ঢাকা ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে ভারতে! এটুআই ছিল মিলেমিশে লুটপাটের প্রকল্প আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল বিদেশেও বিচার সম্ভব শেখ হাসিনার ‘দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!’ : হাসিনার উদ্দেশ্য প্রেস সচিব জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন প্রফেসর ইউনূস ও তার দাবার চাল। পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টা নাহিদ, আসছে নতুন দল ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতাবান ইলন মাস্কের সঙ্গে যে আলোচনা হলো ড. ইউনূসের শ্যামল দত্তের অ্যাকাউন্টে ১০৪২ কোটি টাকার লেনদেন কিভাবে পারে এত পাষণ্ড হতে, হাসিনাকে বললেন আসিফ নজরুল জাতিসংঘের রিপোর্ট ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুলি’! তসলিমার ‘চুম্বন’ প্রকাশকের জয় বাংলা স্লোগান, মব জাস্টিস উস্কে দেয়ার ভারতীয় প্ল্যান? জরুরি ওষুধেও ব্যবসার ফাঁদ:ওষুধের বাজারে অরাজকতা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ড. ইউনূস-মোদি বৈঠকের সম্ভাবনা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ৩২: প্রতিশোধের ক্রোধে উন্মাদ প্রায় শেখ হাসিনা বেনজীরকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারিতে নির্দেশনা শেখ হাসিনার সরকার হটাতে মার্কিন নীলনকশার গোপন নথি ফাঁস

মাহমুদার দেশি খাবারের সুনাম বিদেশেও

আনোয়ার পারভেজ
  • আপডেট সময় : ০৯:২৪:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • / 142
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হতাশা থেকে উদ্যোক্তা

বিয়ের পর কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েও চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মাহমুদা। এর মধ্যে ২০১৯ সালে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। মাহমুদা বলেন, গর্ভধারণের সময়ে ঘরবন্দী জীবনে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে মনস্থির করেন কিছু একটা করবেন। ফেসবুকে নানা পণ্যের ছবি দেখে অনলাইনে ব্যবসার কথা মাথায় আসে। স্বামীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে যমুনার চর থেকে কিনে আনেন ১০ কেজি মাষকলাই ডাল। সেই ডাল গুঁড়া করে অনলাইনে ছবি দেন। অল্প দিনেই সাড়া মেলে। মাসখানেকের মধ্যে পুঁজি দাঁড়ায় ১০ হাজারে।

আগ্রহ বাড়ে মাহমুদার। এরই মধ্যে রংপুর থেকে এক আত্মীয় খাওয়ার জন্য কিছু সিদল পাঠান তাঁকে। কৌতূহলবশত অনলাইনে সেগুলোর ছবি দেন। মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত নেন নিজে সিদল তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করবেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন রংপুরের ওই আত্মীয়।

মাহমুদা প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালে যখন করোনায় সবকিছু বন্ধ, তখন বিভিন্ন পণ্যের ছবি দিয়ে অনলাইনে পোস্ট করেন তিনি। ঘরবন্দী মানুষ ছবি দেখে পণ্যের ফরমাশ দেন। ঘরে বসেই জমে ওঠে ব্যবসা। আনন্দ নিয়ে কুমড়াবড়ি, সিদল ছাড়াও হরেক রকমের আচার তৈরি করেন। সঙ্গে অর্গানিক চাল, কাউনের চাল, মরিচের গুঁড়া। কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন গন্তব্যে। এভাবেই পুরোদস্তুর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন তিনি।

অনলাইন নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই)’ তাঁর অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণা থেকে ‘মনিকা হাউস’ নামে ফেসবুক ও ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তিনি। পরে ‘মনিকা হাউস’ নামে একটি ওয়েবসাইটও বানিয়েছেন।

নারীদের কর্মসংস্থান

যমুনাপার ও চরের নারীদের জীবন বদলে দিয়েছেন মাহমুদা। অনেক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে তাঁর কারখানায়। আগে যেসব নারী ঘরে বসে থাকতেন, তাঁরা এখন বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

মাহমুদা বলেন, তিনি অনলাইনে ফরমাশ নেন। প্যাকেট করা, গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়াসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করেন স্বামী। চরের নারীদের নিয়ে মাষকলাইয়ের ডালের গুঁড়া, কুমড়াবড়ি বানান তিনি। আর কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন গাইঞ্জা ধান, মাষকলাই, লাল মরিচ ও কাউন। ভবিষ্যতে মেয়েদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই ‘মনিকা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’ নামে সংগঠনও করেছেন তিনি।

চরের নারীদের ‘লক্ষ্মী’ মাহমুদা

মরিয়মের বাড়ি যমুনার চরে। আগে ঘরে বসেই দিন কাটত। বছর তিনেক আগে গাইঞ্জা ধানের ঢেঁকিছাঁটা চাল বিক্রি করতে এসে মাহমুদার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। মাহমুদার সঙ্গে কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে তাঁর। হিন্দুকান্দি এলাকার ছালো বেগম বলেন, যমুনায় বসতঘর বিলীন হওয়ার পর সারিয়াকান্দি বাঁধে তাঁর ঠিকানা। মাহমুদার ছোট কারখানায় কাজ করে তাঁর সংসার চলে। সীমা বেগম বলেন, সংসারে খুব অভাব ছিল। অর্ধাহারে দিন কাটত। এখানে কাজ করে তাঁর সংসার চলে যায়।

পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়

স্বামীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে শুরু করা মাহমুদার পুঁজি এখন ৩ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন তিনি। তাঁর তৈরি সিদল, কুমড়াবড়ি, মাষকলাইয়ের গুঁড়া, কাউনের চাল রপ্তানি হয়েছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে।

বেলি বেগম নামের কর্মী বলেন, ‘হামাকেরে হাতে বানানো খাবার বিদেশ যাচ্চে। বিদেশিরা সুনাম করিচ্চে।’ রানী বেগম বলেন, ‘মাহমুদা হামাকেরে এলাকার গর্ব। তাঁর কারণে হামাকেরে তৈরি নানা পদের খাবার বিদেশ যাচ্চে।’

পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি

গত বছর বেগম রোকেয়া দিবসে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন মাহমুদা। পাশাপাশি ‘উই’ থেকে পেয়েছেন ‘লাখোপতি স্মারক’। ২০২০ সালে ‘আইডিয়া বাংলাদেশ’ থেকে সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, মাহমুদা ই-কমার্স ও এফ-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি যমুনার চরের কৃষক-কিষানির কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী ও বিলুপ্তপ্রায় খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে সারা দেশে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভাঙনকবলিত দুর্গম চরাঞ্চলের নারীদের কর্মসংস্থানও তৈরি করেছেন তিনি। তাঁর সিদল, মাষকলাই, ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল স্বাদে ও মানে অতুলনীয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাহমুদার দেশি খাবারের সুনাম বিদেশেও

আপডেট সময় : ০৯:২৪:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩

হতাশা থেকে উদ্যোক্তা

বিয়ের পর কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েও চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মাহমুদা। এর মধ্যে ২০১৯ সালে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। মাহমুদা বলেন, গর্ভধারণের সময়ে ঘরবন্দী জীবনে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে মনস্থির করেন কিছু একটা করবেন। ফেসবুকে নানা পণ্যের ছবি দেখে অনলাইনে ব্যবসার কথা মাথায় আসে। স্বামীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে যমুনার চর থেকে কিনে আনেন ১০ কেজি মাষকলাই ডাল। সেই ডাল গুঁড়া করে অনলাইনে ছবি দেন। অল্প দিনেই সাড়া মেলে। মাসখানেকের মধ্যে পুঁজি দাঁড়ায় ১০ হাজারে।

আগ্রহ বাড়ে মাহমুদার। এরই মধ্যে রংপুর থেকে এক আত্মীয় খাওয়ার জন্য কিছু সিদল পাঠান তাঁকে। কৌতূহলবশত অনলাইনে সেগুলোর ছবি দেন। মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত নেন নিজে সিদল তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করবেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন রংপুরের ওই আত্মীয়।

মাহমুদা প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালে যখন করোনায় সবকিছু বন্ধ, তখন বিভিন্ন পণ্যের ছবি দিয়ে অনলাইনে পোস্ট করেন তিনি। ঘরবন্দী মানুষ ছবি দেখে পণ্যের ফরমাশ দেন। ঘরে বসেই জমে ওঠে ব্যবসা। আনন্দ নিয়ে কুমড়াবড়ি, সিদল ছাড়াও হরেক রকমের আচার তৈরি করেন। সঙ্গে অর্গানিক চাল, কাউনের চাল, মরিচের গুঁড়া। কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন গন্তব্যে। এভাবেই পুরোদস্তুর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন তিনি।

অনলাইন নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই)’ তাঁর অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণা থেকে ‘মনিকা হাউস’ নামে ফেসবুক ও ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তিনি। পরে ‘মনিকা হাউস’ নামে একটি ওয়েবসাইটও বানিয়েছেন।

নারীদের কর্মসংস্থান

যমুনাপার ও চরের নারীদের জীবন বদলে দিয়েছেন মাহমুদা। অনেক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে তাঁর কারখানায়। আগে যেসব নারী ঘরে বসে থাকতেন, তাঁরা এখন বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

মাহমুদা বলেন, তিনি অনলাইনে ফরমাশ নেন। প্যাকেট করা, গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়াসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করেন স্বামী। চরের নারীদের নিয়ে মাষকলাইয়ের ডালের গুঁড়া, কুমড়াবড়ি বানান তিনি। আর কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন গাইঞ্জা ধান, মাষকলাই, লাল মরিচ ও কাউন। ভবিষ্যতে মেয়েদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই ‘মনিকা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’ নামে সংগঠনও করেছেন তিনি।

চরের নারীদের ‘লক্ষ্মী’ মাহমুদা

মরিয়মের বাড়ি যমুনার চরে। আগে ঘরে বসেই দিন কাটত। বছর তিনেক আগে গাইঞ্জা ধানের ঢেঁকিছাঁটা চাল বিক্রি করতে এসে মাহমুদার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। মাহমুদার সঙ্গে কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে তাঁর। হিন্দুকান্দি এলাকার ছালো বেগম বলেন, যমুনায় বসতঘর বিলীন হওয়ার পর সারিয়াকান্দি বাঁধে তাঁর ঠিকানা। মাহমুদার ছোট কারখানায় কাজ করে তাঁর সংসার চলে। সীমা বেগম বলেন, সংসারে খুব অভাব ছিল। অর্ধাহারে দিন কাটত। এখানে কাজ করে তাঁর সংসার চলে যায়।

পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়

স্বামীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে শুরু করা মাহমুদার পুঁজি এখন ৩ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন তিনি। তাঁর তৈরি সিদল, কুমড়াবড়ি, মাষকলাইয়ের গুঁড়া, কাউনের চাল রপ্তানি হয়েছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে।

বেলি বেগম নামের কর্মী বলেন, ‘হামাকেরে হাতে বানানো খাবার বিদেশ যাচ্চে। বিদেশিরা সুনাম করিচ্চে।’ রানী বেগম বলেন, ‘মাহমুদা হামাকেরে এলাকার গর্ব। তাঁর কারণে হামাকেরে তৈরি নানা পদের খাবার বিদেশ যাচ্চে।’

পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি

গত বছর বেগম রোকেয়া দিবসে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন মাহমুদা। পাশাপাশি ‘উই’ থেকে পেয়েছেন ‘লাখোপতি স্মারক’। ২০২০ সালে ‘আইডিয়া বাংলাদেশ’ থেকে সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, মাহমুদা ই-কমার্স ও এফ-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি যমুনার চরের কৃষক-কিষানির কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী ও বিলুপ্তপ্রায় খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে সারা দেশে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভাঙনকবলিত দুর্গম চরাঞ্চলের নারীদের কর্মসংস্থানও তৈরি করেছেন তিনি। তাঁর সিদল, মাষকলাই, ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল স্বাদে ও মানে অতুলনীয়।