ঢাকা ১২:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ড. ইউনূসকে সভাপতি করে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন আপা আপা বলা তানভীর নিজেই আ.লীগের হাতে নির্যাতিত, আছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভল্টের টাকায় অবৈধ বাণিজ্য বিডিআর বিদ্রোহের বিচার পুনরায় করা সম্ভব? সংলাপ, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় এগোতে চায় সরকার এবার সরকারের কাছে ৬৩ কোটি ডলার সুদ চাইল রাশিয়া এফবিসিসিআই সভাপতির পদত‍্যাগ, প্রশাসক নিয়োগ তারল্য বাড়াতে ‘বিশেষ ধার’ আগামী সপ্তাহে ৭ হাজার কোটিতে নির্মিত তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ গার্মেন্টসে থামছে না অস্থিরতা চাকরি গেল আরো দুই লেফটেন্যান্ট জেনারেলের ওষুধের বাজারে উত্তাপ ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন সড়ক পরিবহনে আসছে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ গরুর দিয়ে পাট নিতে চায় পাকিস্তানি সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন, নেতৃত্বে যারা সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ, কমিশনের দায়িত্বে শাহদীন মালিক ছয় বিশিষ্ট নাগরিককের নেতৃত্বে সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার শিগগিরই মেট্রোরেলের বন্ধ থাকা স্টেশন চালু হচ্ছে বিদ্যুতের পাওনা চেয়ে ড. ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন গৌতম আদানি

গুলিস্তান সিনেমা হলটি এখন কোথায়?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:৫২:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৫০৪৮ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্যস্ত ঢাকার ব্যস্ততম জায়গা গুলিস্তান। গুলিস্তান মানেই হচ্ছে, হকারদের অসহনীয় হাক-ডাক,যাত্রী পরিবহণের যত্রতত্র শব্দ দূষণ,মানুষের অসহনীয়ভিড়,ধুলোবালি,
ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যের এক অতি পরিচিত চিত্র।

আপনি যখন কোন যাত্রী পরিবহণে করে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে আসবেন তখন দেখবেন, পরিবহণের হেলপাররা আপনাদের লক্ষ্য করে ডাক দিচ্ছে,এই হল মার্কেট নামার আছে কেউ… হল মার্কেট। কিন্তু এর কোথাও আপনি কোন হল খুঁজে পাবেন না। তাহলে কেন হেলপাররা এই জায়গাকে ‘হল মার্কেট’ নামে ডাকেন? অথচ ঢাকা সিটি করপোরেশনের হোল্ডিংয়ের তালিকায়ও গুলিস্তান নামের কোনো জায়গা নেই। যা আছে তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। যা পাকিস্তান আমলে জিন্নাহ এভিনিউ নামে পরিচিত ছিল। তাহলে এখানকার নাম কীভাবে গুলিস্তান হল?

মূলত এখানেই এক সময়ে ‘গুলিস্তান সিনেমা হল’ ছিল, যা প্রতিষ্ঠার সময়ে “লিবার্টি সিনেমা হল” নামে পরিচিত ছিল। উক্ত সিনেমা হলের সূত্র ধরেই এই জায়গাটির নাম হয়ে যায় গুলিস্তান। সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে গেলেও গুলিস্তান শব্দটি মানুষের হৃদয় থেকে এখনো মুছে যায়নি।

১৯৫২ সালের শেষ দিকে ফজলে দোসানি নামের এক পাকিস্তানি চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী এই সিনেমা হলটি নির্মাণ করেন। এর আগে তিনি কলকাতায় একই ব্যবসা করতেন। ৪৭ সালে দেশভাগের ফলে কলকাতার চেয়ে ঢাকায় চলচ্চিত্র ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। সেই সূত্রে ফজল দোসানি তার ব্যবসা ঢাকায় স্থানান্তর করেন। গুলিস্তান সিনেমা হল নির্মাণ সম্পর্কে মনোয়ার আহমদ তার ঢাকার পুরোনো কথা গ্রন্থে লিখেছেন ১৯৫২ সালের শেষের দিকে রমনা এলাকায় ফজলে দোসানি নির্মাণ করেন গুলিস্তান সিনেমা হল। পরে এই সিনেমা হলের উপরে অল্প আসনের একটি ছোট হল নির্মাণ করে এর নাম দেন নাজ সিনেমা হল। এই হলে প্রথম দিকে শুধু ইংরেজি সিনেমা দেখানো হত। বর্তমানে দুটি সিনেমা হলই বিলুপ্ত।

শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকাকোষ গ্রন্থে বলা হয়েছে। গুলিস্তান সিনেমা হলের নামানুসারে এই জায়গার নাম হয়ে যায় গুলিস্তান। রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রমনার ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের উত্তরে ঢাকা জেলা ক্রীড়া মিলনায়তন এবং পল্টন মাঠের পাশে ১৯৫৩ সালে গুলিস্তান নামের এই সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করা হয়।

গুলিস্তান সিনেমা হলটি ছিল ঢাকার প্রথম আধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ লিখেছেন ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলকাতার চিত্র ব্যবসায়ী খান বাহাদুর ফজল আহমেদ দোশানি ঢাকায় চলে আসেন এবং এই প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। ১৯৫৩ সালে আগা খান এই হলের উদ্বোধন করেন। এটি ছিল ঢাকার প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ। প্রথমে হলটির নাম ছিল লিবার্টি পরে গুলিস্তান করা হয়।

শাব্দিক দিক থেকে “গুলিস্তান” শব্দটির অর্থ ফুলের বাগান। জানা যায়, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে অত্র অঞ্চলে একটি ফুলের বাগান ছিল। সেই ফুলের বাগানকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতিপ্রেমীরা আড্ডা দিতেন। সে আড্ডা কখনো কখনো চলত গভীর রাত পর্যন্ত। মাঝে মাঝে সিনেমা হলটির দক্ষিণ পাশের ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের হুইসেলে তাদের ধ্যান ভাঙত। মোঘল আমলের একটি কামান রাখা ছিল হলের পূর্ব দিকে। সে কামানের গায়ে ঠেস দিয়ে চলত অন্তহীন আড্ডা। তবে এখন সেই সিনেমা হল বা রেলস্টেশন কিছুই নেই।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে গুলিস্তান সিনেমা হলটির মালিক পাকিস্তানে চলে যান,চলে যাওয়ার সময়ে তিনি তার এসব সম্পদ ফেলে রেখে যান। ফলে সিনেমা হলসহ বর্তমান গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এলাকাটি পরিত্যক্ত সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়। এজন্য স্বাধীনতার পরে তথা ১৯৭২ সালে এই হল ও তদসংলগ্ন সম্পত্তিকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে দিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে এই জায়গার মালিক মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট।

২০০৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্ট কতৃপক্ষ সিনেমা হলটিকে ভেঙ্গে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। জানা যায় ২০ তলা শপিং কমপ্লেক্সেটির টপ ফ্লোরে একটি সিনেমা হল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। কিন্তু ভবনটি ১০ তলা পর্যন্ত নির্মিত হওয়ার পর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গুলিস্তান হল মার্কেটের সেই সিনেমা হলটির নির্মাণ বা হদিস আর পাওয়া যাবে কি না তাও এখন প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার।

সংগৃহীত

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গুলিস্তান সিনেমা হলটি এখন কোথায়?

আপডেট সময় : ০৭:৫২:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্যস্ত ঢাকার ব্যস্ততম জায়গা গুলিস্তান। গুলিস্তান মানেই হচ্ছে, হকারদের অসহনীয় হাক-ডাক,যাত্রী পরিবহণের যত্রতত্র শব্দ দূষণ,মানুষের অসহনীয়ভিড়,ধুলোবালি,
ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যের এক অতি পরিচিত চিত্র।

আপনি যখন কোন যাত্রী পরিবহণে করে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে আসবেন তখন দেখবেন, পরিবহণের হেলপাররা আপনাদের লক্ষ্য করে ডাক দিচ্ছে,এই হল মার্কেট নামার আছে কেউ… হল মার্কেট। কিন্তু এর কোথাও আপনি কোন হল খুঁজে পাবেন না। তাহলে কেন হেলপাররা এই জায়গাকে ‘হল মার্কেট’ নামে ডাকেন? অথচ ঢাকা সিটি করপোরেশনের হোল্ডিংয়ের তালিকায়ও গুলিস্তান নামের কোনো জায়গা নেই। যা আছে তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। যা পাকিস্তান আমলে জিন্নাহ এভিনিউ নামে পরিচিত ছিল। তাহলে এখানকার নাম কীভাবে গুলিস্তান হল?

মূলত এখানেই এক সময়ে ‘গুলিস্তান সিনেমা হল’ ছিল, যা প্রতিষ্ঠার সময়ে “লিবার্টি সিনেমা হল” নামে পরিচিত ছিল। উক্ত সিনেমা হলের সূত্র ধরেই এই জায়গাটির নাম হয়ে যায় গুলিস্তান। সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে গেলেও গুলিস্তান শব্দটি মানুষের হৃদয় থেকে এখনো মুছে যায়নি।

১৯৫২ সালের শেষ দিকে ফজলে দোসানি নামের এক পাকিস্তানি চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী এই সিনেমা হলটি নির্মাণ করেন। এর আগে তিনি কলকাতায় একই ব্যবসা করতেন। ৪৭ সালে দেশভাগের ফলে কলকাতার চেয়ে ঢাকায় চলচ্চিত্র ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। সেই সূত্রে ফজল দোসানি তার ব্যবসা ঢাকায় স্থানান্তর করেন। গুলিস্তান সিনেমা হল নির্মাণ সম্পর্কে মনোয়ার আহমদ তার ঢাকার পুরোনো কথা গ্রন্থে লিখেছেন ১৯৫২ সালের শেষের দিকে রমনা এলাকায় ফজলে দোসানি নির্মাণ করেন গুলিস্তান সিনেমা হল। পরে এই সিনেমা হলের উপরে অল্প আসনের একটি ছোট হল নির্মাণ করে এর নাম দেন নাজ সিনেমা হল। এই হলে প্রথম দিকে শুধু ইংরেজি সিনেমা দেখানো হত। বর্তমানে দুটি সিনেমা হলই বিলুপ্ত।

শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকাকোষ গ্রন্থে বলা হয়েছে। গুলিস্তান সিনেমা হলের নামানুসারে এই জায়গার নাম হয়ে যায় গুলিস্তান। রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রমনার ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের উত্তরে ঢাকা জেলা ক্রীড়া মিলনায়তন এবং পল্টন মাঠের পাশে ১৯৫৩ সালে গুলিস্তান নামের এই সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করা হয়।

গুলিস্তান সিনেমা হলটি ছিল ঢাকার প্রথম আধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ লিখেছেন ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলকাতার চিত্র ব্যবসায়ী খান বাহাদুর ফজল আহমেদ দোশানি ঢাকায় চলে আসেন এবং এই প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। ১৯৫৩ সালে আগা খান এই হলের উদ্বোধন করেন। এটি ছিল ঢাকার প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ। প্রথমে হলটির নাম ছিল লিবার্টি পরে গুলিস্তান করা হয়।

শাব্দিক দিক থেকে “গুলিস্তান” শব্দটির অর্থ ফুলের বাগান। জানা যায়, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে অত্র অঞ্চলে একটি ফুলের বাগান ছিল। সেই ফুলের বাগানকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতিপ্রেমীরা আড্ডা দিতেন। সে আড্ডা কখনো কখনো চলত গভীর রাত পর্যন্ত। মাঝে মাঝে সিনেমা হলটির দক্ষিণ পাশের ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের হুইসেলে তাদের ধ্যান ভাঙত। মোঘল আমলের একটি কামান রাখা ছিল হলের পূর্ব দিকে। সে কামানের গায়ে ঠেস দিয়ে চলত অন্তহীন আড্ডা। তবে এখন সেই সিনেমা হল বা রেলস্টেশন কিছুই নেই।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে গুলিস্তান সিনেমা হলটির মালিক পাকিস্তানে চলে যান,চলে যাওয়ার সময়ে তিনি তার এসব সম্পদ ফেলে রেখে যান। ফলে সিনেমা হলসহ বর্তমান গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এলাকাটি পরিত্যক্ত সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়। এজন্য স্বাধীনতার পরে তথা ১৯৭২ সালে এই হল ও তদসংলগ্ন সম্পত্তিকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে দিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে এই জায়গার মালিক মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট।

২০০৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্ট কতৃপক্ষ সিনেমা হলটিকে ভেঙ্গে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। জানা যায় ২০ তলা শপিং কমপ্লেক্সেটির টপ ফ্লোরে একটি সিনেমা হল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। কিন্তু ভবনটি ১০ তলা পর্যন্ত নির্মিত হওয়ার পর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গুলিস্তান হল মার্কেটের সেই সিনেমা হলটির নির্মাণ বা হদিস আর পাওয়া যাবে কি না তাও এখন প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার।

সংগৃহীত