ঢাকা ০৮:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ত্রাণের টাকা কেন ব্যাংকে রেখেছেন সমন্বয়করা? পুলিশ ও বিশেষজ্ঞদের ঢাকার যানজট নিরসনের উপায় খুঁজতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা শাহরিয়ার কবির গ্রেফতার তিতাস গ্যাস পরিচালনা পর্ষদ থেকে মতিউর রহমান চৌধুরীর নাম প্রত্যাহার ভারতের কাছে প্রায় ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন: ১০০ কোটির স্থলে খরচ হবে ১ কোটিরও কম! ‘শেখ হাসিনা আরেকটি দেশের মুখ্যমন্ত্রীও হতে চেয়েছিলেন’ ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিল সরকার স্বার্থ হাসিলে ভোলায় গ্যাস পাওয়ার কথা চেপে যান বিপু অভিজ্ঞতা নেই তবু বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার তিতাস গ্যাসের পরিচালক হলেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী যেভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিলো ‘চৌধুরী পরিবার’ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়াদের তালিকা হচ্ছে: ফারুক-ই-আজম অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের ‘ট্রমা’ কাটবে কী করে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক কিছুরই অদৃশ্য নীতিনির্ধারক ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয় বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের ড. ইউনূসের কূটনীতিতে বিস্মিত ভারত কেমন ছিল বাফুফেতে কাজী সালাহউদ্দিনের ১৬ বছর? অর্থ লোপাটে বাপ-বেটার মহারেকর্ড

মানুষটা রাইফেল চালাতেন গীটারের মতো,স্বাধীন দেশে গীটার বাজাতেন রাইফেলের মতো!

আহসান কবির
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
  • / ৫০১৫ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বেদনার সব কথা মানুষ বলে না। আপনিও বলতে পছন্দ করতেন না। গানে গানে তার কিছু একটা প্রকাশ পেত। যদিও খুব একটা বাজাতেন না তবু মানুষ বলতো-মানুষটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাইফেল চালাতেন গীটারের মতো। আর স্বাধীন দেশে গীটার বাজাতেন রাইফেলের মতো! হয়তো গান গাইতে উঠেছেন স্টেজে। গানের শুরুতেই গীটারিস্ট রকেটকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। রকেট অবাক হলে বললেন-খুব খুব ভালো করে বাজা। আপনি হয়তো গান ধরতেন-‘পাপড়ি কেন বোঝে না,তাই ঘুম আসে না/সারারাত জেগে জেগে কত কথা আমি ভাবি..

রকেট পরে খেয়াল করে নিশ্চুপ হয়ে যেত। মঞ্চের সামনের সারিতেই বসে আছে পাপড়ি…
হয়তো শো শেষ করতেন এই গান দিয়ে-প্রেম চিরদিন দূরে দূরে এক হয়ে থাক না/মিললেই যে ফুরিয়ে যাবে!
চলে যাওয়ার এক যুগ পরেও কী আপনি দূরে আছেন? মিললে কী ফুরিয়ে যেত সব? নাকি প্রেম বিরহেই উজ্জ্বল সবসময়?
বিরহে উজ্জ্বল ছিলেন জানি। তবু গানের কথার মতো কোন অভিযোগ ছিল না আপনার। কোনদিন গীবৎ করতে শুনি নি আপনাকে। হারিয়ে যাওয়া বা ফেলার কান্নাটাই ছিল গানে। যেমন-হারিয়ে গেছে/ফিরে পাব না কিংবা অভিমানি তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ? তুমিতো হারাবে..অথবা হৃদয় সাগর মরুভূমি / মৌসুমী/ কোথায় হারিয়ে গেলে হায়…পাপড়ি বা মৌসুমীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের পর শুধু চলে যেতেই হয়তো আসে!
হারানোর বেদনা কাউকে না বললেই কী বিরহে উজ্জ্বল হওয়া যায়?
যদিও চাঁদের চেয়ে সুন্দর ছিল আপনার প্রিয়তম-ও চাঁদ সুন্দর রূপ তোমার/ তার চেয়ে রূপে রাঙা প্রিয়া আমার..এই প্রিয়ার উপস্থিতি বা স্বশরীর বাস্তবতা পাওয়া যায় নি আপনার কাছে! পাওয়া যেত এমন গান-আসি আসি বলে তুমি আর এলে না/সেইদিন থেকে জীবনের সাথে শুরু সাধনা!
হয়তো বিরহের সাধনাটাই করেছেন আজীবন।মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন সুবিধা নেন নি,জমি বা কারখানা দখল করেন নি। গানের আইকন হয়েও জড়ান নি কোন সঙ্গীতের বা স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতিতে! কষ্টের ফেরিওয়ালা হয়ে গেয়েছেন-আমি যারে চাইরে/সে থাকে মোরই অন্তরে/আমি তারে পেয়েও হারাইরে..অথবা হয়তো বা এইদিন/থাকবে না কোন দিন/তুমিও চলে যাবে/আমিও চলে যাব/ধর কোনদিন…
মুক্তিযুদ্ধের সাহস আর বিরহের উজ্জ্বলতা নিয়ে চলেই গেছেন শেষমেষ। মুক্তিযুদ্ধের পর কী যে এক দিন ছিল। আপনি পরতেন চওড়া কলারের টাইট ফিট শার্ট, বেলবটম ফুলপ্যান্ট, মোটা বেল্ট আর হাইহিলের জুতো। রাখতেন ঝাকড়া চুল। আপনার এই বেশও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে গেল, দাঁড়িয়ে গেল ফ্যাশানে। তুমুল অস্থিরতার সময়ে প্রচলিত গানের ফর্ম ভেঙ্গে যেন নতুন এক ফর্ম ও ফ্যাশান আনলেন আপনি। সেই গানের ফর্ম ও ফ্যাশানে ভেসে গেল তারুন্য। বাংলাদেশে যেন নতুন এক গানের প্রচলন হলো সবাই যাকে বলা শুরু করলো ‘পপ গান’। এই পপ গান কে তখনও কেউ কেউ অপসংস্কৃতি বলে ‘গালি’ দিয়েছেন,কেউ কেউ হয়তো এখনও দিয়ে থাকেন। আপনার তাতে কিছু যায় আসে নি। ৭৩ থেকে ২০১১। আপনি মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছেন পপ গুরু বা পপ সম্রাট হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাইফেল চালাতেন গীটারের মতো। আর স্বাধীন দেশে গীটার বাজাতেন রাইফেলের মতো! স্বাধীন দেশে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন যে তরুনদের তাদের রাখতে চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায়। আমাকেও শুনিয়েছিলেন সেই গল্প।
অনাবিল সাহসের এক গল্প। সেই যে অ্যামবুশ শেষ করে ফেরার আগেই পাকিস্তানি মিলিটারিরা ঘিরে ফেললো চারপাশ। নদী ছাড়া পালানোর কোন পথ নেই। হাতিয়ার আগলে রেখে নিঃশব্দে নামলেন নদীতে। কচুরিপানার আড়ালে নাকটা শুধু উঁচু করে রাখলেন। দশ মিনিট,বিশ মিনিট,ঘন্টা..কতক্ষণ এভাবে ভেসে ছিলেন আপনি সেই হিসেবও রাখেন নি। বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন, পেরেছিলেন স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে! তাই স্বাধীনতার পর পরই গাইতে পেরেছিলেন সেই গান-রেললাইনের ঐ বস্তিতে/জন্মেছিল একটি ছেলে/ মা তার কাঁদে/ছেলেটি মরে গেছে..

আপনি নেই আজম খান। সাহস মরে নি। জীবনযুদ্ধে যখনই পরাজয়ের হাতছানি আসে মনে পরে আপনার ভেসে থাকার দৃশ্য। মনে পড়ে আপনার ঠিক করে দেয়া টিউশানী করতে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে সিদ্ধেশ্বরী এসে টিউশানি শেষ করে আবার হেঁটে হেঁটে বাসায় ফেরার স্মৃতি! মনে পড়ে সারারাত গাড়ি চালানোর সেইসব কান্নাবৃষ্টির রাত। ব্যক্তিগত গল্পের কথা আজ থাক। আমি বা আমরা জানি আপনার জন্য বুকের ভেতর যে বিদ্রোহের ঘরটা ছিল, সহজিয়া সুরের আখড়া ছিল সেখানে আর নেই আপনি। আপনার গানগুলো হৃদয়ের সেই ঘরে ঘুরে বেড়াবে। যখন ১৯৭১ আসবে, যখন ১৯৯০ অথবা ২০০৭-২০০৮ সালের মত ক্রান্তির সময় আসবে তখন আমরা চেতনার জন্য, সাহসের আগুনের জন্য আপনার কাছেই যাব।

আজ আপনার চলে যাবার দিন। যদিও একযুগ আগে আপনাকে বিদায়ী স্যালুট দিতে গিয়েছিলাম শহীদ মিনারে। গান স্যালুট,বিদায়ী বিউগল কিংবা আমাদের কান্না না দেখেই চলে গিয়েছিলেন আপনি!
২০১১ সালের ৬ জুন স্বাভাবিক যে রোদ্দুরের সাথে যুদ্ধ করে আমরা আপনাকে কবরে শুইয়ে এসেছিলাম, বাংলাদেশ কে বদলে দেয়া সেই রোদ্দুর ফিরে আসবে আবারও। সেই চেতনা আর সাহসের আগুন ছুঁয়ে নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ নিশ্চয়ই গেয়ে উঠবে-
এই বিদায় বেলা কেউ কেঁদ না
এই বিদায় বেলা পিছু ডেক না
মোর গান, ভালোবাসা স্মৃতি করে, রেখনা!
আমি যে গেয়েছি কতো যে গান
চেয়েছি দিতে শুধু যে প্রান
দিতে পারিনি সুখ শুধু, তবুও গেয়ে গেলাম!

আপনি বেদনা লুকোতে শিখিয়েছিলেন,সাহস হারাতে বলেন নি। সাহস হারানো পাপ। আপনার রেখে যাওয়া সাহসী রোদ্দুর ছুঁয়ে মনে হয় আপনার মৃত্যু নেই। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আজও আপনার সাহস খুঁজে বেড়াই…

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মানুষটা রাইফেল চালাতেন গীটারের মতো,স্বাধীন দেশে গীটার বাজাতেন রাইফেলের মতো!

আপডেট সময় : ০৭:৫৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২

 

বেদনার সব কথা মানুষ বলে না। আপনিও বলতে পছন্দ করতেন না। গানে গানে তার কিছু একটা প্রকাশ পেত। যদিও খুব একটা বাজাতেন না তবু মানুষ বলতো-মানুষটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাইফেল চালাতেন গীটারের মতো। আর স্বাধীন দেশে গীটার বাজাতেন রাইফেলের মতো! হয়তো গান গাইতে উঠেছেন স্টেজে। গানের শুরুতেই গীটারিস্ট রকেটকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। রকেট অবাক হলে বললেন-খুব খুব ভালো করে বাজা। আপনি হয়তো গান ধরতেন-‘পাপড়ি কেন বোঝে না,তাই ঘুম আসে না/সারারাত জেগে জেগে কত কথা আমি ভাবি..

রকেট পরে খেয়াল করে নিশ্চুপ হয়ে যেত। মঞ্চের সামনের সারিতেই বসে আছে পাপড়ি…
হয়তো শো শেষ করতেন এই গান দিয়ে-প্রেম চিরদিন দূরে দূরে এক হয়ে থাক না/মিললেই যে ফুরিয়ে যাবে!
চলে যাওয়ার এক যুগ পরেও কী আপনি দূরে আছেন? মিললে কী ফুরিয়ে যেত সব? নাকি প্রেম বিরহেই উজ্জ্বল সবসময়?
বিরহে উজ্জ্বল ছিলেন জানি। তবু গানের কথার মতো কোন অভিযোগ ছিল না আপনার। কোনদিন গীবৎ করতে শুনি নি আপনাকে। হারিয়ে যাওয়া বা ফেলার কান্নাটাই ছিল গানে। যেমন-হারিয়ে গেছে/ফিরে পাব না কিংবা অভিমানি তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ? তুমিতো হারাবে..অথবা হৃদয় সাগর মরুভূমি / মৌসুমী/ কোথায় হারিয়ে গেলে হায়…পাপড়ি বা মৌসুমীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের পর শুধু চলে যেতেই হয়তো আসে!
হারানোর বেদনা কাউকে না বললেই কী বিরহে উজ্জ্বল হওয়া যায়?
যদিও চাঁদের চেয়ে সুন্দর ছিল আপনার প্রিয়তম-ও চাঁদ সুন্দর রূপ তোমার/ তার চেয়ে রূপে রাঙা প্রিয়া আমার..এই প্রিয়ার উপস্থিতি বা স্বশরীর বাস্তবতা পাওয়া যায় নি আপনার কাছে! পাওয়া যেত এমন গান-আসি আসি বলে তুমি আর এলে না/সেইদিন থেকে জীবনের সাথে শুরু সাধনা!
হয়তো বিরহের সাধনাটাই করেছেন আজীবন।মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন সুবিধা নেন নি,জমি বা কারখানা দখল করেন নি। গানের আইকন হয়েও জড়ান নি কোন সঙ্গীতের বা স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতিতে! কষ্টের ফেরিওয়ালা হয়ে গেয়েছেন-আমি যারে চাইরে/সে থাকে মোরই অন্তরে/আমি তারে পেয়েও হারাইরে..অথবা হয়তো বা এইদিন/থাকবে না কোন দিন/তুমিও চলে যাবে/আমিও চলে যাব/ধর কোনদিন…
মুক্তিযুদ্ধের সাহস আর বিরহের উজ্জ্বলতা নিয়ে চলেই গেছেন শেষমেষ। মুক্তিযুদ্ধের পর কী যে এক দিন ছিল। আপনি পরতেন চওড়া কলারের টাইট ফিট শার্ট, বেলবটম ফুলপ্যান্ট, মোটা বেল্ট আর হাইহিলের জুতো। রাখতেন ঝাকড়া চুল। আপনার এই বেশও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে গেল, দাঁড়িয়ে গেল ফ্যাশানে। তুমুল অস্থিরতার সময়ে প্রচলিত গানের ফর্ম ভেঙ্গে যেন নতুন এক ফর্ম ও ফ্যাশান আনলেন আপনি। সেই গানের ফর্ম ও ফ্যাশানে ভেসে গেল তারুন্য। বাংলাদেশে যেন নতুন এক গানের প্রচলন হলো সবাই যাকে বলা শুরু করলো ‘পপ গান’। এই পপ গান কে তখনও কেউ কেউ অপসংস্কৃতি বলে ‘গালি’ দিয়েছেন,কেউ কেউ হয়তো এখনও দিয়ে থাকেন। আপনার তাতে কিছু যায় আসে নি। ৭৩ থেকে ২০১১। আপনি মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছেন পপ গুরু বা পপ সম্রাট হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাইফেল চালাতেন গীটারের মতো। আর স্বাধীন দেশে গীটার বাজাতেন রাইফেলের মতো! স্বাধীন দেশে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন যে তরুনদের তাদের রাখতে চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায়। আমাকেও শুনিয়েছিলেন সেই গল্প।
অনাবিল সাহসের এক গল্প। সেই যে অ্যামবুশ শেষ করে ফেরার আগেই পাকিস্তানি মিলিটারিরা ঘিরে ফেললো চারপাশ। নদী ছাড়া পালানোর কোন পথ নেই। হাতিয়ার আগলে রেখে নিঃশব্দে নামলেন নদীতে। কচুরিপানার আড়ালে নাকটা শুধু উঁচু করে রাখলেন। দশ মিনিট,বিশ মিনিট,ঘন্টা..কতক্ষণ এভাবে ভেসে ছিলেন আপনি সেই হিসেবও রাখেন নি। বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন, পেরেছিলেন স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে! তাই স্বাধীনতার পর পরই গাইতে পেরেছিলেন সেই গান-রেললাইনের ঐ বস্তিতে/জন্মেছিল একটি ছেলে/ মা তার কাঁদে/ছেলেটি মরে গেছে..

আপনি নেই আজম খান। সাহস মরে নি। জীবনযুদ্ধে যখনই পরাজয়ের হাতছানি আসে মনে পরে আপনার ভেসে থাকার দৃশ্য। মনে পড়ে আপনার ঠিক করে দেয়া টিউশানী করতে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে সিদ্ধেশ্বরী এসে টিউশানি শেষ করে আবার হেঁটে হেঁটে বাসায় ফেরার স্মৃতি! মনে পড়ে সারারাত গাড়ি চালানোর সেইসব কান্নাবৃষ্টির রাত। ব্যক্তিগত গল্পের কথা আজ থাক। আমি বা আমরা জানি আপনার জন্য বুকের ভেতর যে বিদ্রোহের ঘরটা ছিল, সহজিয়া সুরের আখড়া ছিল সেখানে আর নেই আপনি। আপনার গানগুলো হৃদয়ের সেই ঘরে ঘুরে বেড়াবে। যখন ১৯৭১ আসবে, যখন ১৯৯০ অথবা ২০০৭-২০০৮ সালের মত ক্রান্তির সময় আসবে তখন আমরা চেতনার জন্য, সাহসের আগুনের জন্য আপনার কাছেই যাব।

আজ আপনার চলে যাবার দিন। যদিও একযুগ আগে আপনাকে বিদায়ী স্যালুট দিতে গিয়েছিলাম শহীদ মিনারে। গান স্যালুট,বিদায়ী বিউগল কিংবা আমাদের কান্না না দেখেই চলে গিয়েছিলেন আপনি!
২০১১ সালের ৬ জুন স্বাভাবিক যে রোদ্দুরের সাথে যুদ্ধ করে আমরা আপনাকে কবরে শুইয়ে এসেছিলাম, বাংলাদেশ কে বদলে দেয়া সেই রোদ্দুর ফিরে আসবে আবারও। সেই চেতনা আর সাহসের আগুন ছুঁয়ে নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ নিশ্চয়ই গেয়ে উঠবে-
এই বিদায় বেলা কেউ কেঁদ না
এই বিদায় বেলা পিছু ডেক না
মোর গান, ভালোবাসা স্মৃতি করে, রেখনা!
আমি যে গেয়েছি কতো যে গান
চেয়েছি দিতে শুধু যে প্রান
দিতে পারিনি সুখ শুধু, তবুও গেয়ে গেলাম!

আপনি বেদনা লুকোতে শিখিয়েছিলেন,সাহস হারাতে বলেন নি। সাহস হারানো পাপ। আপনার রেখে যাওয়া সাহসী রোদ্দুর ছুঁয়ে মনে হয় আপনার মৃত্যু নেই। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আজও আপনার সাহস খুঁজে বেড়াই…