ঢাকা ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
কিভাবে বাড়ছে বাংলাদেশের আয়তন? পাল্টে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের পোশাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পদত্যাগ করছেন পুতুল? চারটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে নতুন বাংলাদেশ! সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক : প্রেসসচিব অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন: সাংবাদিকদের নামে মামলা নতুন অডিও ফাঁস : কাঁদতে কাঁদতে যা বললেন শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব শেখ হাসিনার বিচার করা: শফিকুল আলম পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে জনসাধারণের অভিমত চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শাপলা চত্বরে হেফাজত দমন : অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট বেগম জিয়াকে হিংসা করতেন হাসিনা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে বারণের কারণ জানালেন ড. ইউনূস  ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে জুলাই ঘোষণাপত্রের দরকারই নাই রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও মোবাইল রিচার্জে বাড়ছে না ভ্যাট ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদ পদত্যাগপত্রে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক আমার মেয়ের খুনি কে, আমি কি বিচার পাব না: প্রশ্ন তিন্নির বাবার

হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে ছিলেন শহীদের বাবা

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 75
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়ে কোনো বেড না পেয়ে মেঝেতে পড়ে ছিলেন জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে এক শহীদের বাবা। হাসপাতালে গিয়ে শহীদের বাবাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।

বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

তাসনিম জারা তার পোস্টে লিখেছেন, ‘শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান শুধু কথায় নয়, কাজে দেখাতে হবে।

গতকাল একটা নিউজ দেখলাম, আবু সাঈদের বাবাকে হেলিকপ্টারে আনা হলো ঢাকা সিএমএইচে। অনেকেই এই খবরে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছেন – শহীদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে। কিন্তু একই দিনে আরেকটি অভিজ্ঞতা আমাকে বাস্তবতার আরেকটি রূঢ় চেহারা দেখাল।
তিনি লিখেছেন, ‘দুপুর ১২টায় একজন শহীদের বোন ফোন দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, তার বাবা গুরুতর অসুস্থ।

ডাক্তার আইসিইউতে ভর্তি করতে বলেছেন, কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না। অসহায়ভাবে দুই বোন হাসপাতালের এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন। আমি উনাকে জানাই যে দ্রুত আসছি। গিয়ে দেখি, উনার বাবা মেঝেতে শুয়ে আছেন।
হাসপাতালের সহকারী ডিরেক্টরকে খুঁজে কথা বলার পর অবশেষে একটা সিট ম্যানেজ হয়। কিন্তু দেরিতে চিকিৎসা পাওয়ায় তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে তিনি লেখেন, কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল শহীদ পরিবার এবং আহতদের ফাস্ট ট্র্যাক সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখছি। হাসপাতালের নাম বলছি না, কারণ সমস্যাটা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং পুরো সিস্টেমের।

শহীদ পরিবারের জন্য ঘোষিত বিশেষ সুবিধা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটার কোনো মনিটরিং কী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করছে? যদি পরিবারগুলোর অভিযোগ থাকে, সেটা কিভাবে, কোথায় জানাবে? এই সুবিধা নিশ্চিত করতে কী নির্দিষ্ট হেল্পলাইন বা পোর্টাল আছে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। শুধু ঘোষণা দিয়ে দায় শেষ হলে চলবে না। এটা তো প্রমাণিত হলো যে শহীদের বাবা হাসপাতালের মেঝেতে দিন কাটাচ্ছে।
ডা. তাসনিম জারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুনির্দিষ্ট ৩টি দাবি তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো : ১. হাসপাতালের প্রবেশপথ এবং প্রধান অংশগুলোতে সাইনবোর্ড বা পোস্টার বসান, যেখানে লেখা থাকবে, আপনি কি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্য? আমাদের জানান, যেন আমরা আপনাকে দ্রুত সাহায্য করতে পারি। এই পোস্টারে কোথায়, কাকে এবং কীভাবে জানাতে হবে সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য যুক্ত করুন, যাতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের বিভ্রান্তি না হয়।

২. একটি ২৪/৭ হেল্পলাইন চালু করুন যেখানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের সমস্যা জানাতে পারবেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধান পাবেন। হেল্পলাইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল তৈরি করুন। হেল্পলাইন অপারেটরদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করুন, যেন তারা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহ নয়, বরং সমস্যার কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম হন। সেবার মান এবং অপেক্ষার সময় মনিটর করুন। প্রতি সপ্তাহে বা মাসে রিপোর্ট প্রকাশ করুন।

৩. সেবার মান তদারকির জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করুন। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করুন। প্রতিটি অভিযোগের ফলাফল অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে জানানোর ব্যবস্থা রাখুন, যেন ভুক্তভোগীরা আশ্বস্ত হতে পারেন যে তাদের কথা শোনা হচ্ছে।

তিনি আরো লিখেছেন, এখানে আকাশ-কুসুম কোনো দাবি করিনি। শুধু আপনাদের পূর্বে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে বলছি। আমি যেভাবে প্রস্তাব করেছি এভাবেই করতে হবে, তা না। আপনাদের নিজেদের মতো করেই করুন। তবে যেভাবেই করেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান করুন। কথার চেয়ে কাজ দিয়ে শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান দেখান।

শহীদ পরিবারগুলো যেন নিজেদের বোঝা না মনে করে, বরং সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে—এটাই আমাদের দায়িত্ব। আবু সাঈদের বাবার মতো প্রতিটি শহীদ পরিবারের সদস্যের প্রাপ্য সম্মান এবং যত্ন নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরো জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া আর শহীদের আত্মত্যাগকে অপমান করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে ছিলেন শহীদের বাবা

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

 

চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়ে কোনো বেড না পেয়ে মেঝেতে পড়ে ছিলেন জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে এক শহীদের বাবা। হাসপাতালে গিয়ে শহীদের বাবাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।

বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

তাসনিম জারা তার পোস্টে লিখেছেন, ‘শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান শুধু কথায় নয়, কাজে দেখাতে হবে।

গতকাল একটা নিউজ দেখলাম, আবু সাঈদের বাবাকে হেলিকপ্টারে আনা হলো ঢাকা সিএমএইচে। অনেকেই এই খবরে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছেন – শহীদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে। কিন্তু একই দিনে আরেকটি অভিজ্ঞতা আমাকে বাস্তবতার আরেকটি রূঢ় চেহারা দেখাল।
তিনি লিখেছেন, ‘দুপুর ১২টায় একজন শহীদের বোন ফোন দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, তার বাবা গুরুতর অসুস্থ।

ডাক্তার আইসিইউতে ভর্তি করতে বলেছেন, কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না। অসহায়ভাবে দুই বোন হাসপাতালের এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন। আমি উনাকে জানাই যে দ্রুত আসছি। গিয়ে দেখি, উনার বাবা মেঝেতে শুয়ে আছেন।
হাসপাতালের সহকারী ডিরেক্টরকে খুঁজে কথা বলার পর অবশেষে একটা সিট ম্যানেজ হয়। কিন্তু দেরিতে চিকিৎসা পাওয়ায় তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে তিনি লেখেন, কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল শহীদ পরিবার এবং আহতদের ফাস্ট ট্র্যাক সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখছি। হাসপাতালের নাম বলছি না, কারণ সমস্যাটা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং পুরো সিস্টেমের।

শহীদ পরিবারের জন্য ঘোষিত বিশেষ সুবিধা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটার কোনো মনিটরিং কী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করছে? যদি পরিবারগুলোর অভিযোগ থাকে, সেটা কিভাবে, কোথায় জানাবে? এই সুবিধা নিশ্চিত করতে কী নির্দিষ্ট হেল্পলাইন বা পোর্টাল আছে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। শুধু ঘোষণা দিয়ে দায় শেষ হলে চলবে না। এটা তো প্রমাণিত হলো যে শহীদের বাবা হাসপাতালের মেঝেতে দিন কাটাচ্ছে।
ডা. তাসনিম জারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুনির্দিষ্ট ৩টি দাবি তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো : ১. হাসপাতালের প্রবেশপথ এবং প্রধান অংশগুলোতে সাইনবোর্ড বা পোস্টার বসান, যেখানে লেখা থাকবে, আপনি কি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্য? আমাদের জানান, যেন আমরা আপনাকে দ্রুত সাহায্য করতে পারি। এই পোস্টারে কোথায়, কাকে এবং কীভাবে জানাতে হবে সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য যুক্ত করুন, যাতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের বিভ্রান্তি না হয়।

২. একটি ২৪/৭ হেল্পলাইন চালু করুন যেখানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের সমস্যা জানাতে পারবেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধান পাবেন। হেল্পলাইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল তৈরি করুন। হেল্পলাইন অপারেটরদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করুন, যেন তারা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহ নয়, বরং সমস্যার কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম হন। সেবার মান এবং অপেক্ষার সময় মনিটর করুন। প্রতি সপ্তাহে বা মাসে রিপোর্ট প্রকাশ করুন।

৩. সেবার মান তদারকির জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করুন। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করুন। প্রতিটি অভিযোগের ফলাফল অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে জানানোর ব্যবস্থা রাখুন, যেন ভুক্তভোগীরা আশ্বস্ত হতে পারেন যে তাদের কথা শোনা হচ্ছে।

তিনি আরো লিখেছেন, এখানে আকাশ-কুসুম কোনো দাবি করিনি। শুধু আপনাদের পূর্বে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে বলছি। আমি যেভাবে প্রস্তাব করেছি এভাবেই করতে হবে, তা না। আপনাদের নিজেদের মতো করেই করুন। তবে যেভাবেই করেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান করুন। কথার চেয়ে কাজ দিয়ে শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান দেখান।

শহীদ পরিবারগুলো যেন নিজেদের বোঝা না মনে করে, বরং সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে—এটাই আমাদের দায়িত্ব। আবু সাঈদের বাবার মতো প্রতিটি শহীদ পরিবারের সদস্যের প্রাপ্য সম্মান এবং যত্ন নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরো জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া আর শহীদের আত্মত্যাগকে অপমান করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।