স্পিকারের পদত্যাগ, দেখা দিতে পারে সাংবিধানিক জটিলতা
- আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৫০৬৭ বার পড়া হয়েছে
স্পিকারের পদত্যাগ, দেখা দিতে পারে সাংবিধানিক জটিলতা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তিনি। সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। তবে তাঁর পদত্যাগ নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। সংসদ ভেঙে দেওয়ার ২৬ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হওয়ায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ কে করাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সংসদ না থাকলেও স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার স্বপদে বহাল থাকার বিধান রয়েছে। সংবিধান বলছে, পদত্যাগ করলেও নতুন স্পিকার দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত শিরীন শারমিন চৌধুরীই পদে থাকছেন বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ ত্রয়োদশ সংসদের নির্বাচিত স্পিকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত শিরীন শারমিনই স্পিকার হিসেবে গণ্য হবেন।
তিনিই নতুন সংসদের সদস্যদের শপথ পড়াবেন।
সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের পদ কিভাবে শূন্য হবে, সে বিষয়ে বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্য পদ না থাকা, পদত্যাগ করাসহ পাঁচটি কারণে স্পিকারের পদ শূন্য হবে। স্পিকার যদি সংসদ সদস্য পদে না থাকেন, মন্ত্রী হন, অপসারণের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়, পদত্যাগ করেন অথবা কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর অন্য কোনো সদস্য তাঁর কার্যভার গ্রহণ করেন।
তবে একই অনুচ্ছেদে বলা আছে, এসব বিধান সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাঁর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, পরবর্তী সংসদ না আসা পর্যন্ত স্পিকার তাঁর পদে বহাল থাকেন। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে আছেন। এতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্পিকার নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। তাঁকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল স্পিকার নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শিরীন শারমিন টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্বে ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পদত্যাগপত্রটি আমাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি। স্পিকার নিজেই রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। সেটা সরাসরি, নাকি ই-মেইলে পাঠানো হয়েছে তা বলতে পারব না। তবে সোমবারই এই পদত্যাগপত্র দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘স্পিকার মহোদয় পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। সেটি গৃহীত হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পত্রটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন (৩৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৭ আগস্ট শিরীন শারমিনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এর আগে ১৫ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।