ঢাকা ০২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
দুর্গাপূজার ছুটি বাড়ছে একদিন চতুর্থ প্রজন্মের ৬ ব্যাংকে ৬ হাজার কোটি টাকা উদ্ধৃত্ত তারল্য কে এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিল্টন’, আঘাত হানবে যেখানে সচিবদের ২৫টি নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশা পূরণে আশাবাদী রাজনৈতিক নেতারা পাঁচ সদস্য নিয়ে পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্স গঠন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে বিশেষ টাস্কফোর্স শেয়ারবাজার সংস্কারে ৫ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট ‘একটি তাজা টাইম বোমা’ শেয়ারবাজারে এক সপ্তাহে নেই ১৩ হাজার কোটি টাকা ‘কাউন্টডাউন শুরু’ স্ট্যাটাস দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওএসডি নিহত আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ বললেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মি নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, পূজা নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চার দেয়ালের মধ্যে কেমন আছেন ভিআইপিরা? দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ৭ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নয়টি রাজনৈতিক ব্যাংকের অবস্থা নাজুক নতুন কাগুজে নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বাদ বিজয় সরণিতে এআই সিগন্যাল সিস্টেম স্থাপন

সড়ক পরিবহনে আসছে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৪:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৭৬ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণপরিবহন খাতেও পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। দলটির পদধারী একাধিক সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতার হাতে জিম্মি ছিল এই খাত। তারা গা ঢাকা দেওয়ার পরই নেতৃত্বে এসেছে পরিবর্তন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নতুন নেতৃত্ব ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে এগোতে চাইছে। যার অংশ হিসেবে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা, দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি ও অনিয়ম বন্ধ করে চলতি মাসেই যাত্রীবান্ধব, সড়ক নিরাপদ করা ও সুশৃঙ্খলা আনতে প্রাথমিকভাবে ‘মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং’ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে।

 

রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম। গত ২৪ আগস্ট তার নেতৃত্বে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

সাইফুল আলম বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব বলি বা গণঅভ্যুত্থান বলি, তাতে আমরা স্বাধীন দেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। দেশ গড়ার অংশ হিসেবে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা, দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি, অনিয়ম— এই সব জঞ্জাল দূর করে যাত্রীবান্ধব, নিরাপদ, যানজট নিরসনসহ সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থার জন্য আমাদের যা যা করণীয় সেগুলো নিয়ে প্রাথমিকভাবে একটা অ্যাকশন প্ল্যানে যাচ্ছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

এই অ্যাকশন প্ল্যানের মূলে থাকছে— সড়কে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের দ্বারা যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সংশোধন ও সমাধান করার উদ্যোগ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলতি মাসের শেষ দিকে (প্রাথমিকভাবে ২০ সেপ্টেম্বর) ‘মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং’ শুরু করা হবে, যা পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

কাউন্সেলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রধানত যুক্ত করা হবে ঢাকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। বিশেষ করে রাজধানীর শহর ও শহরতলীতে যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনা বন্ধ, নারী যাত্রীদের ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বন্ধ, প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ যাত্রীদের প্রতি ভালো আচরণ করা, নিয়ম-শৃঙ্খলা না মেনে এলোপাতাড়ি গাড়ি না চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ, গতির ক্ষেত্রে চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো রোধ এবং চালক-শ্রমিকদের মাদক থেকে দূরে রাখার মতো ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পরপর দুই দিন চলবে এই কার্যক্রম। এরপর আন্তঃজেলার সঙ্গে যুক্ত ঢাকার প্রতিটি বাস টার্মিনালের পরিবহন সংশ্লিষ্টদের একদিন করে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনা হবে। তারপর প্রতিটি জেলার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বিভাগীয় শহর ও পরে জেলার বাস টার্মিনালে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে লাইসেন্স প্রাপ্তি, গাড়ির তুলনায় চালকের ঘাড়তি পূরণ, ভালো প্রশিক্ষিত চালকদের বিদেশমুখী হওয়ার পরিবর্তে দেশেই উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজ করা এবং চালকদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০০০ সালের আগে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা আনতে মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। তাতে সে সময় যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে বেশ সুফল মিলেছে বলে মনে করেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান। সম্প্রতি আন্দোলন দানা বাঁধলে বিদেশে চলে যান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আর শাজাহান খান কয়েকদিন আগে গ্রেফতার হন।

 

মালিক-শ্রমিকদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন প্রয়োজন

গত দেড় দশকে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ায় যাত্রীসেবা ও বিশৃঙ্খলা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সবার আগে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

একাধিক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতা বলছেন, গত দেড় দশকে পরিবহন খাত ছিল প্রধানত খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও শাজাহান খানের নিয়ন্ত্রণে। তারা এই খাতের মালিক-শ্রমিকদের দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করার দিকে নিয়ে গেছেন। সে কারণে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় ধরনের আন্দোলনও হয়েছিল। কিন্তু তারপরও মৌলিক কোনও পরিবর্তন আসেনি। ফলে পরিবহনে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এবং শৃঙ্খলা আনতে হলে মালিক-শ্রমিকদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন প্রয়োজন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম আরও বলেন, সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবাইকে পরিচালিত করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। দলীয় বা ব্যক্তির ইচ্ছায়, কোনও দলের বা সরকারের তল্পিবাহক হয়ে কিংবা দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ভালো যাত্রীসেবা ও কাজের সুবিধার্থে সরকারের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে।

 

চাঁদাবাজি এবং টার্মিনালেও মনোযোগ

রাজধানীর প্রতিটি বাস টার্মিনালে সাধারণ পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের বিচরণ ও আচরণ নির্বিঘ্নে সচল করার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। টার্মিনালে চাঁদাবাজি বন্ধ, দখল-বেদখল এবং প্রকৃত শ্রমিকদের নেতৃত্ব থাকা নিশ্চিত করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দ্বিতীয় সারির একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালে সমিতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি পরিবহন খাতে তার অনুসারীদের নিয়ে মাফিয়া চক্র গড়ে তোলেন। তার সময় কোম্পানিগুলো ব্যয়ের নামে রীতিমতো চাঁদাবাজি শুরু করেন। এনায়েত উল্লাহ এখন বিদেশে গা ঢাকা দেওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে।

গত ১৪ আগস্ট সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের এক সাধারণ সভায় সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরিবহন কোম্পানিগুলো ম্যানেজমেন্টের জন্য সাধারণ বাস মালিকদের থেকে দৈনিক ব্যয়ভার হিসেবে টোকেন মানির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবে না। টোকেন মানির পরিমাণ কত হবে, সেটি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের রেজুলেশনের মাধ্যমে জানাতে হবে, ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করা যাবে না।

মো. সাইফুল আলম বলেন, ব্যয়ভার হিসেবে টোকেন মানি অতিরিক্ত নেওয়া হলে সেটি চাঁদাবাজির মধ্যে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম রোডের বাস মালিকদের সঙ্গে আমরা বসেছি। তাদের থেকে কোম্পানিগুলো দৈনিক সাড়ে ৭০০ টাকা করে নিতো। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ৫৫ টাকার মতো খরচ হয়। পরে তাদের ৬০ টাকা করে নিতে বলেছি আমরা। এই ধরনের একটা প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য ওইদিন সাধারণ সভায় আমরা সিদ্ধান্ত রিয়েছি। এ ক্ষেত্রে অনেকে অসহযোগিতা করার চেষ্টা করছে।

 

অসহযোগিতার অভিযোগ

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সমর্থন ও সহযোগিতা যোগাচ্ছে। ফলে এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগ আমলে পরিবহন খাতের মাফিয়াদের বেঁধে দেওয়া আগের মতো চাঁদাবাজি, টার্মিনাল দখল নেই বলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা। তবে মাফিয়া চক্র গা ঢাকা দিলেও তাদের সহযোগীরা অসহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন তারা। তারা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতাও চেয়েছেন।

মো. সাইফুল আলম আরও বলেন, ভালো কাজ করতে গেলে বাধা তো আসবেই। কিন্তু আমরা সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করার প্রত্যয় নিয়েছি। সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

নতুন কমিটি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ব্যানারে ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ যাত্রীবান্ধব ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে মতবিনিময় সভা করে। সেখানে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন সেক্টরকে চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়।

খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিদেশে অবস্থান করায় এবং শাজাহান খান গ্রেফতার থাকায় এ বিষয়ে তাদের কোনও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সড়ক পরিবহনে আসছে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’

আপডেট সময় : ০৭:৩৪:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণপরিবহন খাতেও পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। দলটির পদধারী একাধিক সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতার হাতে জিম্মি ছিল এই খাত। তারা গা ঢাকা দেওয়ার পরই নেতৃত্বে এসেছে পরিবর্তন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নতুন নেতৃত্ব ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে এগোতে চাইছে। যার অংশ হিসেবে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা, দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি ও অনিয়ম বন্ধ করে চলতি মাসেই যাত্রীবান্ধব, সড়ক নিরাপদ করা ও সুশৃঙ্খলা আনতে প্রাথমিকভাবে ‘মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং’ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে।

 

রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম। গত ২৪ আগস্ট তার নেতৃত্বে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

সাইফুল আলম বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব বলি বা গণঅভ্যুত্থান বলি, তাতে আমরা স্বাধীন দেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। দেশ গড়ার অংশ হিসেবে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা, দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি, অনিয়ম— এই সব জঞ্জাল দূর করে যাত্রীবান্ধব, নিরাপদ, যানজট নিরসনসহ সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থার জন্য আমাদের যা যা করণীয় সেগুলো নিয়ে প্রাথমিকভাবে একটা অ্যাকশন প্ল্যানে যাচ্ছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

এই অ্যাকশন প্ল্যানের মূলে থাকছে— সড়কে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের দ্বারা যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সংশোধন ও সমাধান করার উদ্যোগ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলতি মাসের শেষ দিকে (প্রাথমিকভাবে ২০ সেপ্টেম্বর) ‘মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং’ শুরু করা হবে, যা পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

কাউন্সেলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রধানত যুক্ত করা হবে ঢাকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। বিশেষ করে রাজধানীর শহর ও শহরতলীতে যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনা বন্ধ, নারী যাত্রীদের ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বন্ধ, প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ যাত্রীদের প্রতি ভালো আচরণ করা, নিয়ম-শৃঙ্খলা না মেনে এলোপাতাড়ি গাড়ি না চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ, গতির ক্ষেত্রে চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো রোধ এবং চালক-শ্রমিকদের মাদক থেকে দূরে রাখার মতো ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পরপর দুই দিন চলবে এই কার্যক্রম। এরপর আন্তঃজেলার সঙ্গে যুক্ত ঢাকার প্রতিটি বাস টার্মিনালের পরিবহন সংশ্লিষ্টদের একদিন করে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনা হবে। তারপর প্রতিটি জেলার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বিভাগীয় শহর ও পরে জেলার বাস টার্মিনালে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে লাইসেন্স প্রাপ্তি, গাড়ির তুলনায় চালকের ঘাড়তি পূরণ, ভালো প্রশিক্ষিত চালকদের বিদেশমুখী হওয়ার পরিবর্তে দেশেই উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজ করা এবং চালকদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০০০ সালের আগে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা আনতে মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। তাতে সে সময় যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে বেশ সুফল মিলেছে বলে মনে করেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান। সম্প্রতি আন্দোলন দানা বাঁধলে বিদেশে চলে যান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আর শাজাহান খান কয়েকদিন আগে গ্রেফতার হন।

 

মালিক-শ্রমিকদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন প্রয়োজন

গত দেড় দশকে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ায় যাত্রীসেবা ও বিশৃঙ্খলা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সবার আগে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

একাধিক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতা বলছেন, গত দেড় দশকে পরিবহন খাত ছিল প্রধানত খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও শাজাহান খানের নিয়ন্ত্রণে। তারা এই খাতের মালিক-শ্রমিকদের দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করার দিকে নিয়ে গেছেন। সে কারণে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় ধরনের আন্দোলনও হয়েছিল। কিন্তু তারপরও মৌলিক কোনও পরিবর্তন আসেনি। ফলে পরিবহনে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এবং শৃঙ্খলা আনতে হলে মালিক-শ্রমিকদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন প্রয়োজন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম আরও বলেন, সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবাইকে পরিচালিত করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। দলীয় বা ব্যক্তির ইচ্ছায়, কোনও দলের বা সরকারের তল্পিবাহক হয়ে কিংবা দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ভালো যাত্রীসেবা ও কাজের সুবিধার্থে সরকারের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে।

 

চাঁদাবাজি এবং টার্মিনালেও মনোযোগ

রাজধানীর প্রতিটি বাস টার্মিনালে সাধারণ পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের বিচরণ ও আচরণ নির্বিঘ্নে সচল করার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। টার্মিনালে চাঁদাবাজি বন্ধ, দখল-বেদখল এবং প্রকৃত শ্রমিকদের নেতৃত্ব থাকা নিশ্চিত করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দ্বিতীয় সারির একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালে সমিতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি পরিবহন খাতে তার অনুসারীদের নিয়ে মাফিয়া চক্র গড়ে তোলেন। তার সময় কোম্পানিগুলো ব্যয়ের নামে রীতিমতো চাঁদাবাজি শুরু করেন। এনায়েত উল্লাহ এখন বিদেশে গা ঢাকা দেওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে।

গত ১৪ আগস্ট সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের এক সাধারণ সভায় সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরিবহন কোম্পানিগুলো ম্যানেজমেন্টের জন্য সাধারণ বাস মালিকদের থেকে দৈনিক ব্যয়ভার হিসেবে টোকেন মানির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবে না। টোকেন মানির পরিমাণ কত হবে, সেটি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের রেজুলেশনের মাধ্যমে জানাতে হবে, ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করা যাবে না।

মো. সাইফুল আলম বলেন, ব্যয়ভার হিসেবে টোকেন মানি অতিরিক্ত নেওয়া হলে সেটি চাঁদাবাজির মধ্যে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম রোডের বাস মালিকদের সঙ্গে আমরা বসেছি। তাদের থেকে কোম্পানিগুলো দৈনিক সাড়ে ৭০০ টাকা করে নিতো। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ৫৫ টাকার মতো খরচ হয়। পরে তাদের ৬০ টাকা করে নিতে বলেছি আমরা। এই ধরনের একটা প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য ওইদিন সাধারণ সভায় আমরা সিদ্ধান্ত রিয়েছি। এ ক্ষেত্রে অনেকে অসহযোগিতা করার চেষ্টা করছে।

 

অসহযোগিতার অভিযোগ

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সমর্থন ও সহযোগিতা যোগাচ্ছে। ফলে এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগ আমলে পরিবহন খাতের মাফিয়াদের বেঁধে দেওয়া আগের মতো চাঁদাবাজি, টার্মিনাল দখল নেই বলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা। তবে মাফিয়া চক্র গা ঢাকা দিলেও তাদের সহযোগীরা অসহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন তারা। তারা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতাও চেয়েছেন।

মো. সাইফুল আলম আরও বলেন, ভালো কাজ করতে গেলে বাধা তো আসবেই। কিন্তু আমরা সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করার প্রত্যয় নিয়েছি। সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

নতুন কমিটি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ব্যানারে ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ যাত্রীবান্ধব ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে মতবিনিময় সভা করে। সেখানে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন সেক্টরকে চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়।

খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিদেশে অবস্থান করায় এবং শাজাহান খান গ্রেফতার থাকায় এ বিষয়ে তাদের কোনও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।