ঢাকা ০২:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

বিলীনের শঙ্কায় রওশনের জাপা

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ১০:৩২:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / 82
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিলীনের শঙ্কায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির রওশন পন্থী নেতারা। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে রওশন অনুসারী নেতাদের রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তাদের দলীয় কোনো কর্মসূচীও নেই। দলের বেশীরভাগ নেতাই আত্মগোপনে অথবা গৃহবন্ধী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত দলটির শীর্ষ নেতারা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে নির্বাচন বর্জনের চিন্তা করছিল তখন আওয়ামী লীগ চাল হিসেবে রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীদের ব্যবহার করে।

রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন রয়েছে রওশন পন্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচী ও আর্থিক জোগান মূলত আওয়ামী লীগ অফিস থেকে সরবরাহ করতো। আওয়ামী লীগের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য ছিলেন এই অংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। ২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বর্জন করতে চাইলে রাজনীতিতে ত্রাতা হিসেবে ভূমিকায় আসেন রওশন এরশাদ। সেই থেকে রওশন এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রসায়ন সৃষ্টি হয়। যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। রওশন এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ও বিদেশে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যখন রওশন চাপে পড়তেন তখন ত্রাতার ভূমিকা নিতে দেখা যেত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

বিভিন্ন সময় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং রওশন এরশাদের ডাক আসত গণভবন থেকে। স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেবর ভাবীর ঝগড়ায় অভিভাবক হিসেবে মীমাংসা করে দিতেন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের চাপের কারণেই এরশাদের মৃত্যুর পরও রাজনীতিতে টিকে থাকেন রওশন। ফলে এখন প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগের অবর্তমানে রাজনীতি থেকে কি তবে ইতি ঘটল রওশন ও তার অনুসারীদের?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনীতিতে অনেক আগেই ইতি ঘটেছে রওশনের। যেটুকু টিকে ছিল তা ছিল আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে রাজনীতিতে জি এম কাদেরের কাছে কর্তৃত্ব হারান রওশন। এরপর আওয়ামী লীগ জি এম কাদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই রওশনকে টিকিয়ে রাখে। এখন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ না থাকায় রাজনীতিতে রওশনের আর কোনো সুযোগ নেই। অপরদিকে রওশনের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে তাকে আর কখনো রাজনীতির মাঠে দেখার সুযোগ নেই। আর আওয়ামী লীগের আর্থিক জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অংশের বাকি নেতারা রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন। এ ক্ষেত্রে এই অংশের নেতাদের কেউ কেউ চেষ্টা করবেন জি এম কাদেরের সঙ্গে মীমাংসায় গিয়ে রাজনীতিতে ফেরার।

গত ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অনুসারীদের ডাকা জাতীয় সম্মেলনে পার্টির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ, কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব নির্বাচিত হন কাজী মামুনুর রশীদ। কাজী ফিরোজের রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে, সাবেক মন্ত্রী ও একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে তার রাজনীতি মূলত টিকে ছিল আওয়ামী লীগের বি টিম হিসেবে। তার নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে সবকিছু আওয়ামী লীগকেই দেখভাল করতে হয়েছে। যার প্রমাণ মিলে সবশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় অভিমানে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয়। সেদিন তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ আমার মিত্র, আমি মিত্রকে শত্রু বানাতে চাই না। সে সময় আরেক বর্ষীয়ান নেতা আবু হোসেন বাবলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়ালে বড় পরাজয় ঘটে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে এই দুই নেতা রাজনীতিতে আর সক্রিয় হবেন না। তারা নিষ্ক্রিয় থেকে চেষ্টা করবেন মামলার বেড়াজাল থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে।

এই অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ ছিলেন রওশনকে প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় নিয়ন্ত্রক। কাজী মামুনুর রশীদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে রওশন এরশাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের অন্দরমহল মহলে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে তিনি রাজনীতিতে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। রাজনীতিতে তার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও রওশন অনুসারীদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে ত্রাতার ভূমিকা পালন করছিলেন এই মামুন। রওশন এরশাদ যখন একাদশ সংসদ পর্যন্ত সংসদ সদস্য সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকায় ছিলেন তখন আর্থিক ও রাজনৈতিক সব সুবিধা ভোগ করেন মামুন। রওশন ও জি এম কাদেরের যত বিরোধ পূর্ণ চিঠি গণ মাধ্যমে আসতো তার সবকিছুর নেপথ্যে ছিলেন কাজী মামুন। ফল হিসেবে সম্মেলনে রওশন মামুনকে মহাসচিব বানান।

এই অংশের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বর্তমান সরকার ও বিএনপি জামায়াতের রোষানল থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করছেন। যেহেতু রাজনীতিতে তাদের কোনো সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই এবং সবশেষ নির্বাচনে তারা অংশ নেননি ফলে আপাতত তাদের রোষানলে পড়তে হয়নি। ৫ আগস্টের পর কোনো মামলাও হয়নি এই অংশের কারও নামে। তারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে গৃহবন্ধী জীবন যাপন করছেন। তারা মনে করেন রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে তাদের আর কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। তাদের পক্ষে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে জি এম কাদেরের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো পথ নেই। তবে আপাতত তারা আত্মগোপনে থাকতে চান নিজেদের মামলার বেড়াজাল থেকে রক্ষা করতে।

রওশন এরশাদপন্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) মুখপাত্র সুনীল শুভ রায়। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগ ছাড়া তাদের রাজনীতিতে টিকে থাকার সুযোগ কতটা। তিনি বলেন, আমরা সবশেষ নির্বাচন বর্জন করেছি ফলে রাজনীতিতে আমাদের টিকে থাকতে সমস্যা নেই। আপাতত আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

আওয়ামী লীগ ছাড়া অর্থের যোগান ও রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিজেদের বুদ্ধি ও সক্ষমতায় রাজনীতি করেছি ও করব। এতে আওয়ামী লীগের কোনো হাত নেই।

এই অংশের মহাসচিব কাজী কাজী মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাব। নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, তা জনগণ বিচার করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিলীনের শঙ্কায় রওশনের জাপা

আপডেট সময় : ১০:৩২:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

 

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিলীনের শঙ্কায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির রওশন পন্থী নেতারা। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে রওশন অনুসারী নেতাদের রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তাদের দলীয় কোনো কর্মসূচীও নেই। দলের বেশীরভাগ নেতাই আত্মগোপনে অথবা গৃহবন্ধী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত দলটির শীর্ষ নেতারা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে নির্বাচন বর্জনের চিন্তা করছিল তখন আওয়ামী লীগ চাল হিসেবে রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীদের ব্যবহার করে।

রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন রয়েছে রওশন পন্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচী ও আর্থিক জোগান মূলত আওয়ামী লীগ অফিস থেকে সরবরাহ করতো। আওয়ামী লীগের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য ছিলেন এই অংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। ২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বর্জন করতে চাইলে রাজনীতিতে ত্রাতা হিসেবে ভূমিকায় আসেন রওশন এরশাদ। সেই থেকে রওশন এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রসায়ন সৃষ্টি হয়। যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। রওশন এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ও বিদেশে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যখন রওশন চাপে পড়তেন তখন ত্রাতার ভূমিকা নিতে দেখা যেত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

বিভিন্ন সময় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং রওশন এরশাদের ডাক আসত গণভবন থেকে। স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেবর ভাবীর ঝগড়ায় অভিভাবক হিসেবে মীমাংসা করে দিতেন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের চাপের কারণেই এরশাদের মৃত্যুর পরও রাজনীতিতে টিকে থাকেন রওশন। ফলে এখন প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগের অবর্তমানে রাজনীতি থেকে কি তবে ইতি ঘটল রওশন ও তার অনুসারীদের?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনীতিতে অনেক আগেই ইতি ঘটেছে রওশনের। যেটুকু টিকে ছিল তা ছিল আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে রাজনীতিতে জি এম কাদেরের কাছে কর্তৃত্ব হারান রওশন। এরপর আওয়ামী লীগ জি এম কাদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই রওশনকে টিকিয়ে রাখে। এখন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ না থাকায় রাজনীতিতে রওশনের আর কোনো সুযোগ নেই। অপরদিকে রওশনের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে তাকে আর কখনো রাজনীতির মাঠে দেখার সুযোগ নেই। আর আওয়ামী লীগের আর্থিক জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অংশের বাকি নেতারা রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন। এ ক্ষেত্রে এই অংশের নেতাদের কেউ কেউ চেষ্টা করবেন জি এম কাদেরের সঙ্গে মীমাংসায় গিয়ে রাজনীতিতে ফেরার।

গত ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অনুসারীদের ডাকা জাতীয় সম্মেলনে পার্টির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ, কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব নির্বাচিত হন কাজী মামুনুর রশীদ। কাজী ফিরোজের রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে, সাবেক মন্ত্রী ও একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে তার রাজনীতি মূলত টিকে ছিল আওয়ামী লীগের বি টিম হিসেবে। তার নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে সবকিছু আওয়ামী লীগকেই দেখভাল করতে হয়েছে। যার প্রমাণ মিলে সবশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় অভিমানে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয়। সেদিন তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ আমার মিত্র, আমি মিত্রকে শত্রু বানাতে চাই না। সে সময় আরেক বর্ষীয়ান নেতা আবু হোসেন বাবলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়ালে বড় পরাজয় ঘটে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে এই দুই নেতা রাজনীতিতে আর সক্রিয় হবেন না। তারা নিষ্ক্রিয় থেকে চেষ্টা করবেন মামলার বেড়াজাল থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে।

এই অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ ছিলেন রওশনকে প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় নিয়ন্ত্রক। কাজী মামুনুর রশীদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে রওশন এরশাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের অন্দরমহল মহলে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে তিনি রাজনীতিতে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। রাজনীতিতে তার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও রওশন অনুসারীদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে ত্রাতার ভূমিকা পালন করছিলেন এই মামুন। রওশন এরশাদ যখন একাদশ সংসদ পর্যন্ত সংসদ সদস্য সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকায় ছিলেন তখন আর্থিক ও রাজনৈতিক সব সুবিধা ভোগ করেন মামুন। রওশন ও জি এম কাদেরের যত বিরোধ পূর্ণ চিঠি গণ মাধ্যমে আসতো তার সবকিছুর নেপথ্যে ছিলেন কাজী মামুন। ফল হিসেবে সম্মেলনে রওশন মামুনকে মহাসচিব বানান।

এই অংশের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বর্তমান সরকার ও বিএনপি জামায়াতের রোষানল থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করছেন। যেহেতু রাজনীতিতে তাদের কোনো সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই এবং সবশেষ নির্বাচনে তারা অংশ নেননি ফলে আপাতত তাদের রোষানলে পড়তে হয়নি। ৫ আগস্টের পর কোনো মামলাও হয়নি এই অংশের কারও নামে। তারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে গৃহবন্ধী জীবন যাপন করছেন। তারা মনে করেন রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে তাদের আর কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। তাদের পক্ষে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে জি এম কাদেরের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো পথ নেই। তবে আপাতত তারা আত্মগোপনে থাকতে চান নিজেদের মামলার বেড়াজাল থেকে রক্ষা করতে।

রওশন এরশাদপন্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) মুখপাত্র সুনীল শুভ রায়। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগ ছাড়া তাদের রাজনীতিতে টিকে থাকার সুযোগ কতটা। তিনি বলেন, আমরা সবশেষ নির্বাচন বর্জন করেছি ফলে রাজনীতিতে আমাদের টিকে থাকতে সমস্যা নেই। আপাতত আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

আওয়ামী লীগ ছাড়া অর্থের যোগান ও রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিজেদের বুদ্ধি ও সক্ষমতায় রাজনীতি করেছি ও করব। এতে আওয়ামী লীগের কোনো হাত নেই।

এই অংশের মহাসচিব কাজী কাজী মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাব। নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, তা জনগণ বিচার করবে।