চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এই তরুণ নিজের বাসায় গড়ে তুলেছেন ‘রোবোটিকস ল্যাব’। তাঁর এই রোবোটিক হাত এখনো সরকারের অনুমোদন পায়নি। তবে জয় বড়ুয়ার কাজ সম্পর্কে অবগত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। সুযোগ দিতে পারলে তিনি আরও অনেক দূরে যাবেন বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
জয় বড়ুয়া বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। বিভিন্ন জটিলতায় পড়ে আর এর অন্য ধাপগুলোতে অংশ নিতে পারেননি। হোম ক্লিনিং রোবট, উভচর রোবট, রোবোটিক থার্ড হ্যান্ড, ওয়্যারলেস হ্যান্ড, হেড মেসেজ ডিভাইস, এলিন ওয়ান ফিউচার কার, রোপ ক্যামেরা, ওয়্যারলেস ক্যামেরা, কথা বলা রোবটসহ আরও নানা কিছু নিয়ে কাজ করছেন এই তরুণ। ২০১৯ সালে নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেন জয় বড়ুয়া ও তাঁর দল। ‘এসো রোবট বানাই’ টিভি শোতে অ্যাগ্রিকালচার রাউন্ড থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘আবিষ্কারের খোঁজে’ নামক প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
জয় বড়ুয়া যে হাতগুলো তৈরি করেছেন, তা কেউ দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারেন। এর দাম পড়ে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর দেশের বাইরে থেকে এ ধরনের রোবোটিক হাত আনতে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
হাত না থাকা ব্যক্তিদের হাত লাগানোর পর তাঁদের যে অনুভূতি, তা নিয়ে একাধিক ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন জয় বড়ুয়া। সেই ভিডিও দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। ইউটিউবে আছে তাঁর নিজের চ্যানেল।
জয় বড়ুয়া জানিয়েছেন, দেশের বাইরে থেকেও হাত বানিয়ে দেওয়ার ফরমাশও পাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে তুরস্কে পৌঁছে গেছে তাঁর তৈরি এই রোবোটিক হাত। এর জন্য খরচ পড়েছে বাংলাদেশি টাকায় ৮০ হাজার টাকা। অনেকেই তাঁর এই রোবোটিক হাতের খোঁজখবর রাখছেন।
‘হাত লাগানোর পর নিজের সৌন্দর্য ফেরত পাইছি’
কুমিল্লার ২৮ বছর বয়সী জহিরুল ইসলাম জয় বড়ুয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি রোবোটিক হাত নিয়েছেন দুই মাস আগে। ২০০৯ সালে ট্রেন দুর্ঘটনার পর জহিরুলের বাঁ হাতটি কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছিল। একদিকে কাটা হাত নিয়ে লজ্জা পেতেন, অন্যদিকে নিজের কাপড় পরতেও সমস্যা হতো তাঁর।
জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, ‘এখন হাত লাগানোর পর নিজের সৌন্দর্য ফেরত পাইছি। পানির বোতল ধরা থেকে শুরু করে টুকটাক অনেক কাজ করতে পারি। চট করে বাইরের কেউ বুঝতেই পারে না আমার একটি হাত নাই।’
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কারখানায় কর্মরত মো. পারভেজ ১৩ বছর আগে দুর্ঘটনায় একটি হাত হারিয়েছিলেন। ফেসবুকে জয় বড়ুয়ার রোবোটিক হাতের ভিডিও দেখে তিনি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। রোবোটিক হাতের সুবিধার বিষয়টি জেনে তিনি এটি নিতে উৎসাহী। এ জন্য ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে পারভেজের। তাঁর জন্য রোবোটিক হাত তৈরির কাজ শুরু করেছেন জয়।
জয় জানান, এখন পর্যন্ত ছয়জন ব্যক্তি তাঁর তৈরি রোবোটিক হাত নিয়ে ব্যবহার শুরু করেছেন। এর বাইরে তাঁর কাছে বেশ কিছু ফরমাশ রয়েছে। নিজের এই উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিতে জয় গড়ে তুলেছেন ‘রোবোলাইফ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মূলমন্ত্র হচ্ছে রোবোটিকস ফর লাইফ। এই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ঢাকা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করেছে। সেখানে সদস্য হিসেবে রয়েছেন জয়ের বড় ভাই বাবলু বড়ুয়া। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী কলেজ থেকে বিবিএ করেছেন। এই দলের অন্য সদস্যরা ভার্চ্যুয়ালি কাজ করছেন।