ব্রিটিশ কোচের বিরুদ্ধে সাবিনাদের বিদ্রোহ, অনুশীলন বয়কট

- আপডেট সময় : ১১:১০:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 5
এ নিয়ে চারিদিকে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দোষারোপ করা হচ্ছে খেলোয়াড়দের। তাহলে আসুন কিছু কথা শেয়ার করি।
নারী ফুটবল ২০০৪ সাল থেকে শুরু হলেও ২০০৯ সাল থেকে নারী ফুটবল চলমান হয়। বলা যেতে পারে নারী ফুটবলের জন্মের বয়স ১৫ বছর। এই ১৫ বছরে অনেক প্রতিবন্ধকতা, অনেক পথ পারি দিয়ে নারী ফুটবল আজ এইখানে। দেশের জন্য এতো এতো সাফল্য এতো অর্জন যে মেয়েগুলো নিয়ে আসলো তাদেরকে নিয়ে আজকে আপনারা কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন! একজন ব্রিটিশের জন্য দেশের মেয়েরা আপনাদের কাছে খারাপ হয়ে গেলো আজ! সাবিনা-ঋতুপর্ণাদের অবদান ভুলে গেলেন নিমিষেই?
চলে আসি আসল প্রসঙ্গে, যেখান থেকে আসলে সমস্যার শুরু…
বাটলারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ চাইনিজ তাইপে যেমন তেমন গেলো সবই মেনে নেওয়া হলো কিন্তু যারা ফুটবল বোঝেন বা পর্যবেক্ষণ করেন বা মহিলা ফুটবল নিয়মিত দেখেন তারা ভুটানের ২ টা ম্যাচ যদি দেখেন তাহলে তারা বুঝবেন সেখানে কোচের পারফরম্যান্স ছিলো জিরো! ১ম ম্যাচে ৪-২ গোলে জিতলেও ম্যাচে ছিলোনা কোনো ছন্দ। যে ছন্দে আমাদের মেয়েরা আগে খেলতো এবং ভুটানের মতো টিমকে হেসেখেলে হারিয়ে দিতো। ১ম ম্যাচে এমন রেজাল্টের পরেও ২য় ম্যাচে আনে বিশাল পরিবর্তন। ১ম একাদশে রুপনার মতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলকিপারকে বসিয়ে রাখেন কোচ কারণ বাটলার আগ থেকে অপছন্দ করতো তাকে তার হাইটের জন্য। যেটা নিয়ে অনুশীলনেও তাঁকে পোক করে বলেছেন অনেকবার যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কিন্তু যখন দেখলো ২ গোলে বাংলাদেশ হারছে তখন না পেরে অন্যদের বলাতে হাফ টাইমের পর রুপনাকে নামাতে বাধ্য হয়েছিলো। আবার মারিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায় কিছুটা এমনই দৃশ্য। মারিয়ার জায়গায় স্বপ্নাকে নামানো হয়েছিলো কিন্তু তাঁকে ১৫ মিনিট পরই উঠিয়ে মারিয়া কে নামানো হয়েছিলো। রুপনা, মারিয়া ও ঋতুপর্ণা চাকমাকে বেঞ্চ থেকে মাঠে নামাতে বাধ্য হন কিন্তু প্রথমে নামালে হয়তো এমন হতো না। তারপর সাফ টুর্নামেন্টে হয়ে গেছে অনেক অনেক কাহিনী যা মেয়েরা এখনো পরিষ্কার করেনি। কিন্তু জানা গেছে অনেককিছুই। সূত্রটা মাসুরার টুপি পরা নিয়ে শুরু হয়েছিলো যেটা সবাই ইতিমধ্যে জানেন। নেপালে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে টুপি পড়ে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলো কয়েকজন খেলোয়াড়। (টুপি খুলে খেতে বসা যে ইংল্যান্ডের টেবিল ম্যানার সেটা মহিলা টিমের কেউই জানতো না) তখন কোচ পিটার কোনো কারণ ব্যখ্যা ছাড়াই খেলোয়াড়দেরকে টুপি খুলতে বলে। অন্য কেও কারণ জিজ্ঞেস না করলেও মাসুরা কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করেছিলো। কিন্তু কোনো ব্যখ্যা ছাড়াই রাগান্বিত স্বরে বলা হয়েছিলো আমি কোচ আমি বলেছি তাই তুমি টুপি খুলবা। মাসুরার প্রশ্নে হেড কোচের সহযোগীরাও উত্তরে কিছুই বলতে পারিনি মাসুরাকে কারণ তাঁরাও জানতো না এই ম্যানার। যেই ক্ষোভের জন্য তাঁকে প্রথম একাদশেও নামানো হয়নি পরেরদিন পাকিস্তানের ম্যাচে এবং মারিয়াকে নামানো হয়নি। যার ফলপ্রসুত রেজাল্ট ড্র হয়েছিলো। কোচের বিবরণ অনুযায়ী মারিয়া মাসুরা ফর্মে ছিলো না। তাহলে এখানে ২ টা প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রথমত, তাহলে পরে ২ দিনে এমন কি হলো যে তাঁরা ফুল ফর্মে চলে আসলো?
দ্বিতীয়ত, আর পিটার কেমন কোচ যে খেলোয়াড়কে ফিট না করে টিমে রেখেছে ফিট না ফর্মে না তাহলে স্কোয়াডে রেখোছিলো কেনো? এখানে কি কোচের ব্যর্থতা আপনাদের চোখে পড়ছে না?
এক খেলোয়াড়ের ভাষ্যমতে, “তারপরই ভারতের ম্যাচের আগে মাঠে প্যাকটিস থামিয়ে আসলো বিশাল হুমকি ধুমকি। বলা হলো কালকে (ইন্ডিয়ার ম্যাচে) সব সিনিয়র নামিয়ে দিবো দেখি তোমরা কি করতে পারো। একটা এতো বড়ো সিভি ধারী কোচের এটা কেমন ব্যবহার। অবশ্যই কোচের ব্যক্তিত্ব এমন হওয়া উচিৎ না। বিভিন্ন ভাবে মানসিক চাপ, ইমোশনাল হ্যারেজমেন্ট, বিভিন্নভাবে পোক করা, ইনসাল্ট করা ইত্যাদি এর ভেতর দিয়েই গত ৭-৮ মাস পার করেছে মেয়েরা। এখন আর তাঁরা পারছে না এখন দেয়ালে পিঠ থেকে গেছে। তাঁরা নিরবে ফেডারেশনকে জানিয়েছেন অনেকবার কিন্তু ফেডারেশন তাঁদের সাথে বসার প্রয়োজন বোধ ও করেননি। আবারও পিটার বাটলারকেই রিনিউ করিয়েছেন। এখন আপনারাই আঙুল তুলছেন মেয়েদের ওপর। তাঁদের সাইড দেখলেনও না। একবারও জানার চেষ্টাও করলেন না।
বাফুফের উচিত খেলোয়াড়দের কথা মাথায় রেখে কোচ ঠিক করা। এত বৈরী সম্পর্ক নিয়ে আর যাই হোক ফুটবল আগাবে না।