ঢাকা ১১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

মাত্র বিশ হাজার টাকায় সাবান তৈরীর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
  • / 78
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাবান আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি দ্রব্য। প্রতিদিন নানান কাজে আমরা সাবান ব্যবহার করি। থালা-বাটি ধোয়ার জন্য বর্তমানে সাবানের পাশাপাশি তরল সাবান বা লিকুইড ডিশ ওয়াশও ব্যবহার করা হয়। থালা-বাসন ধোয়ার জন্য লিকুইড ডিশ ওয়াশ ঠিক গুঁড়া সাবানের মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। অল্প পরিমাণ তরল সাবানে অনেক ফেনা হয়। ব্যবহারে সুবিধার কারণে সাধারণত থালা-বাসন ধোয়ার জন্য তরল সাবান এখন অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে হোটেল রেষ্টুরেন্ট-এ প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি ধোয়ার জন্য তরল সাবান ব্যবহার করা হয়। যে কোন নারী বা পুরুষ তরল সাবান তৈরি করে সাবলম্বী হতে পারেন।

• বাজার সম্ভবনা

• মূলধন

• প্রশিক্ষণ

• প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান

• তরল সাবান তৈরির নিয়ম

• আয় ও লাভের হিসাব

• সচরাচর জিজ্ঞাসা

বাজার সম্ভাবনা

 

লিকুইড ডিস ওয়াশ বা তরল সাবান দিয়ে থালা বাসন ধোয়া খুব সহজ। অল্প পরিমাণ তরল সাবানে অনেক ফেনা হয় এবং সহজেই থালা বাসন পরিস্কার হয় বলে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। অনেক বাড়ীতেই এখন থালা বাসন ধোয়ার জন্য তরল সাবান ব্যবহৃত হয়। এছাড়া হোটেল বা রেস্টুরেন্টে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়া শেষে প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি ধোওয়ার জন্য তরল সাবান ব্যবহার করা হয়।

মূলধন

লিকুইড ডিশ ওয়াশ বা তরল সাবান তৈরি করার জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে প্রায় ৩০৬০ থেকে ৩৫৮০ টাকার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া কাঁচামাল কেনার জন্য প্রায় ৪০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়-স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ

অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তির সহকারী হিসেবে কিছু দিন কাজ করলে লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি করা শিখে নেয়া যাবে এবং ব্যবসার বিস্তারিত সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। এছাড়া স্থানীয় বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরণের প্রশিক্ষণ দেয় কিনা সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান

• স্থায়ী উপকরণ

উপকরণ পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা) প্রাপ্তিস্থান

চুলা ১ টা ১০০-১২০ হার্ডওয়ারের দোকানে

প্লাস্টিকের বালতি ১ টা ৬০-৭০ তৈজসপত্রের দোকান

মিকচার মেশিন ১ টা ১০০০-১২০০ তৈজসপত্রের দোকান

স্টিলের পাত্র ১ টা ৩০০-৩২০ তৈজসপত্রের দোকান

মাপার যন্ত্র ১ টা ৩০০-৩৫০ ইলেকট্রনিক্স দোকান

মাপার পাত্র ১ টা ৩০০-৩২০ তৈজসপত্রের দোকান

ইলেকট্রিক হিটিং পাঞ্চ ১ টা ১০০০-১২০০০ ইলেকট্রনিক্স দোকান

মোট=৩০৬০-৩৫৮০ টাকা

• কাঁচামাল (১০০ লিটার লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরির জন্য)

উপকরণ পরিমাণ মূল্য আনুমানিক (টাকা) প্রাপ্তিস্থান

জেনথাল গাম ২ কেজি ১২০০ কেমিক্যালসের দোকান

সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট ৪ কেজি ১২০০ কেমিক্যালসের দোকান

পানি ৯০ লিটার –

সোডিয়াম মেটাসিলিকেট ৪ কেজি ৪৪০ কেমিক্যালসের দোকান

ল্যাবসা ৪ কেজি ৮০০ কেমিক্যালসের দোকান

রঙ ৬ আউন্স ৫০ কেমিক্যালসের দোকান

পারফিউম/সুগন্ধী ১/২আউন্স ২০ পারফিউমের দোকান

মোট=৩৭১০ টাকা

তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চকবাজার, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরির নিয়ম

1. প্রথমে একটি পাত্রে ৯০ লিটার আয়রনমুক্ত পরিস্কার পানি নিতে হবে।

2. পানি গরম করতে হবে। পানি একটু গরম হলে তাতে ২ কেজি জেনথাল গাম ধীরে ধীরে ঢালতে হবে।

3. জেনথান গাম মিকচার মেশিন দিয়ে গোলাতে হবে। গোলানো হয়ে গেলে মিশ্রণটা ২৪ ঘন্টা বা একদিন রেখে দিতে হবে।

4. ২৪ ঘন্টা বা ১ দিন পর এই মিশ্রনের সাথে ৪ কেজি সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট আস্তে আস্তে ঢালতে হবে এবং মিক্সার মেশিন দিয়ে ভালভাবে মেশাতে হবে।

5. এর পর এই মিশ্রণের সাথে ৪ কেজি সোডিয়াম মেটাসিলিকেট ধীরে ধীরে ভালোভাবে মেশাতে হবে।

6. এই মিশ্রণের সাথে ৪ কেজি ল্যাবসা ধীরে ধীরে মিক্সার মেশিনের সাহায্যে মিশাতে হবে।

7. এর পর এতে ১ কেজি ফরমালিন ঢেলে তা মিক্সার মেশিনের সাহায্যে গুলিয়ে নিতে হবে।

8. সব উপকরণ ভালোভাবে মিশানো হয়ে গেলে তাতে ৩ থেকে ৬ আউন্স রঙ মেশাতে হবে।

9. সুন্দর গন্ধের জন্য এই মিশ্রণের সাথে ১/২ আউন্স পারফিউম বা সুগন্ধী মিশাতে হবে।

• সাবধানতা

1. সব উপকরণ সঠিক পরিমাণে মিশাতে হবে।

2. মিশ্রণের সাথে পারফিউম মেশানোর পর বেশিক্ষণ খোলা রাখা যাবে না। কারণ, বেশিক্ষণ খোলা রাখলে সুগন্ধী হালকা হয়ে যাবে।

আয় ও লাভের হিসাব

লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি হয়ে গেলে বোতল বা প্যাকেট ভরে বাজারজাত করতে হবে। প্রতি প্যাকেট বা বোতল ২৫০ মি.লি. ধরলে ১০০ লিটার দিয়ে ৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি হবে।

• মোট খরচ

খরচের ক্ষেত্র আনুমানিক মূল্য (টাকা)

৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি করতে কাঁচামাল বাবদ খরচ ৩৭১০ টাকা

স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ ১০-১৫ টাকা

যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ ৫০০-৫৫০ টাকা

মোট খরচ ৪২২০-৪২৭৫ টাকা

তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চকবাজার, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

• আয় ও লাভ

বর্তমান বাজারে ১ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশের দাম ২৫-৩০ টাকা

৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশের দাম ১০০০০-১২০০০ টাকা

৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরিতে খরচ ৪২২০-৪২৭৫ টাকা

মোট লাভ ৫৭৮০-৭৭২৫ টাকা

বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর ব্যবসার লাভ-ক্ষতি ও আয় নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠা-নামা করে। তাই এই ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।

প্রয়োজনীয় স্থায়ী ও অস্থায়ী উপকরণগুলো কিনে বাড়ির বাড়তি একটি ঘরে বাসন পত্র ধোয়ার তরল সাবান তৈরি শুরু করা যায়। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করা যায়। তাই সহজেই এই ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

 

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন :১ লিকুইড ডিশ ওয়াশ কি কাজে ব্যবহৃত হয় ?

উত্তর : থালা বাসন ধোয়ার জন্য লিকুইড ডিশ ওয়শ ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন : ২ ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে কি করতে হবে?

উত্তর : ঋণের প্রয়োজন হলে ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : ৩ তরল সাবান তৈরির পর কত দিন পর্যন্ত তা ব্যবহার করা যাবে ?

উত্তর : তরল সাবান সাবান তৈরির পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক লন্ড্রি সাবান তৈরির প্রক্রিয়া:
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সাবান তৈরি করতে আপনার কোনো ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা লাগবে না। আপনি যদি সাবান তৈরির প্রক্রিয়াটি ভালভাবে আয়ত্ত করতে পারেন তবে আপনি খুব সহজেই সাবান তৈরি করতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে বানাবেন।

 

1) প্রথমে, মিক্সার মেশিনটি চালু করুন। ডলোমাইট পাউডার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এই মেশিনে দিতে হবে।

আপনি কতটা কাঁচামাল রাখতে পারবেন তা মেশিনের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত আপনি এই মেশিনে 100 কেজি ডলোমাইট দিতে পারেন।

2) তারপর আপনাকে 3 কেজি সোডা পাউডার দিতে হবে, অর্থাৎ 100 কেজি ডলোমাইট পাউডারের সাথে 3 কেজি সোডা পাউডার দিতে হবে।

3) তারপর ডলোমাইট এবং সোডা পাউডারের মিশ্রণে 20 কেজি অ্যাসিড দ্রবণ যোগ করুন। AOS সাবানে ফেনা তৈরি করে এবং AOS ছাড়া সাবানের ফেনা তৈরি হবে না।

4) তারপর এই সব জিনিস একসাথে কিছুক্ষণ রেখে দিন। অন্তত আধা ঘণ্টা মেশাতে দিন।

5) তারপর এই মিশ্রণে সিলিকেট যোগ করুন। 10 কেজি সোডিয়াম সিলিকেট মেশাতে হবে।

6) আপনি যদি আপনার তৈরি এই সাবান কেকটিতে রঙ বা পারফিউম মেশাতে চান তবে আপনি এই সময় মেশাতে পারেন। কারণ এগুলো এই মিশ্রণের সাথে ভালোভাবে মিশে যাবে। আপনি যদি সাবান সাদা করতে চান তবে আপনার কোন রঙের প্রয়োজন নেই।

7) তারপরে সাবানটিকে একটি সুন্দর ঘ্রাণ দেওয়ার জন্য আপনাকে পারফিউম লাগাতে হবে। যেখানে কমপক্ষে 150 মিলি পারফিউম দিতে হবে।

8) একসাথে মেশালে ময়দার মত হয়ে যায়। এটি রঞ্জকের মাধ্যমে আকার দেওয়া হয় এবং তারপর প্যাক করা হয়।

 

লন্ড্রি সাবানের আকার এবং প্যাকেজিং:
যেকোনো সাবানের একটি নির্দিষ্ট মাপ থাকে। আর তাই এই সাবানের ক্ষেত্রে আপনি ভালো শেপ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সাইজের রং ব্যবহার করতে পারেন।

রঙ্গকটি একটি পাত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে যেখান থেকে মিশ্রণটি ঢেলে সাবানের আকারে বেরিয়ে আসে।

প্যাকেজিংয়ের আগে সাবান কেটে ফেলতে হবে। সাবান কাটার পর প্যাকিং আকারে আসে। আপনি আপনার ব্র্যান্ড এবং প্রয়োজনীয় প্যাকেজ অনুযায়ী প্যাকেটে বাজারে বিক্রি করতে পারেন, অথবা আপনি যে কোম্পানিতে কাজ করছেন তার প্যাকেটগুলিও ব্যবহার করতে পারেন।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাত্র বিশ হাজার টাকায় সাবান তৈরীর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন

আপডেট সময় : ০৭:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

সাবান আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি দ্রব্য। প্রতিদিন নানান কাজে আমরা সাবান ব্যবহার করি। থালা-বাটি ধোয়ার জন্য বর্তমানে সাবানের পাশাপাশি তরল সাবান বা লিকুইড ডিশ ওয়াশও ব্যবহার করা হয়। থালা-বাসন ধোয়ার জন্য লিকুইড ডিশ ওয়াশ ঠিক গুঁড়া সাবানের মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। অল্প পরিমাণ তরল সাবানে অনেক ফেনা হয়। ব্যবহারে সুবিধার কারণে সাধারণত থালা-বাসন ধোয়ার জন্য তরল সাবান এখন অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে হোটেল রেষ্টুরেন্ট-এ প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি ধোয়ার জন্য তরল সাবান ব্যবহার করা হয়। যে কোন নারী বা পুরুষ তরল সাবান তৈরি করে সাবলম্বী হতে পারেন।

• বাজার সম্ভবনা

• মূলধন

• প্রশিক্ষণ

• প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান

• তরল সাবান তৈরির নিয়ম

• আয় ও লাভের হিসাব

• সচরাচর জিজ্ঞাসা

বাজার সম্ভাবনা

 

লিকুইড ডিস ওয়াশ বা তরল সাবান দিয়ে থালা বাসন ধোয়া খুব সহজ। অল্প পরিমাণ তরল সাবানে অনেক ফেনা হয় এবং সহজেই থালা বাসন পরিস্কার হয় বলে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। অনেক বাড়ীতেই এখন থালা বাসন ধোয়ার জন্য তরল সাবান ব্যবহৃত হয়। এছাড়া হোটেল বা রেস্টুরেন্টে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়া শেষে প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি ধোওয়ার জন্য তরল সাবান ব্যবহার করা হয়।

মূলধন

লিকুইড ডিশ ওয়াশ বা তরল সাবান তৈরি করার জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে প্রায় ৩০৬০ থেকে ৩৫৮০ টাকার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া কাঁচামাল কেনার জন্য প্রায় ৪০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়-স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ

অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তির সহকারী হিসেবে কিছু দিন কাজ করলে লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি করা শিখে নেয়া যাবে এবং ব্যবসার বিস্তারিত সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। এছাড়া স্থানীয় বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরণের প্রশিক্ষণ দেয় কিনা সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান

• স্থায়ী উপকরণ

উপকরণ পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা) প্রাপ্তিস্থান

চুলা ১ টা ১০০-১২০ হার্ডওয়ারের দোকানে

প্লাস্টিকের বালতি ১ টা ৬০-৭০ তৈজসপত্রের দোকান

মিকচার মেশিন ১ টা ১০০০-১২০০ তৈজসপত্রের দোকান

স্টিলের পাত্র ১ টা ৩০০-৩২০ তৈজসপত্রের দোকান

মাপার যন্ত্র ১ টা ৩০০-৩৫০ ইলেকট্রনিক্স দোকান

মাপার পাত্র ১ টা ৩০০-৩২০ তৈজসপত্রের দোকান

ইলেকট্রিক হিটিং পাঞ্চ ১ টা ১০০০-১২০০০ ইলেকট্রনিক্স দোকান

মোট=৩০৬০-৩৫৮০ টাকা

• কাঁচামাল (১০০ লিটার লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরির জন্য)

উপকরণ পরিমাণ মূল্য আনুমানিক (টাকা) প্রাপ্তিস্থান

জেনথাল গাম ২ কেজি ১২০০ কেমিক্যালসের দোকান

সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট ৪ কেজি ১২০০ কেমিক্যালসের দোকান

পানি ৯০ লিটার –

সোডিয়াম মেটাসিলিকেট ৪ কেজি ৪৪০ কেমিক্যালসের দোকান

ল্যাবসা ৪ কেজি ৮০০ কেমিক্যালসের দোকান

রঙ ৬ আউন্স ৫০ কেমিক্যালসের দোকান

পারফিউম/সুগন্ধী ১/২আউন্স ২০ পারফিউমের দোকান

মোট=৩৭১০ টাকা

তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চকবাজার, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরির নিয়ম

1. প্রথমে একটি পাত্রে ৯০ লিটার আয়রনমুক্ত পরিস্কার পানি নিতে হবে।

2. পানি গরম করতে হবে। পানি একটু গরম হলে তাতে ২ কেজি জেনথাল গাম ধীরে ধীরে ঢালতে হবে।

3. জেনথান গাম মিকচার মেশিন দিয়ে গোলাতে হবে। গোলানো হয়ে গেলে মিশ্রণটা ২৪ ঘন্টা বা একদিন রেখে দিতে হবে।

4. ২৪ ঘন্টা বা ১ দিন পর এই মিশ্রনের সাথে ৪ কেজি সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট আস্তে আস্তে ঢালতে হবে এবং মিক্সার মেশিন দিয়ে ভালভাবে মেশাতে হবে।

5. এর পর এই মিশ্রণের সাথে ৪ কেজি সোডিয়াম মেটাসিলিকেট ধীরে ধীরে ভালোভাবে মেশাতে হবে।

6. এই মিশ্রণের সাথে ৪ কেজি ল্যাবসা ধীরে ধীরে মিক্সার মেশিনের সাহায্যে মিশাতে হবে।

7. এর পর এতে ১ কেজি ফরমালিন ঢেলে তা মিক্সার মেশিনের সাহায্যে গুলিয়ে নিতে হবে।

8. সব উপকরণ ভালোভাবে মিশানো হয়ে গেলে তাতে ৩ থেকে ৬ আউন্স রঙ মেশাতে হবে।

9. সুন্দর গন্ধের জন্য এই মিশ্রণের সাথে ১/২ আউন্স পারফিউম বা সুগন্ধী মিশাতে হবে।

• সাবধানতা

1. সব উপকরণ সঠিক পরিমাণে মিশাতে হবে।

2. মিশ্রণের সাথে পারফিউম মেশানোর পর বেশিক্ষণ খোলা রাখা যাবে না। কারণ, বেশিক্ষণ খোলা রাখলে সুগন্ধী হালকা হয়ে যাবে।

আয় ও লাভের হিসাব

লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি হয়ে গেলে বোতল বা প্যাকেট ভরে বাজারজাত করতে হবে। প্রতি প্যাকেট বা বোতল ২৫০ মি.লি. ধরলে ১০০ লিটার দিয়ে ৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি হবে।

• মোট খরচ

খরচের ক্ষেত্র আনুমানিক মূল্য (টাকা)

৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরি করতে কাঁচামাল বাবদ খরচ ৩৭১০ টাকা

স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ ১০-১৫ টাকা

যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ ৫০০-৫৫০ টাকা

মোট খরচ ৪২২০-৪২৭৫ টাকা

তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চকবাজার, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

• আয় ও লাভ

বর্তমান বাজারে ১ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশের দাম ২৫-৩০ টাকা

৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশের দাম ১০০০০-১২০০০ টাকা

৪০০ প্যাকেট লিকুইড ডিশ ওয়াশ তৈরিতে খরচ ৪২২০-৪২৭৫ টাকা

মোট লাভ ৫৭৮০-৭৭২৫ টাকা

বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর ব্যবসার লাভ-ক্ষতি ও আয় নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠা-নামা করে। তাই এই ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।

প্রয়োজনীয় স্থায়ী ও অস্থায়ী উপকরণগুলো কিনে বাড়ির বাড়তি একটি ঘরে বাসন পত্র ধোয়ার তরল সাবান তৈরি শুরু করা যায়। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করা যায়। তাই সহজেই এই ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

 

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন :১ লিকুইড ডিশ ওয়াশ কি কাজে ব্যবহৃত হয় ?

উত্তর : থালা বাসন ধোয়ার জন্য লিকুইড ডিশ ওয়শ ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন : ২ ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে কি করতে হবে?

উত্তর : ঋণের প্রয়োজন হলে ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : ৩ তরল সাবান তৈরির পর কত দিন পর্যন্ত তা ব্যবহার করা যাবে ?

উত্তর : তরল সাবান সাবান তৈরির পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক লন্ড্রি সাবান তৈরির প্রক্রিয়া:
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সাবান তৈরি করতে আপনার কোনো ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা লাগবে না। আপনি যদি সাবান তৈরির প্রক্রিয়াটি ভালভাবে আয়ত্ত করতে পারেন তবে আপনি খুব সহজেই সাবান তৈরি করতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে বানাবেন।

 

1) প্রথমে, মিক্সার মেশিনটি চালু করুন। ডলোমাইট পাউডার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এই মেশিনে দিতে হবে।

আপনি কতটা কাঁচামাল রাখতে পারবেন তা মেশিনের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত আপনি এই মেশিনে 100 কেজি ডলোমাইট দিতে পারেন।

2) তারপর আপনাকে 3 কেজি সোডা পাউডার দিতে হবে, অর্থাৎ 100 কেজি ডলোমাইট পাউডারের সাথে 3 কেজি সোডা পাউডার দিতে হবে।

3) তারপর ডলোমাইট এবং সোডা পাউডারের মিশ্রণে 20 কেজি অ্যাসিড দ্রবণ যোগ করুন। AOS সাবানে ফেনা তৈরি করে এবং AOS ছাড়া সাবানের ফেনা তৈরি হবে না।

4) তারপর এই সব জিনিস একসাথে কিছুক্ষণ রেখে দিন। অন্তত আধা ঘণ্টা মেশাতে দিন।

5) তারপর এই মিশ্রণে সিলিকেট যোগ করুন। 10 কেজি সোডিয়াম সিলিকেট মেশাতে হবে।

6) আপনি যদি আপনার তৈরি এই সাবান কেকটিতে রঙ বা পারফিউম মেশাতে চান তবে আপনি এই সময় মেশাতে পারেন। কারণ এগুলো এই মিশ্রণের সাথে ভালোভাবে মিশে যাবে। আপনি যদি সাবান সাদা করতে চান তবে আপনার কোন রঙের প্রয়োজন নেই।

7) তারপরে সাবানটিকে একটি সুন্দর ঘ্রাণ দেওয়ার জন্য আপনাকে পারফিউম লাগাতে হবে। যেখানে কমপক্ষে 150 মিলি পারফিউম দিতে হবে।

8) একসাথে মেশালে ময়দার মত হয়ে যায়। এটি রঞ্জকের মাধ্যমে আকার দেওয়া হয় এবং তারপর প্যাক করা হয়।

 

লন্ড্রি সাবানের আকার এবং প্যাকেজিং:
যেকোনো সাবানের একটি নির্দিষ্ট মাপ থাকে। আর তাই এই সাবানের ক্ষেত্রে আপনি ভালো শেপ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সাইজের রং ব্যবহার করতে পারেন।

রঙ্গকটি একটি পাত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে যেখান থেকে মিশ্রণটি ঢেলে সাবানের আকারে বেরিয়ে আসে।

প্যাকেজিংয়ের আগে সাবান কেটে ফেলতে হবে। সাবান কাটার পর প্যাকিং আকারে আসে। আপনি আপনার ব্র্যান্ড এবং প্রয়োজনীয় প্যাকেজ অনুযায়ী প্যাকেটে বাজারে বিক্রি করতে পারেন, অথবা আপনি যে কোম্পানিতে কাজ করছেন তার প্যাকেটগুলিও ব্যবহার করতে পারেন।