বিশ্বজুড়ে ‘জুটম্যান’ নামে পরিচিত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান
- আপডেট সময় : ১১:৩৯:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 39
ঢেউ টিন, হেলমেট বা সোনালী ব্যাগ, সবই তৈরি করেছেন পাট থেকে। বিশ্বজুড়ে ‘জুটম্যান’ নামে পরিচিত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান।
১৯৫৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ড. মোবারক আহমদ খান মানিকগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহাম্মদ মুর্শিদ খান এবং মা নুরজাহান বেগম। তার পড়াশোনা শুরু হয় মানিকগঞ্জের দৌলতপুর পিএস স্কুলে। ১৯৭৩ সালে মানিকগঞ্জ মডেল হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পলিমার এবং তেজস্ক্রিয় রসায়নে পিএইচডি করেন। পরবর্তীতে জার্মানি, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. মোবারক আহমদ খান বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার ও মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর পাশাপাশি পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৯০ সালে, মোবারক আহমদ খান অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে IAEA ফেলো ছিলেন। ১৯৯৫ এবং ২০১৪ সালে, তিনি জার্মানিতে DAAD ফেলো ছিলেন। ১৯৯৭ সালে, তিনি জাপানের Matsumae International Foundation (MIF) এ কাজ করেন। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। তিনি ৬০০ এর অধিক পাবলিকেশনের লেখক বা সহ-লেখক। ৩০০ জন এমএসসি, ৮ জন এমফিল এবং ২২ জনেরও বেশি পিএইচডি শিক্ষার্থীর সুপারভাইজার ছিলেন তিনি। IUPAC ফেলো হিসেবেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ডাটাবেজ ‘Scopus’ এর তথ্যানুসারে, পাট বিষয়ক গবেষণায় বিশ্বের অন্যতম একজন গবেষক হলেন ড. মোবারক আহমদ খান। পাট বিষয়ক গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য পৃথিবীতে তিনি ‘জুটম্যান’ নামে পরিচিত। তার অন্যতম একটি আবিষ্কার হলো সোনালী ব্যাগ। প্রধানত পাটের সেলুলোজ ব্যবহার করে বানানো সোনালী ব্যাগ পরিবেশবান্ধব এবং বায়োডিগ্রেডেবল বা পচনশীল। সোনালী ব্যাগ পলিথিন ব্যাগের বিকল্পে ব্যবহৃত হলে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। পাটের সাথে পলিমারের মিশ্রণে তিনি উদ্ভাবন করেছেন এক বিশেষ ঢেউটিন ‘জুটিন’। করোনা মহামারীর সময় এমআইটি সলভের ‘Health Security and Pandemics’ চ্যালেঞ্জে তার পাট ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) তৈরির প্রস্তাবনা সমাদৃত হয়। পাটের তৈরি হেলমেট ও টাইলস ইত্যাদিও তিনি তৈরি করেছেন। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিনের বিকল্প প্রোটিনও তিনি আবিষ্কার করেছিলেন।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ এ ভূষিত হয়েছেন তিনি। তার অবদান এবং গবেষণার জন্য তিনি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক, ২০১৬ সালে জাতীয় পাট পুরস্কার এবং তার পরের বছর ফেডারেশন অব এশিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি পুরস্কার অর্জন করেন। আরো পেয়েছেন জাতীয় পরিবেশ স্বর্ণপদক।