সিনেমার প্রচারে সিনেমা চেয়ে ব্যক্তিগত রেষারেষি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঈদুল আজহায়। ‘১০০ কোটি টাকা’ বাজেটের সিনেমা নিয়ে কথায় অনন্ত জলিলকে কান ধরে উঠ-বস করাতে চাইলেন অনন্ত জলিল। অন্যদিকে একই টিভি অনুষ্ঠান রায়হান রাফীকে চেনেন না বলে তাচ্ছিল্য করলেন বর্ষা।
অনন্ত জলিলের ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে নাম লেখান মামুন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মামুনকে নিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তোলেন অনন্ত। সে বিষয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ স্টাটাস দিয়ে জবাব দিলেন ‘সাইকো’ পরিচালক।
ওই টিভি সাক্ষাৎকারে অনন্ত জলিল বলেন, ‘অনন্য মামুনকে আমি পরিচালক বানিয়েছি। তার পরিচালক সমিতির সদস্য হওয়ার ফি এক লাখ ৬০ হাজার টাকা আমি দিয়েছি। সমালোচনা যদি আমার সামনে কোনোদিন করে, আর আমার চোখে পড়ে তাকে তো আমি কান ধরে উঠাবো বসাবো। তার এত বড় সাহস কোথা থেকে হলো। তার কী যোগ্যতা আছে, অনন্ত জলিলের সমালোচনা করার মতো।’
অনন্য মামুন লিখেছেন, ‘অনেক চুপ ছিলাম দেখলাম চুপ থাকা মানে মিথ্যাটাকে অন্যায় হিসেবে মেনে নেওয়া। সত্যটা বলা দরকার অনন্ত সাহেবের সাথে আমার পরিচয় ২০১০ সালের দিকে। আমি তখন কলকাতায় রেগুলার গল্প লেখক হিসাবে এসকে মুভিজের সাথে কাজ করি। স্প্যালাশ ম্যাগাজিনের বাবুর সাথে আমার আগে থেকেই চেনাজানা ছিলো। বাবু আমাকে হোটেলে ডাকলো, অনন্ত ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। বাংলাদেশের ছেলে কলকাতাকে কাজ করে শুনে উনি অনেক খুশি। আমি ল্যাপটপে গল্প লিখি ব্যাপারটা উনার মনে ধরে। বললো দেশে এসে আমার সাথে মিট করবেন।’
সোহানুর রহমান সোহানের সিনেমার কাজ করতে গিয়ে আবারো অনন্ত জলিলের সঙ্গে অনন্য মামুনের দেখা হয়। এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক মধুর হতে থাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘পরিচালক সোহান ভাইয়ের সাথে আমার জুটি হিট। আমার দেয়া সব গুলো গল্প হিট। কথা দাও সাথী হবে, আমার জান আমার গান, পরাণ যায় জ্বলিয়ারে, কোটি টাকার প্রেম, সে আমার মন কেড়েছে, এক মন এক প্রাণ। সোহান ভাই অনন্ত ভাইয়ের সিনেমা দ্য স্পিড লেখার জন্য অনন্ত ভাইয়ের অফিসে নিয়ে গেলেন। তার সাথে আমার দ্বিতীয় দেখা। এরপর তার সাথে আমার কাজ শুরু হলো। আমার কাজের দক্ষতা দেখে অনন্ত ভাই বললেন, আমাকে শুটিং এ থাকতে হবে। আমি এত কিছু ম্যানেজ করতে পারবো না। শুটিংয়ের প্যান অনন্ত ভাইয়ের সাথে থেকে আমি শুরু করলাম। ক্যামেরা লোকেশন শিল্পী সব কিছু। তখন থেকেই আমি সোহান ভাইয়ের চোখে ভিলেন হয়ে গেলাম। সবাই শুটিং শেষ করে দেখে ফেরে। আমি আর অনন্ত ভাইয়ের অফিসের লোক ব্রুসলী ১ সপ্তাহ পরে ফিরে আসি। কারণ তখন নেগেটিভে শুটিং হতো। টেলিসিনিং করে ফাইট এডিট করে আমি দেশে ব্যাক করি। মজার ব্যাপার হলো অনন্ত ভাইয়ের সিনেমার খরচ তার অফিসের লোক দেখাশোনা করে। পরিচালক বা অন্য কারও হাতে টাকা দেয়া হয় না। মালয়েশিয়া হিসাবে তার লোক ২৩ লাখ টাকা বেশি দিয়ে আসে, আমি পরে হিসাব বের করে তাকে টাকাটা ব্যাক করে দেই। সেদিন উনি বলেছিলেন আপনি আমার ছোট ভাই। দ্য স্পিড সিনেমার সব পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ আমি চেন্নাই থেকে করে নিয়ে আসি। অবশ্যই তার জন্য অনন্ত ভাই আমাকে সম্মানী দিয়েছেন।’
পরিচালক সমিতির ফি দেওয়া নিয়ে অনন্তের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনন্য মামুন লিখেছেন, ‘দ্য স্পিড সিনেমার পরে অনন্ত ভাই বললেন, মামুন আপনি এত কিছু পারেন এবারের সিনেমাটা আপনি বানান। সিনেমার মানুষ হিসাবে এটা আমার স্বপ্ন ছিলো, সেটা পূরণ হলো। আমাকে ১ লাখ টাকা সাইনিং মানি দিলেন। সম্পূর্ণ সিনেমার জন্য ৫ লাখ টাকা সত্যি একজন নতুন পরিচালক হিসাবে এটা অনেক টাকা। আমি পরিচালক সমিতিতে সেখান থেকে ৫৬ হাজার ফি জমা দিয়ে সদস্য পদ নিলাম। এখন আপনারা বলেন তো টাকাটা কার আমার নাকি অনন্ত ভাইয়ের? আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞতা জানাই অনন্ত ভাইকে আমাকে তার সিনেমায় প্রথম পরিচালক হিসাবে সুযোগ দেওয়ার জন্য।’
অনন্ত জলিলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার সাথে প্রথম ঝামেলা শুরু হয় মুম্বাইয়ের হিরোইন স্নেহা উলালকে নেওয়ার পর থেকে। অনন্ত ভাইয়ের সাথে বর্ষা ম্যাডামের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। অনন্ত ভাই বাইরের হিরোইনকে নিয়ে কাজ করবে বর্ষা করতে দিবে না। ফাইনালি তাদের সম্পর্ক ঠিক হলো, আমি ভিলেন হয়ে গেলাম। শেষ হলো মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমা। এবং এখন অবধি মুনসুন ফিল্মসের সব চাইতে বড় হিট সিনেমা।’
তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে অনন্য মামুন লিখেছেন, ‘আমি নাকি মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমার টাকা মেরে উত্তরাতে ৬ তলা বাড়ি বানিয়েছি। এক দিন সরাসরি অনন্ত ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই উত্তরাতে ৬ তলা বাড়ি বানাতে কত টাকা লাগে আপনি ভালো করেই জানেন মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমার বাজেট ৩ কোটি ২ লাখ টাকা। আমি সব টাকা মেরে দিলেও কি জায়গা কিনে উত্তরাতে বাড়ি বানানো সম্ভব। উনি তিনি জবাব দিতে পারেন নাই। কারণ উনি জানতেন উনার অফিসে কাউকে সরাসরি টাকা দেয়া হয় না, সব খরচ তার অ্যাকাউন্ট দেখে। এবার আসি মোস্ট ওয়েলকাম -২ সিনেমার দেশের বাইরের সব শুটিং আমি পরিচালনা করেছি, নাজিম শাহরিয়ার জয়, মিশা ভাই, ডন ভাই উনারা ব্যাপারটা ভালো করেই জানেন।’
অনন্ত জলিল তার বাবা মাকে জড়িয়ে গালি দেয় বলে অভিযোগ করেন মামুন। এরপর তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মামুনের ভাষায়, ‘ঐ দিন থেকে চলে এসেছি। আপনার পাশের লোকজন টাকার জন্য আপনাকে হুজুর হুজুর করতে পারে আমি না। আপনার ব্যক্তিগত জীবনের গল্প গুলো না বলি, কারণ আমি আপনাকে সম্মান করি। মানুষকে সম্মান করা পারিবারিক শিক্ষা।’
এবার ঈদে তিনটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। দর্শকদের সবগুলো সিনেমা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন মামুন। পরিশেষে তিনি লেখেন, ‘এবার ঈদে তিনটা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সবগুলোই সিনেমা। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ এটা বলার জন্য পাবলিক আছে। আপনি দেশের সিআইপি আপনার ব্যবহার দেখে আমরা শিখবো, ভবিষ্যতে সিআইপি হবার স্বপ্ন দেখবো… দয়া করে সেই জায়গাটা নষ্ট করবেন না।’