রাজনৈতিক অস্থিরতা: আমানত-ঋণ বিতরণে ধস জুলাইয়ে

- আপডেট সময় : ০৬:৪৯:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 77
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং খাতে। গত জুলাই মাসে ব্যাংক আমানত এবং ঋণ বিতরণ উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে মোট আমানত কমে ৮,১৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। জুনে যা ছিল ১৭,৪২,২২৪ কোটি টাকা, জুলাই শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭,৩৪,০২৬ কোটি টাকায় (আন্তঃব্যাংক এবং সরকারি আমানত বাদে)।
একই চিত্র দেখা গেছে ঋণ বিতরণেও। জুলাই মাসে ঋণ বিতরণ কমেছে ৩,৮৮২ কোটি টাকা। জুনে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২০,৮৯,৩৩০ কোটি টাকা, জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০,৮৫,৪৪৮ কোটি টাকায়।
ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই মাসে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তার জেরেই ব্যাংকিং খাতে এই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ওই মাসে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ১৯ জুলাই সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। ফলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ব্যাংকিং ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসে স্থবিরতা। এতে করে আমানতকারী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এর ফলে তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলেও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটেনি।
এই অস্থির পরিস্থিতিতে অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে তাদের আমানত তুলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আশঙ্কায় কিছু রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরাও ব্যাংকের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেখেছিলেন।
জুলাই মাসে ব্যাংকের বাইরে রাখা মুদ্রার পরিমাণ বেড়ে ২.৯১ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা জুনে ছিল ২.৯০ লাখ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৩ সালে ছিল ২.৬৬ লাখ কোটি টাকা।
ফলস্বরূপ, অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কলমানির হারকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
চলমান ডলার সংকট পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত তিন বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে, যা আর্থিক ব্যবস্থা থেকে স্থানীয় মুদ্রার একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুষে নিয়েছে।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রার হার আগস্টে বেড়ে ১২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগস্ট ২০২১ সালে ছিল ৮৪.৮ টাকা।
এদিকে, জুলাই মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও তা এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে মুদ্রাস্ফীতির হার সামান্য কমে ১০.৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জুলাইয়ে ছিল ১১.৬৬ শতাংশ।
মুদ্রাস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমবর্ধমান। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে।