হাড় ব্যথায় কী করবেন
- আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
আপনার হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার কারণে বা হাড়ে আঘাত লাগার কারণে হাড়ে ব্যথা হতে থাকে, তাহলে সেটা এক বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাড়ে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা বা ক্যান্সারের কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যদি আপনার হাড়ের ব্যথার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে না পান, তাহলে ব্যাপারটা উপেক্ষা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং ব্যথার কারণ বের করুন
হাড়ের ব্যথা এক সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে মাঝবয়সী বা তার বেশি বয়সের নারী-পুরুষদের জন্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরেরও অনেক পরিবর্তন হয়। আপনার শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশির আকার ও হাড়ের ঘনত্ব কমে আসে। এতে আপনার হাতে বারবার আঘাত লাগার প্রবণতা দেখা দেয় এবং হাড় ভেঙে যায়।
যদি আপনার হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার কারণে বা হাড়ে আঘাত লাগার কারণে হাড়ে ব্যথা হতে থাকে, তাহলে সেটা এক বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাড়ে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা বা ক্যান্সারের কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
যদি আপনার হাড়ের ব্যথার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে না পান, তাহলে ব্যাপারটা উপেক্ষা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং ব্যথার কারণ বের করুন।
হাড়ের ব্যথার কারণ
অনেক কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে
ইনজুরি
ইনজুরি বা আঘাত হাড়ে ব্যথার সাধারণ কারণ। সাধারণত আঘাত থেকে, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট বা পড়ে যাওয়া থেকে ব্যথা হতে পারে। হাড়ে যে কোনো ধরনের ক্ষতি হলে হাড় ব্যথা
করতে পারে।
খনিজের ঘাটতি
আপনার হাড় শক্তিশালী করতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিন, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’র অভাবে সচরাচর হাড়ের ভঙ্গুর রোগ অস্টিওপোরোসিস হয়। অস্টিওপোরোসিস হাড়ের খুব সাধারণ রোগ। অস্টিওপোরোসিসের শেষ স্তরে হাড়ে ব্যথা হয়।
ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার
শরীরের এক স্থানের ক্যান্সার অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। স্তন, ফুসফুস, থাইরয়েড, কিডনি ও প্রোস্টেটের ক্যান্সার সাধারণত হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
হাড়ের ক্যান্সার
হাড়ের ক্যান্সার হাড়েই উৎপন্ন হয়। হাড়ের স্বাভাবিক গঠন ধ্বংসের মাধ্যমে এটা হাড়ে ব্যথা ঘটাতে পারে।
হাড়ে রক্ত সরবরাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রোগ
কিছু রোগ যেমন– সিকেল সেল অ্যানিমিয়া হাড়ে রক্ত সরবরাহে বাধা দেয়। রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে হাড়ের টিস্যু মারা যেতে শুরু করে। এর ফলে হাড়ে মারাত্মক ব্যথা হয় ও হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে।
ইনফেকশন
হাড়ে ইনফেকশন হলে যে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয় তার নাম অস্টিওমাইলাইটিস। হাড়ের এ ইনফেকশন হাড়ের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারে ও হাড়ের ব্যথা ঘটাতে পারে।
লিউকেমিয়া
লিউকেমিয়া হলো, অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। অধিকাংশ হাড়ে অস্থিমজ্জা থাকে এবং এটা হাড়ের কোষ তৈরি করে। লিউকেমিয়ার রোগীদের হাড়ে বিশেষ করে পায়ে ব্যথার অভিজ্ঞতা ঘটে।
উপসর্গ
হাড়ের ব্যথার সবচেয়ে লক্ষণীয় উপসর্গ হলো, বসে থাকলে বা নড়াচড়া করলে অস্বস্তি লাগে।
অন্যান্য উপসর্গগুলো নির্ভর করে আপনার হাড়ের ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোর ওপর।
lইনজুরির ক্ষেত্রে যে হাড়ে ব্যথা হয়, সেখানে আরও কিছু উপসর্গ থাকে। যেমন– স্থানটি ফুলে যাওয়া, দৃশ্যমান ভাঙা বা অঙ্গবিকৃতি, আঘাতের স্থানে কট করে শব্দ হওয়া ইত্যাদি।
lখনিজের ঘাটতি হলে হাড়ের ব্যথার সঙ্গে মাংসপেশি ও টিস্যুতে ব্যথা করে, ঘুমের সমস্যা হয়, পেশি কামড়ায়, অবসাদ ও দুর্বল লাগে।
lঅস্টিওপোরোসিসে পিঠে ব্যথা করে, রোগী নুয়ে থাকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যায়।
lছড়িয়ে পড়া বা মেটাস্টাটিক ক্যান্সারে বিস্তৃত উপসর্গ থাকে, যা নির্ভর করে ক্যান্সারটি কোথায় হয়েছে তার ওপর। এ ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, খিঁচুনি, মাথা ঘোরা, জন্ডিস, ছোট ছোট শ্বাস ফেলা, পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকে।
lহাড়ের ক্যান্সারে হাড় ভাঙা বেড়ে যায়, ত্বকের নিচে পিণ্ড অনুভব করা যায়, টিউমারটি নার্ভে চাপ দিলে অসাড় বা ঝিনঝিন অনুভূতি হয়।
l রক্ত সরবরাহ কমে গেলে জয়েন্টে ব্যথা হয়, জয়েন্ট কাজ করে না, জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যায়।
lইনফেকশনের ক্ষেত্রে ইনফেকশনের স্থানটি লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, গরম হয়ে যায়। অঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়, বমি বমি ভাব হয় ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
lলিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে, ত্বক ফ্যাকাসে হয়, রোগী ছোট ছোট শ্বাস নেয়, রাতে ঘেমে যায় ও হঠাৎ ওজন কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় হাড়ে ব্যথা
অনেক গর্ভবতী নারীর পেলভিক বা শ্রোণীর হাড়ে ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। এ ব্যথা কখনও কখনও গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত শ্রোণী চক্রে স্থানান্তরিত হয়। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে– পিউবিক হাড়ে ব্যথা এবং পেলভিক জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া ও ব্যথা করা।
বাচ্চা প্রসব না হওয়া পর্যন্ত ব্যথা যায় না। অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিলে উপসর্গ কমে যায়। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে–
lজয়েন্টগুলো সঠিকভাবে নাড়াচাড়া করা
lফিজিক্যাল থেরাপি
lব্যায়াম
lতলপেটের ব্যায়াম
হাড়ের ব্যথা কীভাবে নির্ণয় করবেন?
সঠিক চিকিৎসার জন্য হাড়ের ব্যথার কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। হাড়ে ব্যথার নির্দিষ্ট কারণের চিকিৎসা করলে আপনার ব্যথাও কমে যাবে।
আপনার চিকিৎসক আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন, আপনার সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করবেন। সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে–
আপনার ব্যথা কোথায় হয়?
প্রথম কবে ব্যথা শুরু হয়েছিল?
ব্যথা কি খুব খারাপ অবস্থায় যায়?
হাড়ে ব্যথার সঙ্গে কি অন্য কোনো উপসর্গ রয়েছে?
আপনার চিকিৎসক আপনার ভিটামিনের ঘাটতি দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে দিতে পারেন, ক্যান্সার আছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্যান্সার মার্কার পরীক্ষা দিতে পারেন। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক আপনার ইনফেকশন ও অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানতে পারেন; যা আপনার হাড়ের স্বাস্থ্যে বাধা প্রদান করে।
lচিকিৎসক আপনার হাড়ের এক্স-রে, এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান দ্বারা ইনজুরি, হাড়ের ক্ষত এবং হাড়ের মধ্যকার টিউমার দেখতে পারেন।
lমাল্টিপল মায়োলোমাসহ অস্থিমজ্জার মধ্যকার
অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করা যেতে পারে।
lকিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনার হাড়ের ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য আরও বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিতে পারেন।