নামানো হয়। এ কাজের জন্য তাদের সম্মানী ভাতাও দেওয়া হয়।
এছাড়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস উদযাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বছরের শেষ দিকে বার বার আলোচনায় উঠে আসে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রসঙ্গ।
পরীক্ষার জটিলতা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে এইচএসসির সব বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অবশিষ্ট থাকা পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। ১৫ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশেও আগের মতো আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায়নি।
গর্বের অর্জন
অক্টোবরের শেষদিকে এসে কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস গড়ে মেয়েরা। উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট ধরে রাখার উচ্ছ্বাসে মাতে গোটা দেশ।
আর ডিসেম্বরের শেষদিকে ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সংকট ও পরিবর্তনের মধ্যেও এই অর্জনগুলো বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও অগ্রগতির প্রতীক হয়ে ওঠে।