ঢাকা ১১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন আমি স্যামসাং ব্যবহার করি, স্ক্রিনশট গেছে আইফোনের : জনপ্রশাসন সচিব উন্নয়নের ভ্রান্ত ধারণা: ঋণে ডুবে থাকা দেশ টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম আমার টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নেই, ৫ কোটি হলেই চলবে এক দিনেই হাওয়া ৮ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন অবশেষে দেখা মিলল আসাদুজ্জামান কামালের ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ কারাগারে কেমন আছেন ‘ভিআইপি’ বন্দীরা একটি ফোনকল যেভাবে বদলে দিয়েছে ড. ইউনূসের জীবনের গতিপথ ড. ইউনুসের Three Zeros থিয়োরি বর্তমান উপদেষ্টাদের সঙ্গে নতুন চার-পাঁচজন মুখ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকটি জাতীয় দিবস বাতিল করতে পারে সরকার সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ গায়েব: উপদেষ্টা “প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস: বাংলার গর্ব, বৈশ্বিক সম্প্রীতির প্রতীক” খেলোয়াড় সাকিবের নিরাপত্তা আছে, ফ্যাসিস্ট সাকিবের ক্ষেত্রে অবান্তর: ক্রীড়া উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে কী অর্জন করলেন? জাতিসংঘে তিন-শুন্যের ধারণা দিলেন ড. ইউনুস যন্ত্রণার নাম ব্যাটারি রিকশা তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে— ড. ইউনূস

মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন নারীরা

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৪:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২ ১৯ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খাগড়াছড়ির সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হ্যাপি চাকমাকে মাসে কম করে হলেও ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিটর করতে যেতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে অবস্থিত, তার কোনো কোনো এলাকায় পানি নেই। কোনো কোনো জায়গায় শৌচাগার নেই। পাহাড়ি রাস্তা তো আছেই। গত আট বছরের মধ্যে তিন বছর আগেও হ্যাপি চাকমা মাসিকের দিনগুলোতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতেন। স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করার পরও কাপড়ে রক্তের দাগ লেগে গেল কি না, সারা দিনের মধ্যে এই প্যাড পাল্টাতে পারবেন কি না, পাল্টালে তা কোথায় ফেলবেন ইত্যাদি ভাবনা মাথা থেকে দূর করতে পারতেন না। তবে তিন বছর ধরে শরীরের সঙ্গে মানানসই সিলিকনের মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করে তিনি মাসিকের সময়টা নিশ্চিন্ত থাকছেন।

শুধু হ্যাপি চাকমা নন, বর্তমানে শহুরে, শিক্ষিত এবং সচেতন নারীরা স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পুনের চেয়ে কাপ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে সংখ্যাটা এখনো কম। অনেকের মধ্যে যোনিপথে কাপ ঢুকিয়ে ব্যবহারে ভয়ও কাজ করে। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে, এটা যদি যোনিপথ দিয়ে শরীরের মধ্যে ঢুকে যায় তখন কী হবে।

তবে যে নারীরা কয়েক বছর ধরে এই কাপ ব্যবহার করছেন তাঁরা বলছেন, শুরুতে দুই থেকে তিন মাস এটি ব্যবহারে অস্বস্তি কাজ করে। তখন কাপ ব্যবহারের পাশাপাশি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হতে পারে। শুরুতে ঠিকমতো অনেকেই এটি পরতে পারেন না। তবে একবার কেউ ব্যবহার করলে তিনি আর সহজে স্যানিটারি প্যাড বা অন্য কোনো কিছুতে ফেরত যাচ্ছেন না। বিশেষ করে খেলোয়াড়, সাইক্লিং করা নারী বা যে নারীদের বাইরে বিরূপ পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে তাঁরা বলছেন, কাপ ব্যবহারে তাঁদের মাসিক নিয়ে আর কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। শৌচাগার ব্যবহার করার সময়ও কাপ খুলতে হচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করা, সাঁতার কাটার সময়ও কাপ কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে না।

বাংলাদেশে এখনো যে নারীরা কাপ ব্যবহার করছেন, তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং ইউটিউব থেকে জেনে ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ অন্য নারীদের সুবিধার জন্য ব্যক্তিগতভাবে ভারত, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কাপগুলো এনে ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করছেন। তবে এর মধ্যে অনেকে নিম্নমানের বা অনুমোদিত সংস্থার অনুমোদন নেই, এমন কাপও বিক্রি করছেন। ফলে নারীরা ব্যবহার করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকছে। তাই কাপ ব্যবহারকারী নারী এবং এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করা চিকিৎসকেরা বলছেন, বিদেশ থেকে যেসব কাপ দেশে এনে বিক্রি করা হচ্ছে, তার গুণগতমান যাচাইয়ের একটি ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

ফেসবুকে মেন্সট্রুয়াল কাপ বাই মাম্বল গ্রুপ পরিচালনা করছেন উন্নয়নকর্মী নাহিদ আখতার দীপা। প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে তিনি মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে কথা বলছেন
ফেসবুকে মেন্সট্রুয়াল কাপ বাই মাম্বল গ্রুপ পরিচালনা করছেন উন্নয়নকর্মী নাহিদ আখতার দীপা। প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে তিনি মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে কথা বলছেনছবি: দীপু মালাকার
খাগড়াছড়ির হ্যাপি চাকমা বলছিলেন, তিনি অনলাইন থেকে প্রথম যে কাপটি কিনেছিলেন, তার মান ভালো ছিল না। ছোট একটি পার্সের মধ্যে কাপটি দিয়েছিল। দেখেই তা আর ব্যবহার করতে ইচ্ছে করেনি। তবে পরে যেটি কেনেন, তা তাঁর মনমতো হয়। একেকটি কাপের যেহেতু দামটা বেশ বেশি তাই কাপ কিনে কেউ ঠকে গেলে তা গায়ে লাগে। আর স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই।

হ্যাপি চাকমা নিজে কাপ ব্যবহারের পর ভালো লাগায় তিনি তাঁর স্বজন ও পরিচিতজনদের জন্যও মোট পাঁচটি কাপ কিনেছেন বলে জানালেন। এর মধ্যে তাঁর অবিবাহিত ছোট বোনও আছেন।

দাঁতের চিকিৎসক শামীমা ইসলাম দুই বছর ধরে কাপ ব্যবহার করছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর দুই অবিবাহিত ননদও কাপ ব্যবহার করছেন। কোনো গবেষণা বা প্রবন্ধে কাপ ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে, তা এখন পর্যন্ত তাঁর নজরে আসেনি বলেও জানালেন।
স্পেকটার্ম অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নেসাও দুই বছরের বেশি সময় ধরে কাপ ব্যবহার করছেন। বললেন, এখন মাসিক হলেও কাপ ব্যবহারের কারণে মাসিকের কথাই মনে থাকে না। আর নারীদের অনেকে নিজের শরীর সম্পর্কেও তেমন কিছু জানেন না। তাই ভাবেন যোনিপথের ভেতরে কাপ ঢোকানোর পর তা শরীরের মধ্যে ঢুকে যাবে। কিন্তু কাপটা ভেতরে ঢোকার তো কোনো পথই নেই।

সাইক্লিং করেন জেবুন নেসা। তিনি জানালেন, মাসিক শেষ হলে কাপ ব্যবহারের পর গরম পানিতে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ফুটিয়ে তা শুকিয়ে রেখে দিতে হয়। তবে তিনি একবার গরম পানিতে ফুটতে দিয়ে ভুলে গিয়েছিলেন, ফলে কাপটি পুড়ে যায়। তাই আবার নতুন করে কিনতে হয়।

নিরাপদ মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন নাহিদ আখতার দীপা। তিনি ফেসবুকে মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ বাই মাম্বল নামের একটি গ্রুপ পরিচালনা করছেন। এতে ১৫ হাজার সদস্য। নাহিদ নিজে কাপ ব্যবহারের পর এই গ্রুপের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে ভারত এবং ডেনমার্ক থেকে কাপ এনে বিক্রি করছেন। বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকার মধ্যে (এফডিএ অনুমোদিত) এই কাপগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে প্রায় ছয় হাজার নারী এই কাপ কিনে ব্যবহার করছেন বলে জানালেন। এ পর্যন্ত মাত্র ছয়জন কাপ ব্যবহারে কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। নাহিদ নিজ উদ্যোগে বাংলায় একটি ম্যানুয়াল গাইডলাইন তৈরি করেছেন।

আফ্রিকায় নারীরা এই কাপ ব্যবহার করছেন। সন্তানের জন্মের আট মাস পর যখন মাসিক শুরু হয় এবং প্রচণ্ড রক্ত যাচ্ছিল তখনই নাহিদ দীপা কীভাবে এই সময় একটু স্বস্তি পেতে পারেন, তা খোঁজা শুরু করে এই কাপের কথা জানতে পারেন।

নাহিদ জানালেন, বিশ্বের অন্যতম মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট ২০১৯ সালে উন্নত, অনুন্নতসহ ২০টির বেশি দেশের ৩ হাজার ৩১৯ জন নারী ও কিশোরীর কাপ ব্যবহার নিয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতে ৪৩টি গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এ নিবন্ধে বলা হয়েছে, নারীরা কাপ ব্যবহার শুরুর পর তাঁরা তা নিয়মিত ব্যবহার করছেন। নাহিদও জানালেন, এখন পর্যন্ত কাপ ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে তেমন কিছু তাঁর নজরে আসেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন নারীরা

আপডেট সময় : ০৭:৩৪:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২

খাগড়াছড়ির সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হ্যাপি চাকমাকে মাসে কম করে হলেও ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিটর করতে যেতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে অবস্থিত, তার কোনো কোনো এলাকায় পানি নেই। কোনো কোনো জায়গায় শৌচাগার নেই। পাহাড়ি রাস্তা তো আছেই। গত আট বছরের মধ্যে তিন বছর আগেও হ্যাপি চাকমা মাসিকের দিনগুলোতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতেন। স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করার পরও কাপড়ে রক্তের দাগ লেগে গেল কি না, সারা দিনের মধ্যে এই প্যাড পাল্টাতে পারবেন কি না, পাল্টালে তা কোথায় ফেলবেন ইত্যাদি ভাবনা মাথা থেকে দূর করতে পারতেন না। তবে তিন বছর ধরে শরীরের সঙ্গে মানানসই সিলিকনের মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করে তিনি মাসিকের সময়টা নিশ্চিন্ত থাকছেন।

শুধু হ্যাপি চাকমা নন, বর্তমানে শহুরে, শিক্ষিত এবং সচেতন নারীরা স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পুনের চেয়ে কাপ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে সংখ্যাটা এখনো কম। অনেকের মধ্যে যোনিপথে কাপ ঢুকিয়ে ব্যবহারে ভয়ও কাজ করে। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে, এটা যদি যোনিপথ দিয়ে শরীরের মধ্যে ঢুকে যায় তখন কী হবে।

তবে যে নারীরা কয়েক বছর ধরে এই কাপ ব্যবহার করছেন তাঁরা বলছেন, শুরুতে দুই থেকে তিন মাস এটি ব্যবহারে অস্বস্তি কাজ করে। তখন কাপ ব্যবহারের পাশাপাশি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হতে পারে। শুরুতে ঠিকমতো অনেকেই এটি পরতে পারেন না। তবে একবার কেউ ব্যবহার করলে তিনি আর সহজে স্যানিটারি প্যাড বা অন্য কোনো কিছুতে ফেরত যাচ্ছেন না। বিশেষ করে খেলোয়াড়, সাইক্লিং করা নারী বা যে নারীদের বাইরে বিরূপ পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে তাঁরা বলছেন, কাপ ব্যবহারে তাঁদের মাসিক নিয়ে আর কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। শৌচাগার ব্যবহার করার সময়ও কাপ খুলতে হচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করা, সাঁতার কাটার সময়ও কাপ কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে না।

বাংলাদেশে এখনো যে নারীরা কাপ ব্যবহার করছেন, তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং ইউটিউব থেকে জেনে ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ অন্য নারীদের সুবিধার জন্য ব্যক্তিগতভাবে ভারত, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কাপগুলো এনে ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করছেন। তবে এর মধ্যে অনেকে নিম্নমানের বা অনুমোদিত সংস্থার অনুমোদন নেই, এমন কাপও বিক্রি করছেন। ফলে নারীরা ব্যবহার করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকছে। তাই কাপ ব্যবহারকারী নারী এবং এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করা চিকিৎসকেরা বলছেন, বিদেশ থেকে যেসব কাপ দেশে এনে বিক্রি করা হচ্ছে, তার গুণগতমান যাচাইয়ের একটি ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

ফেসবুকে মেন্সট্রুয়াল কাপ বাই মাম্বল গ্রুপ পরিচালনা করছেন উন্নয়নকর্মী নাহিদ আখতার দীপা। প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে তিনি মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে কথা বলছেন
ফেসবুকে মেন্সট্রুয়াল কাপ বাই মাম্বল গ্রুপ পরিচালনা করছেন উন্নয়নকর্মী নাহিদ আখতার দীপা। প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে তিনি মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে কথা বলছেনছবি: দীপু মালাকার
খাগড়াছড়ির হ্যাপি চাকমা বলছিলেন, তিনি অনলাইন থেকে প্রথম যে কাপটি কিনেছিলেন, তার মান ভালো ছিল না। ছোট একটি পার্সের মধ্যে কাপটি দিয়েছিল। দেখেই তা আর ব্যবহার করতে ইচ্ছে করেনি। তবে পরে যেটি কেনেন, তা তাঁর মনমতো হয়। একেকটি কাপের যেহেতু দামটা বেশ বেশি তাই কাপ কিনে কেউ ঠকে গেলে তা গায়ে লাগে। আর স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই।

হ্যাপি চাকমা নিজে কাপ ব্যবহারের পর ভালো লাগায় তিনি তাঁর স্বজন ও পরিচিতজনদের জন্যও মোট পাঁচটি কাপ কিনেছেন বলে জানালেন। এর মধ্যে তাঁর অবিবাহিত ছোট বোনও আছেন।

দাঁতের চিকিৎসক শামীমা ইসলাম দুই বছর ধরে কাপ ব্যবহার করছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর দুই অবিবাহিত ননদও কাপ ব্যবহার করছেন। কোনো গবেষণা বা প্রবন্ধে কাপ ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে, তা এখন পর্যন্ত তাঁর নজরে আসেনি বলেও জানালেন।
স্পেকটার্ম অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নেসাও দুই বছরের বেশি সময় ধরে কাপ ব্যবহার করছেন। বললেন, এখন মাসিক হলেও কাপ ব্যবহারের কারণে মাসিকের কথাই মনে থাকে না। আর নারীদের অনেকে নিজের শরীর সম্পর্কেও তেমন কিছু জানেন না। তাই ভাবেন যোনিপথের ভেতরে কাপ ঢোকানোর পর তা শরীরের মধ্যে ঢুকে যাবে। কিন্তু কাপটা ভেতরে ঢোকার তো কোনো পথই নেই।

সাইক্লিং করেন জেবুন নেসা। তিনি জানালেন, মাসিক শেষ হলে কাপ ব্যবহারের পর গরম পানিতে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ফুটিয়ে তা শুকিয়ে রেখে দিতে হয়। তবে তিনি একবার গরম পানিতে ফুটতে দিয়ে ভুলে গিয়েছিলেন, ফলে কাপটি পুড়ে যায়। তাই আবার নতুন করে কিনতে হয়।

নিরাপদ মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন নাহিদ আখতার দীপা। তিনি ফেসবুকে মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ বাই মাম্বল নামের একটি গ্রুপ পরিচালনা করছেন। এতে ১৫ হাজার সদস্য। নাহিদ নিজে কাপ ব্যবহারের পর এই গ্রুপের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে ভারত এবং ডেনমার্ক থেকে কাপ এনে বিক্রি করছেন। বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকার মধ্যে (এফডিএ অনুমোদিত) এই কাপগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে প্রায় ছয় হাজার নারী এই কাপ কিনে ব্যবহার করছেন বলে জানালেন। এ পর্যন্ত মাত্র ছয়জন কাপ ব্যবহারে কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। নাহিদ নিজ উদ্যোগে বাংলায় একটি ম্যানুয়াল গাইডলাইন তৈরি করেছেন।

আফ্রিকায় নারীরা এই কাপ ব্যবহার করছেন। সন্তানের জন্মের আট মাস পর যখন মাসিক শুরু হয় এবং প্রচণ্ড রক্ত যাচ্ছিল তখনই নাহিদ দীপা কীভাবে এই সময় একটু স্বস্তি পেতে পারেন, তা খোঁজা শুরু করে এই কাপের কথা জানতে পারেন।

নাহিদ জানালেন, বিশ্বের অন্যতম মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট ২০১৯ সালে উন্নত, অনুন্নতসহ ২০টির বেশি দেশের ৩ হাজার ৩১৯ জন নারী ও কিশোরীর কাপ ব্যবহার নিয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতে ৪৩টি গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এ নিবন্ধে বলা হয়েছে, নারীরা কাপ ব্যবহার শুরুর পর তাঁরা তা নিয়মিত ব্যবহার করছেন। নাহিদও জানালেন, এখন পর্যন্ত কাপ ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে তেমন কিছু তাঁর নজরে আসেনি।