ঢাকা ১১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা আজ ডিসির দায়িত্বে শেখ হাসিনা চাইলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন হাসিনাকে যেভাবে ভারত থেকে ফেরত আনা সম্ভব জ্বালানির অভাব, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলে তাৎক্ষণিক বিকল্প নেই বিপিডিবির ভারতের সঙ্গে চলমান কোনো প্রকল্প স্থগিত হয়নি:অর্থ উপদেষ্টা এত বিদ্যুৎকেন্দ্র, তবু কেন লোডশেডিং পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে কী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ টাকা পাচারের স্বর্গ বাংলাদেশ রাজাকার খুঁজে বার করার ভার পেলেন তাঁদেরই আইনজীবী পুলিশ সংস্কারে শিগগিরই প্রাথমিক কমিটি গঠন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হবে মেট্রোরেলের ছিদ্দিকের চুক্তি বাতিল, চলতি দায়িত্বে রউফ বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ১৭ স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরের নিয়োগ বাতিল রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনে জোর প্রধান উপদেষ্টার সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড! গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৬৩১, আহত ১৯২০০ শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিবর্তনের হাওয়া ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি: অর্থ উপদেষ্টা নিম্ন আদালতের ১৬৮ বিচারককে একযোগে বদলি

সিঙ্গারা তিনকোনা হয় কেন?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৬:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
  • / ৫০১০ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আসুন জেনে নিই সিঙ্গারা তিনকোনা হওয়ার পিছনের গল্প…

ঠাণ্ডা লুচি বারংবার ফেরত পাঠানোয় রাজবাড়ির হালুইকর অনুমতি চেয়েছিলেন রাজসভায় মিষ্টান্ন পাঠাতে। রাজচিকিৎসকের পরামর্শে মধুমেহ রোগাক্রান্ত রাজা অগ্নিশর্মা হয়ে শূলে চড়ানোর হুকুম দিয়েছিলেন হালুইকরকে। অনেক অনুনয় বিনয় করে নিজের প্রাণ রক্ষা করেছেন হালুইকর। রাজা আদেশ দিয়েছেন – হালুইকরকে তিনরাত্রের মধ্যে দেশত্যাগ করতে।

দ্বিতীয় রাত্রে হালুইকরের স্ত্রী ঠিক করেছে দেশত্যাগের আগে একবার দেখা করবে রাজার সাথে। সেইমতো তৃতীয়দিন সকাল বেলা রাজদরবারে এসে প্রণাম জানালো স্বয়ং রাজামশাইকে। রাজসভায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করায়, রাজাকে জানায় – সে নাকি এমনভাবে লুচি তরকারি করতে পারে, যা রাজা আধঘন্টা বাদে খেলেও গরম পাবেন। এজাতীয় লুচি এবং তরকারি নাকি কিছুক্ষণ বাদে খাওয়াই দস্তুর।

সন্দিহান রাজা কিঞ্চিৎ কৌতূহলী হয়ে হালুইকরের স্ত্রীকে পাঠালেন পাকশালে। জানিয়ে দিলেন যখন রাজসভা থেকে খবর যাবে তৎক্ষণাৎ পাকশাল থেকে খাবার পৌঁছনো চাই। হালুইকরের স্ত্রী মৃদু হেসে মহারাজকে জানিয়েছিলো – খাদ্যদ্রব্য রাজসভায় তৎক্ষণাৎই পৌঁছবে, কিন্তু অনুগ্রহ করে তিনি যেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খান – অন্যথায় মহামান্য রাজকীয় জিহ্বা পুড়ে যেতে পারে। বিস্মিত মহারাজের সামনে দিয়ে হাস্যমুখে হালুইকরের স্ত্রী চলে গেল পাকশালে।

রাজ-পাচক আলুর তরকারি তৈরি করে পাকশালে দাঁড়িয়ে কাঁপছেন, হুকুম এলেই লুচি ভাজতে হবে। ময়দার তাল মাখা রয়েছে হাতের সামনে। হালুইকরের স্ত্রী পাচককে কটাক্ষ করে বসলো ময়দার তাল নিয়ে। লেচি কেটে লুচি বেলে, কাঁচা ময়দার ভেতর লুচির জন্য তৈরি সাধারণ তরকারি ভরে দিয়ে, সমভুজাকৃতি ত্রিভুজের গড়ন বানিয়ে আড়ষ্ঠ রাজ পাচকের সামনে নিজের আঁচল সামলে শুরু করলো চটুল গল্প।

রাজাজ্ঞা আসতেই তরকারির পুর ভর্তি দশটি ত্রিভুজাকৃতির লুচির ময়দা ফুটন্ত ঘি ভর্তি কড়ায় ফেলে দিয়ে, নিমেষের মধ্যে সোনালী রঙের ত্রিভুজগুলি তুলে নিয়ে স্বর্ণথালায় সাজিয়ে নিজেই চললো রাজসভায়।

মহারাজ এরূপ অদ্ভুত দর্শন খাদ্যবস্তু দেখে স্তম্ভিত। হালুইকরের স্ত্রী অত্যন্ত বিনীতভাবে জানালো – খাদ্যদ্রব্যটির নাম সমভুজা। মহারাজ যেন সম্পূর্ণ বস্তুটি মুখে না ঢুকিয়ে একটি কামড় দিয়ে দেখেন – ঠাণ্ডা না গরম এবং অনুগ্রহ করে স্বাদটি জানান।

মহারাজ স্বাদ জানাননি। তিনি তিনছড়া মুক্তো মালা খুলে হালুইকরের স্ত্রীয়ের হাতে দিয়েছিলেন। রাজবাড়ির হালুইকরের দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিলেন। প্রায় ছ’মাস পর হেসে উঠেছিলেন মহারাজ, শান্তি পেয়েছিলো তামাম প্রজাকুল।

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। ১৭৬৬ সালে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার রাজ-হালুইকর, কলিঙ্গ তথা বর্তমান ওড়িষ্যা থেকে আগত গুণীনাথ হালুইকরের ষষ্ঠপুত্র গিরীধারী হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী দেবী আবিষ্কার করেছিলেন সিঙ্গাড়া।

শাক্ত সাধক, পরবর্তিকালে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি রামপ্রসাদ, স্বয়ং সন্ধ্যাহ্নিক সেরে প্রতিসন্ধ্যায় বসতেন একথালা সিঙ্গাড়া নিয়ে। দোলপূর্ণিমার সন্ধ্যায়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দরবার থেকে বাইশটি সুসজ্জিত হস্তী ভেট নিয়ে গিয়েছিলো উমিচাঁদের কাছে – বাইশটি স্বর্ণথালা ভর্তি বাইশশোটি সিঙ্গাড়া। ভারতীয় খাদ্য হিসেবে সিঙ্গাড়ার সাথে রবার্ট ক্লাইভের প্রথম সাক্ষাৎ হয়, এই মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রেরই সৌজন্যে।সিঙ্গাড়ার জন্য ইতিহাস স্বীকৃতি দিয়েছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে। নাম ভুলে গেছে তাঁর প্রধান হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী বেহারার।

ইংরিজিতে বলে, কমন সেন্স মেকস্ আ ম্যান আনকমন। ধরিত্রীদেবী সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন এই অসাধারণ খাদ্যদ্রব্যটির, যেটি সেই ১৭৬৬ সাল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা তথা সারা ভারতে। ঐতিহাসিকদের মতে, এর বহু আগে, নবম শতাব্দীতে পারস্যের অধিবাসীরা যব এবং ময়দার তালের সঙ্গে গাজর কড়াইশুঁটি রসুন ও মাংস মেখে সেঁকে খেতো, যাকে বর্তমান সিঙ্গাড়ার জনক হিসাবে ধরা হলেও, সুদূর পারস্য থেকে ভারতবর্ষে এসেও তাঁরা ময়দার তালে মাংসের কুঁচি ঢুকিয়ে সেঁকেই খেতেন। এরও বহুপরে তাঁরা ভারতবর্ষের উত্তরপূর্ব উপকূলে বিভিন্ন মশলা সহযোগে তৈরি আলুর তরকারি, ময়দার ভেতর ঢুকিয়ে ঘিয়ে ভাজার পদ্ধতিতে চমৎকৃত হ’ন।

ডায়বেটিক পেশেন্টদের ঘন ঘন খিদে পায়। চিকিৎসাবিজ্ঞান উন্নত হয়েছে। ডাক্তাররা বলছেন, অনেকক্ষণ অন্তর একসাথে প্রচুর পরিমানে না খেয়ে, ক্যালোরি মেপে কিছুক্ষণ অন্তর অল্পসল্প খাবার খেতে। কিন্তু সেযুগে ডাক্তারবাবুদের হৃদয় ছিলো বিশাল। মধুমেহ রোগীরা তখন তেল ঘি মশলা, ভাজা খেলেও তাঁরা রাগ করতেন না। নিশ্চিতভাবেই আজকের যুগে ডাক্তার বাবুরা আঁতকে উঠবেন যদি দেখেন কোনো ডায়াবেটিক পেশেন্ট প্রতিঘন্টায় সিঙ্গাড়া ওড়াচ্ছেন, তবু, আঁটকানো যায়নি সিঙ্গাড়াকে। শহুরে অভিজাত পরিবারের বৈঠকখানায় মোটা গদির সোফায় বসা অতিথির থালাই হোক বা প্রত্যন্ত গ্রামের জরাজীর্ণ চায়ের দোকানের সামনে নড়বড়ে বাঁশের বেঞ্চে রাখা তেলচিটে কালো ভাঙ্গা বেতের চুবড়ি – বিকেল সাড়ে চারটেই হোক বা সকাল পৌনে দশটা, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রধান হালুইকরের স্ত্রীর উদ্ভাবনটি সর্বত্র সর্বদা সর্বগামী।

যা রাজসভায় রাজ-সম্মুখে পরিবেশিত হয়, তার কৌলীন্য প্রশ্নাতীত হবে – এই তো স্বাভাবিক।

ভাষাবিদদের মতে, সমভুজা–> সম্ভোজা–> সাম্ভোসা–> সামোসা।মতান্তরে, সমভুজা–> সম্ভোজা–> সিভুসা–> সিঁঙুরা(নদীয়ার কথ্যভাষার প্রভাবে)–> সিঙ্গাড়া।

সময় দিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

তথ্য সূত্র : ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সিঙ্গারা তিনকোনা হয় কেন?

আপডেট সময় : ০৯:৫৬:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২

আসুন জেনে নিই সিঙ্গারা তিনকোনা হওয়ার পিছনের গল্প…

ঠাণ্ডা লুচি বারংবার ফেরত পাঠানোয় রাজবাড়ির হালুইকর অনুমতি চেয়েছিলেন রাজসভায় মিষ্টান্ন পাঠাতে। রাজচিকিৎসকের পরামর্শে মধুমেহ রোগাক্রান্ত রাজা অগ্নিশর্মা হয়ে শূলে চড়ানোর হুকুম দিয়েছিলেন হালুইকরকে। অনেক অনুনয় বিনয় করে নিজের প্রাণ রক্ষা করেছেন হালুইকর। রাজা আদেশ দিয়েছেন – হালুইকরকে তিনরাত্রের মধ্যে দেশত্যাগ করতে।

দ্বিতীয় রাত্রে হালুইকরের স্ত্রী ঠিক করেছে দেশত্যাগের আগে একবার দেখা করবে রাজার সাথে। সেইমতো তৃতীয়দিন সকাল বেলা রাজদরবারে এসে প্রণাম জানালো স্বয়ং রাজামশাইকে। রাজসভায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করায়, রাজাকে জানায় – সে নাকি এমনভাবে লুচি তরকারি করতে পারে, যা রাজা আধঘন্টা বাদে খেলেও গরম পাবেন। এজাতীয় লুচি এবং তরকারি নাকি কিছুক্ষণ বাদে খাওয়াই দস্তুর।

সন্দিহান রাজা কিঞ্চিৎ কৌতূহলী হয়ে হালুইকরের স্ত্রীকে পাঠালেন পাকশালে। জানিয়ে দিলেন যখন রাজসভা থেকে খবর যাবে তৎক্ষণাৎ পাকশাল থেকে খাবার পৌঁছনো চাই। হালুইকরের স্ত্রী মৃদু হেসে মহারাজকে জানিয়েছিলো – খাদ্যদ্রব্য রাজসভায় তৎক্ষণাৎই পৌঁছবে, কিন্তু অনুগ্রহ করে তিনি যেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খান – অন্যথায় মহামান্য রাজকীয় জিহ্বা পুড়ে যেতে পারে। বিস্মিত মহারাজের সামনে দিয়ে হাস্যমুখে হালুইকরের স্ত্রী চলে গেল পাকশালে।

রাজ-পাচক আলুর তরকারি তৈরি করে পাকশালে দাঁড়িয়ে কাঁপছেন, হুকুম এলেই লুচি ভাজতে হবে। ময়দার তাল মাখা রয়েছে হাতের সামনে। হালুইকরের স্ত্রী পাচককে কটাক্ষ করে বসলো ময়দার তাল নিয়ে। লেচি কেটে লুচি বেলে, কাঁচা ময়দার ভেতর লুচির জন্য তৈরি সাধারণ তরকারি ভরে দিয়ে, সমভুজাকৃতি ত্রিভুজের গড়ন বানিয়ে আড়ষ্ঠ রাজ পাচকের সামনে নিজের আঁচল সামলে শুরু করলো চটুল গল্প।

রাজাজ্ঞা আসতেই তরকারির পুর ভর্তি দশটি ত্রিভুজাকৃতির লুচির ময়দা ফুটন্ত ঘি ভর্তি কড়ায় ফেলে দিয়ে, নিমেষের মধ্যে সোনালী রঙের ত্রিভুজগুলি তুলে নিয়ে স্বর্ণথালায় সাজিয়ে নিজেই চললো রাজসভায়।

মহারাজ এরূপ অদ্ভুত দর্শন খাদ্যবস্তু দেখে স্তম্ভিত। হালুইকরের স্ত্রী অত্যন্ত বিনীতভাবে জানালো – খাদ্যদ্রব্যটির নাম সমভুজা। মহারাজ যেন সম্পূর্ণ বস্তুটি মুখে না ঢুকিয়ে একটি কামড় দিয়ে দেখেন – ঠাণ্ডা না গরম এবং অনুগ্রহ করে স্বাদটি জানান।

মহারাজ স্বাদ জানাননি। তিনি তিনছড়া মুক্তো মালা খুলে হালুইকরের স্ত্রীয়ের হাতে দিয়েছিলেন। রাজবাড়ির হালুইকরের দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিলেন। প্রায় ছ’মাস পর হেসে উঠেছিলেন মহারাজ, শান্তি পেয়েছিলো তামাম প্রজাকুল।

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। ১৭৬৬ সালে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার রাজ-হালুইকর, কলিঙ্গ তথা বর্তমান ওড়িষ্যা থেকে আগত গুণীনাথ হালুইকরের ষষ্ঠপুত্র গিরীধারী হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী দেবী আবিষ্কার করেছিলেন সিঙ্গাড়া।

শাক্ত সাধক, পরবর্তিকালে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি রামপ্রসাদ, স্বয়ং সন্ধ্যাহ্নিক সেরে প্রতিসন্ধ্যায় বসতেন একথালা সিঙ্গাড়া নিয়ে। দোলপূর্ণিমার সন্ধ্যায়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দরবার থেকে বাইশটি সুসজ্জিত হস্তী ভেট নিয়ে গিয়েছিলো উমিচাঁদের কাছে – বাইশটি স্বর্ণথালা ভর্তি বাইশশোটি সিঙ্গাড়া। ভারতীয় খাদ্য হিসেবে সিঙ্গাড়ার সাথে রবার্ট ক্লাইভের প্রথম সাক্ষাৎ হয়, এই মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রেরই সৌজন্যে।সিঙ্গাড়ার জন্য ইতিহাস স্বীকৃতি দিয়েছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে। নাম ভুলে গেছে তাঁর প্রধান হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী বেহারার।

ইংরিজিতে বলে, কমন সেন্স মেকস্ আ ম্যান আনকমন। ধরিত্রীদেবী সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন এই অসাধারণ খাদ্যদ্রব্যটির, যেটি সেই ১৭৬৬ সাল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা তথা সারা ভারতে। ঐতিহাসিকদের মতে, এর বহু আগে, নবম শতাব্দীতে পারস্যের অধিবাসীরা যব এবং ময়দার তালের সঙ্গে গাজর কড়াইশুঁটি রসুন ও মাংস মেখে সেঁকে খেতো, যাকে বর্তমান সিঙ্গাড়ার জনক হিসাবে ধরা হলেও, সুদূর পারস্য থেকে ভারতবর্ষে এসেও তাঁরা ময়দার তালে মাংসের কুঁচি ঢুকিয়ে সেঁকেই খেতেন। এরও বহুপরে তাঁরা ভারতবর্ষের উত্তরপূর্ব উপকূলে বিভিন্ন মশলা সহযোগে তৈরি আলুর তরকারি, ময়দার ভেতর ঢুকিয়ে ঘিয়ে ভাজার পদ্ধতিতে চমৎকৃত হ’ন।

ডায়বেটিক পেশেন্টদের ঘন ঘন খিদে পায়। চিকিৎসাবিজ্ঞান উন্নত হয়েছে। ডাক্তাররা বলছেন, অনেকক্ষণ অন্তর একসাথে প্রচুর পরিমানে না খেয়ে, ক্যালোরি মেপে কিছুক্ষণ অন্তর অল্পসল্প খাবার খেতে। কিন্তু সেযুগে ডাক্তারবাবুদের হৃদয় ছিলো বিশাল। মধুমেহ রোগীরা তখন তেল ঘি মশলা, ভাজা খেলেও তাঁরা রাগ করতেন না। নিশ্চিতভাবেই আজকের যুগে ডাক্তার বাবুরা আঁতকে উঠবেন যদি দেখেন কোনো ডায়াবেটিক পেশেন্ট প্রতিঘন্টায় সিঙ্গাড়া ওড়াচ্ছেন, তবু, আঁটকানো যায়নি সিঙ্গাড়াকে। শহুরে অভিজাত পরিবারের বৈঠকখানায় মোটা গদির সোফায় বসা অতিথির থালাই হোক বা প্রত্যন্ত গ্রামের জরাজীর্ণ চায়ের দোকানের সামনে নড়বড়ে বাঁশের বেঞ্চে রাখা তেলচিটে কালো ভাঙ্গা বেতের চুবড়ি – বিকেল সাড়ে চারটেই হোক বা সকাল পৌনে দশটা, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রধান হালুইকরের স্ত্রীর উদ্ভাবনটি সর্বত্র সর্বদা সর্বগামী।

যা রাজসভায় রাজ-সম্মুখে পরিবেশিত হয়, তার কৌলীন্য প্রশ্নাতীত হবে – এই তো স্বাভাবিক।

ভাষাবিদদের মতে, সমভুজা–> সম্ভোজা–> সাম্ভোসা–> সামোসা।মতান্তরে, সমভুজা–> সম্ভোজা–> সিভুসা–> সিঁঙুরা(নদীয়ার কথ্যভাষার প্রভাবে)–> সিঙ্গাড়া।

সময় দিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

তথ্য সূত্র : ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য