ঢাকা ০২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

শেখ হাসিনার সরব হওয়াকে যেভাবে দেখছে সরকার, বিএনপি ও জামায়াত

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৬:০১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 76
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাঁই অগাস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে অবস্থান নিয়েছেন শেখ হাসিনা
পাঁচই অগাস্ট পতনের পর সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা।
একইসাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবেলা করে দলীয় কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনাও দিচ্ছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় সভাপতির ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান সংকটে নেতা-কর্মীদের কী করা দরকার তা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন তারা।
একইসাথে ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ঘিরে তাদের কর্মসূচি রয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে, বিএনপির দাবি, শেখ হাসিনা একটা ‘পলিটিক্যাল স্পেস’ পাওয়ার চেষ্টা করছে। এসব বক্তব্যে তার রাজনীতিতে ফেরা না ফেরার কিছু নেই।
পলাতক আসামি হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রিত থেকে তার জনসম্মুখে আসার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনসভায় শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়, অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিরোধী কথা বলে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। যা দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য সহায়ক না।

দলের ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
রোববার, আটই অগাস্ট, লন্ডনে আরেকটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
ভার্চুয়ালি দেয়া এ বক্তব্যে শেখ হাসিনা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
১৫ই জুলাই থেকে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোর পূর্ণ তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের বিচার দাবি করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাইদ ও মুগ্ধসহ সব হত্যাকাণ্ডের জন্য আন্দোলনের মাস্টার-মাইন্ডরা দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন।
ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত সংঘটিত জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না- গত ১৪ অক্টোবর এমন তথ্য জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, যাদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে এই দায়মুক্তি দেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। এটা দিয়ে প্রমাণ হয়েছে তারা অপরাধী। যারা অপরাধ করেছে তাদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বাংলাদেশের জনগণই তাদের বিচার করবে।
আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন শেখ হাসিনার বক্তব্যে দলের নেতা-কর্মীরা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে, সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করা ও যোগাযোগ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।
“দেশের এই যে সংকট, সেই সংকটে দেশের মানুষ, দলের নেতা-কর্মীদের কী করা দরকার, কী হওয়া উচিত সেই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। অবশ্যই দেশের মানুষ, দলের নেতা-কর্মীরা তার এই কথায় উজ্জীবিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতি তারা অ্যানালাইসিস করতে পারবে এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে,” বলেন মি. চৌধুরী।
প্রতিটি দলেরই নিজস্ব পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল থাকে জানিয়ে মি. চৌধুরী বলেন, “আমাদের দলের কর্মকাণ্ড চলমান আছে। এটা থেমে নাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ভবিষ্যতে কী করতে হবে না হবে তার রূপরেখা আমাদের আছে। আমরা সেইভাবে কাজ করতেছি।”
বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনাকে গত পাঁচই অগাস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে
“যেহেতু সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার অর্থ হলো মুক্তিযুদ্ধের ধারাকে নিষিদ্ধ করতে চায়। এর মধ্যেও আমরা কাজ করতেছি,” যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এই যে জালিম দখলদার জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া। অসভ্যতার একটা সমাজ তৈরি করা হইছে, যেই সমাজে কোনো মানুষের সম্মান নাই সে সমাজ থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে একটা সভ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া। সেই জায়গাটায় আমরা কাজ করতেছি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।”
দেশকে একটা অন্ধকার আদিম যুগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মন্তব্য করে মি. চৌধুরী বলেন, “এর দায়-দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। বিচার তো তাদের হবে। যারা এ কাজটা করছে ভবিষ্যতে তাদেরই বিচার হবে। এ দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে।”
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে বলে জানান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবে। ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষেও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি আছে।”

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মি. চৌধুরী বলেন, “একজন পলাতক আসামি রাষ্ট্রকে একটা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে আরেকটা রাষ্ট্রে গিয়ে সেখান থেকে তার রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে এটা তো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। এবং এটা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে না।”
পলাতক আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার যেখানে লুকিয়ে থাকার কথা সেখানে তিনি খোলাখুলিভাবে রাজনীতি করছেন বলে মন্তব্য করেন মি. চৌধুরী।
একের পর এক সমাবেশ যোগ দিয়ে ভার্চুয়ালি শেখ হাসিনার বক্তব্যে রাজনীতিতে ফেরা না ফেরার কোনো প্রশ্ন এখন আসছে না বলে জানান এই বিএনপি নেতা।
“তার রাজনীতিতে ফেরা না ফেরার প্রশ্ন এখন আসছে না। আগে তার যে কর্মকাণ্ড সেই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সেই বিচারের সম্মুখীন হওয়ার পরে আগামীতে দেখা যাবে সে ফিরতে পারবে কি পারবে না,” বলেন মি. চৌধুরী।
ভারতে শেখ হাসিনা যেভাবে আছেন সেভাবে তার জনসম্মুখে আসার সুযোগ নেই বলে জানান এই বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
“যেই ব্যক্তিটির পাবলিক এপিয়ারেন্সের কোনো সুযোগ নাই, তার ভিজিবিলিটি থাকার কোনো সুযোগ নাই। সে গিয়েছে ওখানে আশ্রয় নিয়েছে, সে আশ্রিত হিসেবে থেকে তার যে পাবলিক ভিজিবিলিটি, পাবলিক এপিয়ারেন্স এটা তো খুব ডেঞ্জারাস বিষয়।”
শেখ হাসিনা তার এসব বক্তব্য দিয়ে ‘পলিটিক্যাল স্পেস’ পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন মি. চৌধুরী।
“কেন না সে একটা পলাতক আসামি, সে পলিটিক্যাল স্পেস খোলার চেষ্টা করতেছে একটা। এবং সেই স্পেসটা সে ভারতে বসে পাচ্ছে, পাওয়ার সুযোগ খুঁজতেছে এবং সে পাচ্ছে আপাতত। এটা তো দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ভালো কিছু হতে পারে না।”
ফলে দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ভারতকে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা।
এদিকে দেশের বাইরে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ।
“যিনি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন এবং গণ আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন তার বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য রাখার কোনো নৈতিক এবং আইনগত অধিকার নেই,” বলেন মি. আকন্দ।
শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ অন্যায়, অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
একইসাথে ভার্চুয়ালি দেয়া শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন মি. আকন্দ।
অন্তর্বর্তী সরকার যা বলছে
অন্তর্বতী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী কথা, মিথ্যা অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সহায়ক হচ্ছে না।
জুলাইয়ে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে শেখ হাসিনা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই সেসব হত্যাকাণ্ডের দায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপর চাপানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান মি. হোসেন।
“এটা অত্যন্ত একটা জঘন্য কাজ তিনি করছেন। এটা তিনি নির্দ্বিধায় কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়া করতে পারছেন। আমরা চাইব যে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের স্বার্থে তাকে রিস্ট্রেইন করা প্রয়োজন এবং সেটা ভারত সরকারকেই করতে হবে,” বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শেখ হাসিনার সরব হওয়াকে যেভাবে দেখছে সরকার, বিএনপি ও জামায়াত

আপডেট সময় : ০৬:০১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

পাঁই অগাস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে অবস্থান নিয়েছেন শেখ হাসিনা
পাঁচই অগাস্ট পতনের পর সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা।
একইসাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবেলা করে দলীয় কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনাও দিচ্ছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় সভাপতির ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান সংকটে নেতা-কর্মীদের কী করা দরকার তা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন তারা।
একইসাথে ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ঘিরে তাদের কর্মসূচি রয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে, বিএনপির দাবি, শেখ হাসিনা একটা ‘পলিটিক্যাল স্পেস’ পাওয়ার চেষ্টা করছে। এসব বক্তব্যে তার রাজনীতিতে ফেরা না ফেরার কিছু নেই।
পলাতক আসামি হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রিত থেকে তার জনসম্মুখে আসার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনসভায় শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়, অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিরোধী কথা বলে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। যা দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য সহায়ক না।

দলের ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
রোববার, আটই অগাস্ট, লন্ডনে আরেকটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
ভার্চুয়ালি দেয়া এ বক্তব্যে শেখ হাসিনা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
১৫ই জুলাই থেকে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোর পূর্ণ তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের বিচার দাবি করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাইদ ও মুগ্ধসহ সব হত্যাকাণ্ডের জন্য আন্দোলনের মাস্টার-মাইন্ডরা দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন।
ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত সংঘটিত জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না- গত ১৪ অক্টোবর এমন তথ্য জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, যাদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে এই দায়মুক্তি দেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। এটা দিয়ে প্রমাণ হয়েছে তারা অপরাধী। যারা অপরাধ করেছে তাদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বাংলাদেশের জনগণই তাদের বিচার করবে।
আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন শেখ হাসিনার বক্তব্যে দলের নেতা-কর্মীরা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে, সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করা ও যোগাযোগ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।
“দেশের এই যে সংকট, সেই সংকটে দেশের মানুষ, দলের নেতা-কর্মীদের কী করা দরকার, কী হওয়া উচিত সেই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। অবশ্যই দেশের মানুষ, দলের নেতা-কর্মীরা তার এই কথায় উজ্জীবিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতি তারা অ্যানালাইসিস করতে পারবে এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে,” বলেন মি. চৌধুরী।
প্রতিটি দলেরই নিজস্ব পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল থাকে জানিয়ে মি. চৌধুরী বলেন, “আমাদের দলের কর্মকাণ্ড চলমান আছে। এটা থেমে নাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ভবিষ্যতে কী করতে হবে না হবে তার রূপরেখা আমাদের আছে। আমরা সেইভাবে কাজ করতেছি।”
বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনাকে গত পাঁচই অগাস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে
“যেহেতু সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার অর্থ হলো মুক্তিযুদ্ধের ধারাকে নিষিদ্ধ করতে চায়। এর মধ্যেও আমরা কাজ করতেছি,” যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এই যে জালিম দখলদার জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া। অসভ্যতার একটা সমাজ তৈরি করা হইছে, যেই সমাজে কোনো মানুষের সম্মান নাই সে সমাজ থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে একটা সভ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া। সেই জায়গাটায় আমরা কাজ করতেছি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।”
দেশকে একটা অন্ধকার আদিম যুগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মন্তব্য করে মি. চৌধুরী বলেন, “এর দায়-দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। বিচার তো তাদের হবে। যারা এ কাজটা করছে ভবিষ্যতে তাদেরই বিচার হবে। এ দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে।”
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে বলে জানান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবে। ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষেও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি আছে।”

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মি. চৌধুরী বলেন, “একজন পলাতক আসামি রাষ্ট্রকে একটা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে আরেকটা রাষ্ট্রে গিয়ে সেখান থেকে তার রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে এটা তো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। এবং এটা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে না।”
পলাতক আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার যেখানে লুকিয়ে থাকার কথা সেখানে তিনি খোলাখুলিভাবে রাজনীতি করছেন বলে মন্তব্য করেন মি. চৌধুরী।
একের পর এক সমাবেশ যোগ দিয়ে ভার্চুয়ালি শেখ হাসিনার বক্তব্যে রাজনীতিতে ফেরা না ফেরার কোনো প্রশ্ন এখন আসছে না বলে জানান এই বিএনপি নেতা।
“তার রাজনীতিতে ফেরা না ফেরার প্রশ্ন এখন আসছে না। আগে তার যে কর্মকাণ্ড সেই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সেই বিচারের সম্মুখীন হওয়ার পরে আগামীতে দেখা যাবে সে ফিরতে পারবে কি পারবে না,” বলেন মি. চৌধুরী।
ভারতে শেখ হাসিনা যেভাবে আছেন সেভাবে তার জনসম্মুখে আসার সুযোগ নেই বলে জানান এই বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
“যেই ব্যক্তিটির পাবলিক এপিয়ারেন্সের কোনো সুযোগ নাই, তার ভিজিবিলিটি থাকার কোনো সুযোগ নাই। সে গিয়েছে ওখানে আশ্রয় নিয়েছে, সে আশ্রিত হিসেবে থেকে তার যে পাবলিক ভিজিবিলিটি, পাবলিক এপিয়ারেন্স এটা তো খুব ডেঞ্জারাস বিষয়।”
শেখ হাসিনা তার এসব বক্তব্য দিয়ে ‘পলিটিক্যাল স্পেস’ পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন মি. চৌধুরী।
“কেন না সে একটা পলাতক আসামি, সে পলিটিক্যাল স্পেস খোলার চেষ্টা করতেছে একটা। এবং সেই স্পেসটা সে ভারতে বসে পাচ্ছে, পাওয়ার সুযোগ খুঁজতেছে এবং সে পাচ্ছে আপাতত। এটা তো দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ভালো কিছু হতে পারে না।”
ফলে দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ভারতকে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা।
এদিকে দেশের বাইরে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ।
“যিনি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন এবং গণ আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন তার বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য রাখার কোনো নৈতিক এবং আইনগত অধিকার নেই,” বলেন মি. আকন্দ।
শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ অন্যায়, অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
একইসাথে ভার্চুয়ালি দেয়া শেখ হাসিনার এসব বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন মি. আকন্দ।
অন্তর্বর্তী সরকার যা বলছে
অন্তর্বতী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী কথা, মিথ্যা অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সহায়ক হচ্ছে না।
জুলাইয়ে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে শেখ হাসিনা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই সেসব হত্যাকাণ্ডের দায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপর চাপানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান মি. হোসেন।
“এটা অত্যন্ত একটা জঘন্য কাজ তিনি করছেন। এটা তিনি নির্দ্বিধায় কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়া করতে পারছেন। আমরা চাইব যে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের স্বার্থে তাকে রিস্ট্রেইন করা প্রয়োজন এবং সেটা ভারত সরকারকেই করতে হবে,” বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।