ঢাকাশনিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইতিহাস ঐতিয্য
  3. ইসলাম
  4. কর্পোরেট
  5. খেলার মাঠে
  6. জাতীয়
  7. জীবনযাপন
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. নারী কন্ঠ
  11. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  12. ফার্মাসিস্ট কর্নার
  13. ফিচার
  14. ফ্যাশন
  15. বিনোদন

১৯০১ সালের ৭ই ডিসেম্বর বিজলী বাতির আলোয় ঝলমল করল ঢাকা শহর

ডেস্ক নিউজ
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩ ৪:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অবশেষে বহুপ্রতীক্ষিত সেই ৭ই ডিসেম্বর এল। সাজসাজ সাড়া পড়ে গেল সারা শহরে। বিকাল ৫টা বাজতে না বাজতেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল আহসানমঞ্জিলের আশপাশের এলাকা। নবাব আহসানউল্লার আমন্ত্রণে গণ্যমান্য অতিথিরাও এসে গেলেন আহসানমঞ্জিলে। ঐতিহাসিক এই ঘটনা উদ্বোধনের জন্য বাংলার ছোট লাট স্যার জন উডবার্নকে আগেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়াতে তার পক্ষ থেকে কলকাতা থেকে সি. ডাব্লিউ বোল্টন এসে পৌঁছালেন। ঢাকায় জ্বলে উঠল বিদ্যুৎ বাতি!

বিজলী বাতি আবিষ্কারের তিন বছর পর ১৮৮২ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর এডিসন সাহেব সুইচ টিপে নিউ ইয়র্ক শহরের পার্ল স্ট্রিটে ৫৯ জন গ্রাহকের বাসায় বিজলী বাতি জ্বেলে দিলেন। এর উনিশ বছরের মাথায় ১৯০১ সালের ৭ই ডিসেম্বর বিজলী বাতির আলোয় ঝলমল করে উঠল আমাদের ঢাকা শহর। অবশ্য গোটা শহরকে তখন এর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে যেটুকু হয়েছিল, তাতেই ঢাকাবাসীর আনন্দের সীমা ছিল না। কারণ বিজলী বাতির কথা তারা শুনেছে মাত্র। সেই বাতির আলো পাওয়া তখনো তাদের জন্য ছিল অকল্পনীয়।

এর আগে ঢাকার রাস্তায় জ্বলত কেরোসিনের বাতি, তাও সব রাস্তায় নয়। ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়াকে ভারত সম্রাজ্ঞী হিসাবে ঘোষণা উদযাপনের জন্য ১৮৭৭ সালে ঢাকা শহরে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নানা উত্সব আয়োজনের অংশ হিসাবে ওয়াইজঘাটে অবস্থিত তত্কালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল অফিস থেকে চকবাজার পর্যন্ত রাস্তা আলোকিত করতে একশ’টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এর এক বছর পর কমিটির সদস্যদের চাঁদায় (চাঁদার মোট পরিমাণ সাড়ে ছয় হাজার টাকা) এসব ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছিল এবং এগুলোতে লাগানো হয়েছিল ৬০টি কেরোসিনের বাতি। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা মিউনিসিপ্যালিটির লোক লম্বা লম্বা মই নিয়ে এসে জ্বেলে দিত এসব কেরোসিনের বাতি। বিদ্যুতের লোডশেডিং বলে কোন শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিল না ঢাকাবাসী। তবে একটু জোর হাওয়া দিলে বা ঝড়-বৃষ্টি হলেই এসব বাতি নিভে গিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে যেত ঢাকার সব রাস্তা-ঘাট।

১৮৮৬ সালে শোনা গেল, ঢাকার নবাব খাজা আবদুল গনিকে স্যার উপাধি দেবে ব্রিটিশ সরকার। একথা শুনে নবাব খাজা আহসানউল্লাহ যারপরনাই খুশি হলেন। তিনি বললেন, “সদাশয় সরকার বাহাদুর যদি সত্যিই আমার পিতাকে এই ‘ইজ্জত’ প্রদান করে তবে কথা দিচ্ছি, ঢাকাবাসীদের আমি খুশি করে দেব।”

সেই বছরই খাজা আবদুল গনিকে ব্রিটিশ সরকার ‘নাইট কমান্ডার অব স্টার অব ইন্ডিয়া’ উপাধি প্রদান করে। ভারতের বড় লাট লর্ড ডাফরিন ১৮৮৮ সালে ঢাকা পরিদর্শনে এসে নবাব আহসানউল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেরোসিনের সড়ক-বাতির পরিবর্তে গ্যাসের সড়ক-বাতি লাগানো কর্মসূচির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৮৯১ সালে নবাবের পক্ষ থেকে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাসের বাতি লাগানোর প্রস্তাব দেয়া হয়।

তবে নবাবের সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হয়নি। ১৮৯৭ সালে সে আমলে নগরীতে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা পত্রিকা ‘ঢাকা প্রকাশে’ লেখা হয়,

“আজ হইতে বারো বত্সর পূর্বে নবাব খাজা আহসানউল্লাহ ঢাকা শহরের সড়কে কেরোসিনের বাতির পরিবর্তে গ্যাসের বাতি লাগাইবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করিয়াছিলেন। মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের ওপর তিনি আস্থা রাখিতে না পারায় সম্ভবত তাহার সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় নাই। তবে এইবার নবাব সাহেবের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নবাব খাজা ইউসুফ জান মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আমরা আশা করিতেছি, তাহার সেই অবিশ্বাস দূরীভূত হইবে এবং নবাব সাহেবের সেই প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটিবে।”

রাস্তা আলোকিত করার যে প্রতিশ্রুতি নবাব আহসানউল্লাহ ঢাকাবাসীকে দিয়েছিলেন, তা তিনি কখনো ভোলেননি। তাই ঢাকার রাস্তায় বিজলী বাতি জ্বালবার জন্য ১৯০১ সালেই তিনি ঢাকা ইলেকট্রিক লাইট ফান্ড গঠন করে তাতে সাড়ে চার লক্ষ টাকা প্রদান করেন। সেই বছরই ৫ই জুলাই ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির তত্ত্বাবধানে ‘দ্য ঢাকা ইলেকট্রিক লাইট ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়।

ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পত্রিকায় প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা শহরের রহমতগঞ্জ সড়ক, চকবাজার সার্কুলার রোড, মোগলটুলি রোড, নালগোলা রোড, বাবুবাজার রোড, কমিটিগঞ্জ রোড, আরমেনিয়া স্ট্রিট, ইসলামপুর রোড, আহসানমঞ্জিল রোড, পাটুয়াটুলি রোড, বাংলাবাজার রোড, ডাল বাজার রোড. ফরাশগঞ্জ, লোহারপুল রোড, দিগবাজার রোড. ভিক্টোরিয়া পার্ক, লক্ষ্মীবাজার রোড, সদরঘাট রোড. শাঁখারিবাজার রোড. জনসন রোড. নবাবপুর রোড. রেলওয়ে স্টাফকোয়ার্টার রোড. জামদানি নগর রোড ও রাজার দেউড়ি লেনে বিদ্যুত্ বাতি লাগানো হবে।

৭ ডিসেম্বর, ১৯০১। আহসানমঞ্জিল চত্বরে বানানো বিশাল মঞ্চের সবার মাঝখানে বসলেন স্যার বোল্টন, তার ডানদিকে বসলেন নবাব আহসানউল্লাহ, বামদিকে মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনারবৃন্দ। বোল্টন সাহেব ঢাকার রাস্তায় বিদ্যুত্ বাতির ব্যবস্থা করার জন্য নবাব আহসানউল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন,

“আজ থেকে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিরও দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। ঢাকার সরু সরু রাস্তাঘাট, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সঙ্গে এই বিদ্যুত্ বাতি বড়ই বেমানান। আমরা আশা করি, মিউনিসিপ্যালিটি এ বিষয়টির দিকে নজর দেবে।”

এর পরই তিনি সুইচ টিপে বিজলী বাতি জ্বেলে দিলেন। প্রথম বিজলী বাতি জ্বলল ঢাকা শহরে। বহু নগরবাসী পরম বিস্ময়ে দেখল, বিনা তেলে, বিনা গ্যাসে জ্বলছে বাতি—আরো উজ্জ্বল, আরো স্থির।

প্রাপ্তি স্বীকার: ,Bengali Umbrella

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো । বিডিসারাদিন২৪'এ প্রকাশিত নারীকন্ঠ,মতামত লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত বিডিসারাদিন২৪ 'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় বিডিসারাদিন২৪ কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। বিডিসারাদিন২৪ 'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।