ঢাকা ০৮:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত ইন্টারপোলের জালে বেনজীর হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে ভারতে! এটুআই ছিল মিলেমিশে লুটপাটের প্রকল্প আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল বিদেশেও বিচার সম্ভব শেখ হাসিনার ‘দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!’ : হাসিনার উদ্দেশ্য প্রেস সচিব জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন প্রফেসর ইউনূস ও তার দাবার চাল। পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টা নাহিদ, আসছে নতুন দল ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতাবান ইলন মাস্কের সঙ্গে যে আলোচনা হলো ড. ইউনূসের শ্যামল দত্তের অ্যাকাউন্টে ১০৪২ কোটি টাকার লেনদেন কিভাবে পারে এত পাষণ্ড হতে, হাসিনাকে বললেন আসিফ নজরুল জাতিসংঘের রিপোর্ট ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুলি’! তসলিমার ‘চুম্বন’ প্রকাশকের জয় বাংলা স্লোগান, মব জাস্টিস উস্কে দেয়ার ভারতীয় প্ল্যান? জরুরি ওষুধেও ব্যবসার ফাঁদ:ওষুধের বাজারে অরাজকতা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ড. ইউনূস-মোদি বৈঠকের সম্ভাবনা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ৩২: প্রতিশোধের ক্রোধে উন্মাদ প্রায় শেখ হাসিনা

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস – ২০২৪

বৈষম্যহীন “স্বাস্থ্যসেবা খাত” বিনির্মানে হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীসেবা চালু করা অত্যাবশ্যক

অধ্যাপক ড. মো. শাহ এমরান
  • আপডেট সময় : ১১:৪৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 157
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত ২০-০৮-২০২৪ তারিখে স্বাস্থ্যসেবা খাত সংস্কারের জন্য বর্তমান অন্তবর্তী সরকার ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষনা করেছে। ঐ কমিটিতে স্থান পাওয়া সবাই ডাক্তার। এই কমিটি ঘোষনার মাধ্যমে আগের গতানুগতিক সরকারগুলির মতো জুলাই ছাত্র-জনতার গন-অভ্যুত্থান পরবর্তী ড. মো. ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার প্রমান করল যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত মানেই ডাক্তারদের একচেটিয়া আধিপত্য।

এখানে অন্য কারো কোনো ঠাই নাই। অথচ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা খাত মানেই ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদদের সন্মিলিত টিম।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে ফার্মাসিস্টদের অবস্থান কোথায়?

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়টি বর্তমানে চারটি অধিদপ্তর নিয়ে গঠিত। যথা – ক) স্বাস্থসেবা অধিদপ্তর, খ) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, গ) ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ঘ) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। আবার, ফার্মেসী কাউন্সিল স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যাহা বাংলাদেশে ফার্মেসী শিক্ষা ও ফার্মেসী পেশার চর্চাকে নিয়ন্ত্রন করে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একটি বিশাল দিক। আমরা যদি চিত্র -১ দেখি, তাহলে দেখব যে, সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চারটি পেশাজীবি শ্রেণীর সমন্বয়ে গঠিত। এঁরা হলেন – ১) ডাক্তার, ২) ফার্মাসিস্ট, ৩) নার্স ও ৪) স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ।

চিত্র – ১ এ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদদের সরব উপস্থিতি থাকলেও ফার্মাসিস্টদের উপস্থিতি একেবারেই নাই। আর সেইজন্যই আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার  করুন দশা। অন্তত করোনা মহামারী আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাহা সুস্পষ্ট ভাবে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। তাই, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ফার্মাসিস্টদের অন্তর্ভুক্তি একান্তভাবে দরকার। আশা করি আমাদের বর্তমান নীতিনির্ধারক মহল বিষয়টি অনুধাবন করবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ফার্মাসিস্টদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করবেন।

বাংলাদেশে সাধারন মানুষ ফার্মেসী বলতে কি বোঝে?

বাংলাদেশে সাধারন মানুষ ফার্মেসী বলতে ওষুধের দোকান বুঝে আর ফার্মাসিস্ট বলতে ঐ ওষুধের দোকানদারকেই বুঝে। ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসী বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা পেশাদার ফার্মাসিস্টকে বুঝে না, এমনকি ফার্মেসী পেশা কি জিনিষ সেটাও বুঝে না। এটা একটা বিশাল বাধা ফার্মাসিস্টদের সামনে। এই বাধা উত্তরনের উপায় কি? আসলে জনগনের মনে পেশা হিসেবে ফার্মেসীকে ঠাঁই দেওয়াইতে না পারলে, পেশা হিসাবে ফার্মেসীর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাবে। যখন কোন মেধাবী ছেলেমেয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে ভর্তি হয়, তখন তার চারপাশের সাধারন মানুষ হায় হায় করে বলে, আহা রে! এত ভাল পাশ দিয়ে সে কিনা ফার্মেসীতে ভর্তি হলো! ওষুধের দোকানে কাজ করবে?  তবে এখন বহু সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগ খোলাতে আর মোটামুটি শহর-গ্রাম-গঞ্জের সকল স্তরের ছাত্র-ছাত্রীগন বিষয়টি পড়াতে একটা গনসচেতনতা সৃষ্টির সুযোগ হইতেছে। খানিকটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। পেশা হিসাবে সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা না পাওয়ার একটা বড় কারন হলো যদু-মধু-রাম-রহিম-জন যে কেউ ওষুধের দোকান খোলা ও পরিচালনার পারমিশন পাওয়া এবং সরকারীভাবে হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর, মডেল ফার্মেসী ও রিটেইল বা কমুনিটি ফার্মেসীসেবা চালু না করা।

ফার্মেসী কোর্সের সিলেবাস আধুনিকীকরণ

ফার্মেসী কোর্সের সিলেবাস কি হসপিটাল ফার্মেসী চালু করার জন্য উপযোগী? হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর, মডেল ফার্মেসী ও রিটেইল বা কমুনিটি ফার্মেসীসেবা চালু  করতে গেলে ৩ বছর, ৪ বছর, ৫ বছর নাকি ৬ বছর মেয়াদী কোর্স দরকার, এই বিতর্কটা থেকেই যাচ্ছে। হসপিটাল ফার্মেসী চালু করতে গেলে আমাদের ফার্মেসী বিভাগগুলির বর্তমান কোর্স-কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের ফার্মেসী শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড। হ্যাঁ, আমাদের সিনিয়র, সমসাময়িক ও জুনিয়র অনেক ফার্মাসিস্ট বিদেশে হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন বা করতেছেন। এক্ষেত্রে আমরা তাঁদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারি। আমাদেরকে আরো বিবেচনায় নিতে হবে যে, জীববিজ্ঞান / স্বাস্থ্যবিজ্ঞান / চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফার্মেসীর অবস্থান কোথায়? ফার্মেসী একটি ইন্ট্রিগ্যাটেড বিষয় এবং পেশা হিসাবেও অনন্য। হেলথ সায়েন্স বা মেডিকেল সায়েন্স এর সঙ্গে এর তুলনা হয় না। ফার্মাসিস্ট হতে হলে নিন্মোক্ত বিষয়গুলির যথাযথ কম্বিনেশন বা সমন্বয় লাগবে। কিন্তু মেডিকেল ও নার্সিং এ পাঁচ বছরের কোর্স। প্রফেশনাল সাবজেক্ট এর তকমা পেতে হলে আমাদেরকেই পাঁচ বছরের পেশাগত ডিগ্রীর সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না, বরং সম্ভব হলে ৬ বছর মেয়াদী ফার্ম ডি কোর্স চালু করতে হবে। দেশে বিরাজমান অন্য সব নন-প্রফেশনাল বিষয়ের আদলে ৪ বছর মেয়াদী ফার্মেসীর কোর্স চালু করার বা ফিরে যাওয়ার চিন্তাটা হবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা শামিল।

ফার্মাসিস্ট হলে হলে চিত্র – ২ এ বর্নিত বিষয়গুলির যথাযথ কম্বিনেশন বা সমন্বয় লাগবে। সেই কারনে ফার্মেসী একটি অনন্য বিষয় এবং পেশা হিসাবেও অনন্য। হেলথ সায়েন্স বা মেডিকেল সায়েন্স এর সঙ্গে এর তুলনা হয় না। সেই জন্যই ওষুধ উৎপাদন থেকে রিটেইল ফার্মেসী বা হসপিটাল ফার্মেসীতে ফার্মাসিস্ট থাকাটা অপরিহার্য।

গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের সাত দফা দাবী

হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর, মডেল ফার্মেসী ও রিটেইল বা কমুনিটি ফার্মেসীসেবা চালু  করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টগন শান্তিপূর্ন আন্দোলন করে আসছে। সেই সাথে সুবিবেচনার জন্য সরকারের নিকট কিছু দাবী-দাওয়াও পেশ করে আসছে। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের দাবীগুলি নিন্মরূপ –

(১) ফার্মেসী সেবা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা (Establishment of Directorate General of Pharmacy Services, DGPS)

The Pharmacy Practice Act প্রনয়ন করার মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও অন্যান্য বিষয়াদি সমন্বয় করার জন্য ফার্মেসী সেবা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

() হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী সার্ভিস চালু করণ (Establishment of Hospital and Clinical Pharmacy Services)

পদোন্নতির সুবিধা রেখে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন কর্তৃক ফার্মেসিকে “ক্যাডার বিষয়” হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। পদের নাম হবে “হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট”। এদেরকে বিভিন্ন সরকারি / বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।

() সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মডেল ফার্মেসী চালু করণ (Establishment of Model Pharmacy)

সারাদেশে সাধারন ওষুধের দোকানের পরিবর্তে সরকারী সহায়তায় মডেল ফার্মেসি চালু করতে হবে এবং এসব ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দানের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য “The Pharmacy Practice Act” প্রনয়ণ করতে হবে।

() বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে “Pharmaceutical Corps” খোলা (Establishment of “Pharmaceutical Corps” in Bangladesh Army)

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো “Medical corps” এর অনুরূপ “Pharmaceutical Corps” খুলতে হবে।

(৫) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্টদেরকে নিয়োগ দেওয়া (Employment of Graduate Pharmacists in different government organizations)

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন – ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (DGDA), ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি (DTL), ফার্মেসী কাউন্সিল (PCB), বিএসটিআই (BSTI),আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (ICDDR,B,), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা  পরিষদ (BCSIR), কেন্দ্রীয় ওষুধ ভান্ডার (CMSD), ব্যাংক-বীমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্টদেরকে নিয়োগ দিতে হবে।

() ড্রাগ থেরাপিউটিক কমিটিতে ফার্মাসিস্টদেরকে অন্তর্ভুক্ত (Inclusion of Pharmacists in Drug and Therapeutic Committee) করা

‘ড্রাগ ও থেরাপিউটিক কমিটি’ গঠন করে হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় ফার্মাসিস্টদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(৭) ফার্মেসীতে ভর্তি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন (Unique admission system for Pharmacy)

ফার্মেসী একটি পেশাগত বিষয় এবং ওষুধ মানুষের জীবন-মরনের সাথে জড়িত বিধায়, এই পেশা ও পেশাজীবিদের সন্মান রক্ষার্থে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রি ফার্মেসি পড়তে ইচ্ছুক তাদের জন্য মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ একটি “কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা” অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল (PCB) কে দিতে হবে। সেই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রিরা তাদের মেধাক্রম অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্বাবিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হবে।

কেন হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর দরকার?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ৫৫% কমুনিটি ফার্মেসীতে, ৩০% হসপিটাল ফার্মেসীতে, ৫% সরকারী প্রতিষ্ঠানে, ৫% শিক্ষা ব্যবস্থায় আর বাকী ৫% কাজ করবে ওষুধ প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আমরা দেখি যে, বাংলাদেশে প্রায় ৯৫% এর বেশী ফার্মাসিস্ট শুধুমাত্র ওষুধ প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, কারন আমাদের ফার্মেসীর কোর্স সেই ভাবেই ডিজাইন করা।

বাংলাদেশে এ মুহুর্তে হাসপাতালের সংখ্যা প্রায় ৬৫৪টি। এসব হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা প্রায় ৫১,৩১৬ টি। এই বিশাল সংখ্যক হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ অনেক থাকলেও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের সংখ্যা শূন্যের কোঠায়। স্বাস্থ্যসেবা খাতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদদের কাজ যেমন গুরুত্বপূর্ন তেমনি ফার্মাসিস্টদের কাজও গুরুত্বপূর্ন। বিশেষ করে হাসপাতালে সঠিক নিয়মে ওষুধ সংরক্ষন, রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ ও ডোজ নির্ধারন, ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার উপর নজরদারী ও প্রতিরোধ এবং ফার্মাকোভিজিলেন্স কার্যক্রম পরিচালনায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। ২০১৬ সালের জাতীয় ওষূধ নীতি ও ২০২৩ সালের ওষুধ ও কসমেটিক আইনেও পর্যায়ক্রমে সকল সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে আন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগে হাসপিটাল কার্যক্রম চালু করার কথা বলা আছে।

ওষুধ রপ্তানী হয় বিদেশে আর রোগীরা বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে !

ব্যাপারটি কি চমৎকার না? আমরা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানী করি আর আমাদের দেশের রোগীরা বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার এই ভংগুর  দশার কারন হলো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ফার্মাসিটদের অনুপস্থিতি।

উপসংহার

অতি সম্প্রতি আমরা দেখাছি, মেডিকেল বোর্ড বারবার বলা সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নাই।  তাই এখন থেকে সবাইকে দেশের হাসপাতালসমূহেই চিকিৎসা নিতে হবে। তথাকথিত উন্নত চিকিৎসার নামে দেশের টাকা খরচ করে কাউকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। বরং ডাক্তার, ফার্মাসিট, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্টদের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করুন, দেশের হাসপাতালগুলিতে  পর্যাপ্ত সংখ্যক ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দিয়ে “হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর ব্যবস্থা অতি দ্রুত চালু করুন”। তরুন ও বেকার ফার্মাসিস্টরা আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তা না হলে যে কোনো সময় এই নবীন ফার্মাসিস্টগন মাঠে  নেমে পড়বে দাবী আদায়ের জন্য। আর তরুনরা মাঠে নামলে পুলিশ কেন সানাবাহিনী দিয়েও তাদের দাবাইয়া রাখতে পারবেন না। তাই রক্ত ঝরানোর আগেই ফার্মাসিস্টদের যৌক্তিক দাবী-দাওয়াগুলি মেনে নিন আর দেশে হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীসেবা ব্যবস্থা চালু করে সেখানে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

অধ্যাপক ড. মো. শাহ এমরান

ফার্মাসিউটিক্যাল কেমেস্ট্রি বিভাগ

ফার্মেসীর অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস – ২০২৪

বৈষম্যহীন “স্বাস্থ্যসেবা খাত” বিনির্মানে হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীসেবা চালু করা অত্যাবশ্যক

আপডেট সময় : ১১:৪৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গত ২০-০৮-২০২৪ তারিখে স্বাস্থ্যসেবা খাত সংস্কারের জন্য বর্তমান অন্তবর্তী সরকার ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষনা করেছে। ঐ কমিটিতে স্থান পাওয়া সবাই ডাক্তার। এই কমিটি ঘোষনার মাধ্যমে আগের গতানুগতিক সরকারগুলির মতো জুলাই ছাত্র-জনতার গন-অভ্যুত্থান পরবর্তী ড. মো. ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার প্রমান করল যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত মানেই ডাক্তারদের একচেটিয়া আধিপত্য।

এখানে অন্য কারো কোনো ঠাই নাই। অথচ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা খাত মানেই ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদদের সন্মিলিত টিম।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে ফার্মাসিস্টদের অবস্থান কোথায়?

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়টি বর্তমানে চারটি অধিদপ্তর নিয়ে গঠিত। যথা – ক) স্বাস্থসেবা অধিদপ্তর, খ) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, গ) ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ঘ) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। আবার, ফার্মেসী কাউন্সিল স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যাহা বাংলাদেশে ফার্মেসী শিক্ষা ও ফার্মেসী পেশার চর্চাকে নিয়ন্ত্রন করে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একটি বিশাল দিক। আমরা যদি চিত্র -১ দেখি, তাহলে দেখব যে, সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চারটি পেশাজীবি শ্রেণীর সমন্বয়ে গঠিত। এঁরা হলেন – ১) ডাক্তার, ২) ফার্মাসিস্ট, ৩) নার্স ও ৪) স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ।

চিত্র – ১ এ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদদের সরব উপস্থিতি থাকলেও ফার্মাসিস্টদের উপস্থিতি একেবারেই নাই। আর সেইজন্যই আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার  করুন দশা। অন্তত করোনা মহামারী আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাহা সুস্পষ্ট ভাবে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। তাই, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ফার্মাসিস্টদের অন্তর্ভুক্তি একান্তভাবে দরকার। আশা করি আমাদের বর্তমান নীতিনির্ধারক মহল বিষয়টি অনুধাবন করবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ফার্মাসিস্টদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করবেন।

বাংলাদেশে সাধারন মানুষ ফার্মেসী বলতে কি বোঝে?

বাংলাদেশে সাধারন মানুষ ফার্মেসী বলতে ওষুধের দোকান বুঝে আর ফার্মাসিস্ট বলতে ঐ ওষুধের দোকানদারকেই বুঝে। ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসী বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা পেশাদার ফার্মাসিস্টকে বুঝে না, এমনকি ফার্মেসী পেশা কি জিনিষ সেটাও বুঝে না। এটা একটা বিশাল বাধা ফার্মাসিস্টদের সামনে। এই বাধা উত্তরনের উপায় কি? আসলে জনগনের মনে পেশা হিসেবে ফার্মেসীকে ঠাঁই দেওয়াইতে না পারলে, পেশা হিসাবে ফার্মেসীর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাবে। যখন কোন মেধাবী ছেলেমেয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে ভর্তি হয়, তখন তার চারপাশের সাধারন মানুষ হায় হায় করে বলে, আহা রে! এত ভাল পাশ দিয়ে সে কিনা ফার্মেসীতে ভর্তি হলো! ওষুধের দোকানে কাজ করবে?  তবে এখন বহু সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগ খোলাতে আর মোটামুটি শহর-গ্রাম-গঞ্জের সকল স্তরের ছাত্র-ছাত্রীগন বিষয়টি পড়াতে একটা গনসচেতনতা সৃষ্টির সুযোগ হইতেছে। খানিকটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। পেশা হিসাবে সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা না পাওয়ার একটা বড় কারন হলো যদু-মধু-রাম-রহিম-জন যে কেউ ওষুধের দোকান খোলা ও পরিচালনার পারমিশন পাওয়া এবং সরকারীভাবে হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর, মডেল ফার্মেসী ও রিটেইল বা কমুনিটি ফার্মেসীসেবা চালু না করা।

ফার্মেসী কোর্সের সিলেবাস আধুনিকীকরণ

ফার্মেসী কোর্সের সিলেবাস কি হসপিটাল ফার্মেসী চালু করার জন্য উপযোগী? হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর, মডেল ফার্মেসী ও রিটেইল বা কমুনিটি ফার্মেসীসেবা চালু  করতে গেলে ৩ বছর, ৪ বছর, ৫ বছর নাকি ৬ বছর মেয়াদী কোর্স দরকার, এই বিতর্কটা থেকেই যাচ্ছে। হসপিটাল ফার্মেসী চালু করতে গেলে আমাদের ফার্মেসী বিভাগগুলির বর্তমান কোর্স-কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের ফার্মেসী শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড। হ্যাঁ, আমাদের সিনিয়র, সমসাময়িক ও জুনিয়র অনেক ফার্মাসিস্ট বিদেশে হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন বা করতেছেন। এক্ষেত্রে আমরা তাঁদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারি। আমাদেরকে আরো বিবেচনায় নিতে হবে যে, জীববিজ্ঞান / স্বাস্থ্যবিজ্ঞান / চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফার্মেসীর অবস্থান কোথায়? ফার্মেসী একটি ইন্ট্রিগ্যাটেড বিষয় এবং পেশা হিসাবেও অনন্য। হেলথ সায়েন্স বা মেডিকেল সায়েন্স এর সঙ্গে এর তুলনা হয় না। ফার্মাসিস্ট হতে হলে নিন্মোক্ত বিষয়গুলির যথাযথ কম্বিনেশন বা সমন্বয় লাগবে। কিন্তু মেডিকেল ও নার্সিং এ পাঁচ বছরের কোর্স। প্রফেশনাল সাবজেক্ট এর তকমা পেতে হলে আমাদেরকেই পাঁচ বছরের পেশাগত ডিগ্রীর সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না, বরং সম্ভব হলে ৬ বছর মেয়াদী ফার্ম ডি কোর্স চালু করতে হবে। দেশে বিরাজমান অন্য সব নন-প্রফেশনাল বিষয়ের আদলে ৪ বছর মেয়াদী ফার্মেসীর কোর্স চালু করার বা ফিরে যাওয়ার চিন্তাটা হবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা শামিল।

ফার্মাসিস্ট হলে হলে চিত্র – ২ এ বর্নিত বিষয়গুলির যথাযথ কম্বিনেশন বা সমন্বয় লাগবে। সেই কারনে ফার্মেসী একটি অনন্য বিষয় এবং পেশা হিসাবেও অনন্য। হেলথ সায়েন্স বা মেডিকেল সায়েন্স এর সঙ্গে এর তুলনা হয় না। সেই জন্যই ওষুধ উৎপাদন থেকে রিটেইল ফার্মেসী বা হসপিটাল ফার্মেসীতে ফার্মাসিস্ট থাকাটা অপরিহার্য।

গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের সাত দফা দাবী

হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর, মডেল ফার্মেসী ও রিটেইল বা কমুনিটি ফার্মেসীসেবা চালু  করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টগন শান্তিপূর্ন আন্দোলন করে আসছে। সেই সাথে সুবিবেচনার জন্য সরকারের নিকট কিছু দাবী-দাওয়াও পেশ করে আসছে। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের দাবীগুলি নিন্মরূপ –

(১) ফার্মেসী সেবা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা (Establishment of Directorate General of Pharmacy Services, DGPS)

The Pharmacy Practice Act প্রনয়ন করার মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও অন্যান্য বিষয়াদি সমন্বয় করার জন্য ফার্মেসী সেবা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

() হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী সার্ভিস চালু করণ (Establishment of Hospital and Clinical Pharmacy Services)

পদোন্নতির সুবিধা রেখে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন কর্তৃক ফার্মেসিকে “ক্যাডার বিষয়” হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। পদের নাম হবে “হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট”। এদেরকে বিভিন্ন সরকারি / বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।

() সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মডেল ফার্মেসী চালু করণ (Establishment of Model Pharmacy)

সারাদেশে সাধারন ওষুধের দোকানের পরিবর্তে সরকারী সহায়তায় মডেল ফার্মেসি চালু করতে হবে এবং এসব ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দানের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য “The Pharmacy Practice Act” প্রনয়ণ করতে হবে।

() বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে “Pharmaceutical Corps” খোলা (Establishment of “Pharmaceutical Corps” in Bangladesh Army)

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো “Medical corps” এর অনুরূপ “Pharmaceutical Corps” খুলতে হবে।

(৫) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্টদেরকে নিয়োগ দেওয়া (Employment of Graduate Pharmacists in different government organizations)

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন – ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (DGDA), ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি (DTL), ফার্মেসী কাউন্সিল (PCB), বিএসটিআই (BSTI),আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (ICDDR,B,), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা  পরিষদ (BCSIR), কেন্দ্রীয় ওষুধ ভান্ডার (CMSD), ব্যাংক-বীমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্টদেরকে নিয়োগ দিতে হবে।

() ড্রাগ থেরাপিউটিক কমিটিতে ফার্মাসিস্টদেরকে অন্তর্ভুক্ত (Inclusion of Pharmacists in Drug and Therapeutic Committee) করা

‘ড্রাগ ও থেরাপিউটিক কমিটি’ গঠন করে হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় ফার্মাসিস্টদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(৭) ফার্মেসীতে ভর্তি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন (Unique admission system for Pharmacy)

ফার্মেসী একটি পেশাগত বিষয় এবং ওষুধ মানুষের জীবন-মরনের সাথে জড়িত বিধায়, এই পেশা ও পেশাজীবিদের সন্মান রক্ষার্থে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রি ফার্মেসি পড়তে ইচ্ছুক তাদের জন্য মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ একটি “কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা” অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল (PCB) কে দিতে হবে। সেই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রিরা তাদের মেধাক্রম অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্বাবিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হবে।

কেন হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর দরকার?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ৫৫% কমুনিটি ফার্মেসীতে, ৩০% হসপিটাল ফার্মেসীতে, ৫% সরকারী প্রতিষ্ঠানে, ৫% শিক্ষা ব্যবস্থায় আর বাকী ৫% কাজ করবে ওষুধ প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আমরা দেখি যে, বাংলাদেশে প্রায় ৯৫% এর বেশী ফার্মাসিস্ট শুধুমাত্র ওষুধ প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, কারন আমাদের ফার্মেসীর কোর্স সেই ভাবেই ডিজাইন করা।

বাংলাদেশে এ মুহুর্তে হাসপাতালের সংখ্যা প্রায় ৬৫৪টি। এসব হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা প্রায় ৫১,৩১৬ টি। এই বিশাল সংখ্যক হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ অনেক থাকলেও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের সংখ্যা শূন্যের কোঠায়। স্বাস্থ্যসেবা খাতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদদের কাজ যেমন গুরুত্বপূর্ন তেমনি ফার্মাসিস্টদের কাজও গুরুত্বপূর্ন। বিশেষ করে হাসপাতালে সঠিক নিয়মে ওষুধ সংরক্ষন, রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ ও ডোজ নির্ধারন, ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার উপর নজরদারী ও প্রতিরোধ এবং ফার্মাকোভিজিলেন্স কার্যক্রম পরিচালনায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। ২০১৬ সালের জাতীয় ওষূধ নীতি ও ২০২৩ সালের ওষুধ ও কসমেটিক আইনেও পর্যায়ক্রমে সকল সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে আন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগে হাসপিটাল কার্যক্রম চালু করার কথা বলা আছে।

ওষুধ রপ্তানী হয় বিদেশে আর রোগীরা বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে !

ব্যাপারটি কি চমৎকার না? আমরা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানী করি আর আমাদের দেশের রোগীরা বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার এই ভংগুর  দশার কারন হলো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ফার্মাসিটদের অনুপস্থিতি।

উপসংহার

অতি সম্প্রতি আমরা দেখাছি, মেডিকেল বোর্ড বারবার বলা সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নাই।  তাই এখন থেকে সবাইকে দেশের হাসপাতালসমূহেই চিকিৎসা নিতে হবে। তথাকথিত উন্নত চিকিৎসার নামে দেশের টাকা খরচ করে কাউকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। বরং ডাক্তার, ফার্মাসিট, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্টদের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করুন, দেশের হাসপাতালগুলিতে  পর্যাপ্ত সংখ্যক ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দিয়ে “হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীর ব্যবস্থা অতি দ্রুত চালু করুন”। তরুন ও বেকার ফার্মাসিস্টরা আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তা না হলে যে কোনো সময় এই নবীন ফার্মাসিস্টগন মাঠে  নেমে পড়বে দাবী আদায়ের জন্য। আর তরুনরা মাঠে নামলে পুলিশ কেন সানাবাহিনী দিয়েও তাদের দাবাইয়া রাখতে পারবেন না। তাই রক্ত ঝরানোর আগেই ফার্মাসিস্টদের যৌক্তিক দাবী-দাওয়াগুলি মেনে নিন আর দেশে হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক্যাল ফার্মেসীসেবা ব্যবস্থা চালু করে সেখানে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

অধ্যাপক ড. মো. শাহ এমরান

ফার্মাসিউটিক্যাল কেমেস্ট্রি বিভাগ

ফার্মেসীর অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।