রেমিট্যান্সে ২.৫% প্রণোদনার দূর্নীতি বন্ধ করুন!
- আপডেট সময় : ০৫:৫৫:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
প্রাপক:
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
অনুলিপি: ড. আহসান এইচ মনসুর, মাননীয় গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
দৃষ্টি আকর্ষণ: সেলিম আর.এফ হোসাইন, প্রেসিডেন্ট, এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ
প্রিয় অর্থ উপদেষ্টা মহোদয়,
সালাম নিবেন।
সভ্য দেশগুলোতে খোলা চিঠি লেখার রেওয়াজ রয়েছে। আপনাকে সরাসরিও লেখা যেত। কিন্তু তাতে অনেক দাপ্তরিক নিয়ম মেনে সেটা করতে হতো। তখন এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বাদ দিয়ে বিষয়টি করতে হতো। যেহেতু বিষয়টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিধায়, খোলা চিঠির আশ্রয় নিলাম। তাতে সমস্যাটির একটি সমাধানের পাশাপাশি জনসচেতনাও তৈরী হতে পারে।
বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা তাদের বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সাথে মিলে নিয়মবহির্ভূতভাবে রেমিট্যান্স গ্রহণ করছে। তাতে জনগণের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এটা বন্ধ করার জন্যই আপনাকে লেখা।
বাংলাদেশে মূলত দুই ধরণের রেমিট্যান্স আসে। একটি হলো “ওয়েজ আর্নার্স” রেমিট্যান্স, আরেকটি হলো “সার্ভিস রেমিট্যান্স”। যারা প্রবাসে বসে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করে দেশে পাঠান, তাদেরকে বলা হয়েছে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্স, যেখানে সরকারের কোষাগার থেকে শতকরা ২.৫% হারে প্রণোদনা দেয়া হয়ে থাকে।
আর সার্ভিস রেমিট্যান্স হলো দেশে বসেই যদি বিদেশের কোনও কাজ করে থাকে, কিংবা কোনও সেবার বিনিময়ে বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জন করে থাকে। এইক্ষেত্রে কোনও সরকারী প্রণোদনা নেই।
কিন্তু একদল এক্সচেঞ্জ হাউজ বাংলাদেশের কিছু ব্যাংকের সাথে যোগসাজোস করে দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিস রেমিট্যান্সকে “ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্স” দেখিয়ে বাড়তি ২.৫ ভাগ প্রণোদনা নিয়ে আসছে। এর ফলে একটি বিরাট অংশ মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা বানিয়ে নিচ্ছে। তারা নিজের ডলার দেশে বসেই নিজের কাছে নিয়ে আসে, মাঝ দিয়ে সরকারের ২.৫% ক্ষতির মুখে পরছে।
বিষয়টি এমন নয় যে, এটা গোপনে করা হচ্ছে। সকল তথ্যাদি বাংলাদেশের ব্যাংকের কাছে জমা দিয়েই এই অর্থ বাগিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিগত সময়গুলোতে কে কার কাছে কোথা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছে, তার তথ্য অডিট করলেই পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, বিষয়টি যেহেতু এখনও সচল রয়েছে, সেই তথ্য-উপাত্ত এবং প্রমাণাদি আমাদের কাছেও রয়েছে।
আপনার কাছে অনুরোধ, অতি দ্রুত এই অপকর্মটি বন্ধ করবেন। যদি বিষয়টি আপনার বুঝতে অসুবিধা হয়, জানাবেন। আমি ডাটা দিয়ে সাহায্য করবো।
প্রিয় গভর্নর মহোদয়,
আপনি কিছুদিন আগে বলেছেন, সরকারের এই ২.৫% প্রণোদনা বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। বিষয়টি আপনিও ধরতে পেরেছেন দেখে ভালো লেগেছে। কিন্তু এটা বন্ধ করার এখতিয়ার হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
তবে আপনি দুটো কাজ করতে পারেন – একটি হলো অডিট করান। এতোদিন যারা এই দূর্নীতির সাথে জড়িত ছিল, সেটা বের করুন। আর দ্বিতীয়টি হলো, একটি চিঠি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে এটা বন্ধ করতে বলুন। তারা জানে, কোনটা ওয়েজ আর্নার্স, আর কোনটা সার্ভিস রেমিট্যান্স। তাদের কাছে সফটওয়্যার আছে। সেখানে প্রতিটি রেকর্ড দেখা যায়। যদি ডাটা পরিবর্তন করে থাকে, সেটাও ধরা যাবে।
আপনি তাদেরকে এই দূর্নীতিটি বন্ধ করার নির্দেশ দিন। আপনার কথা অমান্য করে তো আর বাংলাদেশে কেউ ব্যাংক চালাতে পারবে না। জনগণের এই টাকা ক্ষতি এখুনি বন্ধ করুন।
প্রিয় প্রেসিডেন্ট, এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ,
অতি সম্প্রতি আপনার একটি বক্তৃতা ভাইরাল হয়েছে। তার মূল কারণ হলো, আপনি ব্যাংকিং ব্যবস্থার করুণ আসল চিত্রটি তুলে ধরেছেন। আপনার সমিতি বাংলাদেশের সবগুলো ব্যাংক পরিচালনা করে। আপনারাই ভালো জানেন, কিসের ভেতর দিয়ে কী হয়। সেই আলোচনায় আর গেলাম না।
আপনারা যেহেতু জনগণের টাকার রক্ষনাবেক্ষণ করে থাকেন, তাই আপনাদের একটি দায়িত্ব হলো যেকোনও ধরণের ক্ষতি বন্ধ করা। আপনি যেহেতু পুরো সমিতির প্রেসিডেন্ট, তাই আপনার কাছেও অনুরোধ থাকলো, আপনি আপনার সদস্য ব্যাংকগুলোকে এই প্রণোদনা নিয়ে দূর্নীতিটি বন্ধে সচেষ্ট হবেন।
চিঠি লম্বা না করে এখানেই শেষ করি।
আপনাদের মূল্যবান সময়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এই কাজটি দ্রুত করার অনুরোধ থাকলো। এটা বন্ধ করতে মূলত এক দিন লাগার কথা। তবুও আমরা একটি সপ্তাহ দেখতে পারি। যদি এর মাধ্যমে কোনও সুরাহা না হয়, তাহলে আমরা আদালতকে এই বিষয়ে একটি মতামত দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারি। বর্তমানের আদালত যেহেতু ন্যয় বিচারের পক্ষে কাজ করবে বলে মানুষ মনে করে, আমরা সেই পথেও হেটে দেখতে পারি। আমাদের কাছে যা প্রমাণাদি আছে, তা আমরা মাননীয় আদালতকে দিয়ে একটি সুবিচার চাইতেই পারি।
আশা করছি, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসেবে একজন সামান্য লেখকের এই আর্জিটুকু সুবিবেচনায় নিবেন।
নিবেদক
জাকারিয়া স্বপন
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পুনশ্চ: আমার এখানে অনেক বেদেশী বন্ধু আছে। তাই পত্রটি বাংলায় লিখলাম, যেন আমাদের দেশের কোনও খারাপ নিয়মের কথা বাইরের বন্ধুরা বুঝতে না পারে!