ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব শেখ হাসিনার বিচার করা: শফিকুল আলম পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে জনসাধারণের অভিমত চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শাপলা চত্বরে হেফাজত দমন : অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট বেগম জিয়াকে হিংসা করতেন হাসিনা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে বারণের কারণ জানালেন ড. ইউনূস  ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে জুলাই ঘোষণাপত্রের দরকারই নাই রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও মোবাইল রিচার্জে বাড়ছে না ভ্যাট ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদ পদত্যাগপত্রে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক আমার মেয়ের খুনি কে, আমি কি বিচার পাব না: প্রশ্ন তিন্নির বাবার জয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ৩ বছর আগে, জানালেন নিজেই গণহত্যায় জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন ৫ আগস্ট: বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাপ্রধানের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল ক্রসফায়ারে নিহতদের ৪ জন ছিলেন ডিবি হেফাজতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন শেখ রেহানা শনিবার স্কুল খোলা নাকি বন্ধ? ‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি, আয় ৩০ কোটি টাকা!

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হয় কিভাবে?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ১০:৪১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 57
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হয় কিভাবে? দেশভিত্তিক নিয়ম-নীতি ভিন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিস্তারিত জানা যাক….

বাংলাদেশে ওষুধের দাম নির্ধারণ একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং এটি প্রধানত বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (Directorate General of Drug Administration – DGDA) এবং সরকারের নির্ধারিত নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। নিচে প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ:
বাংলাদেশে কিছু অপরিহার্য ওষুধের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোকে বলা হয় Essential Medicines List (EML)।

EML-এ অন্তর্ভুক্ত ওষুধ: এগুলোর দাম সরকার নির্ধারণ করে এবং কোম্পানিগুলোকে সেই দামে ওষুধ বিক্রি করতে হয়।
অন্যান্য ওষুধ: এগুলোর দাম কোম্পানিগুলো বাজার প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে পারে, তবে DGDA অনুমোদন দিতে হবে।

২. উৎপাদন খরচ হিসাব:
কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব উৎপাদন খরচ হিসাব করে। এতে অন্তর্ভুক্ত হয়:

কাঁচামাল।
উৎপাদন প্রক্রিয়া।
প্যাকেজিং।
গুণগত মান পরীক্ষা।

৩. গবেষণা ও উন্নয়ন খরচ:
যদি কোনো কোম্পানি নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে নতুন ওষুধ তৈরি করে, তাদের এই খরচ যোগ করতে হয়।

৪. মুনাফার হার:
কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচের উপর নির্দিষ্ট মুনাফার হার যোগ করে। বাংলাদেশে সাধারণত এটি নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং অতিরিক্ত মুনাফার অনুমতি নেই।

৫. ভ্যাট এবং ট্যাক্স:
VAT (মূল্য সংযোজন কর): বাংলাদেশে ওষুধের উপর সাধারণত ১৫% VAT প্রযোজ্য।

শুল্ক কর: যদি কাঁচামাল আমদানি করা হয়, তাহলে এর উপর শুল্ক কর যোগ করা হয়।

 

৬. MRP নির্ধারণ:
MRP (Maximum Retail Price) হলো সেই সর্বোচ্চ দাম, যা গ্রাহক ওষুধ কেনার সময় পরিশোধ করবে।
MRP = উৎপাদন খরচ + মুনাফা + VAT + পরিবহন খরচ।
এটি প্যাকেটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।

 

৭. DGDA অনুমোদন:
ওষুধের দাম নির্ধারণের জন্য DGDA-তে প্রস্তাব জমা দিতে হয়।
DGDA যাচাই-বাছাই করে দাম অনুমোদন করে।

 

৮. বাজার পর্যবেক্ষণ:
DGDA বাজারে নজরদারি চালায় যাতে:

কেউ বেশি দামে ওষুধ বিক্রি না করে।
মানহীন ওষুধ বাজারজাত না হয়।

 

বাংলাদেশে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্য:
জনস্বার্থের জন্য: সরকার নিশ্চিত করে যে প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম সাধ্যের মধ্যে থাকে।

Generic Medicine: বাংলাদেশে অনেক ওষুধ জেনেরিক নামে বিক্রি হয়, যা মূলত ব্র্যান্ডেড ওষুধের তুলনায় সস্তা।

National Drug Policy, 1982: এই নীতিমালা বাংলাদেশে ওষুধের দাম এবং মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

উদাহরণ:
ধরা যাক, একটি ট্যাবলেটের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা।

মুনাফা: ৫ টাকা।
পরিবহন ও অন্যান্য খরচ: ২ টাকা।
VAT: ১৫% (উৎপাদন খরচ + মুনাফা)।
MRP = ১০ + ৫ + ২ + (১৫% × ১৫) = ১৮.২৫ টাকা।

এটি প্যাকেট বা স্ট্রিপে উল্লেখ করা হবে এবং খুচরা বিক্রেতা এই দামেই বিক্রি করবে।

 

বাংলাদেশে ওষুধের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া জাতীয় ওষুধ নীতিমালা, DGDA-এর অনুমোদন, এবং বাজার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। এর মূল লক্ষ্য হলো জনসাধারণকে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন ওষুধ সরবরাহ করা।

ওষুধের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করা হয় ? কেন বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ঔষধের মূল্য কেন ভিন্ন ? চলুন দেখি বিস্তারিত

ক) প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত ঔষধের মূল্য:-

প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ঔষধের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আছে যাহা বেঞ্চ মার্ক হিসেবে অভিহিত। প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত ঔষধের মূল্যকে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বলা হয়।

১। প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত ১১৭টি পদের বিভিন্ন ডোজেস ফরমের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা আছে। প্রতিষ্ঠান সমূহকে উক্ত মূল্য সীমার মধ্যে বিভিন্ন পদের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের নিমিত্তে নির্ধারিত ফরমেট মোতাবক প্রস্তাবনা দাখিল করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ (ড্রাগস্) প্রস্তাবিত পদের মূল্য নির্ধারণ এবং মূল্যসনদ ইস্যু করে থাকে।

২। প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত যে সকল ঔষধের মূল্য নির্ধারণ করা নেই অথবা কোন ঔষধের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলে
সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মূল্য বৃদ্ধির জন্য পদটির অ্যানেক্সারে বর্ণিত সক্রিয় ও সহযোগী উপাদানের ক্রয়ের Invoice ,B/E, Costing sheet সহ আবেদন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে অধিদপ্তরে সংরক্ষিত রেকর্ড হতে উক্ত পদের Active ingredient & Excipient এর বিগত ৬(ছয়) মাসের মূল্যের গড়ের (HS. Code অনুযায়ী শুল্ক ও অন্যান্য খরচ ৮% ধরে) সাথে পদটির প্যাকিং ম্যাটেরিয়ালের মূল্য যোগ করে যে মূল্য দাঁড়ায় তাকে নির্ধারিত মার্কআপ দিয়ে গুণ করে মূল্য(ভ্যাট ব্যতিত) নির্ধারণ করা হয়।

সুত্রঃ {Price of RM ( Ac+Ex) + Price of PM} X Markup = MRP (without VAT)

নির্ধারিত মার্ক-আপ এর বিবরণঃ
১। পুনঃ মোড়কজাত (রিপ্যাকিং) ঔষধ – ১.৫০।
২। মুখে খাওয়ার সকল প্রকার ঔষধ (এণ্টিবায়োটিক ও জন্ম নিয়šত্রণের বড়ি ছাড়া) ও ট্রপিক্যাল প্রিপারেশন – ২.২৫।
৩। মুখে খাওয়ার সকল এণ্টিবায়োটিক ঔষধ – ২.৩০
৪। সকল স্টেরাইল ঔষধ ও জন্মনিয়šত্রণের বড়ি – ২.৮০
৫। সকল অ্যাসেপটিক প্রিপারেশন- ৩.৪০
৬। স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ঔষধ – ৩.৪০
৭। এণ্টিভাইরাল, এণ্টিফাংগাল, এণ্টিইনফেকটিভ ঔষধ -২.৩০
৮। সাসটেইন রিলিজ ট্যাবলেট/ক্যাপসুল-২.৮০।
৯। ডিসপারসিবল ট্যাবলেট – ৩.০০।

খ) প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাবহির্ভূত ঔষধের মূল্যঃ

তালিকা বহির্ভুত ঔষধের মূল্যকে নির্দেশক মূল্য হিসেবে অভিহিত করা হয়।
প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাবহির্ভূত ঔষধের মূল্য ম্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নং- জনস্বাস্থ্য- ১/ঔষধ-১৮/৯৩/৬৩, তারিখ -২৬/০২/৯৪ মোতাবেক স্ব-স্ব ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়ে
থাকে।

এ রূপ পদের মূল্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারণপূর্বক ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে মূল্য সনদের জন্য নির্ধারিত ফরমেট মোতাবক ঔষধ প্রশাসনে আবেদন দাখিল করতে হয়। মূল্য সনদের আবেদন পত্রের সহিত প্রস্তাবিত মূল্য, বৈধ মেয়াদের অ্যানেক্সার, সক্রিয় উপাদানের অনুমোদিত বণ্টকলিস্টের কপি , পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে ইস্যুকৃত মূল্য সনদের কপি দাখিল করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ (ড্রাগস্) শুধুমাত্র ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে মূল্যসনদ ইস্যু করে থাকে।

খ) আমদানীকৃত ঔষধের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া
আমদানীকৃত ঔষধের সর্বোচচ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
আমদানীকৃত ঔষধের সর্বোচচ খুচরা মূল্য নির্ধারণের জন্য ইন্ডেণ্ট, ইনভয়েস, ই/ঊ, আমদানী রেজিঃ সনদপত্রের
কপিসহ আবেদন করতে হয়। সর্বোচচ খুচরা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিন ধরণের মার্ক আপ ব্যবহার করা হয়।

নির্ধারিত মার্ক-আপ
১। শুল্ক ও ভ্যাট ফ্রি এবং অন্যান্য করযুক্ত (AIT ৫% + ATV ৩%) পদের মার্ক আপ -১.৬০৮৬।
২। ভ্যাট ফ্রি, ৫% শুল্ক, এবং অন্যান্য করযুক্ত (AIT ৫% + ATV ৩%) পদের মার্ক আপ – ১.৬৮০৯।
৩। ৫% শুল্ক, ১৫% ভ্যাট এবং অন্যান্য করযুক্ত (AIT ৫% + ATV ৩%) পদের মার্ক আপ -১.৯০৩০।

মূল্য নির্ধারণের সূত্র  C&F Value- X Ex. Rate X Mark up = MRP

  • গ) দেশে উৎপাদিত ঔষধের কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া
    নির্ধারণের সময় তিনটি ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়।(ক) কোন কাঁচামাল প্র¯তুত করতে যদি ৭.৫% অথবা উহার চেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয় তবে উক্ত কাঁচামালটির আমদানীকৃত বিগত ছয় মাসের গড়ের ল্যান্ডেড কস্টের সঙ্গে ২৫% যুক্ত করে উহার মূল্য(ভ্যাট ব্যতিত) নির্ধারণ করা হয়।
    (খ) যদি ৭.৫% এর কম অথবা কোন সাশ্রয় না হয় তবে আমদানীকৃত কাঁচামালের গত ছয় মাসের গড়ের ল্যান্ডেড কস্টের সহিত ২০% যুক্ত করে মূল্য (ভ্যাট ব্যতিত) নির্ধারণ করা হয়।
    (গ) যদি কোন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় না হয়ে লোকসান হয় তবে এ ধরণের শিল্পকে নিরুৎসাহিত করা হয়।

দেশে উৎপাদিত ঔষধের খুচরা মূল্য নির্ধারণের জন্য এবং ঔষধের কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণের জন্য ঔষধের মূল্য
নির্ধারণ কমিটি এবং মূল্য নির্ধারণের টেকনিক্যাল সাব কমিটি নামক দু’টি কমিটি রয়েছে।

 

 

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হয় কিভাবে?

আপডেট সময় : ১০:৪১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হয় কিভাবে? দেশভিত্তিক নিয়ম-নীতি ভিন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিস্তারিত জানা যাক….

বাংলাদেশে ওষুধের দাম নির্ধারণ একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং এটি প্রধানত বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (Directorate General of Drug Administration – DGDA) এবং সরকারের নির্ধারিত নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। নিচে প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ:
বাংলাদেশে কিছু অপরিহার্য ওষুধের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোকে বলা হয় Essential Medicines List (EML)।

EML-এ অন্তর্ভুক্ত ওষুধ: এগুলোর দাম সরকার নির্ধারণ করে এবং কোম্পানিগুলোকে সেই দামে ওষুধ বিক্রি করতে হয়।
অন্যান্য ওষুধ: এগুলোর দাম কোম্পানিগুলো বাজার প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে পারে, তবে DGDA অনুমোদন দিতে হবে।

২. উৎপাদন খরচ হিসাব:
কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব উৎপাদন খরচ হিসাব করে। এতে অন্তর্ভুক্ত হয়:

কাঁচামাল।
উৎপাদন প্রক্রিয়া।
প্যাকেজিং।
গুণগত মান পরীক্ষা।

৩. গবেষণা ও উন্নয়ন খরচ:
যদি কোনো কোম্পানি নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে নতুন ওষুধ তৈরি করে, তাদের এই খরচ যোগ করতে হয়।

৪. মুনাফার হার:
কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচের উপর নির্দিষ্ট মুনাফার হার যোগ করে। বাংলাদেশে সাধারণত এটি নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং অতিরিক্ত মুনাফার অনুমতি নেই।

৫. ভ্যাট এবং ট্যাক্স:
VAT (মূল্য সংযোজন কর): বাংলাদেশে ওষুধের উপর সাধারণত ১৫% VAT প্রযোজ্য।

শুল্ক কর: যদি কাঁচামাল আমদানি করা হয়, তাহলে এর উপর শুল্ক কর যোগ করা হয়।

 

৬. MRP নির্ধারণ:
MRP (Maximum Retail Price) হলো সেই সর্বোচ্চ দাম, যা গ্রাহক ওষুধ কেনার সময় পরিশোধ করবে।
MRP = উৎপাদন খরচ + মুনাফা + VAT + পরিবহন খরচ।
এটি প্যাকেটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।

 

৭. DGDA অনুমোদন:
ওষুধের দাম নির্ধারণের জন্য DGDA-তে প্রস্তাব জমা দিতে হয়।
DGDA যাচাই-বাছাই করে দাম অনুমোদন করে।

 

৮. বাজার পর্যবেক্ষণ:
DGDA বাজারে নজরদারি চালায় যাতে:

কেউ বেশি দামে ওষুধ বিক্রি না করে।
মানহীন ওষুধ বাজারজাত না হয়।

 

বাংলাদেশে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্য:
জনস্বার্থের জন্য: সরকার নিশ্চিত করে যে প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম সাধ্যের মধ্যে থাকে।

Generic Medicine: বাংলাদেশে অনেক ওষুধ জেনেরিক নামে বিক্রি হয়, যা মূলত ব্র্যান্ডেড ওষুধের তুলনায় সস্তা।

National Drug Policy, 1982: এই নীতিমালা বাংলাদেশে ওষুধের দাম এবং মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

উদাহরণ:
ধরা যাক, একটি ট্যাবলেটের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা।

মুনাফা: ৫ টাকা।
পরিবহন ও অন্যান্য খরচ: ২ টাকা।
VAT: ১৫% (উৎপাদন খরচ + মুনাফা)।
MRP = ১০ + ৫ + ২ + (১৫% × ১৫) = ১৮.২৫ টাকা।

এটি প্যাকেট বা স্ট্রিপে উল্লেখ করা হবে এবং খুচরা বিক্রেতা এই দামেই বিক্রি করবে।

 

বাংলাদেশে ওষুধের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া জাতীয় ওষুধ নীতিমালা, DGDA-এর অনুমোদন, এবং বাজার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। এর মূল লক্ষ্য হলো জনসাধারণকে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন ওষুধ সরবরাহ করা।

ওষুধের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করা হয় ? কেন বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ঔষধের মূল্য কেন ভিন্ন ? চলুন দেখি বিস্তারিত

ক) প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত ঔষধের মূল্য:-

প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ঔষধের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আছে যাহা বেঞ্চ মার্ক হিসেবে অভিহিত। প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত ঔষধের মূল্যকে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বলা হয়।

১। প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত ১১৭টি পদের বিভিন্ন ডোজেস ফরমের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা আছে। প্রতিষ্ঠান সমূহকে উক্ত মূল্য সীমার মধ্যে বিভিন্ন পদের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের নিমিত্তে নির্ধারিত ফরমেট মোতাবক প্রস্তাবনা দাখিল করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ (ড্রাগস্) প্রস্তাবিত পদের মূল্য নির্ধারণ এবং মূল্যসনদ ইস্যু করে থাকে।

২। প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাভুক্ত যে সকল ঔষধের মূল্য নির্ধারণ করা নেই অথবা কোন ঔষধের মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলে
সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মূল্য বৃদ্ধির জন্য পদটির অ্যানেক্সারে বর্ণিত সক্রিয় ও সহযোগী উপাদানের ক্রয়ের Invoice ,B/E, Costing sheet সহ আবেদন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে অধিদপ্তরে সংরক্ষিত রেকর্ড হতে উক্ত পদের Active ingredient & Excipient এর বিগত ৬(ছয়) মাসের মূল্যের গড়ের (HS. Code অনুযায়ী শুল্ক ও অন্যান্য খরচ ৮% ধরে) সাথে পদটির প্যাকিং ম্যাটেরিয়ালের মূল্য যোগ করে যে মূল্য দাঁড়ায় তাকে নির্ধারিত মার্কআপ দিয়ে গুণ করে মূল্য(ভ্যাট ব্যতিত) নির্ধারণ করা হয়।

সুত্রঃ {Price of RM ( Ac+Ex) + Price of PM} X Markup = MRP (without VAT)

নির্ধারিত মার্ক-আপ এর বিবরণঃ
১। পুনঃ মোড়কজাত (রিপ্যাকিং) ঔষধ – ১.৫০।
২। মুখে খাওয়ার সকল প্রকার ঔষধ (এণ্টিবায়োটিক ও জন্ম নিয়šত্রণের বড়ি ছাড়া) ও ট্রপিক্যাল প্রিপারেশন – ২.২৫।
৩। মুখে খাওয়ার সকল এণ্টিবায়োটিক ঔষধ – ২.৩০
৪। সকল স্টেরাইল ঔষধ ও জন্মনিয়šত্রণের বড়ি – ২.৮০
৫। সকল অ্যাসেপটিক প্রিপারেশন- ৩.৪০
৬। স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ঔষধ – ৩.৪০
৭। এণ্টিভাইরাল, এণ্টিফাংগাল, এণ্টিইনফেকটিভ ঔষধ -২.৩০
৮। সাসটেইন রিলিজ ট্যাবলেট/ক্যাপসুল-২.৮০।
৯। ডিসপারসিবল ট্যাবলেট – ৩.০০।

খ) প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাবহির্ভূত ঔষধের মূল্যঃ

তালিকা বহির্ভুত ঔষধের মূল্যকে নির্দেশক মূল্য হিসেবে অভিহিত করা হয়।
প্রাইমারী হেলথ কেয়ার তালিকাবহির্ভূত ঔষধের মূল্য ম্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নং- জনস্বাস্থ্য- ১/ঔষধ-১৮/৯৩/৬৩, তারিখ -২৬/০২/৯৪ মোতাবেক স্ব-স্ব ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়ে
থাকে।

এ রূপ পদের মূল্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারণপূর্বক ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে মূল্য সনদের জন্য নির্ধারিত ফরমেট মোতাবক ঔষধ প্রশাসনে আবেদন দাখিল করতে হয়। মূল্য সনদের আবেদন পত্রের সহিত প্রস্তাবিত মূল্য, বৈধ মেয়াদের অ্যানেক্সার, সক্রিয় উপাদানের অনুমোদিত বণ্টকলিস্টের কপি , পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে ইস্যুকৃত মূল্য সনদের কপি দাখিল করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ (ড্রাগস্) শুধুমাত্র ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে মূল্যসনদ ইস্যু করে থাকে।

খ) আমদানীকৃত ঔষধের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া
আমদানীকৃত ঔষধের সর্বোচচ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
আমদানীকৃত ঔষধের সর্বোচচ খুচরা মূল্য নির্ধারণের জন্য ইন্ডেণ্ট, ইনভয়েস, ই/ঊ, আমদানী রেজিঃ সনদপত্রের
কপিসহ আবেদন করতে হয়। সর্বোচচ খুচরা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিন ধরণের মার্ক আপ ব্যবহার করা হয়।

নির্ধারিত মার্ক-আপ
১। শুল্ক ও ভ্যাট ফ্রি এবং অন্যান্য করযুক্ত (AIT ৫% + ATV ৩%) পদের মার্ক আপ -১.৬০৮৬।
২। ভ্যাট ফ্রি, ৫% শুল্ক, এবং অন্যান্য করযুক্ত (AIT ৫% + ATV ৩%) পদের মার্ক আপ – ১.৬৮০৯।
৩। ৫% শুল্ক, ১৫% ভ্যাট এবং অন্যান্য করযুক্ত (AIT ৫% + ATV ৩%) পদের মার্ক আপ -১.৯০৩০।

মূল্য নির্ধারণের সূত্র  C&F Value- X Ex. Rate X Mark up = MRP

  • গ) দেশে উৎপাদিত ঔষধের কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া
    নির্ধারণের সময় তিনটি ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়।(ক) কোন কাঁচামাল প্র¯তুত করতে যদি ৭.৫% অথবা উহার চেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয় তবে উক্ত কাঁচামালটির আমদানীকৃত বিগত ছয় মাসের গড়ের ল্যান্ডেড কস্টের সঙ্গে ২৫% যুক্ত করে উহার মূল্য(ভ্যাট ব্যতিত) নির্ধারণ করা হয়।
    (খ) যদি ৭.৫% এর কম অথবা কোন সাশ্রয় না হয় তবে আমদানীকৃত কাঁচামালের গত ছয় মাসের গড়ের ল্যান্ডেড কস্টের সহিত ২০% যুক্ত করে মূল্য (ভ্যাট ব্যতিত) নির্ধারণ করা হয়।
    (গ) যদি কোন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় না হয়ে লোকসান হয় তবে এ ধরণের শিল্পকে নিরুৎসাহিত করা হয়।

দেশে উৎপাদিত ঔষধের খুচরা মূল্য নির্ধারণের জন্য এবং ঔষধের কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণের জন্য ঔষধের মূল্য
নির্ধারণ কমিটি এবং মূল্য নির্ধারণের টেকনিক্যাল সাব কমিটি নামক দু’টি কমিটি রয়েছে।