ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বেগম জিয়াকে হিংসা করতেন হাসিনা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে বারণের কারণ জানালেন ড. ইউনূস  ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে জুলাই ঘোষণাপত্রের দরকারই নাই রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও মোবাইল রিচার্জে বাড়ছে না ভ্যাট ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদ পদত্যাগপত্রে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক আমার মেয়ের খুনি কে, আমি কি বিচার পাব না: প্রশ্ন তিন্নির বাবার জয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ৩ বছর আগে, জানালেন নিজেই গণহত্যায় জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন ৫ আগস্ট: বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাপ্রধানের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল ক্রসফায়ারে নিহতদের ৪ জন ছিলেন ডিবি হেফাজতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন শেখ রেহানা শনিবার স্কুল খোলা নাকি বন্ধ? ‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি, আয় ৩০ কোটি টাকা! শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ঘোষণা আসছে? টিউলিপকে দেশে ফেরত চান ড. ইউনূস? যুক্তরাজ্যে টিউলিপের পর আলোচনায় সালমানপুত্র হাসিনা যেভাবে সৌদিকে দমিয়ে রাখতো

যশোরের কৃতি সন্তান বিজ্ঞানী নীলরতন ধর

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৯:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
  • / 80
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যশোর শহরের ছেলে হয়ে ৩ বার নোবেল পুরস্কার কমিটির একজন বিচারক মনোনীত হয়েছিলেন । ভাবা যায়! যশোর শহরের ভেতর তার নামে একটি সড়ক আছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা কেউ তাকে চিনি না ।

যশোরের কৃতি সন্তান গুণীজন বিজ্ঞানী নীলরতন ধর । নীলরতন ধর নামে একটা রাস্তা আছে । এখনো অথচ এই মানুষটা কে আমরা চিনিও না জানিও না । এমন একজন গুণীকে আমরা চেনানোর চেষ্টা করিনা বরং ভুলে যাচ্ছি একটু একটু করে । তাকে জানলে বা জানালে যশোরবাসীই গৌরাবান্বিত হতে পারতো । অহংকারের পাঁচ পাঁচটি পালক তাকে ঘিরেই যুক্ত হতে পারতো যশোরের গৌরাবাঙ্গে । যশোরের ছেলে হয়ে তিন বার নোবেল পুরস্কার কমিটির একজন বিচারক মনোনীত হয়েছিলেন । ভাবা যায়!

ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রের পথিকৃৎ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী নীলরতন ধর, ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ২রা জানুয়ারি যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা ছিলেন অ্যাডভোকেট প্রসন্ন কুমার ধর । ড. নীলরতন ধর পরিবারের ভ্রাতাগণ উকিল অমূল্য রতন ধর, রাজনীতিবিদ ডা: জীবন রতন ধর, ডা: দুর্গারতন ধর এম.আর.সি.পি সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ।

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক নীলরতন লেখাপড়া শুরু করেছিলেন যশোর জেলা স্কুলে । শিক্ষাজীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বস্তরেই প্রথম । এম.এস.সি-তে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড নম্বর পেয়ে কুড়িটি স্বর্ণপদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত পুরস্কার লাভ করেন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এস.সি পড়ার সময়ে বিজ্ঞান জগতের দুইজন দিকপাল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র ও আচার্য জগদীশচন্দ্রের অধীনে গবেষণায় রত হন ।

১৯১৫ সালে স্টেট স্কলারশিপ পেয়ে বিলেত যান । ১৯১৭ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯১৯ সালে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি.এস.সি’ উপাধি লাভ করেন । ১৯১৯ সালে লণ্ডনে ফিরে আই.ই.এস নির্বাচিত হয়ে এলাহাবাদ ম্যুর সেন্ট্রাল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন । তাঁর গবেষণা জীবনের প্রথম কাজ ‘ইনডিউসড অ্যাণ্ড ফটো-কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন’ ।

শেষ জীবনেও তিনি নাইট্রোজেন ফিকশন নিয়ে গবেষণায় রত ছিলেন । তাঁর মৌলিক গবেষণাপত্রের সংখ্যা ছয়শতাধিক । ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত । তিনি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডক্টরেট এবং এস এ হিল ও জি হিল স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন । ১৯৩৮, ১৯৪৭ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার কমিটিতে তিনি বিচারক ছিলেন । তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তাঁর নির্মিত ‘ইণ্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব স্পেশাল সায়েন্স’ এর বাড়িটি তাঁর প্রথম স্ত্রী বিজ্ঞানী সেইলা ধরের মৃত্যুর পর (১৯৪৯) এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর নামাঙ্কিত করে ।

তিনি অত্যন্ত মিতব্যয় জীবনযাপন করতেন । গবেষণার জন্য তিনি বহু লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন । তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪ লক্ষ টাকা আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে অধ্যাপক পদ ও ১ লক্ষ টাকা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে লেকচারার পদ সৃষ্টির জন্য দিয়েছেন । চিত্তরঞ্জন সেবাসদনকে ১ লক্ষ টাকা এবং ৭ বছরের সম্পূর্ণ বেতন তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন । ভারত সরকার তাঁকে “পদ্মশ্রী” খেতাব দিতে চাইলে তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন ।

তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো:
(১) আমাদের খাদ্য
(২) জমির উর্বরতা বৃদ্ধির উপায়
(৩) নিট কনসেপশন ইন বায়ো কেমিস্ট
(৪) ইনফ্লুয়েন্স অব লাইট ইন সাম বায়ো-কেমিক্যাল প্রসেস ইত্যাদি।

বিজ্ঞান জগতের এই দিকপাল মনীষী ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটান । (ঐতিহাসিক তথ্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে সংগৃহীত)

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যশোরের কৃতি সন্তান বিজ্ঞানী নীলরতন ধর

আপডেট সময় : ০৯:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

যশোর শহরের ছেলে হয়ে ৩ বার নোবেল পুরস্কার কমিটির একজন বিচারক মনোনীত হয়েছিলেন । ভাবা যায়! যশোর শহরের ভেতর তার নামে একটি সড়ক আছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা কেউ তাকে চিনি না ।

যশোরের কৃতি সন্তান গুণীজন বিজ্ঞানী নীলরতন ধর । নীলরতন ধর নামে একটা রাস্তা আছে । এখনো অথচ এই মানুষটা কে আমরা চিনিও না জানিও না । এমন একজন গুণীকে আমরা চেনানোর চেষ্টা করিনা বরং ভুলে যাচ্ছি একটু একটু করে । তাকে জানলে বা জানালে যশোরবাসীই গৌরাবান্বিত হতে পারতো । অহংকারের পাঁচ পাঁচটি পালক তাকে ঘিরেই যুক্ত হতে পারতো যশোরের গৌরাবাঙ্গে । যশোরের ছেলে হয়ে তিন বার নোবেল পুরস্কার কমিটির একজন বিচারক মনোনীত হয়েছিলেন । ভাবা যায়!

ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রের পথিকৃৎ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী নীলরতন ধর, ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ২রা জানুয়ারি যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা ছিলেন অ্যাডভোকেট প্রসন্ন কুমার ধর । ড. নীলরতন ধর পরিবারের ভ্রাতাগণ উকিল অমূল্য রতন ধর, রাজনীতিবিদ ডা: জীবন রতন ধর, ডা: দুর্গারতন ধর এম.আর.সি.পি সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ।

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক নীলরতন লেখাপড়া শুরু করেছিলেন যশোর জেলা স্কুলে । শিক্ষাজীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বস্তরেই প্রথম । এম.এস.সি-তে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড নম্বর পেয়ে কুড়িটি স্বর্ণপদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত পুরস্কার লাভ করেন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এস.সি পড়ার সময়ে বিজ্ঞান জগতের দুইজন দিকপাল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র ও আচার্য জগদীশচন্দ্রের অধীনে গবেষণায় রত হন ।

১৯১৫ সালে স্টেট স্কলারশিপ পেয়ে বিলেত যান । ১৯১৭ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯১৯ সালে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি.এস.সি’ উপাধি লাভ করেন । ১৯১৯ সালে লণ্ডনে ফিরে আই.ই.এস নির্বাচিত হয়ে এলাহাবাদ ম্যুর সেন্ট্রাল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন । তাঁর গবেষণা জীবনের প্রথম কাজ ‘ইনডিউসড অ্যাণ্ড ফটো-কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন’ ।

শেষ জীবনেও তিনি নাইট্রোজেন ফিকশন নিয়ে গবেষণায় রত ছিলেন । তাঁর মৌলিক গবেষণাপত্রের সংখ্যা ছয়শতাধিক । ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত । তিনি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডক্টরেট এবং এস এ হিল ও জি হিল স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন । ১৯৩৮, ১৯৪৭ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার কমিটিতে তিনি বিচারক ছিলেন । তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তাঁর নির্মিত ‘ইণ্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব স্পেশাল সায়েন্স’ এর বাড়িটি তাঁর প্রথম স্ত্রী বিজ্ঞানী সেইলা ধরের মৃত্যুর পর (১৯৪৯) এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর নামাঙ্কিত করে ।

তিনি অত্যন্ত মিতব্যয় জীবনযাপন করতেন । গবেষণার জন্য তিনি বহু লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন । তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪ লক্ষ টাকা আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে অধ্যাপক পদ ও ১ লক্ষ টাকা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে লেকচারার পদ সৃষ্টির জন্য দিয়েছেন । চিত্তরঞ্জন সেবাসদনকে ১ লক্ষ টাকা এবং ৭ বছরের সম্পূর্ণ বেতন তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন । ভারত সরকার তাঁকে “পদ্মশ্রী” খেতাব দিতে চাইলে তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন ।

তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো:
(১) আমাদের খাদ্য
(২) জমির উর্বরতা বৃদ্ধির উপায়
(৩) নিট কনসেপশন ইন বায়ো কেমিস্ট
(৪) ইনফ্লুয়েন্স অব লাইট ইন সাম বায়ো-কেমিক্যাল প্রসেস ইত্যাদি।

বিজ্ঞান জগতের এই দিকপাল মনীষী ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটান । (ঐতিহাসিক তথ্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে সংগৃহীত)