ভালোবাসার শেষ ঠিকানা: আফরোজী ইউনুস ও মুহাম্মদ ইউনুস

- আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
- / 10
আফরোজী ইউনুস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্দাথবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে পর্দাথবিজ্ঞানের গবেষক হিসেবে থাকাকালীন সময় পরিচয় হয় মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে।
প্রথম ডিভোর্সের পর দীর্ঘদিনের একাকীত্বর অবসান ঘটান ড. ইউনুস, আফরোজী ইউনুসের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। প্রধান উপদেষ্টা হবার পর অনেক জাবিয়ান ইউনুস স্যারকে জাবির দুলাভাই বলে সম্বোধন করেন।
(তবে ডঃ. ইউনুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্র তাই তিনি ঢাবির অভিভাবক)
আফরোজী ইউনুসের বেড়ে ওঠা কিন্তু ওপার বাংলায়। কলকাতার বর্ধমান শহরের রাণীগঞ্জ বাজারের কাছে লস্করদিঘি এলাকায় আফরোজী ম্যামের শৈশব, কৈশোর পার হয়। সেই সূত্রে, ইউনুস স্যার কলকাতারও জামাই বাবু।
দাম্পত্য জীবনে তারা সুখী দম্পতি ছিলেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে আফরোজী ইউনুসের ডিমেনশিয়া রোগ।
ধীরে ধীরে ভুলতে থাকেন নাম, নাম্বার, দৈনন্দিন কাজ, পুরানো স্মৃতি, পাড়া প্রতিবেশি সবাইকে … একটা সময় ভুলে বসলেন তার নিত্যদিনের জগতটাকেই। শুধু স্মৃতিতে থেকে গেলেন ইউনুস স্যার।
ডিমেনশিয়ার প্রথম স্টেইজে আছি কিনা সেই নিয়ে আমার ডাক্তার অনেক চেকাপ করেন একসময়। সেই কারণেই এই রোগ সম্পর্কে আমার জানাশোনা আছে। আমি নাম্বার, অনেকের নাম ভুলে যাই (অনেকে হয়তো কষ্ট পান আমার এই আচরণে কিন্তু আসলেই আমি ভুলে যাই, মনে রাখতে পারি না অনেক কিছুই। পুরনো অনেক স্মৃতি একদমই ভুলে গিয়েছি। বিশেষ করে প্রথম বিয়ে সংসার এসব কিছু স্মরণ করতে গেলে আমার পুরানো ছবি দেখতে হয়।) তো এসব ফেইস করছি, আরো অনেক কিছুই আছে। আমার শুধু তাদের কথাই স্পষ্ট ভাবে মনে আছে যাদের সাথে খুব ভালো সময় পার করেছি। যাদের সাথে খুব সুসম্পর্ক ছিলো। আজকে আমি বলি, আমি অনেক কিছুই কেনো লিখে যাই, কারণ ভবিষ্যতে যদি এই সমস্যা আরো বেড়ে যায় অন্তত লেখাগুলো যেনো থেকে যায়।
তো নিজেকে দিয়েই বুঝেছি আফরোজী ম্যাম ইউনুস স্যারকেই কেনো মনে রেখেছেন! কারণ স্যার ম্যামকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন, সম্মান করতেন। তার প্রমাণ তিনি প্রধান উপদেষ্টা হবার আগেই জানিয়েছিলেন যে, স্ত্রীর দেখাশোনার দায়িত্ব তার, তার স্ত্রী তাকে ছাড়া কাউকে চিনেন না, খাওয়া দাওয়ার সব দায়িত্ব তার।
একজন মানুষ বৃদ্ধ হলেও দিন দিন শিশুর মতোন হয়ে যাচ্ছেন। কাউকে চিনেন না, কাউকে তার মনে নেই… কতোটা অসহায় লাগে নিজের কাছে নিজেকে? চিনেন শুধু স্বামীকে, সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে আছেন সেই স্বামীর প্রতি।
দুজন মানুষের শেষ জীবন হয়তো এভাবেই একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে, যত্নে, ভালোবাসায় কেটে যাবার কথা কিন্তু নাহ বাধা দিলো ৫ই আগস্ট।
আমরা দেশের জন্য যোগ্য নেতা পেলেও, আফরোজী ম্যাম আর আগের মতোন পাশে পান না স্বামী মুহাম্মদ ইউনুসকে।
কেমন যায় তার দিনকাল?
কে যত্ন নেয় তার?
তিনি তো কাউকে চিনেন না, অচেনা কারো যত্ন কি এক্সেপ্ট করতে চান?
অবিশ্বাস, দ্বিধা দ্বন্দ্বের আতংক নিয়ে কেমন যাচ্ছে একজন বয়স্ক নারীর প্রতিটা বেলা?
সম্মান, সুখ, বিলাসিতা, শান্তি, স্ত্রীর প্রতি দেখা শোনার দায়িত্ব সব রেখে একজন ব্যক্তি এই পচে যাওয়া দেশের জন্য নিত্যদিন ছুটে বেড়াচ্ছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দূর্নীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন, নিত্যদিনের পণ্য গরীব মানুষের হাতের নাগালে রাখার জন্য তার প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখিয়েছেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে দূর্নীতিমুক্ত, এই দেশের তরুণদের প্রতিভাকে যোগ্য জায়গায় নিয়ে যাবার জন্য প্রতিদিন একেক মহলে দেন দরবার চালাচ্ছেন, ছুটে যাচ্ছেন বিশ্বের একেক প্রান্তে …
স্বার্থ তার একটাই, বাংলাদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া।
এই সৎ চাওয়াটুকুর জন্য, তার স্যাক্রিফাইস তার অসুস্থ ওয়াইফের স্যাক্রিফাইস সব ভুলে আমরা যা তা বলে বসছি, সুদখোর ইউনুস বলি, দাজ্জাল বলি।
নিজেদের দিকে তাকাইনা যে, আমরা কি করছি? এই দেশের জন্য, দ্বীনের জন্য আমাদের ডেডিকেশন ১৫ বছরে কি ছিলো আর এখনই বা কি আছে?
জবাবদিহি শুধু ইউনুস স্যারের হবে না, আমাদের মতোন অধম, অকৃতজ্ঞ, নালায়েকদেরও হবে। তবে, ওই মুনাফেকদের বিচার আগে হবে যারা ইনসাফের সংগ্রামে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলো।