শহীদ ফারহান ফাইয়াজ বেঁচে থাকবে কোটি মানুষের হৃদয়ে
- আপডেট সময় : ০৭:১৬:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইন্ট্রোতে রেসিডেনসিয়াল মডেলে কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ ইংরেজিতে এ কথা লিখেছিলেন।
ফারহান আজ বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত হয়েছেন। রেসিডেনসিয়াল মডেলে কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজের আত্মীয় নাজিয়া খান। ফারহানের সঙ্গে হাসিখুশি একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘দিস ইজ মাই ফারহান ফাইয়াজ। হি ইজ ডেড নাও। আই ওয়ান্ট জাস্টিস (এই আমার ফারহান আইয়াজ। সে এখন মৃত। আমি ন্যায়বিচার চাই)।’
আজ আরেকটি পোস্টে নাজিয়া খান লিখেছেন, ফারহানের বয়স ১৮ বছরও হয়নি। ফারহানের জন্ম ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৬। সবাইকে প্রতিবাদী হওয়া এবং তাঁর (নাজিয়া) পোস্টটি শেয়ার করা জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাজিয়া খান।
নাজিয়া খান আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ফারহান তাঁর বোনের ননদের ছেলে। তবে পারিবারিকভাবে সম্পর্ক খুব ভালো। তিনি বলেন, ফারহানের লাশ হাসপাতালে আছে। পরিবারের সদস্যরা সেখানেই আছেন। কেউ এখন কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই।
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহান। কলেজের শিক্ষক তারেক আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দুপুরে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ফারহান সানগ্লাস চোখে ছিল। তখনো ছেলেটা তাজা। সেখান থেকে চলে আসার ঘণ্টা দু-এক পরে ছেলেটার লাশ দেখতে হলো।’ আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘… হাসপাতালে লাশটা যখন দেখলাম, পা আর চলছিল না।
ফারহানের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন “টেন মিনিট স্কুল”এর ইংরেজি শিক্ষক মুনিজেরিন শহীদ। লিখেছেন, তাঁর এই শিক্ষার্থী অনেক মেধাবী, আচরণ খুব ভালো ছিল। তার এভাবে মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না।’
‘টেন মিনিট স্কুল’–এর প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক ফেসবুকে ফারহানের সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট দিয়েছে লিখেছেন, ‘মাই স্টুডেন্ট ইজ ডেড (আমার ছাত্র মারা গেছে।’
ফেসবুকে কাশফিয়া আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, বাক্রুদ্ধ! ভাষাহীন! সকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র নিহত হলো। এখন নিহত হলো ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক ছাত্র। আমার ছেলের দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুজন। ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে বেরিয়ে গেল সতীর্থদের শেষবার দেখতে। এটা কোনো কথা! খুব সহজেই যার সমাধান হয়ে যেত, তার জন্য এত রক্তপাত! তা–ও আবার এমন তরুণ রক্ত! আর নিতে পারছি না সত্যি। দম বন্ধ হয়ে আসছে।
॥ সেলিনা শিউলী ॥
ঢাকা, ৭ সপ্টেম্বর, ২০২৪(বাসস) : ‘পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের বিষাক্ত ধোঁয়ার ঝাঁঝে আমার নাক ও চোখ প্রচ- জ্বলছিল। আমি এ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বড় রাস্তা-সংলগ্ন ফুটপাতে বসে পড়লাম। খানিক বাদেই শুনি তুই বুকে গুলি খেয়েছিস। কোনো ঝক্কি-ঝমেলার কথা না ভেবেই তোর কাছে ছুটে গেলাম। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তোকে যখন সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন ছুুটন্ত অ্যাম্বুলেন্সের সিটে শুয়ে থাকা তুই আমার চোখের দিকে তাকালি। আমি দেখলাম, তোর দুই চোখের অব্যক্ত চাহনী! পর পর দু’বার তোর এই চাহনীর সময় মনে হচ্ছিল দু’চোখের মণি ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তোর চোখের ওই চাহনীতে ছিল পতিত স্বৈরাচারের সশস্ত্র গু-বাহিনীর প্রতি একরাশ ঘৃণা। হঠাৎ তোর চোখের দুই পাতা ওঠানামা করে বন্ধ হয়ে গেলো চিরতরে! সে সময় আমার ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। বিমূঢ় আমি কাঁদতে চেয়েও পারিনি। তোর চিরবিদায়ের পর, গত তিন সপ্তাহ ধরে ঘুমাতে পারছি না। কারণ, ঘুম ঘুম ভাব এলেই তোর চোখের অব্যক্ত ওই চাহনী স্বপ্নের মধ্যে ভেসে ওঠে, ঘুমাতে দেয় না।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে হৃদয় বিদারক এ কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বিরোধী (পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী) আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ ফারহান ফাইয়াজের সহপাঠী ওয়াসিফ মুনিম।
শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে সহপাঠীদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিতে গত ১৮ জুলাই ফারহান ফাইয়াজ ও ওয়াসিফ মুনিম দুই বন্ধু এক সাথে রাস্তায় নামে। তারা দু’জন ধানমন্ডি এলাকায় পোঁছলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র গু-াদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে। এ সময় ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ গুলিবিদ্ধ হয়। সামান্য আহত হলেও ফারহান ফাইয়াজের সহপাঠী ওয়াসিফ মুনিম বেঁচে যায়।
সরকারী চাকুরিতে বিভিন্ন কোটায় নিয়োগ প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিল। দিনে দিনে এই ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পূঞ্জীভূত ক্ষোভ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এরই অংশ হিসেবে গত জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে মাঠে নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলন। পরবর্তীতে এই আন্দোলন সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ভিত্তিক আন্দোলন নিয়ে যায় রাজপথে। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ শহিদ হন। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ হয় নতুন মাত্রা। ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলন ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়।
শহিদ ফারহান ফাইয়াজের বন্ধু মুনিম তার ফেসবুক স্টাটাসে গুলিবিদ্ধ ফাইয়াজ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তোকে প্রথমে আমি ইমার্জেন্সিতে নেই, পরে ডাক্তার জানায় তোকে আইসিইউ’তে নেয়া লাগবে। নেয়ার সময়ই লিফটে তোর সাথে আমার জীবনের শেষ দেখা, আমাকে আইসিইউ’তে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমার অবস্থা দেখে সকলে মিথ্যা আশ্বাস দিলো; তুই বেঁেচ আছিস। হ্যাঁ রে, তুইতো বেঁচে রইলি কোটি মানুষের হৃদয়ে, আর রেখে গেলি তোর চোখের চাহনীর স্মৃতি। যা আমাকে প্রতিদিন মারে।’
প্রাণের বন্ধুকে হারানোর কষ্ট বুকে চেপে রাখতে পারেনি বলেই মুনিম ফেসবুক স্ট্যাটাসে হৃদয়ের আবেগ প্রকাশ করতে লিখেছেন, ‘আমাকে রাজপথে থাকার অণুপ্রেরণা দিয়ে গেলি। এরপর থেকে একদিনের জন্যও আন্দোলনে যোগ দেওয়া মিস করিনি। হাতে ছররা গুলি খেয়েও না। তোর রক্তের সাথে বেঈমানি হতে দেইনিরে ফারহান। তুই জিতে গেছিস রে, আজ তোর দেশ স্বাধীন।’
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর গুলিতে শহিদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বার্তা সংস্থা বাসস-এর প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপকালে বলেন, ‘বাবার কাঁধে ছেলের লাশ, সন্তান হারানোর শোক; এটা পৃথিবীতে কেউ বুঝবে না। এর চেয়ে ভারী কোন কিছু আর নাই। একমাত্র যিনি সন্তানকে চিরতরে হারিয়েছেন, তিনিই শুধু সন্তান হারানোর কষ্ট বুঝতে পারবেন।’
শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া অতি সম্প্র্রতি রাজধানীর শান্তিনগরের সার্কিট হাউজ রোডস্থ তাঁর ফ্ল্যাটে বাসস-এর প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদ ফারহান ফাইয়াজ সম্পর্কে বলেন, ‘আমার ছেলের পুরো নাম মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভুঁইয়া। ডাক নাম রাতুল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে সরকারি বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের গুলিতে শহিদ হওয়ার পর ফারহান ফাইয়াজ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ছোটবেলা থেকে ফারহান শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে পছন্দ করতো। যেখানে ঝগড়াঝাটি ও ঝামেলা থাকতো, তা থেকে এড়িয়ে চলতো। যে ছেলে সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারতো না, রোদ-বৃষ্টি হলে ছাতা ব্যবহার করতো, কখনো উবার কল করা না হলে লোকাল বাসে চড়ে কলেজে যাওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে কষ্ট পেতো, সেই ছেলে কীভাবে এতোবড় আন্দোলনে যাবে? আমি চিন্তাই করতে পারি নাই!’
তিনি বলেন, ‘আজকালকার ছেলেদের ফেসবুক বা অন্য সামাজিক মাধ্যমে অবাধ বিচরণ, কেউ কেউ হয়তোবা তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বন্ধুদের গ্রুপে ডাক পড়েছিল, কলেজের একজন শিক্ষকও আন্দোলনে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আগস্ট মাসের বেতন ফ্রি করে দেওয়ার কথা বলেছিল। ফারহান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এতোটাই জড়িয়ে যায় যে বাসায় তার নবম শ্রেণিতে পড়–য়া বোনকে পর্যন্ত বলেছিল,‘ অ্যাই ফারিন, তুমি আন্দোলনে যাচ্ছো না কেন? তোমার তো আন্দোলনে যাওয়া উচিত।’
তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ফারহান শিশুবয়সেই তার প্রখর মেধা আর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছিল। অল্প পড়াতেই সব আয়ত্তে এসে যেতো। সে তার কলেজের পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি অন্য সবার চেয়ে প্রতিযোগিতায় নিজেকে একটু এগিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বইগুলোও পড়তো। তার পড়ার টেবিলে পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন লেখকদের বই সাজানো রয়েছে। ফারহানকে নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম।
শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, ফারহানের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পদার্থবিদ হবে, দেশের বাইরে থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে মানুষের কল্যাণে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যেসব পাঠ্য ছিল, সেসব বই এখনই সে পড়তো। ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স নিয়ে ধারণা নিয়েছে। সে বলতো, তার কোয়ালিটি এপ্রুভ করার জন্য বুয়েটে অ্যাডমিশন পরীক্ষা দিয়ে তার কোয়ালিটি যাচাই-বাছাই করবে, তারপর ইউকে’তে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যাবে। এটা তার ড্রিম প্রজেক্ট ছিল।
এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ফারহান পিৎজা, পাস্তা আর বার্গার খেতে খুব পছন্দ করতো। মৃত্যুর আগের রাতে ১৭ জুলাই অনলাইনে পিৎজা অর্ডার করেছিল। আমি দরজা খুলে সেটা গ্রহণ করি এবং ওর হাতে দেই। খাবার খেয়ে রাত দশটা বা সাড়ে দশটা নাগাদ শুতে চলে যায়। আর কথা হয়নি, বাবাটার সাথে আবার। অনেক ব্যথা অনেক কষ্ট আমাদের। দেশের জন্য আমাদের একমাত্র ছেলে শহিদ হয়েছে। তার ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশটা নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এটা একদিকে আমাদের জন্য যেমন সান্ত¦নার, তেমনি বেদনারও।’
কথা ছিল, ২৫ আগস্ট শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরবেন, কিন্তু বুলেট কেড়ে নিল ঢাকা মডেল রেসিডেনসিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারহান ফাইয়াজের প্রাণ। দীর্ঘ বিরতির পর আজ রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস শুরু হয়েছে। একাদশ শ্রেণির ক্লাসে সশরীরে না ফিরলেও ফুল হয়ে ফিরেছেন শহীদ ফারহান ফাইয়াজ।
সহপাঠীরা ফারহান ফাইয়াজকে ভুলে যান নি। যেই টেবিলে ফারহানের বসার কথা ছিল, সেই টেবিলে তারা ফুল আর পতাকা রেখেছেন। স্মরণ করছেন প্রিয় বন্ধুকে। অনেকেই বন্ধুর স্মরণে কান্না জুড়ে দিয়েছেন। ফারহানের শূন্যতা তারা মেনে নিতে পারছেন না।
ফারহানের এক শিক্ষক সেই টেবিলের ছবি দেখিয়ে বলেন, এই আসনে বসে ক্লাস করার কথা ছিল শহীদ ফারহান ফাইয়াজের। কিন্তু সে নেই। ফারহান শহীদ হয়ে আমাদের ঋণী করে রেখে গেছে। আমরা যেন এই অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও কর্মকাণ্ড দিয়ে রক্ষা করি। আল্লাহর কাছে কাছে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের শহীদি মর্যাদার জন্য দোয়া করছি।
উল্লেখ্য, রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে ফারহান ফাইয়াজ নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ফারহান ফাইয়াজ ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় ১৮ জুলাই বিকেল সাড়ে তিনটার পর থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। সে সময় আহত হন ফারহান ফাইয়াজ। সেখান থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষত ছিল।