ঢাকা ১১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ড. ইউনূসকে সভাপতি করে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন আপা আপা বলা তানভীর নিজেই আ.লীগের হাতে নির্যাতিত, আছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভল্টের টাকায় অবৈধ বাণিজ্য বিডিআর বিদ্রোহের বিচার পুনরায় করা সম্ভব? সংলাপ, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় এগোতে চায় সরকার এবার সরকারের কাছে ৬৩ কোটি ডলার সুদ চাইল রাশিয়া এফবিসিসিআই সভাপতির পদত‍্যাগ, প্রশাসক নিয়োগ তারল্য বাড়াতে ‘বিশেষ ধার’ আগামী সপ্তাহে ৭ হাজার কোটিতে নির্মিত তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ গার্মেন্টসে থামছে না অস্থিরতা চাকরি গেল আরো দুই লেফটেন্যান্ট জেনারেলের ওষুধের বাজারে উত্তাপ ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন সড়ক পরিবহনে আসছে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ গরুর দিয়ে পাট নিতে চায় পাকিস্তানি সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন, নেতৃত্বে যারা সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ, কমিশনের দায়িত্বে শাহদীন মালিক ছয় বিশিষ্ট নাগরিককের নেতৃত্বে সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার শিগগিরই মেট্রোরেলের বন্ধ থাকা স্টেশন চালু হচ্ছে বিদ্যুতের পাওনা চেয়ে ড. ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন গৌতম আদানি

হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে এত নারী রাস্তায় নেমেছিল কেন?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৬:১১:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৫০৩৬ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

আওয়ামী লীগের সভানেন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের ইতি টানতে হাজার হাজার মানুষ যখন রাস্তায় নেমে আসে তখন একটি বিষয় ছিল আলাদাভাবে নজর কাড়ার মতো। আর সেটি হচ্ছে, আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক নারীদের অংশগ্রহণ।

রাস্তায় নেমে অসংখ্য নারী পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শেখ হাসিনা বিরোধী শ্লোগান দিয়েছে। সাধারণত বাংলাদেশের আন্দোলনগুলোতে এত নারীদের অংশগ্রহণ দেখা যায় না। আন্দোলনে নারীদের এই অংশগ্রহণের বিষয়টিকে অভূতপূর্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন অনেক বিশ্লেষক। বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের একজন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ফারজানা লিও একজন পেশাদার বডি বিল্ডার। তিনি নিজে কাজিপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ও শ্লোগান দিয়েছেন।

ফারজানা লিও মনে করেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে নারীরা যদি একাত্ম না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হতো না। নারীরা যখন ব্যাপক সংখ্যায় শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িয়ে যায় তখন তাদের পক্ষে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। ফারাজনা লিও তার জীবনে কখনোই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না। নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের গুলি করে মেরেছে সেটি দেখে বেশ মর্মাহত হয়েছিলেন তিনি। এই বিষয়টি তাকে রাস্তায় টেনে নামিয়েছে। আর রাস্তায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে আন্দোলন করতে দেখে তিনিও উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ যতই বাড়ছিল, সেটি পুরুষদের মনেও সাহস যোগাচ্ছিল।

তিনি বলেন, বহু নারী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে আবার অনেকে বাড়িতে থেকেও আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে। সন্তান যখন তার মায়ের দিক থেকে সাপোর্ট পায় তখন কোনও কিছুই তাকে আটকাতে পারে না।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বুলবুল সিদ্দিকী বলছেন, বহু মেয়েরা মিছিল কিংবা বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল মিছিলে অংশ নেওয়া তাদের সহপাঠী কিংবা ভাইদের রক্ষা করা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬০’র দশকে বিভিন্ন আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। এ ছাড়া ১৯৯০’র দশকে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনেও নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ অতীতের সবকিছু ছাপিয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ করার আরেকটি কারণ আছে। সেটি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ মেয়েদের ওপর আক্রমণ করেছে। লাঠি দিয়ে ছাত্রীদের পেটানোর এসব ছবি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে তখন মানুষ আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

হাইকোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে জুলাই মাসের শুরুর দিকে প্রথমে শুরু হয় কোটা বিরোধী বিক্ষোভ। এরপর ধীরে ধীরে সে আন্দোলন সরকার পতনের একদফায় এসে ঠেকে। ছাত্ররা একদফা ঘোষণার পর শেখ হাসিনা আর বেশিদিন ক্ষমতায় টিকতে পারেননি। একদফা ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যেতে বাধ্য হন তিনি।

জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগস্ট মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত সাড়ে ছয়শ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা ৮০০’র বেশি। মোট কতজন নিহত হয়েছে সেই পরিষ্কার চিত্র এখনো অজানা।

নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ছাত্র, রাজনৈতিক দলের কর্মী, পথচারী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে। অনেকে ঘরের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে শিশুরাও আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে এত নারী রাস্তায় নেমেছিল কেন?

আপডেট সময় : ০৬:১১:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

আওয়ামী লীগের সভানেন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের ইতি টানতে হাজার হাজার মানুষ যখন রাস্তায় নেমে আসে তখন একটি বিষয় ছিল আলাদাভাবে নজর কাড়ার মতো। আর সেটি হচ্ছে, আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক নারীদের অংশগ্রহণ।

রাস্তায় নেমে অসংখ্য নারী পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শেখ হাসিনা বিরোধী শ্লোগান দিয়েছে। সাধারণত বাংলাদেশের আন্দোলনগুলোতে এত নারীদের অংশগ্রহণ দেখা যায় না। আন্দোলনে নারীদের এই অংশগ্রহণের বিষয়টিকে অভূতপূর্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন অনেক বিশ্লেষক। বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের একজন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ফারজানা লিও একজন পেশাদার বডি বিল্ডার। তিনি নিজে কাজিপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ও শ্লোগান দিয়েছেন।

ফারজানা লিও মনে করেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে নারীরা যদি একাত্ম না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হতো না। নারীরা যখন ব্যাপক সংখ্যায় শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িয়ে যায় তখন তাদের পক্ষে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। ফারাজনা লিও তার জীবনে কখনোই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না। নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের গুলি করে মেরেছে সেটি দেখে বেশ মর্মাহত হয়েছিলেন তিনি। এই বিষয়টি তাকে রাস্তায় টেনে নামিয়েছে। আর রাস্তায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে আন্দোলন করতে দেখে তিনিও উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ যতই বাড়ছিল, সেটি পুরুষদের মনেও সাহস যোগাচ্ছিল।

তিনি বলেন, বহু নারী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে আবার অনেকে বাড়িতে থেকেও আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে। সন্তান যখন তার মায়ের দিক থেকে সাপোর্ট পায় তখন কোনও কিছুই তাকে আটকাতে পারে না।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বুলবুল সিদ্দিকী বলছেন, বহু মেয়েরা মিছিল কিংবা বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল মিছিলে অংশ নেওয়া তাদের সহপাঠী কিংবা ভাইদের রক্ষা করা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬০’র দশকে বিভিন্ন আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। এ ছাড়া ১৯৯০’র দশকে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনেও নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ অতীতের সবকিছু ছাপিয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ করার আরেকটি কারণ আছে। সেটি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ মেয়েদের ওপর আক্রমণ করেছে। লাঠি দিয়ে ছাত্রীদের পেটানোর এসব ছবি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে তখন মানুষ আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

হাইকোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে জুলাই মাসের শুরুর দিকে প্রথমে শুরু হয় কোটা বিরোধী বিক্ষোভ। এরপর ধীরে ধীরে সে আন্দোলন সরকার পতনের একদফায় এসে ঠেকে। ছাত্ররা একদফা ঘোষণার পর শেখ হাসিনা আর বেশিদিন ক্ষমতায় টিকতে পারেননি। একদফা ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যেতে বাধ্য হন তিনি।

জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগস্ট মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত সাড়ে ছয়শ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা ৮০০’র বেশি। মোট কতজন নিহত হয়েছে সেই পরিষ্কার চিত্র এখনো অজানা।

নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ছাত্র, রাজনৈতিক দলের কর্মী, পথচারী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে। অনেকে ঘরের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে শিশুরাও আছে।