পদত্যাগে রবিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম সমন্বয়কদের
হাইকোর্টে ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত
- আপডেট সময় : ০৫:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৪১ বার পড়া হয়েছে
হাইকোর্ট বিভাগে ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে এসব বিচারপতিদের পদত্যাগের জন্য রবিবার বিকেল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে সমন্বয়করা।
হাইকোর্টে ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়োগ পাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর বিচারকদের অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এনেক্স ভবনে রেজিস্ট্রার জেনারেল এ তথ্য জানান। তার এই ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন।
রেজিস্ট্রার জেনারেল ডা. আজিজ আহমদ ভূঁঞা বলেন, “আগামী আদালত খুললে বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তোলা হবে। ইতোমধ্যে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।”
রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধি দল আমার সঙ্গে দেখা করেছে। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আমরা আলোচনা করেছি। পরবর্তী সময়ে এই বিষয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। বিচারপতিদের পদত্যাগ কিংবা অপসারণের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। বিগত সরকার বিচারপতিদের অপসারণে একটি অ্যামেনমেন্ট নিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেটি বাতিল করে দিয়েছে। এটি আবারও রিভিউর জন্য সরকার আবেদন করেছে। আগামী ২০ তারিখ রবিবার আদালত খুলবে। এটা নিয়ে ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেবেন।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া বিচারপতিদের পদত্যাগের যে দাবি, এক্ষেত্রে বিষয়টা হলো— বিচারক নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি, আবার অপসারণও করেন রাষ্ট্রপতি। এখানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির যা করনীয় তিনি তা করেছেন। ইতোমধ্যে ১২ জন বিচারককে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে, ২০ তারিখ তারা বিচারকাজ করতে পারবেন না। আমরা আশা করছি, ২০ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করবে। পর্যায়ক্রমে কী হয় সেটা জানা যাবে।”
রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় আশা করি রবিবার আসবে। বিচারপতিদের সেদিনই পদত্যাগ করতে হবে। রায়ের জন্য রবিবার বিকেল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। হাইকোর্ট, জজকোর্টসহ দেশের বিচারালয়ে দম্ভের সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। যাদের হাতে দুই হাজার শহিদের রক্তের দাগ রয়েছে। তারা চায় খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে। তাদের অপসারণে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা নেই। তাই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব— ভিডিও দেখে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”
হাসনাত আরও বলেন, “হাইকোর্টের ফ্যাসিস্ট ১২ বিচারপতিকে অপসারণের দাবিতে রবিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। রবিবার তাদের অপসারণ করা না হলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনের যাব। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছি। আমাদের আন্দোলনের প্রতিফলনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। আমরা এ দেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার দেখতে চাই না এবং ফ্যাসিবাদীদের কোনো ঠাঁই দেওয়া হবে না।”
এর আগে, আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট উল্লেখ করে ১২ বিচারকের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজারও শিক্ষার্থী। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। তাদের স্লোগান, অবস্থান কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো হাইকোর্ট এলাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়।