ঢাকা ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ড: মুহাম্মদ ইউনুস ইন্ডিয়ার জায়গামত আঘাত করেছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজনৈতিক দলের ঐক্য ভারত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে বাধ্য: ড. ইউনূস মুন্নী সাহা সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে বেতনের বাইরে জমা হয় ১৩৪ কোটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে আ. লীগের দৃষ্টিতে দেখা বন্ধ করতে হবে : ভারতকে নাহিদ ইসলাম “ছাত্রদের ভূমিকা ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা” অশান্তির জন্য মহম্মদ ইউনূসকেই দায়ী করলেন শেখ হাসিনা৷ ফেরত চাওয়া হবে শেখ হাসিনাকে, মানতে বাধ্য ভারত: ড. ইউনূস আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার: শ্বেতপত্রে উন্মোচিত সাংবাদিক মুন্নী সাহা গ্রেপ্তার অচিরেই কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা: উপদেষ্টা আসিফ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত কেন তথ্যযুদ্ধে নেমেছে? ভারতের দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর: আসিফ নজরুল কোটি টাকার বাস ৯০ লাখে বানাবে বিআরটিসি ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ: সংখ্যালঘুরা ‘আগের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে’ বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের খবর ভুয়া ধানমন্ডি লেকে হবে ‘বিদ্রোহী চত্বর’ সারজি এবং হাসনাতের গাড়ি চাপা দেয়া ট্রাক ও ট্রাকের ড্রাইভার আটক রাষ্ট্রের যেসব বিষয়ে বড়সড় পরিবর্তনের কথা ভাবছে সংস্কার কমিশনগুলো

৭০০ বছরের পুরোনো চন্ডিদাস-রজকিনীর অমর প্রেমের ইতিহাস

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০২:০৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪ ৫৮ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

চন্ডিদাস আর রজকিনীর অমর প্রেম কাহিনী গল্প নয় সত্য। ঐতিহাসিক সেই ঘটনার সাক্ষী মাগুরা শালিখার ধোপাখালী গ্রাম। তাদের স্মৃতিরক্ষায় ঘাট নির্মাণসহ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী স্থানীয়দের। ‘চন্ডীদাস আর রজকিনী-তারাই প্রেমের শিরোমণি’, ‘বারো বছর বড়শী বাইল তবু আধার গিলল না’; আবহমানকাল ধরেই এই প্রেমগীত বাংলার নাটক, চলচ্চিত্র, যাত্রাপালা তথা হাটে, মাঠে, ঘাটে এক চির পরিচিত সুর, এক অমর প্রেম কাহিনী। শৈশব থেকেই এটা শুনে আসছি আমরা সকলেই। এটিকে প্রচলিত লোকগাঁথা হিসেবেও মনে করতেন অনেকে।
তবে চণ্ডীদাস ও রজকিনীর এই প্রেমকাহিনী কোনো কিংবদন্তি নয়, এটি একটি সত্য ঘটনা। প্রেমিক-প্রেমিকার পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন যে কেমন হতে পারে তা শিখিয়ে গেছেন তারা। এই চণ্ডীদাস আর রজকিনীর প্রেমকাহিনী বা সত্য ঘটনা ঘটেছিলো মাগুরার এই জনপদে। আপনার প্রিয়জনের জন্য সেরা উপহার

জনশ্রুতি রয়েছে, এটি ১৪ শতকের শেষ ভাগের দিকের ঘটনা। চণ্ডীদাসের বাবা ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ জমিদার। আর, রজকিনী একই গ্রামের ধোপার মেয়ে। অপরূপা সুন্দরী রজকিনীকে দেখে জমিদার পুত্র চণ্ডীদাস জাতপাত ভুলে তার প্রেমে পড়ে যান। গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা ফটকি নদীসহ একাধিক নদীর সাথে সংযুক্ত এক সময়ের নদী এখন কুমোরকোঠা দুয়া নামেই পরিচিত। যার দুই ধারে ছিল তাদের দুইজনের বাড়ি। ধোপা কন্যা অপরুপ সুন্দরী রজকিনী ওপারের ঘাটে কাপড় ধুতে আসলে জমিদারপুত্র চণ্ডীদাস প্রতিদিন মাছ ধরার ছলে বড়শি নিয়ে এপারে বসে থাকতেন তাকে দেখতে। এভাবেই দিন-মাস পেরিয়ে বছর চলতে চলতে ১২ বছর কেটে যায় নিরবে। এমন কি বড়শী ছাড়াই শুধু ছিপ ফেলেই মাছ শিকারের ভান করে নিরবে ঘাটে বসে থাকেন চন্ডিদাস। অবশেষে এভাবেই ১২ বছর কেটে গেলে একদিন নিরাবতা ভেঙে রজকিনীই চণ্ডীদাসকে জিজ্ঞেস করে, ‘বাবু বড়শিতে কি মাছ ধরে’ উত্তরে চন্ডিদাস বলেন ১২ বছর পর মাত্র প্রথম মাছ বঁড়শিতে টিব/টোকা দিল। আর তখন থেকেই শুরু হয় তাদের কথোপকথন। কিন্তু, তৎকালীন হিন্দু ব্রাহ্মণ সমাজ তাদের এ অসম প্রেম কোনভাবেই মেনে নেয় না। নানা প্রতিকূলতা অপবাদে জর্জরিত প্রেমিক-প্রেমিকা সব ছেড়ে একদিন পালিয়ে যায় ভারতের বাকুরা জেলায়। সেখান থেকে পরে বৃন্দাবনে চলে যান তারা। তারপর তাদের নির্দিষ্ট কোন খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। এদিকে, গ্রামের সমাজপতিরা দুটি পরিবারকেই সমাজচ্যুত (একঘরে) করেন। তারাও দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান ভারতের কোন অঙ্গরাজ্যে।

স্থানীয়দের দাবি, ৭০০ শত বছর পূর্বের ঐতিহাসিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামে। চণ্ডীদাস-রজকিনীর স্মৃতিঘেরা ছায়া সুনিবিড় ধোপাখালী গ্রামের মাঝে ফটকি নদী সংলগ্ন সেই কুমোরকোঠা দুয়া অমর প্রেমের সাক্ষী হয়ে রয়েছে আজও।

প্রেমিক-প্রেমিকার পবিত্র মনের ভালোবাসার বন্ধন যে কেমন হতে পারে তা শিখিয়ে গেছেন তারা। তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকা শীর্ণ দুয়াটি (স্থানীয়দের ভাষায়) এখনও মানুষকে চন্ডীদাস ও রজকিনীর অমর সেই প্রেমকে মনে করিয়ে দেয়। তবে রূপকথার গল্পের মতো এ ঘটনাটি যে এই জনপদের তা কয়েক বছর পূর্বে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পেরেছে মানুষ।

বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন
তখন থেকেই মাগুরা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের ধারে অবস্থিত ধোপাখালী গ্রাম মানুষের আগ্রহের বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দূরদূরান্ত হতে মানুষ ধোপাখালীতে আসেন চণ্ডীদাস ও রজকিনীর প্রীতিময় অমর সে প্রেমের স্মৃতি রোমন্থন করতে। যদিও প্রায় ৭০০ বছর আগের সেই নদী, নদীর পাড়ে ঘাটের কোন স্মৃতি চিহ্ন আজ আর নেই। নেই জমিদার পুত্র চণ্ডিদাস বা ধোপাকন্যা রজকিনীর ভিটেমাটি বা কোন বংশধর।

প্রশাসনসহ কাছে সংশ্লিষ্টদের কাছে চন্ডীদাস ও রজকিনীর প্রবিত্র সেই অমর প্রেমের সাক্ষী ঐতিহাসিক এ স্থানে তাদের স্মৃতি রক্ষায় ঘাট নির্মাণসহ এটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়া তোলার দাবী জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৭০০ বছরের পুরোনো চন্ডিদাস-রজকিনীর অমর প্রেমের ইতিহাস

আপডেট সময় : ০২:০৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

 

চন্ডিদাস আর রজকিনীর অমর প্রেম কাহিনী গল্প নয় সত্য। ঐতিহাসিক সেই ঘটনার সাক্ষী মাগুরা শালিখার ধোপাখালী গ্রাম। তাদের স্মৃতিরক্ষায় ঘাট নির্মাণসহ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী স্থানীয়দের। ‘চন্ডীদাস আর রজকিনী-তারাই প্রেমের শিরোমণি’, ‘বারো বছর বড়শী বাইল তবু আধার গিলল না’; আবহমানকাল ধরেই এই প্রেমগীত বাংলার নাটক, চলচ্চিত্র, যাত্রাপালা তথা হাটে, মাঠে, ঘাটে এক চির পরিচিত সুর, এক অমর প্রেম কাহিনী। শৈশব থেকেই এটা শুনে আসছি আমরা সকলেই। এটিকে প্রচলিত লোকগাঁথা হিসেবেও মনে করতেন অনেকে।
তবে চণ্ডীদাস ও রজকিনীর এই প্রেমকাহিনী কোনো কিংবদন্তি নয়, এটি একটি সত্য ঘটনা। প্রেমিক-প্রেমিকার পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন যে কেমন হতে পারে তা শিখিয়ে গেছেন তারা। এই চণ্ডীদাস আর রজকিনীর প্রেমকাহিনী বা সত্য ঘটনা ঘটেছিলো মাগুরার এই জনপদে। আপনার প্রিয়জনের জন্য সেরা উপহার

জনশ্রুতি রয়েছে, এটি ১৪ শতকের শেষ ভাগের দিকের ঘটনা। চণ্ডীদাসের বাবা ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ জমিদার। আর, রজকিনী একই গ্রামের ধোপার মেয়ে। অপরূপা সুন্দরী রজকিনীকে দেখে জমিদার পুত্র চণ্ডীদাস জাতপাত ভুলে তার প্রেমে পড়ে যান। গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা ফটকি নদীসহ একাধিক নদীর সাথে সংযুক্ত এক সময়ের নদী এখন কুমোরকোঠা দুয়া নামেই পরিচিত। যার দুই ধারে ছিল তাদের দুইজনের বাড়ি। ধোপা কন্যা অপরুপ সুন্দরী রজকিনী ওপারের ঘাটে কাপড় ধুতে আসলে জমিদারপুত্র চণ্ডীদাস প্রতিদিন মাছ ধরার ছলে বড়শি নিয়ে এপারে বসে থাকতেন তাকে দেখতে। এভাবেই দিন-মাস পেরিয়ে বছর চলতে চলতে ১২ বছর কেটে যায় নিরবে। এমন কি বড়শী ছাড়াই শুধু ছিপ ফেলেই মাছ শিকারের ভান করে নিরবে ঘাটে বসে থাকেন চন্ডিদাস। অবশেষে এভাবেই ১২ বছর কেটে গেলে একদিন নিরাবতা ভেঙে রজকিনীই চণ্ডীদাসকে জিজ্ঞেস করে, ‘বাবু বড়শিতে কি মাছ ধরে’ উত্তরে চন্ডিদাস বলেন ১২ বছর পর মাত্র প্রথম মাছ বঁড়শিতে টিব/টোকা দিল। আর তখন থেকেই শুরু হয় তাদের কথোপকথন। কিন্তু, তৎকালীন হিন্দু ব্রাহ্মণ সমাজ তাদের এ অসম প্রেম কোনভাবেই মেনে নেয় না। নানা প্রতিকূলতা অপবাদে জর্জরিত প্রেমিক-প্রেমিকা সব ছেড়ে একদিন পালিয়ে যায় ভারতের বাকুরা জেলায়। সেখান থেকে পরে বৃন্দাবনে চলে যান তারা। তারপর তাদের নির্দিষ্ট কোন খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। এদিকে, গ্রামের সমাজপতিরা দুটি পরিবারকেই সমাজচ্যুত (একঘরে) করেন। তারাও দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান ভারতের কোন অঙ্গরাজ্যে।

স্থানীয়দের দাবি, ৭০০ শত বছর পূর্বের ঐতিহাসিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামে। চণ্ডীদাস-রজকিনীর স্মৃতিঘেরা ছায়া সুনিবিড় ধোপাখালী গ্রামের মাঝে ফটকি নদী সংলগ্ন সেই কুমোরকোঠা দুয়া অমর প্রেমের সাক্ষী হয়ে রয়েছে আজও।

প্রেমিক-প্রেমিকার পবিত্র মনের ভালোবাসার বন্ধন যে কেমন হতে পারে তা শিখিয়ে গেছেন তারা। তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকা শীর্ণ দুয়াটি (স্থানীয়দের ভাষায়) এখনও মানুষকে চন্ডীদাস ও রজকিনীর অমর সেই প্রেমকে মনে করিয়ে দেয়। তবে রূপকথার গল্পের মতো এ ঘটনাটি যে এই জনপদের তা কয়েক বছর পূর্বে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পেরেছে মানুষ।

বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন
তখন থেকেই মাগুরা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের ধারে অবস্থিত ধোপাখালী গ্রাম মানুষের আগ্রহের বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দূরদূরান্ত হতে মানুষ ধোপাখালীতে আসেন চণ্ডীদাস ও রজকিনীর প্রীতিময় অমর সে প্রেমের স্মৃতি রোমন্থন করতে। যদিও প্রায় ৭০০ বছর আগের সেই নদী, নদীর পাড়ে ঘাটের কোন স্মৃতি চিহ্ন আজ আর নেই। নেই জমিদার পুত্র চণ্ডিদাস বা ধোপাকন্যা রজকিনীর ভিটেমাটি বা কোন বংশধর।

প্রশাসনসহ কাছে সংশ্লিষ্টদের কাছে চন্ডীদাস ও রজকিনীর প্রবিত্র সেই অমর প্রেমের সাক্ষী ঐতিহাসিক এ স্থানে তাদের স্মৃতি রক্ষায় ঘাট নির্মাণসহ এটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়া তোলার দাবী জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।