ঢাকা ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
পদত্যাগ করলেন নাহিদ ইসলাম বাবরের জীবন থেকে ১৭ বছর কেড়ে নেয় ‘প্রথম আলো’ সোমবার থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চাপমুক্ত প্রশাসন এবং ড. ইউনূসের দর্শন ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ পালনের ঘোষণা আনিসুল হকের মুক্তি চেয়ে পোস্টার দিল্লিতে গৃহবন্দী শেখ হাসিনা? গ্যাস-বিদ্যুতে ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ মোদি-হাসিনা মাইনাস: ট্রাম্পের আস্থায় এখন ড. ইউনূস! মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ নিয়ে ভাইরাল ভিডিওর আসল ঘটনা আমি ফিরব, আমাদের শহিদদের প্রতিশোধ নেব’: শেখ হাসিনা অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত ইন্টারপোলের জালে বেনজীর হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে ভারতে! এটুআই ছিল মিলেমিশে লুটপাটের প্রকল্প আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল বিদেশেও বিচার সম্ভব শেখ হাসিনার ‘দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!’ : হাসিনার উদ্দেশ্য প্রেস সচিব

হজ্বের সংক্ষিপ্ত নিয়ম ও জরুরি মাসায়িল

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
  • আপডেট সময় : ১২:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
  • / 97
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হজ্ব তিন প্রকার

এক. তামাত্তু হজ্ব

মীকাত অতিক্রমের পূর্বে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা মুকাররামায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পাদন করে চুল কেটে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এই সফরেই ৮ যিলহজ্ব হজ্বের ইহরাম বেঁধে হজ্বকার্য সম্পাদন করা।

দুই. ইফরাদ

মীকাত অতিক্রমের পূর্বে শুধু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা মুকাররামা পৌঁছে (উমরা না করা বরং তাওয়াফে কুদুম করে মুস্তাহাব তাওয়াফ করা) ইহরাম অবস্থায় হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা।

তিন. কিরান

মীকাত অতিক্রমের পূর্বে একই সাথে উমরা ও হজ্বের নিয়তে ইহরাম বেঁধে এই ইহরামে উমরাহ ও হজ্ব উভয়টি পালন করা। মক্কা মুকাররামা পৌঁছে প্রথমে উমরা করা অতঃপর এই ইহরাম অবস্থাতেই হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এবং হজ্বের সময়ে হজ্ব করা।

ইহরাম বাঁধার নিয়ম

হজ্ব অথবা উমরার নিয়তে তালবিয়া পড়লেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে এর সুন্নাত তরীকা হল :

*  মোচনখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম  চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা।

*  ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা। গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নেওয়া। ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব -গুনয়াতুন নাসেক পৃ. ৬৯

*  পুরুষগণ দুটি নতুন বা ধৌত সাদা চাদর নিবে। একটি লুঙ্গির  মতো করে পরবে। অপরটি চাদর হিসাবে ব্যবহার করবে। কালো বা অন্য কোনো শরীয়তসিদ্ধ রং এর কাপড় পরিধান করাও জায়েয। পায়ের পাতার উপরের উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরা যাবে।

    মহিলাগণ স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তারা ইহরাম অবস্থায় জুতা মোজা ব্যবহার করতে পারবে।

*  ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর ও ঘ্রান ইহরাম বাধারর পরে বাকী থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। আর ইহরামের কাপড়ে আতর/সুগন্ধি লাগাবেনা। কেননা ইহরামের কাপড়ে এভাবে আতর বা  সুগন্ধি লাগানো নিষিদ্ধ যা ইহরামের পরও লেগে থাকে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৯ গুনাতুন নাসেক পৃ. ৭০ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২২ মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৮

(মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে) ইহরাম বাঁধার পূর্বে দুই রাকাত নফল নামায পড়া ভালো।-গুনয়াতুননাসেক ৭৩মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৯রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২

*  নিয়ত : (পুরুষ হলে টুপি বা মাথার কাপড় খুলে ফেলতে হবে) তামাত্তুকারী শুধু উমরার নিয়ত করবেইফরাদকারী শুধু হজ্বের নিয়ত এবং কিরানকারী হজ্ব ও উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে। পুরুষ উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়বে আর মহিলা নিম্নস্বরে পড়বে।

তালবিয়া হল —

لبيك اللهم لبيك لبيك لا شريك لك لبيك، إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك.

          –মানাসিক পৃ. ১০০গুনয়াতুন্নাসেক পৃ. ৭৪আদ্দুররুল মুখতার পৃ. ৪৮৪

 

মাসআলা : তালবিয়া পূর্ণ পড়তে হবে। তালবিয়ার এই দুআর অল্প কিছু ছেড়ে দেওয়াও মাকরূহ।-মানাসিক পৃ. ১০২আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৪ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৩,

মাসআলা : তালবিয়ার উক্ত দুআর স্থলে সুবহানাল্লাহআলহামদুলিল্লাহকালিমা তাইয়্যিবা বা আল্লাহ তাআলার কোনো জিকির পড়লেও ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু তালবিয়া ছাড়া অন্য কিছু পড়া মাকরুহ তাই তালবিয়া পড়া সম্ভব না হলে আল্লাহ তাআলার যে কোনো জিকির পড়ে ইহরাম বাঁধতে পারবে। -মানাসিক ১০২গুনয়াতুননাসিক ৭৬আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৩

মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা ও পা-মোজা ব্যবহার করতে পারবে। তবে হাত মোজার ব্যাপারে দুধরনের দলীল বিদ্যমান থাকায় কেউ কেউ হাতমোজা পরিধান না করাকে উত্তম বলেছেন। -আল ইসতিযকার ১১/৩০সূনানে আবু দাউদ ২/২৫৪ আত্তারগীব ওয়াত তারহীব ৪/৪৭৭মীযানুল ইতিদাল ৩/৪৫ইলাউস সুনান ১০/৪৮ আলবাহরুর রায়েক ২/২২৩বাদায়ে ২/৪১০ফাতহুল মুলহিম ৩/২০৪মানাসিক ১১৬গুনাতুল নাসিক -৭৪খানিয়া -১/২৮৪আহকামে হজ্ব ৩৫

মাসআলা : মহিলাগণ ওযর অবস্থায় অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাবসন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও ইহরাম বাঁধতে ও তালবিয়া পড়তে পারবে। হজ্বের অন্যান্য কাজও করতে পারবে তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করানামায পড়া জায়েয নয়।

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায়ও মহিলাদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা নিষিদ্ধ। তাই এ অবস্থায় চেহারার সাথে কাপড় লেগে না থাকে এভাবে চেহারার পর্দা করা জরুরি। এখন এক ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়যা পরিধান করে সহজেই চেহারার পর্দা করা যায়। -আদিল্লাতুল হেজাব ৩২৯-৩৩৪নাইলুল আওতার ৫/৭১ মানাসিক ১১৫ফাতহুল বারী ৩/৪৭৫এলামুল মুআককিয়ীন ১/১২২-১২৩হজ্বের মাস শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ শাওয়াল মাসের আগে হজ্বের ইহরাম বাঁধা মাকরূহ। -গুনয়াতুন্নাসেক -৬৭

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা যাবে। -শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাকে অন্যান্য মৃতের মতোই গোসল ইত্যাদি দিবে এবং স্বাভাবিক মৃতের  মতোই অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করবে।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়

১। পুরুষের জন্য শরীরের কোনো অঙ্গের আকৃতি বা গঠন অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। যেমন : পাঞ্জাবিজুব্বাশার্টসেলোয়ারপ্যান্টগেঞ্জিকোর্টসোয়েটারজাঙ্গিয়া।

মাসআলা : ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করে কিংবা জোড়া দিয়ে পরিধান করা যাবে। তবে ইহরামের কাপড় এ ধরনের সেলাইমুক্ত হওয়াই ভালো। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করা ও বেল্ট বাঁধা নিষিদ্ধ নয়।

২। পুরুষের জন্য মাথা ও চেহারা ঢাকা নিষিদ্ধ। মহিলাদের জন্য শুধু চেহারায় কাপড় স্পর্শ করানো নিষেধ। তাই তারা পরপুরুষের সামনে চেহারায় কাপড় লেগে না থাকে এভাবে পর্দা করবে।

৩। পুরুষের জন্য পায়ের উপরের অংশের উঁচু হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। এমন জুতা বা স্যান্ডেল করতে হবে যা পরলে ওই উচু অংশ খোলা থাকে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০

৪। ইহরামের কাপড় বা শরীরে আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ। সুগন্ধিযুক্ত তেল যয়তূন ও তিলের তেলও লাগানো যাবে না। সুগন্ধি সাবানপাউডারস্নোক্রীম ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি পৃথকভাবে সুগন্ধি জর্দা খাওয়াও নিষিদ্ধ। পানের সাথে খাওয়া মাকরূহ। ইচ্ছাকৃতভাবে ফল-ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরূহ। -মানাসিক ১২১আহকামে হজ্ব ৩৪আহকামে হজ্ব ৩৪

৫। শরীরের কোনো স্থানের চুলপশম বা নখ কাটা বা উপড়ানো নিষিদ্ধ।

৬। ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে এ সংক্রান্ত কোনো কথা বা কাজ করা নিষিদ্ধ।

৭। কোনো বন্য পশু শিকার করা বা কোনো শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ।

৮। ঝগড়া-বিবাদ সাধারণ সময়েও নিষিদ্ধ। ইহরাম অবস্থায় এর গুনাহ আরো বেশি।

৯। কাপড় বা শরীরের উকূন মারা নিষিদ্ধ। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৬-৪৯০ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৪, মানাসিক ১১৭-১২০, গুনয়াতুননাসেক ৮৫

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ তাতে লিপ্ত হওয়া গুনাহ। এর কারণে হজ্ব কিছুটা অসম্পূর্ণ হয়ে যায় আর কিছু নিষেধাজ্ঞা এমন রয়েছে যেগুলো করলে দম’ ওয়াজিব হয়। আর আরাফায় অবস্থানের পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হলে হজ্বই নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে গরু বা উট যবেহ করা ছাড়া পরবর্তী বছর কাযা করা জরুরি। ¬-আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৮-৫৫৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৪মানাসিক ১১৭

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ব্যতীত পূর্ণ শরীর চাদর ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করা যাবে। কানঘাড়পা ঢাকা যাবে। মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া যাবে। তবে পুরো মুখ বালিশের উপর রেখে ঢেকে শোয়া যাবে না। -মানাসিক ১২৩-১২৪গুনয়াতুননাসেক ৯৩

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় পান খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তবে পানে সুগন্ধিযুক্ত মসলা বা জর্দা খাওয়া নিষিদ্ধ।

মাসআলা  : ইহরাম অবস্থায় পানিতে ডুব দেওয়া যাবে। -গুনয়াতুনন্নাসেক ৯১

 

উমরার পদ্ধতি

উমরার ফরয দুটি

১। উমরার ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ উমরার নিয়তে তালবিয়া পড়া।

২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা ।

উমরার ওয়াজিব দুটি

১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।

২। মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা।

 

মাসআলা :   উমরার তাওয়াফে পুরুষের জন্য ইজতিবা’ অর্থাৎ ডান কাঁধ খালি রেখে চাদর বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা এবং রমল’ অর্থাৎ তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে কিছুটা দ্রুত বীরদর্পে হাঁটা।

উমরার তাওয়াফ

মাসআলা :   যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল অর্থাৎ বীরদর্পে কাঁধ হেলিয়ে কিছুটা দ্রুত বেগে চলা সুন্নত। তদ্রƒপ পুরো তাওয়াফে ইজতেবা (ডান কাঁধ খালি করে ডান বগলের নিচে দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর দিয়ে চাদর পরিধান) করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তবে এ দুটি শুধু পুরুষদের জন্য সুন্নত। মহিলাদের জন্য নয়। -মানাসিক ১২৯আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৮ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫

মাসআলা :   তাওয়াফকারীর সীনা বাইতুল্লাহ দিকে করে তাওয়াফ করা যাবে না। এমনকি রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার সময় কিংবা হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়ার সময় সীনা বাইতুল্লাহর দিকে ঘুরে গেলে যেখান থেকে ঘুরেছে সেখান থেকেই সীনা ঠিক করে আবার তাওয়াফ শুরু করা জরুরি। -মানাসিক ১৫৩গুন্য়াতুন নাসিক ১১৩রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৪

মাসআলা :   সকল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া ওয়াজিব। চাই তাওয়াফ নফল হোক বা ফরয। আর এই দুই রাকাত মাকামে ইব্রাহীমীর পিছনে পড়া ভালো। কিন্তু জায়গার সংকুলান না হলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে পড়া যাবে। এমনকি হেরেমের সীমানার ভিতর পড়লেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। হেরেমের বাইরে পড়া মাকরূহ। তবে পড়লে আদায় হবে যাবে। দম ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ১৫৫আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬গুনয়াতুননাসেক ১১৬

মাসআলা :   তাওয়াফ পরবর্তী দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পরেই অবিলম্বে আদায় করা উত্তম। বিনা ওজরে বিলম্বে পড়া মাকরূহ। তবে মাকরূহ ওয়াক্ত হলে পরে পড়বে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯মানাসিক ১৫৫গুনয়াতুননাসেক ১১৬

মাসআলা :   একাধিক তাওয়াফ করে পরবর্তী দুই রাকাত নামাযকে একত্রে পড়া মাকরূহ। তবে পূর্বের তাওয়াফের পরের সময় যদি মাকরূহ ওয়াক্ত হয়ে থাকে তবে একাধিক তাওয়াফের নামায একত্রে আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই। -গুনয়াতুনাসেক ১১৭ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

 

হজ্বের পদ্ধতি

হজ্বের ফরয তিনটি :

১। ইহরাম বাঁধা

২। উকূফে আরাফা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ্ব সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে পরবর্তি রাতের সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্বে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।

৩।      তাওয়াফে যিয়ারত। ১০ যিলহজ্ব থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই এ তাওয়াফ সম্পন্ন করা।

হজ্বের ওয়াজিবসমূহ এই

১। উকূফে মুযদালিফা। ১০ যিলহজ্ব সোবহে সাদিকের পর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের ভিতর স্বল্প সময় মুযদালিফায় অবস্থান করলে এ ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

২। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।

     এ সায়ী তাওয়াফে যিয়ারতের পরও করা যায়। আবার ৮ যিলহজ্বের আগেও নফল তওয়াফের পর আদায় করা যায়। ইফরাদ হজ্ব আদায়কারীগণ মক্কা প্রবেশের পর যে তাওয়াফে কুদুম’ করে থাকে এরপর হজ্বের ওয়াজিব সায়ী করে নিতে পারে।

৩। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে জামরাতে রমী তথা কংকর নিক্ষেপ করা।

৪। তামাত্তু ও কিরান হজ্ব আদায়কারীর জন্য দমে শুকর তথা হজ্বের কুরবানী।

৫। মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাটা।

৬। মীকাতের বাহির থেকে আগত লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা’ করা।

 

নিম্নে ৮ যিলহজ্ব থেকে ১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত ৫ দিন হজ্বের আমলগুলোর কর্মপদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট মাসায়িল আলোচনা করা হচ্ছে :

প্রথম দিন ৮ যিলহজ্ব

আজ সূর্যোদয়ের পর সকল হাজীকে ইহরাম অবস্থায় মিনা গমন করতে হবে। যোহর থেকে পরবর্তী দিনের ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় পড়া এবং ৮ তারিখ দিবাগত রাত্রি মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

হজ্বের ইহরাম

ইফরাদ হজ্ব ও কিরান হজ্ব আদায়কারী হজ্বের ইহরাম পূর্ব থেকেই করে থাকে। তামাত্তু হজ্ব আদায়কারী আজ মিনায় যাওয়ার পূর্বে হজ্বের ইহরাম বাঁধবে।

হজ্বের ইহরাম বাঁধার স্থান

মাসআলা :   হজ্বের ইহরাম বাঁধার জন্য পুরুষ-মহিলা কারো জন্যই মসজিদে হারামে যাওয়া জরুরি নয়। মহিলাগণ নিজ নিজ অবস্থান স্থল থেকেই ইহরাম বাঁধবে। পুরুষরাও হোটেল বা আবাস-স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে পারে। তবে পুরুষগণ সম্ভব হলে মসজিদে হারামে এসে নিয়ম অনুযায়ী ইহরাম বাঁধা ভালো।

মাসআলা  :  হজ্বের ইহরামের পর থেকে ১০ তারিখ জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পুর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবে। কংকর নিক্ষেপের পর থেকে তালবিয়অ বন্ধ হয়ে যাবে। -মানাসিক ২২৫গুনয়াতুননাসেক ১৭০

মাসআলা :   মিনায় অবস্থান না করা

                ৮ তারিখ দিবাগত রাতে যদি কেউ মিনায় অবস্থান না করে কিংবা এ তারিখে মোটেই মিনায় না যায় তাহলেও তার হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে মাকরূহ হবে। -মানাসিক ১৮৮-১৮৯আহকামে হজ্ব ৬২

মাসআলা :   তাবু মিনার বাইরে হলে

                মিনায় জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে মিনার এলাকার বাইরে বহু তাবু লাগানো হয়। যেহেতু এটি জায়গা সংকীর্ণতার ওজরে করা হয়ে থাকে তাই আশা করা যায়এ সকল তাবুতে অবস্থানকারীগণও মিনায় অবস্থানের ফযীলত পেয়ে যাবে। তবে যারা তাবুর বাইরে মিনার এলাকায় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে পারে তাদের জন্য সেখানে অবস্থান করাই ভালো হবে।

মাসআলা :   নির্ধারিত সময়ের আগেই মিনায় রওয়ানা

                মিনায় রওয়ানা হওয়ার সময় হল ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর। কিন্তু আজকাল ৭ তারিখ দিবাগত রাতেই মুআল্লিমের গাড়ি রওয়ানা হয়ে যায় এবং রাতে রাতেই মিনায় পৌঁছে যায়। যদিও ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর রওয়ানা হওয়া নিয়ম এবং এটিই ভালোকিন্তু অধিক ভিড়ের কারণে আগে আগে চলে যাওয়া দোষণীয় নয়। -মানাসিক ১৮৮গুনয়াতুনন্নাসেক ১৪৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

মাসআলা :   ৯-১৩ যিলহজ্ব পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব। তাই প্রত্যেক হাজীকে এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।

 

দ্বিতীয় দিন ৯ যিলহজ্ব

উকূফে আরাফা 

আজ হজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন আদায়ের দিন। ৯ যিলহজ্ব সূর্য ঢলার পর থেকে পরবর্তী রাতের সূবহে সাদিকের মধ্যে যেকোনো স্বল্প সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকলেই এই ফরয আদায় হয়ে যায়। তবে এ দিন সূর্যাস্তের আগে আরাফায় পৌঁছলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৫৭ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৯ আহকামে হজ্ব ৬৩

আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা

৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া উত্তম। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩গুনয়াতুন্নাসেক ১৪৬-১৪৭

সূর্যোদয়ের পূর্বে আরাফায় যাওয়া 

ভিড়ের কারণে বহু লোক ৮ তারিখ রাতেই আরাফায় চলে যায়। মুআল্লিমের গাড়িগুলোও রাত থেকেই হাজী সাহেবদেরকে আরাফার পৌঁছাতে শুরু করে। রাতে চলে গেলে একাধিক সুন্নাতের খেলাফ হয়। এক. রাতে মিনায় থাকা সুন্নত। এটি আদায় হয় না।

দুই. ৯ তারিখ ফজর নামায মিনায় পড়া সুন্নত। এটাও ছুটে যায়। 

তিন. সূর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশে রওনা হওয়া মুস্তাহাব। সেটাও আদায় হয় না। তাই সাধ্য মতো চেষ্টা করা চাই যেন বাসগুলো অন্তত ফজরের পর ছাড়ে। যদি  মানানো সম্ভব না হয় তাহলে বৃদ্ধ ও মহিলারা মাহরামসহ আগে চলে যাবেন। আর সুস্থ সবল হাজীগণ মিনায় ফজরের নামায পড়ে আরাফার পথে রওয়ানা হবেন। মিনায় ফজর পড়ে হেঁটে গেলেও সুন্দরভাবে দুপুরের আগেই আরাফায় পৌঁছা যায়। গাড়িতে গেলে জ্যামের কারণে একটু বিলম্ব হলেও আরাফায় পৌঁছা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক সময় একেবারে তাঁবুর নিকটে পৌঁছা যায় না। কিছুটা আগে নেমে যেতে হয়। তাই মাযূর হাজীগণ রাতেও যেতে পারবেন। আর যারা সুস্থ সবল আছেনহাঁটতে তেমন সমস্যা হয় না তারা ফজরের পরই রওয়ানা হবেন। -রদ্দুল মুহতার -২/৫০৩

আরাফায় কসর করবে না পূর্ণ নামায পড়বে অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের মতে আরাফার ময়দানে মুকীম হাজীগণ যোহর-আসর পূর্ণ চার রাকাতই পড়বে। হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্তও এমনই। তাই নিজ নিজ তাবুতে পড়লে মুকীম হাজীগণ পূর্ণ নামায পড়বেনকসর করবেন না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৫ গুনয়াতুন্নাসেক ১৫১ফাতাওয়া হিন্দিয়া -১/২২৮২/৫০৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৯

যোহর ও আসর একত্রে পড়া

মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারলে যোহর ও আসর একত্রে ইমামের পিছনে আদায় করে নিবে। কিন্তু মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হলে জোহরের সময় যোহর এবং আসরের সময় আসর পড়বে। একত্রে পড়লে সময়ের আগে পড়া নামায আদায় হবে না।

উকূফে আরাফার করণীয়

উত্তম হলকিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে একেবারে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুআ করা। এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে না পারলে অল্প সময় বসবে। এরপর আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুআ মুনাজাতে লেগে যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার আহকামে হজ্ব ৬৫

সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফা থেকে বেরিয়ে যাওয়া

অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মুযদালিফায় রওনা হয়ে যায়। এরূপ হয়ে গেলে কর্তব্য হল পুনরায় আরাফায় ফিরে যাওয়া। যদি ফিরে না যায় তবে দম দিতে হবে। -খ. মানাসিক ২১০  গুনয়াতুনন্নাসেক ১৬০রদ্দুল মুহতার ২/৫৫২

৯ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আরাফায় পৌঁছতে না পারলে

কেউ যদি ৯ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আরাফার ময়দানে কোনো কারণে পৌঁছতে না পারে তবে সে সুবহে সাদেক হওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য আরাফায় অবস্থান করলেও তার ফরয আদায় হবে যাবে। আর এ কারণে  দম বা অন্য কিছু ওয়াজিব হবে না। তবে যথা সময় আরাফায় না পৌছার ত্রুটি থেকে যায়। -মানাসিক ২০৫-২০৬গুনয়াতুন্নাসেক ১৫৯

আরাফায় জুমআ

আরাফার ময়দানে জুমআ পড়া জায়েয নয়। তাই এদিন শুক্রবার হলে হাজীগণ যোহর পড়বেজুমআ নয়। – মানাসিক ১৯৬

মাসআলা :   মসজিদে নামিরার পশ্চিমের কিছু অংশসহ বাতনে উরানা’ নামক স্থান রয়েছে। এখানে উকূফ গ্রহণযোগ্য নয়। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৪

মুযদালিফায় রওয়ানা

আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামায না পড়েই মুযদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হবে। সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হতে বিলম্ব না করাই শ্রেয়। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৮

৯ তারিখ দিবাগত রাত্রির মাগরিব ও ইশা

আজকের মাগরিব ও ইশা ইশার ওয়াক্তে মুযদালিফায় গিয়ে পড়তে হবে। যদি কেউ মুযদালিফায় পৌঁছার আগেই রাস্তায় মাগরিব ইশা পড়ে নেয় কিংবা মুযদালিফায় পৌঁছার আগে শুধু মাগরিব পড়ে তবে ইভয় ক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছে আবার মাগরিব ইশা একত্রে পড়া জরুরি। -মানাসিক ২১৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৪

মাসআলা :   মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা এক আযান ও এক ইকামতে পড়া উত্তম। পৃথক পৃথক ইকামতও জায়েয। –মানাসিক ২১৪ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০রদ্দুল মুহতার ২/৫০৮

                মুযদালিফায় গিয়ে ইশার ওয়াক্ত না থাকলে বিলম্বের কারণে মুযদালিফায় পৌঁছার আগেই ইশার ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে পথিমধ্যে মাগরিব ইশা পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছার পর ইশার ওয়াক্ত বাকী না থাকলে মাগরিব ইশা দোহরাতে হবে না। কিন্তু যদি সেখানে গিয়ে মাগরিব-ইশা পড়ার সময় বাকী থাকে তবে এ দুই নামায পুনরায় পড়তে হবে। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৮আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪২আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪০৪তাতারখানিয়া ২/৪৫৮ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০;  গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৪

ইশার ওয়াক্তের পূর্বেই মুযদালিফা পৌঁছে গেলে

যদি কেউ ইশার ওয়াক্তের পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছে যায় তবে সে তখন মাগরিব পড়বে নাবরং ইশার ওয়াক্ত হওয়ার পর মাগরিব-ইশা আদায় করবে। -মানাসিক ২১৮

মাসআলা :   মুযদালিফায় দুই নামায একত্রে পড়ার জন্য জামাত শর্ত নয়। একা পড়লেও দুই নামায একত্রে ইশার সময় পড়বে। তবে নিজেরা জামাত করে পড়া ভালো। -মানাসিক ২১৪গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৩-১৬৪

মাসআলা :   কেউ যদি দুই নামাযের মাঝে নফল বা সুন্নাত নামায কিংবা অন্য কোন কাজে বিলম্ব করে। যেমন : খানা-খাওয়া ইত্যাদি তবে ইশার জন্য ভিন্ন ইকামত দেওয়া উচিত। -মানাসিক ২১৯

৩য়  দিন ১০ যিলহজ্ব

উকূফে মুযদালিফা

উকূফে মুযদালিফার সময় ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। সুবহে সাদিকের পর স্বল্প সময় অবস্থানের পর মুযদালিফা ত্যাগ করলেও ওয়াজিব আদায় হবে যাবে। তবে সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করা সুন্নত। আর মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। -মানাসিক ২১৫২১৮ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৫

মাসআলা : উকূফে মুযদালিফা যেহেতু ওয়াজিব তাই বিশেষ ওযর ব্যতীত নির্ধারিত সময়ে উকূফ না করলে দম ওয়াজিব হবে। অবশ্য ভীড়ের কারণে যদি সূর্যোদয়ের আগে মুযদালিফায় পৌঁছতে না পারে তবে তার উপর দম ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ২১৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১১

উকূফের স্থান

মুযদালিফার ময়দানের যেকোনো অংশেই অবস্থান করা যাবে। মসজিদে মাশআরে হারামের নিকট উকূফ করা ভালো। অবশ্য মুযদালিফার বাইরে মিনার দিকে ওয়াদিয়ে মুহাস্সির’ নামক স্থানে উকূফ করা যাবে না। কারণ এখানে উকূফ করা নিষিদ্ধ। এখানকার উকূফ ধর্তব্য নয়। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৭

মাসআলা : অতিশয় বৃদ্ধদুর্বল কিংবা অধিক পীড়িত রোগীর জন্য মুযদালিফায় অবস্থান না করে আরাফা থেকে সোজা মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ২১৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১

১০ম যিলহজ্বের দ্বিতীয় ওয়াজিব জামরায়ে আকাবার রমী

রমীর পদ্ধতি

রমী অর্থ কংকর নিক্ষেপ করা। মসজিদে হারামের দিক থেকে সর্বশেষ কংকর নিক্ষেপের স্থানকে জামরা আকাবা’ বলা হয়। এখানে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। কংকর নিক্ষেপের স্থানে যে চওড়া পিলার আছে তাতেই কংকর মারা জরুরি নয় বরং বেষ্টনীর ভিতরে পড়াই যথেষ্ট। পিলারে কংকর লেগে তা যদি বেষ্টনীর বাইরে গিয়ে পড়ে তবে তা ধর্তব্য হবে নাঐ কংকর পুনরায় নিক্ষেপ করতে হবে। আর পিলারের গোড়ায় মারা ভাল পিলারের উপর অংশে মারা অনুত্তম। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৭১ রদ্দুল মুহতার ২/৫১২

কংকর সংগ্রহ

প্রথম দিনের সাতটি কংকর মুযদালিফা থেকে সংগ্রহ করা মুস্তাহাব। অবশ্য অন্য জায়গা থেকে নিলেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে জামরার নিকট থেকে নিবে না। কারণএই স্থানের পাথরগুলো হাদীসের ভাষ্যমতে আল্লাহ তাআলার দরবারে ধিকৃত। যাদের হজ্ব কবুল হয়নি তাদের কংকর এখানে পড়ে থাকে। পরবর্তী দিনের কংকর মুযদালিফা থেকে নেওয়া মুস্তাহাব নয়। জামরার নিকট ব্যতীত অন্য যেকোনো স্থান থেকে নিতে পারবে। -মানাসিক ২২২গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৮আদ্দুররুল মুখতার ৫১৫

কংকরের ধরন

বুট বা ছোলার দানার মত ছোট কংকর মারা ভালো। বড়জোর খেজুরের বিচির মত হতে পারে। বড় পাথর মারা মাকরূহ। তদ্রƒপ নাপাক কংকর মারাও মাকরূহ। কংকর নাপাক হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা ধুয়ে নিক্ষেপের কাজে ব্যবহার করা যাবে। -মানাসিক ২২২

জামরা আকাবাতে রমীর সময়

১০ম যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত সম্ভব হলে রমী করা মুস্তাহাব। তবে ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে ১০ তারিখ দিবাগত রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত রমী করা জায়েয। বিনা ওজরে মুস্তাহাব সময় রমী না করে অন্য সময় রমী করা মাকরূহ। কিন্তু আজকাল যেহেতু মুস্তাহাব সময়ে রমীর স্থানে প্রচণ্ড ভীড় হয় তাই মহিলা ও দুর্বলদের মতো অন্যদের জন্যও মুস্তাহাব সময়ের বাইরে রমী করার অবকাশ রয়েছে। ওজর থাকার কারণে তা মাকরূহ হবে না। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৯-১৭০ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২৩৩

সাত কংকর একত্রে মারা

কেউ যদি সাত কংকর একবারে নিক্ষেপ করে তবে এক কংকর মারা হয়েছে বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে আরো ছয়টি কংকর পৃথক পৃথক মারতে হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৫

মাসআলা :   জামরা আকাবার রমীর পর দুআর জন্য এখানে অবস্থান না করাই সুন্নত। তাই আজ কংকর মেরে দুআর জন্য সময়ক্ষেপন করবে না। বরং কংকর মেরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করবে। -মানাসিক ২২৪

সময় মতো রমী না করলে

১০ তারিখ দিবাগত রাতের সুবহে সাদিকের আগে জামরা আকাবার রমী করতে না পারলে ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মতে দম ওয়াজিব হবে। ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ.-এর মতে দম ওয়াজিব হবে না বেশি মাজুর ব্যক্তিগণ এ মতটি গ্রহণ করতে পারে। তবে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আগে মেরে নিতে হবে। অন্যথায় পরে কংকর মারার অবকাশ নেই। এক্ষেত্রে কংকর না মারার কারণে সবার মতেই ভিন্ন দম ওয়াজিব হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৬

অন্যকে দিয়ে রমী করানো

প্রত্যেক হাজী পুরুষ হোক বা মহিলানিজের রমী নিজেই করবে। ভীড়ের কারণে কিংবা অন্য কোনো শরয়ী ওযর ব্যতীত অন্যের দ্বারা রমী করানো জায়েয নয়। শরয়ী ওযর ব্যতীত অন্যকে দিয়ে রমী করালে তা আদায় হবে না। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে পুনরায় নিজের রমী করতে হবে। যদি না করে তবে দম ওয়াজিব হবে।

শরয়ী ওযর হল এমন অসুস্থতা বা দুর্বলতা যার কারণে বসে নামায পড়া জায়েয। অথবা অসুস্থতার কারণে জামরাত পর্যন্ত পেঁছা খুবই কষ্টকর হয় কিংবা রোগ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে তবে এরূপ ব্যক্তি অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবে। -আহকামে হজ্ব ৭৬-৭৭

মাসআলা :   মাজুর ব্যক্তির পক্ষ থেকে রমী করার জন্য তার অনুমতি লাগবে। বিনা অনুমতিতে কেউ তার পক্ষ থেকে রমী করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে অচেতনপাগল এবং ছোট বাচ্চার অনুমতি ছাড়াই তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবক রমী করে দিতে পারবে। -আহকামে হজ্ব ৭৭

মাসআলা :   যে ব্যক্তি অন্যের পক্ষ থেকে রমী করবেতার জন্য উত্তম হল প্রথমে নিজের রমী শেষ করবে তারপর বদলী করবে। একটি কংকর নিজের পক্ষ থেকে আর আরেকটি অন্যের পক্ষ থেকে এভাবে মারা মাকরূহ। তাই আগে নিজের সাত কংকর মারবে এরপর বদলী আদায় করবে। -আহকামে হজ্ব ৭৭

মাসআলা :   ঋতুবর্তী মহিলাগণও রমী করতে পারবে।

১০ম যিলহজ্বের তৃতীয় ওয়াজিব

দমে শুকর বা হজ্বের কুরবানী

তামাত্তু ও কিরানকারি হাজীদের জন্য একটা কুরবানী করা ওয়াজিব। জামরায়ে আকাবার রমীর পর কুরবানী করবেমাথা মুণ্ডাবে।

মাসআলা :   ইফরাদ হজ্বকারীর উপর হজ্বের কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে করলে ভালো।

মাসআলা :   ইফরাদ হাজীদের যেহেতু কুরবানী নেই তাই তারা রমীর পরই চুল কাটতে পারবে। রমীর আগে চুল কাটলে দম ওয়াজিব হবে।

দমে শুকর বা হজ্বের কুরবানীর সময়

১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ের ভিতর কুরবানী করতে হবে। সুন্নত সময় শুরু হয় ১০ যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর থেকে। ¬-রদ্দুল মুহতার ২/৫৩২

কুরবানীর স্থান

মাসআলা : হজ্বের কুরবানী হেরেমের সীমার ভিতরে করা জরুরি। হেরেমের বাইরে জবাই করলে তা দ্বারা হজ্বের কুরবানী আদায় হবে না। হেরেমের যেকোন স্থানে কুরবানী করতে পারে। মিনাতে করা জরুরি নয়। -রদ্দুল মুহতার ২/৫৩২

হাজীদের জন্য ঈদুল আযহার কুরবানী

মুসাফিরের উপর ঈদুল আজহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। সুতরাং যারা ১০-১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুসাফির থাকবে তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কিন্তু যারা মিনায় রওয়া হওয়ার আগে মক্কাতেই ১৫ দিনের নিয়তে অবস্থান করেছে তারা মুকীম হবে। তাদের জন্য হজ্বের কুরবানী ছাড়াও ঈদুল আযহার ভিন্ন কুরবানী দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৫

হজ্বের কুরবানীর গোশত

হজ্বের কুরবানীর গোশত হাজী নিজেও খেতে পারবে। এ কুরবানীর গোশতের হুকুম ঈদুল আযহার কুরবানীর  মতোই।

হজ্বের কুরবানীর সামর্থ না থাকলে

তামাত্তু ও কিরানকারী হাজীদের কারো নিকট হজ্বের কুরবানীর সামর্থ না থাকলে তাকে এর পরিবর্তে ১০টি রোযা রাখতে হবে। ৩টি রোযা আরাফার দিন পর্যন্ত শেষ হতে হবে। আর বাকী সাতটি পরবর্তীতে সুযোগমতো রাখলেই চলবে। আরাফার দিন সহ তিনটি রোযা রাখা না হলে তার জন্য কুরবানী দেওয়াই জরুরি হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে  তাৎক্ষণিক কুরবানীর ব্যবস্থা করতে না পারলে চুল কেটে নিবে এবং পরবর্তীতে দুটি পশু যবেহ করবে। ১টি হজ্বের কুরবানী হিসাবে। আর অপরটি কুরবানী না করে চুল কাটার কারণে।

মাসআলা : হজ্বের কুরবানীতে ঈদুল আযহার কুরবানীর ন্যায় গরুমহিষউটের সাত ভাগের একভাগ দিতে পারবে। এ ছাড়া ছাগলভেড়া বা দুম্বা দেওয়ার সুযোগ তো আছেই।

১০ যিলহজ্বের চতুর্থ ওয়াজিব

মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা

মাথা মুণ্ডানোর সময়

১০ যিলহজ্বের দিন কুরবানীর পর থকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত মাথা মুণ্ডানোর সুযোগ আছে। এর চেয়ে বিলম্ব করলে দম ওয়াজিব হবে। অবশ্য মাথা মুণ্ডানোর আগ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থাতেই থাকতে হবে। এ সময় পাথর মারার কাজ করলে তাও ইহরাম অবস্থাতেই করতে হবে।-হিদায়া ১/২৭৬গুজয়াতুল মানাসিক ১৭৫রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৪বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩০মাবসূতে সারাখসী ৪/৭০

চুল কাটার পরিমাণ

মাথার চুল না মুণ্ডিয়ে যদি খাটো করে তবে আঙুলের এক কর (প্রায় এক ইঞ্চি) পরিমাণ ছোট করা ওয়াজিব। মহিলাগণ অন্তত এতটুকু ছেটে নিবে। এ পরিমাণ চুল মাথার এক চতুর্থাংশ থেকে কাটা হলেই হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু মাথার এক অংশ মুণ্ডিয়ে অন্য অংশে চুল রাখা বা ছোট বড় করে রাখা মাকরূহ তাহরীমী। তাই এমনটি করবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৫

মাসআলা : মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটার আগে নখ বা শরীরের অতিরিক্ত পশম ইত্যাদি কাটা যাবে না। যদি কাটে তবে জরিমানা দিতে হবে।

মাসআলা : জামরা আকাবার কংকর নিক্ষেপের পর হজ্ব আদায়কারী নিজের চুল কাটার আগে অন্যের চুল কাটতে পারবে। কিন্তু নিজের চুল কাটার সময় হওয়ার পূর্বে অন্যের চুল কেটে দিলে যে কাটছে তার উপর এক ফিতরা পরিমাণ সাদকা করা জরুরি হবে। -আহকামে হজ্ব ৯৯আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫১২

মাসআলা : কারো মাথা পূর্ব থেকে মুণ্ডানো থাকলে কিংবা পুরো মাথা টাক থাকলে হালাল হওয়ার জন্য মাথায় ক্ষুর ঘুরিয়ে নিলেই চলবে। -বাদায়েউস সানায়ে ২/২১২রদ্দুল মুহতার ২/৫১৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১

মাথা মুণ্ডানোর স্থান

হাজীদের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মিনাতে মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটা সুন্নাত। হেরেমের সীমার ভিতর অন্য কোথাও করে নিলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। হেরেমের বাইরে মাথা কামালে দম ওয়াজিব হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৯

হজ্বের তৃতীয় ফরয তাওয়াফে যিয়ারত

তাওয়াফে যিয়ারতের সময়

সুন্নত হল জামরা আকাবার রমীকুরবানী এবং মাথা কামানোর পর তাওয়াফ করা। আরাফায় অবস্থানের আগে তাওয়াফে যিয়ারত করলে তা দ্বারা ফরয তাওয়াফ আদায় হবে না। আরাফায় অবস্থানের পর ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্বের সূর্যাস্তের আগে এই তাওয়াফ করার অবকাশ রয়েছে। যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্ত হয়ে যায় এবং তাওয়াফে যিয়ারত করা না হয় তবে দম দেওয়া জরুরি হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭৫৩৩আহকামে হজ্ব ৮০

মাসআলা : তাওয়াফে যিয়ারত অসুস্থ হলেও নিজেকেই করতে হবে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু অন্যকে দিয়ে করানো যাবে না। হাঁঅচেতন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী তাওয়াফে যিয়ারত করা যাবে। আর সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য পায়ে হেঁটে তাওয়াফে যিয়ারত করা ওয়াজিব। পায়ে হেঁটে করার সামর্থ থাকাবস্থায় হুইল চেয়ারে করে বা অন্য কোনো বাহনে চড়ে তাওয়াফে যিয়ারত করা যাবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭

তাওয়াফে যিয়ারত রমল ও সায়ী

যারা মিনায় যাওয়ার পূর্বে সায়ী করেছে অর্থাৎ ইফরাদ হজ্বকারী তাওয়াফে কুদুমের পর এবং তামাত্তু ও কিরানকারী নফল তাওয়াফের পরতাদের যেহেতু তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করতে হবে না তাই এই তাওয়াফে তাদেরকে রমলও করতে হবে না। অবশ্য যারা পূর্বে এভাবে সায়ী করেনি তাদের যেহেতু তাওয়াফের পর সায়ী করতে হবে তাই তাওয়াফে রমলও করতে হবে। -আহকামে হজ্ব ৮১

ঋতুমতি মহিলার তাওয়াফ

স্রাব চলাকালীন তাওয়াফ নিষিদ্ধ। তাই পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে পবিত্র হয়ে গেলে অবশ্যই এর ভিতরেই তাওয়াফ সেরে নিতে হবে। কিন্তু যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের ভিতর পবিত্র না হয় তাহলে পবিত্র হওয়ামাত্র আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে কোনো জরিমানা আসবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯

পবিত্র হওয়ার আগেই দেশে ফিরতে হলে

যদি কোনো মহিলা হায়েয বা নেফাস অবস্থায় থাকার কারণে তাওয়াফে যিয়ারত করতে না পারেআর তার দেশে ফিরার তারিখ হয়ে যায়। কোনোভাবে  তা বাতিল বা দেরি করা সম্ভব না হয় তবে এই অপারগতার কারণে অপবিত্র অবস্থায় তাওয়াফ করে নিবে। আর একটি উট বা গরু দম হিসাবে জবাই করতে হবে। সাথে আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফারও করবে। তাওয়াফে যিয়ারত না করে দেশে যাবে না। অন্যথায় তাকে আবার মক্কায় এসে তাওয়াফ করতে হবে। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামীর সাথে থাকতে পারবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৮-৫১৯

মাসআলা : কোনো মহিলার ওষুধ সেবনের কারণে যদি স্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যায় তবে সে গোসল করে তাওয়াফ করতে পারবে।

হজ্বের ৪র্থ দিন ১১ যিলহজ্ব

মাসআলা : ১১ ও ১২ যিলহজ্বের রাত্রিতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। কেউ যদি মিনায় না থাকে তবে সুন্নতের খেলাফ হবে বটে কিন্তু কোনো প্রকার জরিমানা দিতে হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩

১১ যিলহজ্ব রমীর সময়

জোহরের সময় থেকে নিয়ে আগত রাত্রের সুবহে সাদিক পর্যন্ত রমীর সময়। তবে সম্ভব হলে সূর্যাস্তের আগে করে নেওয়া ভাল। সূর্যাস্তের পর মাকরূহ সময়। কিন্তু মহিলাদুর্বল ও অধিক ভীড়ের কারণে সূর্যাস্তের পর রমী করতে কোনো অসুবিধা নেই।

মাসআলা : ১১ যিলহজ্ব তিন জামরাতেই রমী করতে হবে। প্রথম দুই জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করে কিবলামুখী হয়ে দুআ করা সুন্নাত। জামরায়ে আকাবার রমীর পর দুআ নেই। -সহীহ বুখারী ১/২৩৬রদ্দুল মুহতার ২/৫২১

পঞ্চম দিন ১২ যিলহজ্ব

রমীর তৃতীয় দিন

১২ যিলহজ্ব যোহরের সময় থেকে রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অবশ্য সম্ভব হলে সূর্যাস্তের আগে রমী করা মুস্তাহাব। আজও তিন জামরাতেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।

মাসআলা : ১১ ও ১২ তারিখ যোহরের পূর্বে রমীর সময় শুরুই হয় না। তাই এ সময় কেউ রমী করলে তা আদায় হবে না। প্রকাশ থাকে যে১১ ও ১২ তারিখে নির্ধারিত সময়ের ভিতর যদি কেউ রমী করতে না পারে তবে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত তা কাযা করার (অর্থাৎ রমী করার) সুযোগ আছে। কিন্তু ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগে কাযা করতে না পারলে এরপরে আর রমী করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে দম দেওয়া জরুরি। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১

১৩ যিলহজ্বরমী করা

মাসআলা : ১২ তারিখ দিবাগত রাতে মিনায় থাকা উত্তম এবং ১৩ তারিখ রমী করাও উত্তম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থ দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখ রমী করেই মিনা ত্যাগ করেছিলেন।

              অবশ্য কেউ যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে রমী করে মিনা ত্যাগ করতে না পারে তবে সূর্যাস্তের পর মিনা ত্যাগ করা মাকরূহ হবে। তবে এ কারণে দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। আর যদি মিনায় ১৩ তারিখ সুবহে সাদিক হয়ে যায় তবে ঐ দিন রমী করা ওয়াজিব। রমী না করে চলে যাওয়া না জায়েয এবং এতে দম ওয়াজিব হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১আহকামে হজ্ব ৮৫

মাসআলা : ১৩ তারিখ যোহরের পূর্বেও রমী করা জায়েয। তবে যোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় হচ্ছে রমী করার সুন্নত ওয়াক্ত। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩

তাওয়াফে বিদা

মীকাতের বাইরে অবস্থানকারী হাজীদের জন্য মক্কা মুকাররামা ত্যাগ করার আগে একটি তাওয়াফ করা ওয়াজিব। একে তাওয়াফে বিদা বলা হয়। এই তাওয়াফটি মক্কা থেকে বিদায়ের সময় করা উত্তম। আর মক্কা ও মীকাতের ভিতর অবস্থানকারীদের জন্য তাওয়াফে বিদা ওয়াজিব নয়মুস্তাহাব। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩

তাওয়াফে যিয়ারতের পর হাজী কর্তৃক আদায়কৃত যে কোন তাওয়াফ ছাড়া বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

 

লক্ষণীয় :

হজ্বের মৌলিক বিষয়গুলো উপরে উল্লেখ করা হল। এ ছাড়া হজ্ব করতে গিয়ে ভুল। এছাড়া হজ্ব ভুল-ভ্রান্তি বা অন্য কারণে হাজীগণ আরো অনেক মাসআলার সম্মুখীন হতে পারেন সে ক্ষেত্রে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে তা জেনে নেওয়া আবশ্যক।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হজ্বের সংক্ষিপ্ত নিয়ম ও জরুরি মাসায়িল

আপডেট সময় : ১২:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

হজ্ব তিন প্রকার

এক. তামাত্তু হজ্ব

মীকাত অতিক্রমের পূর্বে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা মুকাররামায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পাদন করে চুল কেটে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এই সফরেই ৮ যিলহজ্ব হজ্বের ইহরাম বেঁধে হজ্বকার্য সম্পাদন করা।

দুই. ইফরাদ

মীকাত অতিক্রমের পূর্বে শুধু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা মুকাররামা পৌঁছে (উমরা না করা বরং তাওয়াফে কুদুম করে মুস্তাহাব তাওয়াফ করা) ইহরাম অবস্থায় হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা।

তিন. কিরান

মীকাত অতিক্রমের পূর্বে একই সাথে উমরা ও হজ্বের নিয়তে ইহরাম বেঁধে এই ইহরামে উমরাহ ও হজ্ব উভয়টি পালন করা। মক্কা মুকাররামা পৌঁছে প্রথমে উমরা করা অতঃপর এই ইহরাম অবস্থাতেই হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এবং হজ্বের সময়ে হজ্ব করা।

ইহরাম বাঁধার নিয়ম

হজ্ব অথবা উমরার নিয়তে তালবিয়া পড়লেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে এর সুন্নাত তরীকা হল :

*  মোচনখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম  চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা।

*  ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা। গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নেওয়া। ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব -গুনয়াতুন নাসেক পৃ. ৬৯

*  পুরুষগণ দুটি নতুন বা ধৌত সাদা চাদর নিবে। একটি লুঙ্গির  মতো করে পরবে। অপরটি চাদর হিসাবে ব্যবহার করবে। কালো বা অন্য কোনো শরীয়তসিদ্ধ রং এর কাপড় পরিধান করাও জায়েয। পায়ের পাতার উপরের উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরা যাবে।

    মহিলাগণ স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তারা ইহরাম অবস্থায় জুতা মোজা ব্যবহার করতে পারবে।

*  ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর ও ঘ্রান ইহরাম বাধারর পরে বাকী থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। আর ইহরামের কাপড়ে আতর/সুগন্ধি লাগাবেনা। কেননা ইহরামের কাপড়ে এভাবে আতর বা  সুগন্ধি লাগানো নিষিদ্ধ যা ইহরামের পরও লেগে থাকে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৯ গুনাতুন নাসেক পৃ. ৭০ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২২ মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৮

(মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে) ইহরাম বাঁধার পূর্বে দুই রাকাত নফল নামায পড়া ভালো।-গুনয়াতুননাসেক ৭৩মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৯রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২

*  নিয়ত : (পুরুষ হলে টুপি বা মাথার কাপড় খুলে ফেলতে হবে) তামাত্তুকারী শুধু উমরার নিয়ত করবেইফরাদকারী শুধু হজ্বের নিয়ত এবং কিরানকারী হজ্ব ও উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে। পুরুষ উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়বে আর মহিলা নিম্নস্বরে পড়বে।

তালবিয়া হল —

لبيك اللهم لبيك لبيك لا شريك لك لبيك، إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك.

          –মানাসিক পৃ. ১০০গুনয়াতুন্নাসেক পৃ. ৭৪আদ্দুররুল মুখতার পৃ. ৪৮৪

 

মাসআলা : তালবিয়া পূর্ণ পড়তে হবে। তালবিয়ার এই দুআর অল্প কিছু ছেড়ে দেওয়াও মাকরূহ।-মানাসিক পৃ. ১০২আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৪ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৩,

মাসআলা : তালবিয়ার উক্ত দুআর স্থলে সুবহানাল্লাহআলহামদুলিল্লাহকালিমা তাইয়্যিবা বা আল্লাহ তাআলার কোনো জিকির পড়লেও ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু তালবিয়া ছাড়া অন্য কিছু পড়া মাকরুহ তাই তালবিয়া পড়া সম্ভব না হলে আল্লাহ তাআলার যে কোনো জিকির পড়ে ইহরাম বাঁধতে পারবে। -মানাসিক ১০২গুনয়াতুননাসিক ৭৬আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৩

মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা ও পা-মোজা ব্যবহার করতে পারবে। তবে হাত মোজার ব্যাপারে দুধরনের দলীল বিদ্যমান থাকায় কেউ কেউ হাতমোজা পরিধান না করাকে উত্তম বলেছেন। -আল ইসতিযকার ১১/৩০সূনানে আবু দাউদ ২/২৫৪ আত্তারগীব ওয়াত তারহীব ৪/৪৭৭মীযানুল ইতিদাল ৩/৪৫ইলাউস সুনান ১০/৪৮ আলবাহরুর রায়েক ২/২২৩বাদায়ে ২/৪১০ফাতহুল মুলহিম ৩/২০৪মানাসিক ১১৬গুনাতুল নাসিক -৭৪খানিয়া -১/২৮৪আহকামে হজ্ব ৩৫

মাসআলা : মহিলাগণ ওযর অবস্থায় অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাবসন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও ইহরাম বাঁধতে ও তালবিয়া পড়তে পারবে। হজ্বের অন্যান্য কাজও করতে পারবে তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করানামায পড়া জায়েয নয়।

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায়ও মহিলাদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা নিষিদ্ধ। তাই এ অবস্থায় চেহারার সাথে কাপড় লেগে না থাকে এভাবে চেহারার পর্দা করা জরুরি। এখন এক ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়যা পরিধান করে সহজেই চেহারার পর্দা করা যায়। -আদিল্লাতুল হেজাব ৩২৯-৩৩৪নাইলুল আওতার ৫/৭১ মানাসিক ১১৫ফাতহুল বারী ৩/৪৭৫এলামুল মুআককিয়ীন ১/১২২-১২৩হজ্বের মাস শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ শাওয়াল মাসের আগে হজ্বের ইহরাম বাঁধা মাকরূহ। -গুনয়াতুন্নাসেক -৬৭

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা যাবে। -শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাকে অন্যান্য মৃতের মতোই গোসল ইত্যাদি দিবে এবং স্বাভাবিক মৃতের  মতোই অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করবে।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়

১। পুরুষের জন্য শরীরের কোনো অঙ্গের আকৃতি বা গঠন অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। যেমন : পাঞ্জাবিজুব্বাশার্টসেলোয়ারপ্যান্টগেঞ্জিকোর্টসোয়েটারজাঙ্গিয়া।

মাসআলা : ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করে কিংবা জোড়া দিয়ে পরিধান করা যাবে। তবে ইহরামের কাপড় এ ধরনের সেলাইমুক্ত হওয়াই ভালো। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করা ও বেল্ট বাঁধা নিষিদ্ধ নয়।

২। পুরুষের জন্য মাথা ও চেহারা ঢাকা নিষিদ্ধ। মহিলাদের জন্য শুধু চেহারায় কাপড় স্পর্শ করানো নিষেধ। তাই তারা পরপুরুষের সামনে চেহারায় কাপড় লেগে না থাকে এভাবে পর্দা করবে।

৩। পুরুষের জন্য পায়ের উপরের অংশের উঁচু হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। এমন জুতা বা স্যান্ডেল করতে হবে যা পরলে ওই উচু অংশ খোলা থাকে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০

৪। ইহরামের কাপড় বা শরীরে আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ। সুগন্ধিযুক্ত তেল যয়তূন ও তিলের তেলও লাগানো যাবে না। সুগন্ধি সাবানপাউডারস্নোক্রীম ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি পৃথকভাবে সুগন্ধি জর্দা খাওয়াও নিষিদ্ধ। পানের সাথে খাওয়া মাকরূহ। ইচ্ছাকৃতভাবে ফল-ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরূহ। -মানাসিক ১২১আহকামে হজ্ব ৩৪আহকামে হজ্ব ৩৪

৫। শরীরের কোনো স্থানের চুলপশম বা নখ কাটা বা উপড়ানো নিষিদ্ধ।

৬। ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে এ সংক্রান্ত কোনো কথা বা কাজ করা নিষিদ্ধ।

৭। কোনো বন্য পশু শিকার করা বা কোনো শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ।

৮। ঝগড়া-বিবাদ সাধারণ সময়েও নিষিদ্ধ। ইহরাম অবস্থায় এর গুনাহ আরো বেশি।

৯। কাপড় বা শরীরের উকূন মারা নিষিদ্ধ। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৬-৪৯০ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৪, মানাসিক ১১৭-১২০, গুনয়াতুননাসেক ৮৫

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ তাতে লিপ্ত হওয়া গুনাহ। এর কারণে হজ্ব কিছুটা অসম্পূর্ণ হয়ে যায় আর কিছু নিষেধাজ্ঞা এমন রয়েছে যেগুলো করলে দম’ ওয়াজিব হয়। আর আরাফায় অবস্থানের পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হলে হজ্বই নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে গরু বা উট যবেহ করা ছাড়া পরবর্তী বছর কাযা করা জরুরি। ¬-আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৮-৫৫৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৪মানাসিক ১১৭

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ব্যতীত পূর্ণ শরীর চাদর ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করা যাবে। কানঘাড়পা ঢাকা যাবে। মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া যাবে। তবে পুরো মুখ বালিশের উপর রেখে ঢেকে শোয়া যাবে না। -মানাসিক ১২৩-১২৪গুনয়াতুননাসেক ৯৩

মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় পান খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তবে পানে সুগন্ধিযুক্ত মসলা বা জর্দা খাওয়া নিষিদ্ধ।

মাসআলা  : ইহরাম অবস্থায় পানিতে ডুব দেওয়া যাবে। -গুনয়াতুনন্নাসেক ৯১

 

উমরার পদ্ধতি

উমরার ফরয দুটি

১। উমরার ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ উমরার নিয়তে তালবিয়া পড়া।

২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা ।

উমরার ওয়াজিব দুটি

১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।

২। মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা।

 

মাসআলা :   উমরার তাওয়াফে পুরুষের জন্য ইজতিবা’ অর্থাৎ ডান কাঁধ খালি রেখে চাদর বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা এবং রমল’ অর্থাৎ তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে কিছুটা দ্রুত বীরদর্পে হাঁটা।

উমরার তাওয়াফ

মাসআলা :   যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল অর্থাৎ বীরদর্পে কাঁধ হেলিয়ে কিছুটা দ্রুত বেগে চলা সুন্নত। তদ্রƒপ পুরো তাওয়াফে ইজতেবা (ডান কাঁধ খালি করে ডান বগলের নিচে দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর দিয়ে চাদর পরিধান) করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তবে এ দুটি শুধু পুরুষদের জন্য সুন্নত। মহিলাদের জন্য নয়। -মানাসিক ১২৯আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৮ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫

মাসআলা :   তাওয়াফকারীর সীনা বাইতুল্লাহ দিকে করে তাওয়াফ করা যাবে না। এমনকি রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার সময় কিংবা হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়ার সময় সীনা বাইতুল্লাহর দিকে ঘুরে গেলে যেখান থেকে ঘুরেছে সেখান থেকেই সীনা ঠিক করে আবার তাওয়াফ শুরু করা জরুরি। -মানাসিক ১৫৩গুন্য়াতুন নাসিক ১১৩রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৪

মাসআলা :   সকল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া ওয়াজিব। চাই তাওয়াফ নফল হোক বা ফরয। আর এই দুই রাকাত মাকামে ইব্রাহীমীর পিছনে পড়া ভালো। কিন্তু জায়গার সংকুলান না হলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে পড়া যাবে। এমনকি হেরেমের সীমানার ভিতর পড়লেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। হেরেমের বাইরে পড়া মাকরূহ। তবে পড়লে আদায় হবে যাবে। দম ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ১৫৫আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬গুনয়াতুননাসেক ১১৬

মাসআলা :   তাওয়াফ পরবর্তী দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পরেই অবিলম্বে আদায় করা উত্তম। বিনা ওজরে বিলম্বে পড়া মাকরূহ। তবে মাকরূহ ওয়াক্ত হলে পরে পড়বে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯মানাসিক ১৫৫গুনয়াতুননাসেক ১১৬

মাসআলা :   একাধিক তাওয়াফ করে পরবর্তী দুই রাকাত নামাযকে একত্রে পড়া মাকরূহ। তবে পূর্বের তাওয়াফের পরের সময় যদি মাকরূহ ওয়াক্ত হয়ে থাকে তবে একাধিক তাওয়াফের নামায একত্রে আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই। -গুনয়াতুনাসেক ১১৭ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

 

হজ্বের পদ্ধতি

হজ্বের ফরয তিনটি :

১। ইহরাম বাঁধা

২। উকূফে আরাফা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ্ব সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে পরবর্তি রাতের সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্বে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।

৩।      তাওয়াফে যিয়ারত। ১০ যিলহজ্ব থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই এ তাওয়াফ সম্পন্ন করা।

হজ্বের ওয়াজিবসমূহ এই

১। উকূফে মুযদালিফা। ১০ যিলহজ্ব সোবহে সাদিকের পর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের ভিতর স্বল্প সময় মুযদালিফায় অবস্থান করলে এ ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

২। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।

     এ সায়ী তাওয়াফে যিয়ারতের পরও করা যায়। আবার ৮ যিলহজ্বের আগেও নফল তওয়াফের পর আদায় করা যায়। ইফরাদ হজ্ব আদায়কারীগণ মক্কা প্রবেশের পর যে তাওয়াফে কুদুম’ করে থাকে এরপর হজ্বের ওয়াজিব সায়ী করে নিতে পারে।

৩। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে জামরাতে রমী তথা কংকর নিক্ষেপ করা।

৪। তামাত্তু ও কিরান হজ্ব আদায়কারীর জন্য দমে শুকর তথা হজ্বের কুরবানী।

৫। মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাটা।

৬। মীকাতের বাহির থেকে আগত লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা’ করা।

 

নিম্নে ৮ যিলহজ্ব থেকে ১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত ৫ দিন হজ্বের আমলগুলোর কর্মপদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট মাসায়িল আলোচনা করা হচ্ছে :

প্রথম দিন ৮ যিলহজ্ব

আজ সূর্যোদয়ের পর সকল হাজীকে ইহরাম অবস্থায় মিনা গমন করতে হবে। যোহর থেকে পরবর্তী দিনের ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় পড়া এবং ৮ তারিখ দিবাগত রাত্রি মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

হজ্বের ইহরাম

ইফরাদ হজ্ব ও কিরান হজ্ব আদায়কারী হজ্বের ইহরাম পূর্ব থেকেই করে থাকে। তামাত্তু হজ্ব আদায়কারী আজ মিনায় যাওয়ার পূর্বে হজ্বের ইহরাম বাঁধবে।

হজ্বের ইহরাম বাঁধার স্থান

মাসআলা :   হজ্বের ইহরাম বাঁধার জন্য পুরুষ-মহিলা কারো জন্যই মসজিদে হারামে যাওয়া জরুরি নয়। মহিলাগণ নিজ নিজ অবস্থান স্থল থেকেই ইহরাম বাঁধবে। পুরুষরাও হোটেল বা আবাস-স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে পারে। তবে পুরুষগণ সম্ভব হলে মসজিদে হারামে এসে নিয়ম অনুযায়ী ইহরাম বাঁধা ভালো।

মাসআলা  :  হজ্বের ইহরামের পর থেকে ১০ তারিখ জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পুর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবে। কংকর নিক্ষেপের পর থেকে তালবিয়অ বন্ধ হয়ে যাবে। -মানাসিক ২২৫গুনয়াতুননাসেক ১৭০

মাসআলা :   মিনায় অবস্থান না করা

                ৮ তারিখ দিবাগত রাতে যদি কেউ মিনায় অবস্থান না করে কিংবা এ তারিখে মোটেই মিনায় না যায় তাহলেও তার হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে মাকরূহ হবে। -মানাসিক ১৮৮-১৮৯আহকামে হজ্ব ৬২

মাসআলা :   তাবু মিনার বাইরে হলে

                মিনায় জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে মিনার এলাকার বাইরে বহু তাবু লাগানো হয়। যেহেতু এটি জায়গা সংকীর্ণতার ওজরে করা হয়ে থাকে তাই আশা করা যায়এ সকল তাবুতে অবস্থানকারীগণও মিনায় অবস্থানের ফযীলত পেয়ে যাবে। তবে যারা তাবুর বাইরে মিনার এলাকায় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে পারে তাদের জন্য সেখানে অবস্থান করাই ভালো হবে।

মাসআলা :   নির্ধারিত সময়ের আগেই মিনায় রওয়ানা

                মিনায় রওয়ানা হওয়ার সময় হল ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর। কিন্তু আজকাল ৭ তারিখ দিবাগত রাতেই মুআল্লিমের গাড়ি রওয়ানা হয়ে যায় এবং রাতে রাতেই মিনায় পৌঁছে যায়। যদিও ৮ তারিখ সূর্যোদয়ের পর রওয়ানা হওয়া নিয়ম এবং এটিই ভালোকিন্তু অধিক ভিড়ের কারণে আগে আগে চলে যাওয়া দোষণীয় নয়। -মানাসিক ১৮৮গুনয়াতুনন্নাসেক ১৪৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

মাসআলা :   ৯-১৩ যিলহজ্ব পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব। তাই প্রত্যেক হাজীকে এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।

 

দ্বিতীয় দিন ৯ যিলহজ্ব

উকূফে আরাফা 

আজ হজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন আদায়ের দিন। ৯ যিলহজ্ব সূর্য ঢলার পর থেকে পরবর্তী রাতের সূবহে সাদিকের মধ্যে যেকোনো স্বল্প সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকলেই এই ফরয আদায় হয়ে যায়। তবে এ দিন সূর্যাস্তের আগে আরাফায় পৌঁছলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৫৭ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৯ আহকামে হজ্ব ৬৩

আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা

৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া উত্তম। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩গুনয়াতুন্নাসেক ১৪৬-১৪৭

সূর্যোদয়ের পূর্বে আরাফায় যাওয়া 

ভিড়ের কারণে বহু লোক ৮ তারিখ রাতেই আরাফায় চলে যায়। মুআল্লিমের গাড়িগুলোও রাত থেকেই হাজী সাহেবদেরকে আরাফার পৌঁছাতে শুরু করে। রাতে চলে গেলে একাধিক সুন্নাতের খেলাফ হয়। এক. রাতে মিনায় থাকা সুন্নত। এটি আদায় হয় না।

দুই. ৯ তারিখ ফজর নামায মিনায় পড়া সুন্নত। এটাও ছুটে যায়। 

তিন. সূর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশে রওনা হওয়া মুস্তাহাব। সেটাও আদায় হয় না। তাই সাধ্য মতো চেষ্টা করা চাই যেন বাসগুলো অন্তত ফজরের পর ছাড়ে। যদি  মানানো সম্ভব না হয় তাহলে বৃদ্ধ ও মহিলারা মাহরামসহ আগে চলে যাবেন। আর সুস্থ সবল হাজীগণ মিনায় ফজরের নামায পড়ে আরাফার পথে রওয়ানা হবেন। মিনায় ফজর পড়ে হেঁটে গেলেও সুন্দরভাবে দুপুরের আগেই আরাফায় পৌঁছা যায়। গাড়িতে গেলে জ্যামের কারণে একটু বিলম্ব হলেও আরাফায় পৌঁছা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক সময় একেবারে তাঁবুর নিকটে পৌঁছা যায় না। কিছুটা আগে নেমে যেতে হয়। তাই মাযূর হাজীগণ রাতেও যেতে পারবেন। আর যারা সুস্থ সবল আছেনহাঁটতে তেমন সমস্যা হয় না তারা ফজরের পরই রওয়ানা হবেন। -রদ্দুল মুহতার -২/৫০৩

আরাফায় কসর করবে না পূর্ণ নামায পড়বে অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের মতে আরাফার ময়দানে মুকীম হাজীগণ যোহর-আসর পূর্ণ চার রাকাতই পড়বে। হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্তও এমনই। তাই নিজ নিজ তাবুতে পড়লে মুকীম হাজীগণ পূর্ণ নামায পড়বেনকসর করবেন না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৫ গুনয়াতুন্নাসেক ১৫১ফাতাওয়া হিন্দিয়া -১/২২৮২/৫০৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৯

যোহর ও আসর একত্রে পড়া

মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারলে যোহর ও আসর একত্রে ইমামের পিছনে আদায় করে নিবে। কিন্তু মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হলে জোহরের সময় যোহর এবং আসরের সময় আসর পড়বে। একত্রে পড়লে সময়ের আগে পড়া নামায আদায় হবে না।

উকূফে আরাফার করণীয়

উত্তম হলকিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে একেবারে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুআ করা। এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে না পারলে অল্প সময় বসবে। এরপর আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুআ মুনাজাতে লেগে যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার আহকামে হজ্ব ৬৫

সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফা থেকে বেরিয়ে যাওয়া

অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মুযদালিফায় রওনা হয়ে যায়। এরূপ হয়ে গেলে কর্তব্য হল পুনরায় আরাফায় ফিরে যাওয়া। যদি ফিরে না যায় তবে দম দিতে হবে। -খ. মানাসিক ২১০  গুনয়াতুনন্নাসেক ১৬০রদ্দুল মুহতার ২/৫৫২

৯ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আরাফায় পৌঁছতে না পারলে

কেউ যদি ৯ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আরাফার ময়দানে কোনো কারণে পৌঁছতে না পারে তবে সে সুবহে সাদেক হওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য আরাফায় অবস্থান করলেও তার ফরয আদায় হবে যাবে। আর এ কারণে  দম বা অন্য কিছু ওয়াজিব হবে না। তবে যথা সময় আরাফায় না পৌছার ত্রুটি থেকে যায়। -মানাসিক ২০৫-২০৬গুনয়াতুন্নাসেক ১৫৯

আরাফায় জুমআ

আরাফার ময়দানে জুমআ পড়া জায়েয নয়। তাই এদিন শুক্রবার হলে হাজীগণ যোহর পড়বেজুমআ নয়। – মানাসিক ১৯৬

মাসআলা :   মসজিদে নামিরার পশ্চিমের কিছু অংশসহ বাতনে উরানা’ নামক স্থান রয়েছে। এখানে উকূফ গ্রহণযোগ্য নয়। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০৪

মুযদালিফায় রওয়ানা

আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামায না পড়েই মুযদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হবে। সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হতে বিলম্ব না করাই শ্রেয়। -রদ্দুল মুহতার ২/৫০৮

৯ তারিখ দিবাগত রাত্রির মাগরিব ও ইশা

আজকের মাগরিব ও ইশা ইশার ওয়াক্তে মুযদালিফায় গিয়ে পড়তে হবে। যদি কেউ মুযদালিফায় পৌঁছার আগেই রাস্তায় মাগরিব ইশা পড়ে নেয় কিংবা মুযদালিফায় পৌঁছার আগে শুধু মাগরিব পড়ে তবে ইভয় ক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছে আবার মাগরিব ইশা একত্রে পড়া জরুরি। -মানাসিক ২১৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৪

মাসআলা :   মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা এক আযান ও এক ইকামতে পড়া উত্তম। পৃথক পৃথক ইকামতও জায়েয। –মানাসিক ২১৪ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০রদ্দুল মুহতার ২/৫০৮

                মুযদালিফায় গিয়ে ইশার ওয়াক্ত না থাকলে বিলম্বের কারণে মুযদালিফায় পৌঁছার আগেই ইশার ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে পথিমধ্যে মাগরিব ইশা পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে মুযদালিফায় পৌঁছার পর ইশার ওয়াক্ত বাকী না থাকলে মাগরিব ইশা দোহরাতে হবে না। কিন্তু যদি সেখানে গিয়ে মাগরিব-ইশা পড়ার সময় বাকী থাকে তবে এ দুই নামায পুনরায় পড়তে হবে। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৮আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪২আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪০৪তাতারখানিয়া ২/৪৫৮ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০;  গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৪

ইশার ওয়াক্তের পূর্বেই মুযদালিফা পৌঁছে গেলে

যদি কেউ ইশার ওয়াক্তের পূর্বে মুযদালিফায় পৌঁছে যায় তবে সে তখন মাগরিব পড়বে নাবরং ইশার ওয়াক্ত হওয়ার পর মাগরিব-ইশা আদায় করবে। -মানাসিক ২১৮

মাসআলা :   মুযদালিফায় দুই নামায একত্রে পড়ার জন্য জামাত শর্ত নয়। একা পড়লেও দুই নামায একত্রে ইশার সময় পড়বে। তবে নিজেরা জামাত করে পড়া ভালো। -মানাসিক ২১৪গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৩-১৬৪

মাসআলা :   কেউ যদি দুই নামাযের মাঝে নফল বা সুন্নাত নামায কিংবা অন্য কোন কাজে বিলম্ব করে। যেমন : খানা-খাওয়া ইত্যাদি তবে ইশার জন্য ভিন্ন ইকামত দেওয়া উচিত। -মানাসিক ২১৯

৩য়  দিন ১০ যিলহজ্ব

উকূফে মুযদালিফা

উকূফে মুযদালিফার সময় ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। সুবহে সাদিকের পর স্বল্প সময় অবস্থানের পর মুযদালিফা ত্যাগ করলেও ওয়াজিব আদায় হবে যাবে। তবে সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করা সুন্নত। আর মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। -মানাসিক ২১৫২১৮ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৫

মাসআলা : উকূফে মুযদালিফা যেহেতু ওয়াজিব তাই বিশেষ ওযর ব্যতীত নির্ধারিত সময়ে উকূফ না করলে দম ওয়াজিব হবে। অবশ্য ভীড়ের কারণে যদি সূর্যোদয়ের আগে মুযদালিফায় পৌঁছতে না পারে তবে তার উপর দম ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ২১৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১১

উকূফের স্থান

মুযদালিফার ময়দানের যেকোনো অংশেই অবস্থান করা যাবে। মসজিদে মাশআরে হারামের নিকট উকূফ করা ভালো। অবশ্য মুযদালিফার বাইরে মিনার দিকে ওয়াদিয়ে মুহাস্সির’ নামক স্থানে উকূফ করা যাবে না। কারণ এখানে উকূফ করা নিষিদ্ধ। এখানকার উকূফ ধর্তব্য নয়। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৭

মাসআলা : অতিশয় বৃদ্ধদুর্বল কিংবা অধিক পীড়িত রোগীর জন্য মুযদালিফায় অবস্থান না করে আরাফা থেকে সোজা মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ২১৯ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১

১০ম যিলহজ্বের দ্বিতীয় ওয়াজিব জামরায়ে আকাবার রমী

রমীর পদ্ধতি

রমী অর্থ কংকর নিক্ষেপ করা। মসজিদে হারামের দিক থেকে সর্বশেষ কংকর নিক্ষেপের স্থানকে জামরা আকাবা’ বলা হয়। এখানে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। কংকর নিক্ষেপের স্থানে যে চওড়া পিলার আছে তাতেই কংকর মারা জরুরি নয় বরং বেষ্টনীর ভিতরে পড়াই যথেষ্ট। পিলারে কংকর লেগে তা যদি বেষ্টনীর বাইরে গিয়ে পড়ে তবে তা ধর্তব্য হবে নাঐ কংকর পুনরায় নিক্ষেপ করতে হবে। আর পিলারের গোড়ায় মারা ভাল পিলারের উপর অংশে মারা অনুত্তম। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৭১ রদ্দুল মুহতার ২/৫১২

কংকর সংগ্রহ

প্রথম দিনের সাতটি কংকর মুযদালিফা থেকে সংগ্রহ করা মুস্তাহাব। অবশ্য অন্য জায়গা থেকে নিলেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে জামরার নিকট থেকে নিবে না। কারণএই স্থানের পাথরগুলো হাদীসের ভাষ্যমতে আল্লাহ তাআলার দরবারে ধিকৃত। যাদের হজ্ব কবুল হয়নি তাদের কংকর এখানে পড়ে থাকে। পরবর্তী দিনের কংকর মুযদালিফা থেকে নেওয়া মুস্তাহাব নয়। জামরার নিকট ব্যতীত অন্য যেকোনো স্থান থেকে নিতে পারবে। -মানাসিক ২২২গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৮আদ্দুররুল মুখতার ৫১৫

কংকরের ধরন

বুট বা ছোলার দানার মত ছোট কংকর মারা ভালো। বড়জোর খেজুরের বিচির মত হতে পারে। বড় পাথর মারা মাকরূহ। তদ্রƒপ নাপাক কংকর মারাও মাকরূহ। কংকর নাপাক হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা ধুয়ে নিক্ষেপের কাজে ব্যবহার করা যাবে। -মানাসিক ২২২

জামরা আকাবাতে রমীর সময়

১০ম যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত সম্ভব হলে রমী করা মুস্তাহাব। তবে ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে ১০ তারিখ দিবাগত রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত রমী করা জায়েয। বিনা ওজরে মুস্তাহাব সময় রমী না করে অন্য সময় রমী করা মাকরূহ। কিন্তু আজকাল যেহেতু মুস্তাহাব সময়ে রমীর স্থানে প্রচণ্ড ভীড় হয় তাই মহিলা ও দুর্বলদের মতো অন্যদের জন্যও মুস্তাহাব সময়ের বাইরে রমী করার অবকাশ রয়েছে। ওজর থাকার কারণে তা মাকরূহ হবে না। -গুনয়াতুন্নাসেক ১৬৯-১৭০ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২৩৩

সাত কংকর একত্রে মারা

কেউ যদি সাত কংকর একবারে নিক্ষেপ করে তবে এক কংকর মারা হয়েছে বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে আরো ছয়টি কংকর পৃথক পৃথক মারতে হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৫

মাসআলা :   জামরা আকাবার রমীর পর দুআর জন্য এখানে অবস্থান না করাই সুন্নত। তাই আজ কংকর মেরে দুআর জন্য সময়ক্ষেপন করবে না। বরং কংকর মেরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করবে। -মানাসিক ২২৪

সময় মতো রমী না করলে

১০ তারিখ দিবাগত রাতের সুবহে সাদিকের আগে জামরা আকাবার রমী করতে না পারলে ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মতে দম ওয়াজিব হবে। ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ.-এর মতে দম ওয়াজিব হবে না বেশি মাজুর ব্যক্তিগণ এ মতটি গ্রহণ করতে পারে। তবে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আগে মেরে নিতে হবে। অন্যথায় পরে কংকর মারার অবকাশ নেই। এক্ষেত্রে কংকর না মারার কারণে সবার মতেই ভিন্ন দম ওয়াজিব হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৬

অন্যকে দিয়ে রমী করানো

প্রত্যেক হাজী পুরুষ হোক বা মহিলানিজের রমী নিজেই করবে। ভীড়ের কারণে কিংবা অন্য কোনো শরয়ী ওযর ব্যতীত অন্যের দ্বারা রমী করানো জায়েয নয়। শরয়ী ওযর ব্যতীত অন্যকে দিয়ে রমী করালে তা আদায় হবে না। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে পুনরায় নিজের রমী করতে হবে। যদি না করে তবে দম ওয়াজিব হবে।

শরয়ী ওযর হল এমন অসুস্থতা বা দুর্বলতা যার কারণে বসে নামায পড়া জায়েয। অথবা অসুস্থতার কারণে জামরাত পর্যন্ত পেঁছা খুবই কষ্টকর হয় কিংবা রোগ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে তবে এরূপ ব্যক্তি অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবে। -আহকামে হজ্ব ৭৬-৭৭

মাসআলা :   মাজুর ব্যক্তির পক্ষ থেকে রমী করার জন্য তার অনুমতি লাগবে। বিনা অনুমতিতে কেউ তার পক্ষ থেকে রমী করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে অচেতনপাগল এবং ছোট বাচ্চার অনুমতি ছাড়াই তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবক রমী করে দিতে পারবে। -আহকামে হজ্ব ৭৭

মাসআলা :   যে ব্যক্তি অন্যের পক্ষ থেকে রমী করবেতার জন্য উত্তম হল প্রথমে নিজের রমী শেষ করবে তারপর বদলী করবে। একটি কংকর নিজের পক্ষ থেকে আর আরেকটি অন্যের পক্ষ থেকে এভাবে মারা মাকরূহ। তাই আগে নিজের সাত কংকর মারবে এরপর বদলী আদায় করবে। -আহকামে হজ্ব ৭৭

মাসআলা :   ঋতুবর্তী মহিলাগণও রমী করতে পারবে।

১০ম যিলহজ্বের তৃতীয় ওয়াজিব

দমে শুকর বা হজ্বের কুরবানী

তামাত্তু ও কিরানকারি হাজীদের জন্য একটা কুরবানী করা ওয়াজিব। জামরায়ে আকাবার রমীর পর কুরবানী করবেমাথা মুণ্ডাবে।

মাসআলা :   ইফরাদ হজ্বকারীর উপর হজ্বের কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে করলে ভালো।

মাসআলা :   ইফরাদ হাজীদের যেহেতু কুরবানী নেই তাই তারা রমীর পরই চুল কাটতে পারবে। রমীর আগে চুল কাটলে দম ওয়াজিব হবে।

দমে শুকর বা হজ্বের কুরবানীর সময়

১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ের ভিতর কুরবানী করতে হবে। সুন্নত সময় শুরু হয় ১০ যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর থেকে। ¬-রদ্দুল মুহতার ২/৫৩২

কুরবানীর স্থান

মাসআলা : হজ্বের কুরবানী হেরেমের সীমার ভিতরে করা জরুরি। হেরেমের বাইরে জবাই করলে তা দ্বারা হজ্বের কুরবানী আদায় হবে না। হেরেমের যেকোন স্থানে কুরবানী করতে পারে। মিনাতে করা জরুরি নয়। -রদ্দুল মুহতার ২/৫৩২

হাজীদের জন্য ঈদুল আযহার কুরবানী

মুসাফিরের উপর ঈদুল আজহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। সুতরাং যারা ১০-১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুসাফির থাকবে তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কিন্তু যারা মিনায় রওয়া হওয়ার আগে মক্কাতেই ১৫ দিনের নিয়তে অবস্থান করেছে তারা মুকীম হবে। তাদের জন্য হজ্বের কুরবানী ছাড়াও ঈদুল আযহার ভিন্ন কুরবানী দিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৫

হজ্বের কুরবানীর গোশত

হজ্বের কুরবানীর গোশত হাজী নিজেও খেতে পারবে। এ কুরবানীর গোশতের হুকুম ঈদুল আযহার কুরবানীর  মতোই।

হজ্বের কুরবানীর সামর্থ না থাকলে

তামাত্তু ও কিরানকারী হাজীদের কারো নিকট হজ্বের কুরবানীর সামর্থ না থাকলে তাকে এর পরিবর্তে ১০টি রোযা রাখতে হবে। ৩টি রোযা আরাফার দিন পর্যন্ত শেষ হতে হবে। আর বাকী সাতটি পরবর্তীতে সুযোগমতো রাখলেই চলবে। আরাফার দিন সহ তিনটি রোযা রাখা না হলে তার জন্য কুরবানী দেওয়াই জরুরি হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে  তাৎক্ষণিক কুরবানীর ব্যবস্থা করতে না পারলে চুল কেটে নিবে এবং পরবর্তীতে দুটি পশু যবেহ করবে। ১টি হজ্বের কুরবানী হিসাবে। আর অপরটি কুরবানী না করে চুল কাটার কারণে।

মাসআলা : হজ্বের কুরবানীতে ঈদুল আযহার কুরবানীর ন্যায় গরুমহিষউটের সাত ভাগের একভাগ দিতে পারবে। এ ছাড়া ছাগলভেড়া বা দুম্বা দেওয়ার সুযোগ তো আছেই।

১০ যিলহজ্বের চতুর্থ ওয়াজিব

মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা

মাথা মুণ্ডানোর সময়

১০ যিলহজ্বের দিন কুরবানীর পর থকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত মাথা মুণ্ডানোর সুযোগ আছে। এর চেয়ে বিলম্ব করলে দম ওয়াজিব হবে। অবশ্য মাথা মুণ্ডানোর আগ পর্যন্ত ইহরাম অবস্থাতেই থাকতে হবে। এ সময় পাথর মারার কাজ করলে তাও ইহরাম অবস্থাতেই করতে হবে।-হিদায়া ১/২৭৬গুজয়াতুল মানাসিক ১৭৫রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৪বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩০মাবসূতে সারাখসী ৪/৭০

চুল কাটার পরিমাণ

মাথার চুল না মুণ্ডিয়ে যদি খাটো করে তবে আঙুলের এক কর (প্রায় এক ইঞ্চি) পরিমাণ ছোট করা ওয়াজিব। মহিলাগণ অন্তত এতটুকু ছেটে নিবে। এ পরিমাণ চুল মাথার এক চতুর্থাংশ থেকে কাটা হলেই হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু মাথার এক অংশ মুণ্ডিয়ে অন্য অংশে চুল রাখা বা ছোট বড় করে রাখা মাকরূহ তাহরীমী। তাই এমনটি করবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৫

মাসআলা : মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটার আগে নখ বা শরীরের অতিরিক্ত পশম ইত্যাদি কাটা যাবে না। যদি কাটে তবে জরিমানা দিতে হবে।

মাসআলা : জামরা আকাবার কংকর নিক্ষেপের পর হজ্ব আদায়কারী নিজের চুল কাটার আগে অন্যের চুল কাটতে পারবে। কিন্তু নিজের চুল কাটার সময় হওয়ার পূর্বে অন্যের চুল কেটে দিলে যে কাটছে তার উপর এক ফিতরা পরিমাণ সাদকা করা জরুরি হবে। -আহকামে হজ্ব ৯৯আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫১২

মাসআলা : কারো মাথা পূর্ব থেকে মুণ্ডানো থাকলে কিংবা পুরো মাথা টাক থাকলে হালাল হওয়ার জন্য মাথায় ক্ষুর ঘুরিয়ে নিলেই চলবে। -বাদায়েউস সানায়ে ২/২১২রদ্দুল মুহতার ২/৫১৬ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩১

মাথা মুণ্ডানোর স্থান

হাজীদের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মিনাতে মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটা সুন্নাত। হেরেমের সীমার ভিতর অন্য কোথাও করে নিলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। হেরেমের বাইরে মাথা কামালে দম ওয়াজিব হবে। -আহকামে হজ্ব ৭৯

হজ্বের তৃতীয় ফরয তাওয়াফে যিয়ারত

তাওয়াফে যিয়ারতের সময়

সুন্নত হল জামরা আকাবার রমীকুরবানী এবং মাথা কামানোর পর তাওয়াফ করা। আরাফায় অবস্থানের আগে তাওয়াফে যিয়ারত করলে তা দ্বারা ফরয তাওয়াফ আদায় হবে না। আরাফায় অবস্থানের পর ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্বের সূর্যাস্তের আগে এই তাওয়াফ করার অবকাশ রয়েছে। যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্ত হয়ে যায় এবং তাওয়াফে যিয়ারত করা না হয় তবে দম দেওয়া জরুরি হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭৫৩৩আহকামে হজ্ব ৮০

মাসআলা : তাওয়াফে যিয়ারত অসুস্থ হলেও নিজেকেই করতে হবে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু অন্যকে দিয়ে করানো যাবে না। হাঁঅচেতন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী তাওয়াফে যিয়ারত করা যাবে। আর সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য পায়ে হেঁটে তাওয়াফে যিয়ারত করা ওয়াজিব। পায়ে হেঁটে করার সামর্থ থাকাবস্থায় হুইল চেয়ারে করে বা অন্য কোনো বাহনে চড়ে তাওয়াফে যিয়ারত করা যাবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭

তাওয়াফে যিয়ারত রমল ও সায়ী

যারা মিনায় যাওয়ার পূর্বে সায়ী করেছে অর্থাৎ ইফরাদ হজ্বকারী তাওয়াফে কুদুমের পর এবং তামাত্তু ও কিরানকারী নফল তাওয়াফের পরতাদের যেহেতু তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করতে হবে না তাই এই তাওয়াফে তাদেরকে রমলও করতে হবে না। অবশ্য যারা পূর্বে এভাবে সায়ী করেনি তাদের যেহেতু তাওয়াফের পর সায়ী করতে হবে তাই তাওয়াফে রমলও করতে হবে। -আহকামে হজ্ব ৮১

ঋতুমতি মহিলার তাওয়াফ

স্রাব চলাকালীন তাওয়াফ নিষিদ্ধ। তাই পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে পবিত্র হয়ে গেলে অবশ্যই এর ভিতরেই তাওয়াফ সেরে নিতে হবে। কিন্তু যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের ভিতর পবিত্র না হয় তাহলে পবিত্র হওয়ামাত্র আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে কোনো জরিমানা আসবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯

পবিত্র হওয়ার আগেই দেশে ফিরতে হলে

যদি কোনো মহিলা হায়েয বা নেফাস অবস্থায় থাকার কারণে তাওয়াফে যিয়ারত করতে না পারেআর তার দেশে ফিরার তারিখ হয়ে যায়। কোনোভাবে  তা বাতিল বা দেরি করা সম্ভব না হয় তবে এই অপারগতার কারণে অপবিত্র অবস্থায় তাওয়াফ করে নিবে। আর একটি উট বা গরু দম হিসাবে জবাই করতে হবে। সাথে আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফারও করবে। তাওয়াফে যিয়ারত না করে দেশে যাবে না। অন্যথায় তাকে আবার মক্কায় এসে তাওয়াফ করতে হবে। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামীর সাথে থাকতে পারবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/৫১৮-৫১৯

মাসআলা : কোনো মহিলার ওষুধ সেবনের কারণে যদি স্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যায় তবে সে গোসল করে তাওয়াফ করতে পারবে।

হজ্বের ৪র্থ দিন ১১ যিলহজ্ব

মাসআলা : ১১ ও ১২ যিলহজ্বের রাত্রিতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। কেউ যদি মিনায় না থাকে তবে সুন্নতের খেলাফ হবে বটে কিন্তু কোনো প্রকার জরিমানা দিতে হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩

১১ যিলহজ্ব রমীর সময়

জোহরের সময় থেকে নিয়ে আগত রাত্রের সুবহে সাদিক পর্যন্ত রমীর সময়। তবে সম্ভব হলে সূর্যাস্তের আগে করে নেওয়া ভাল। সূর্যাস্তের পর মাকরূহ সময়। কিন্তু মহিলাদুর্বল ও অধিক ভীড়ের কারণে সূর্যাস্তের পর রমী করতে কোনো অসুবিধা নেই।

মাসআলা : ১১ যিলহজ্ব তিন জামরাতেই রমী করতে হবে। প্রথম দুই জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করে কিবলামুখী হয়ে দুআ করা সুন্নাত। জামরায়ে আকাবার রমীর পর দুআ নেই। -সহীহ বুখারী ১/২৩৬রদ্দুল মুহতার ২/৫২১

পঞ্চম দিন ১২ যিলহজ্ব

রমীর তৃতীয় দিন

১২ যিলহজ্ব যোহরের সময় থেকে রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অবশ্য সম্ভব হলে সূর্যাস্তের আগে রমী করা মুস্তাহাব। আজও তিন জামরাতেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।

মাসআলা : ১১ ও ১২ তারিখ যোহরের পূর্বে রমীর সময় শুরুই হয় না। তাই এ সময় কেউ রমী করলে তা আদায় হবে না। প্রকাশ থাকে যে১১ ও ১২ তারিখে নির্ধারিত সময়ের ভিতর যদি কেউ রমী করতে না পারে তবে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত তা কাযা করার (অর্থাৎ রমী করার) সুযোগ আছে। কিন্তু ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগে কাযা করতে না পারলে এরপরে আর রমী করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে দম দেওয়া জরুরি। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১

১৩ যিলহজ্বরমী করা

মাসআলা : ১২ তারিখ দিবাগত রাতে মিনায় থাকা উত্তম এবং ১৩ তারিখ রমী করাও উত্তম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থ দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখ রমী করেই মিনা ত্যাগ করেছিলেন।

              অবশ্য কেউ যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে রমী করে মিনা ত্যাগ করতে না পারে তবে সূর্যাস্তের পর মিনা ত্যাগ করা মাকরূহ হবে। তবে এ কারণে দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। আর যদি মিনায় ১৩ তারিখ সুবহে সাদিক হয়ে যায় তবে ঐ দিন রমী করা ওয়াজিব। রমী না করে চলে যাওয়া না জায়েয এবং এতে দম ওয়াজিব হবে। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১আহকামে হজ্ব ৮৫

মাসআলা : ১৩ তারিখ যোহরের পূর্বেও রমী করা জায়েয। তবে যোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময় হচ্ছে রমী করার সুন্নত ওয়াক্ত। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২১ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩

তাওয়াফে বিদা

মীকাতের বাইরে অবস্থানকারী হাজীদের জন্য মক্কা মুকাররামা ত্যাগ করার আগে একটি তাওয়াফ করা ওয়াজিব। একে তাওয়াফে বিদা বলা হয়। এই তাওয়াফটি মক্কা থেকে বিদায়ের সময় করা উত্তম। আর মক্কা ও মীকাতের ভিতর অবস্থানকারীদের জন্য তাওয়াফে বিদা ওয়াজিব নয়মুস্তাহাব। -রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩

তাওয়াফে যিয়ারতের পর হাজী কর্তৃক আদায়কৃত যে কোন তাওয়াফ ছাড়া বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

 

লক্ষণীয় :

হজ্বের মৌলিক বিষয়গুলো উপরে উল্লেখ করা হল। এ ছাড়া হজ্ব করতে গিয়ে ভুল। এছাড়া হজ্ব ভুল-ভ্রান্তি বা অন্য কারণে হাজীগণ আরো অনেক মাসআলার সম্মুখীন হতে পারেন সে ক্ষেত্রে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে তা জেনে নেওয়া আবশ্যক।