শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় আজ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করবে জাতি

- আপডেট সময় : ০৬:৪১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 63
শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় আজ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করবে জাতি
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর ও আলশামসের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরাজয় অনিবার্য জেনে একটি জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার এমন নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। আজ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বেদনায় এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করবে জাতি।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে।’ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
অনেক আত্মদান, ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় যে স্বাধীনতা, সেই দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ দেশের লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকারসহ বুদ্ধিজীবীদের অপরিসীম অবদান রয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের বিভিন্ন সময় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে। তবে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ধারণা করা হয়, সেদিনই পৈশাচিক নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হয়। এ জন্য ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়।
অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশাসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শহীদ হন সেদিন।
বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে থেকে জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায় রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে। আলোকিত এসব মানুষকে খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয় বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকের মৃতদেহ খুঁজেই পাওয়া যায়নি।
খুঁজে পাওয়া অনেকের মরদেহ আবার শনাক্ত করা যায়নি। শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর এসব ঘটনা ও নৃশংসতা যখন একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে বিজয়ের সীমাহীন আনন্দের মধ্যেই বেদনায় মুহ্যমান হয়ে পড়ে জাতি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আরো রয়েছেন ডা. আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ডা. ফজলে রাব্বি, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব (জি সি দেব), জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হানসহ আরো অনেকেই।
জাতীয় কর্মসূচি
যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ জাতীয়ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হবে। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতারা আজ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকল পেশাজীবী সদস্যকে সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। দিবসটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতীয় কর্মসূচি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে।