ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

শহীদ তিতুমীর: বাংলার এক অনন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ১০:১২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / 79
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শহীদ তিতুমীর: বাংলার এক অনন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী
তিতুমীর, প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী, ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নাম। ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও সংগ্রামী নেতা, যিনি ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন।

শিক্ষাজীবন ও সংগ্রামের সূচনা
তিতুমীর ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে আগ্রহী ছিলেন। তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং ইসলামের গভীর শিক্ষায় শিক্ষিত হন। তাঁর তাত্ত্বিক শিক্ষা ছিল অত্যন্ত দৃঢ়, যা পরবর্তীতে তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। পীর সাহেবদের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়ে তিনি ইসলামি সংস্কারের পাশাপাশি সামাজিক অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা পান।

১৮২২ সালে তিতুমীর হজ পালন করতে মক্কা গমন করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি বাংলার কৃষকদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ব্রিটিশ শাসক এবং তাদের মদদপুষ্ট জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিতুমীর ধর্মীয় আদর্শের সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনকে একত্রিত করেন।

ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন
তিতুমীর কৃষকদেরকে জমিদারি ব্যবস্থার শোষণ থেকে মুক্তি দিতে সংগ্রাম শুরু করেন। জমিদারদের তোলা অবৈধ কর (যেমন: বাঁশের খুঁটি কর) বন্ধ করতে তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন। এই আন্দোলন ব্রিটিশ শাসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তিতুমীরের নেতৃত্বে কৃষকেরা ব্রিটিশ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

১৮৩১ সালে তিনি নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে একটি শক্তিশালী দুর্গ নির্মাণ করেন, যা ইতিহাসে “বাঁশের কেল্লা” নামে পরিচিত। এই কেল্লা ছিল ব্রিটিশ ও তাদের দোসর জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক। বাঁশের তৈরি হলেও এই কেল্লা এতটাই মজবুত ছিল যে ব্রিটিশ সেনাদের জন্য এটি ভাঙা সহজ ছিল না।

শহীদ তিতুমীর
তিতুমীরের প্রতিরোধ ছিল ব্রিটিশদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ব্রিটিশ সরকার তিতুমীরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। তারা কামানের গোলায় বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে তিতুমীরসহ তাঁর অনেক অনুসারী শহীদ হন।

তিতুমীরের সংগ্রাম শুধু একটি অঞ্চল বা জাতির স্বাধীনতার জন্য নয়, এটি ছিল সকল শোষিত মানুষের অধিকারের জন্য একটি যুগান্তকারী লড়াই। তাঁর আত্মত্যাগ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিতুমীরের জীবন থেকে শিক্ষা
তিতুমীরের জীবন থেকে আমরা শিখি যে ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম এবং শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই প্রকৃত মানবতার পরিচয়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, সীমিত সম্পদ থাকলেও সাহস, ঐক্য ও আদর্শের ভিত্তিতে যে কোনো অন্যায় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।

তিতুমীর বাংলার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের কাহিনী আজও বাঙালির হৃদয়ে অমলিন। সমাজ ও ধর্মের নামে যেকোনো ধরনের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর এই সংগ্রাম আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শহীদ তিতুমীর: বাংলার এক অনন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী

আপডেট সময় : ১০:১২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

শহীদ তিতুমীর: বাংলার এক অনন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী
তিতুমীর, প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী, ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নাম। ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও সংগ্রামী নেতা, যিনি ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন।

শিক্ষাজীবন ও সংগ্রামের সূচনা
তিতুমীর ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে আগ্রহী ছিলেন। তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং ইসলামের গভীর শিক্ষায় শিক্ষিত হন। তাঁর তাত্ত্বিক শিক্ষা ছিল অত্যন্ত দৃঢ়, যা পরবর্তীতে তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। পীর সাহেবদের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়ে তিনি ইসলামি সংস্কারের পাশাপাশি সামাজিক অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা পান।

১৮২২ সালে তিতুমীর হজ পালন করতে মক্কা গমন করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি বাংলার কৃষকদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ব্রিটিশ শাসক এবং তাদের মদদপুষ্ট জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিতুমীর ধর্মীয় আদর্শের সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনকে একত্রিত করেন।

ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন
তিতুমীর কৃষকদেরকে জমিদারি ব্যবস্থার শোষণ থেকে মুক্তি দিতে সংগ্রাম শুরু করেন। জমিদারদের তোলা অবৈধ কর (যেমন: বাঁশের খুঁটি কর) বন্ধ করতে তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন। এই আন্দোলন ব্রিটিশ শাসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তিতুমীরের নেতৃত্বে কৃষকেরা ব্রিটিশ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

১৮৩১ সালে তিনি নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে একটি শক্তিশালী দুর্গ নির্মাণ করেন, যা ইতিহাসে “বাঁশের কেল্লা” নামে পরিচিত। এই কেল্লা ছিল ব্রিটিশ ও তাদের দোসর জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক। বাঁশের তৈরি হলেও এই কেল্লা এতটাই মজবুত ছিল যে ব্রিটিশ সেনাদের জন্য এটি ভাঙা সহজ ছিল না।

শহীদ তিতুমীর
তিতুমীরের প্রতিরোধ ছিল ব্রিটিশদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ব্রিটিশ সরকার তিতুমীরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। তারা কামানের গোলায় বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে। এই যুদ্ধে তিতুমীরসহ তাঁর অনেক অনুসারী শহীদ হন।

তিতুমীরের সংগ্রাম শুধু একটি অঞ্চল বা জাতির স্বাধীনতার জন্য নয়, এটি ছিল সকল শোষিত মানুষের অধিকারের জন্য একটি যুগান্তকারী লড়াই। তাঁর আত্মত্যাগ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিতুমীরের জীবন থেকে শিক্ষা
তিতুমীরের জীবন থেকে আমরা শিখি যে ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম এবং শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই প্রকৃত মানবতার পরিচয়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, সীমিত সম্পদ থাকলেও সাহস, ঐক্য ও আদর্শের ভিত্তিতে যে কোনো অন্যায় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।

তিতুমীর বাংলার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের কাহিনী আজও বাঙালির হৃদয়ে অমলিন। সমাজ ও ধর্মের নামে যেকোনো ধরনের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর এই সংগ্রাম আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস।