ঢাকা ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এ বছর শীত কম হবে, নাকি বেশি হবে? শেখ হাসিনার বক্তব্য সমর্থন করে না ভারত: বিক্রম মিশ্রি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ডিএমপির ট্রাফিক নির্দেশনা নিষিদ্ধ হচ্ছে ই-সিগারেট ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম, যা জানাল মোদি সরকার আসিফ নজরুলকে ‘র’ এজেন্ট বলার প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন আসিফ মাহমুদ সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মি, কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে? শেখ পরিবারের কে কোথায় আছেন? শেখ পরিবারের সিনেমায় ৩৭৮ কোটি রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে: নাহিদ ইসলাম স্বেচ্ছায় সরে গেলে সাধারণ ক্ষমা পাবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা: উপদেষ্টা শেখ হাসিনার সরব হওয়াকে যেভাবে দেখছে সরকার, বিএনপি ও জামায়াত জুলাই বিপ্লবের কন্যাদের কীর্তিগাঁথা শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা ইজতেমায় ১৪ দেশের নাগরিকদের ভিসা দিতে সতর্কতা ‘শেখ হাসিনা উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন’ দিল্লিকে ঢাকা লন্ডনে দেখা মিলল পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী-এমপিদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য ‘সমীচীন’ নয়: দিল্লিকে ঢাকা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ’: ড. ইউনূস ইইউ’র ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক আজ

সহিংস সংঘর্ষের জেরে মণিপুরের একাধিক জেলায় কারফিউ

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / 40
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সহিংস সংঘর্ষের জেরে মণিপুরের একাধিক জেলায় কারফিউ, বর্তমান পরিস্থিতি কী?
আরও একবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুর। চলমান সহিংসতার কারণে পূর্ব এবং পশ্চিমে পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, থৌবাল, কাকচিং, কাংপোকপি এবং চূড়াচাঁদপুরে বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও।

সোমবার রাজ্যের শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত জেলায় রাকফিউ রয়েছে সেখানে ১৯শে নভেম্বর পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

গত কয়েকদিন ধরে একাধিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারে বারে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর।

সম্প্রতি এক কুকি নারীকে হত্যার অভিযোগ, সিআরপিএফ জওয়ানের গুলিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১০ জন কুকি যুবকের মৃত্যু, তারপর নারী-শিশু মিলিয়ে ছয়জনের (মেইতেই গোষ্ঠীর) অপহরণ এবং পরবর্তীতে নদী থেকে তাদের দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সে রাজ্যে নতুনভাবে হিংসা ছড়িয়েছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে মণিপুরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও তুঙ্গে।

শনিবার একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কের পদত্যাগ দাবি করে তাদের বাড়িতে হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। বিক্ষুব্ধদের মোকাবিলা করতে নামানো হয় বিপুল পুলিশ বাহিনী। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এরপর রোববার রাতে মেইতেই সম্প্রদায়ের ছয়জনকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে জিরিবাম থানা এলাকার বাবুপাড়ায় ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধদের একাংশের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এদিকে, রোববার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে কনরাড সাংমার নেতৃত্বাধীন ন্যাশানাল পিপলস পার্টি।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বিজেপির ন্যশানাল প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডাকে চিঠিতে মণিপুরের অবস্থার কথা জানিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, এন বীরেন সিংয়ের সরকার তার রাজ্যের (মণিপুরের) পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরাও।

মণিপুরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রোববার একটা উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। এরপরই সোমবার জানানো হয়, রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থা বা এনআইএ মণিপুরের সাম্প্রতিক তিনটে ঘটনার তদন্ত করবে যাকে কেন্দ্র করে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে ওই রাজ্যে।

এর আগে সেপ্টেম্বর মাসেও অশান্ত হয়ে উঠেছিল এই রাজ্য।

সোমবারের পরিস্থিতি কেমন
কারফিউ জারি করার পর সোমবার সকাল থেকেই থমথমে পরিস্থিতি রয়েছে ইম্ফলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতি দেখা গেছে। কড়া তল্লাশি চালানো হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। রাস্তা-ঘাটে যান চলাচল কম। কড়া তল্লাশির পরই যানবাহন যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

ওষুধের দোকান এবং জরুরি পরিষেবা বাদে অন্যান্য দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে কারফিউয়ের আওতায় থাকা অঞ্চলে।

মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন এবং রাজ ভবনের বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ইম্ফলের বাসিন্দা পি শরৎচন্দ্র রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। মেইতেই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এই অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মণিপুর আর নিরাপদ নেই। পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত একবছর ধরে যা অবস্থা তাতে মানুষের আর প্রশাসনের প্রতিও আস্থা নেই।”

“আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর-পাকড়, কারফিউ, তল্লাশি, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই প্রায় হয় না। উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এমন পদক্ষেপ বহু বছর ধরেই দেখে আসছি আমরা। এতে কিছুই লাভ হয়নি। মণিপুরের পরিস্থিতি আসলে সাংবিধানিক ব্যর্থতার কারণে বলেই আমি মনে করি।”

মেইতেইদের পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মেইতেই গোষ্ঠীর মানুষ মোটেই নিরাপদ বোধ করছেন না কোথাও।”

অন্যদিকে, কুকি গোষ্ঠীর অভিযোগ, মেইতেই প্রধান অঞ্চলে তাদের নিশানা করা হচ্ছে। কুকি গোষ্ঠীর হাতজালহই হাওকিপ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কুকিদের পরিস্থিতির কথা আদৌ কি কেউ ভাবছে? তাদের দেখলেই মারধর করা হচ্ছে, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। হয় আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছে, নয়ত অন্য কোথাও গা ঢাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।”

একইসঙ্গে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

মি. হাওকিপ বলেন, “শান্তি কমিটি তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল, কোথায় সেই কমিটি এবং কী করেছে তারা? যদি কিছুই করেই থাকে তাহলে এই পরিস্থিতি তৈরিই হতো না মণিপুরে। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সরকার কী করছে? গত বছর থেকে মণিপুরে আগুন জ্বলছে।”

মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়িতে হামলা
গত কয়েকদিন ধরে মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইম্ফলে বেশ কয়েকজন বিধায়ক ও মন্ত্রীর বাড়িতে শনিবার হামলা চালানো হয়, বেশ কয়েকটা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাদের পরিবারেরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।

ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার অভিযোগও ওঠে।

মণিপুরের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন, বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের জামাই আরকে ইমোর বাড়িতেও আক্রমণ চালানো হয় বলে অভিযোগ।

জিরিবাম থেকে যে ছয়জনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে তার ন্যায় বিচার এবং অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার দাবি জানান বিক্ষুব্ধরা। এর পাশাপাশি বিধায়ক-মন্ত্রীদের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।

মণিপুর বিধানসভায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির বিধায়ক শেখ নুরুল হাসান বিবিসি হিন্দিকে বলেন, “বিকেল চারটার দিকে আমার বাড়িতে ১০০-১৫০ জনের ভিড় হয়। আমি সবে দিল্লি এসেছি। জমায়েতের কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলি।”

“ওদের অভিযোগ, বর্তমান বিধায়ক-মন্ত্রী মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না, তাই তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ। আমি তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। তাই তারা আমার বাড়িতে হামলা না চালিয়ে ফিরে যায়। আমি বলেছি, জনগণ যা বলবে আমি সেটাই করতে রাজি।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সহিংস সংঘর্ষের জেরে মণিপুরের একাধিক জেলায় কারফিউ

আপডেট সময় : ১১:৩৩:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

 

সহিংস সংঘর্ষের জেরে মণিপুরের একাধিক জেলায় কারফিউ, বর্তমান পরিস্থিতি কী?
আরও একবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুর। চলমান সহিংসতার কারণে পূর্ব এবং পশ্চিমে পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, থৌবাল, কাকচিং, কাংপোকপি এবং চূড়াচাঁদপুরে বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও।

সোমবার রাজ্যের শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত জেলায় রাকফিউ রয়েছে সেখানে ১৯শে নভেম্বর পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

গত কয়েকদিন ধরে একাধিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারে বারে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর।

সম্প্রতি এক কুকি নারীকে হত্যার অভিযোগ, সিআরপিএফ জওয়ানের গুলিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১০ জন কুকি যুবকের মৃত্যু, তারপর নারী-শিশু মিলিয়ে ছয়জনের (মেইতেই গোষ্ঠীর) অপহরণ এবং পরবর্তীতে নদী থেকে তাদের দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সে রাজ্যে নতুনভাবে হিংসা ছড়িয়েছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে মণিপুরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও তুঙ্গে।

শনিবার একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কের পদত্যাগ দাবি করে তাদের বাড়িতে হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। বিক্ষুব্ধদের মোকাবিলা করতে নামানো হয় বিপুল পুলিশ বাহিনী। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এরপর রোববার রাতে মেইতেই সম্প্রদায়ের ছয়জনকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে জিরিবাম থানা এলাকার বাবুপাড়ায় ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধদের একাংশের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এদিকে, রোববার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে কনরাড সাংমার নেতৃত্বাধীন ন্যাশানাল পিপলস পার্টি।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বিজেপির ন্যশানাল প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডাকে চিঠিতে মণিপুরের অবস্থার কথা জানিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, এন বীরেন সিংয়ের সরকার তার রাজ্যের (মণিপুরের) পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরাও।

মণিপুরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রোববার একটা উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। এরপরই সোমবার জানানো হয়, রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থা বা এনআইএ মণিপুরের সাম্প্রতিক তিনটে ঘটনার তদন্ত করবে যাকে কেন্দ্র করে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে ওই রাজ্যে।

এর আগে সেপ্টেম্বর মাসেও অশান্ত হয়ে উঠেছিল এই রাজ্য।

সোমবারের পরিস্থিতি কেমন
কারফিউ জারি করার পর সোমবার সকাল থেকেই থমথমে পরিস্থিতি রয়েছে ইম্ফলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতি দেখা গেছে। কড়া তল্লাশি চালানো হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। রাস্তা-ঘাটে যান চলাচল কম। কড়া তল্লাশির পরই যানবাহন যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

ওষুধের দোকান এবং জরুরি পরিষেবা বাদে অন্যান্য দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে কারফিউয়ের আওতায় থাকা অঞ্চলে।

মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন এবং রাজ ভবনের বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ইম্ফলের বাসিন্দা পি শরৎচন্দ্র রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। মেইতেই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এই অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মণিপুর আর নিরাপদ নেই। পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত একবছর ধরে যা অবস্থা তাতে মানুষের আর প্রশাসনের প্রতিও আস্থা নেই।”

“আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর-পাকড়, কারফিউ, তল্লাশি, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই প্রায় হয় না। উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এমন পদক্ষেপ বহু বছর ধরেই দেখে আসছি আমরা। এতে কিছুই লাভ হয়নি। মণিপুরের পরিস্থিতি আসলে সাংবিধানিক ব্যর্থতার কারণে বলেই আমি মনে করি।”

মেইতেইদের পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মেইতেই গোষ্ঠীর মানুষ মোটেই নিরাপদ বোধ করছেন না কোথাও।”

অন্যদিকে, কুকি গোষ্ঠীর অভিযোগ, মেইতেই প্রধান অঞ্চলে তাদের নিশানা করা হচ্ছে। কুকি গোষ্ঠীর হাতজালহই হাওকিপ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কুকিদের পরিস্থিতির কথা আদৌ কি কেউ ভাবছে? তাদের দেখলেই মারধর করা হচ্ছে, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। হয় আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছে, নয়ত অন্য কোথাও গা ঢাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।”

একইসঙ্গে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

মি. হাওকিপ বলেন, “শান্তি কমিটি তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল, কোথায় সেই কমিটি এবং কী করেছে তারা? যদি কিছুই করেই থাকে তাহলে এই পরিস্থিতি তৈরিই হতো না মণিপুরে। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সরকার কী করছে? গত বছর থেকে মণিপুরে আগুন জ্বলছে।”

মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়িতে হামলা
গত কয়েকদিন ধরে মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইম্ফলে বেশ কয়েকজন বিধায়ক ও মন্ত্রীর বাড়িতে শনিবার হামলা চালানো হয়, বেশ কয়েকটা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাদের পরিবারেরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।

ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার অভিযোগও ওঠে।

মণিপুরের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন, বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের জামাই আরকে ইমোর বাড়িতেও আক্রমণ চালানো হয় বলে অভিযোগ।

জিরিবাম থেকে যে ছয়জনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে তার ন্যায় বিচার এবং অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার দাবি জানান বিক্ষুব্ধরা। এর পাশাপাশি বিধায়ক-মন্ত্রীদের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।

মণিপুর বিধানসভায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির বিধায়ক শেখ নুরুল হাসান বিবিসি হিন্দিকে বলেন, “বিকেল চারটার দিকে আমার বাড়িতে ১০০-১৫০ জনের ভিড় হয়। আমি সবে দিল্লি এসেছি। জমায়েতের কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলি।”

“ওদের অভিযোগ, বর্তমান বিধায়ক-মন্ত্রী মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না, তাই তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ। আমি তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। তাই তারা আমার বাড়িতে হামলা না চালিয়ে ফিরে যায়। আমি বলেছি, জনগণ যা বলবে আমি সেটাই করতে রাজি।”