ঢাকা ০২:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

সাবিনা খাতুনের বিকল্প কি তৈরী করেছি আমরা?

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / 178
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাবিনা খাতুন কি ফুরিয়ে গেছে?

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও সাফ গেমস মিলিয়ে ২০১০-২০১৯ টাইম পিরিয়ডে মোট ৮টি আসরের ব্যাক্তিগত অর্জনের তালিকায় দেখবেন কেবল ভারতীয় ও নেপালীদের দাপট। শুধু একটি জায়গা বাদে।

২০১৪ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিল সাবিনা খাতুন। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে নেপালের বিপক্ষে রেগুলেশন টাইমের পেনাল্টিতে একমাত্র গোল হজমে হেরে বাদ পড়েছিল, কিন্তু ৪ ম্যাচে সাবিনার খেলা শুধুই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল। পুরো দলকে একাই টানছিল সে।

শুধু সেই আসরই না। সাবিনা এক যুগের ওপর প্রায় একার কাধে বহন করে এনেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলকে।

২০১০ এর জানুয়ারিতে দেশের মাঠে সাফ গেমস দিয়ে সিনিয়র আন্তর্জাতিক ফুটবলে পথচলা শুরু করেছিল নারীরা৷ সেই আসরের নানা ইভেন্ট ও পুরুষ অ২৩ দলের দাপটের মাঝেও নারী দলে মনোযোগ না দিয়ে থাকতে পারিনি। অংম্রাচিং মারমা ও সুইনু প্রু মারমা ইমেডিয়েটলি দলের তারকা খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিল। তাদের পাশাপাশি সাবিনার খেলা আলাদাভাবে নজর কেড়েছিল।

তার খেলায় শুরু থেকেই পরিপক্কতা ছিল। গোছানো খেলা খেলতে গিয়ে প্রায় ক্ষেত্রেই বিপক্ষ দলের ফিজিক্যালিটি ও অভিজ্ঞতার কাছে আটকে গেলেও বোঝা যাচ্ছিল, সুপারস্টার হবার সবরকম কোয়ালিটিই ছিল সাবিনার। সেই আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাবিনার একমাত্র গোলে পাকিস্তান কে হারিয়ে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করে নারী দল। সেই বছরই কয়েক মাস পর এএফসি অ১৯ বাছাইতে জর্ডানের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ডিফেন্স স্প্লিটিং রান নিয়ে থ্রু পাস ধরে ওয়ান টু ওয়ান থেকে গোল করেছিল সাবিনা।

ভারতের বালা দেবি বা নেপালের সাবিত্রা ভান্ডারি সাম্বা কে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা মহিলা ফুটবলার বলা হয়েছে এতকাল। কিন্তু আমার নজরে, সাবিনা সেরাদের সেরা। শুধু আমি বলছি বলে বা আমি বাংলাদেশি বলে বায়াজড এরকম কিছু না, সাবিনা সত্যিই সেরাদের সেরা। বালা দেবি বা সাম্বাদের মত ফিজিক্যাল বিস্ট না, কিন্তু ট্যাকনিক্যাল কোয়ালিটিতে সাবিনা অদ্বিতীয়।

সাবিনার খেলার গতি কোভিডের পর থেকে কমছে বলে মনে হচ্ছিলো। ২০২২ সাফে কোচ ছোটন তাকে নাম্বার নাইন থেকে শিফট করে আনলো সেন্ট্রাল এটাকিং মিড পজিশনে নাম্বার টেন রোলে। মিনিমাম রানিং করলেও সুপেরিওর ট্যাকনিক্যাল কোয়ালিটিতে ম্যাক্সিমাম আউটপুট দেয় সাবিনা। বক্সে তার লেট রানগুলো ছিল দেখার মত। সেই আসরে বাংলাদেশের এমন কোন গোল ছিল না যেখানে সাবিনার টাচ ছিল না, তা অফ দ্য বল রানিং হয়ে হলেও। ট্রুলি মাস্টারক্লাস ছিল সাবিনা পুরো আসর জুড়ে।

এবং সাফের ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একই আসর থেকে সেরা খেলোয়াড় ও সেরা স্কোরার এর পুরষ্কার জিতে নিয়েছিল সাবিনা ২০২২ এ। সাফের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একাধিকবার টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারও জিতেছে এই সাবিনা।

এবারের আসরে দেখলাম, সাবিনার রোল আগের মতই ছিল, কিন্তু ইম্প্যাক্ট রাখবার মত মিনিমাম রানিংটাও সে করতে পারেনি। বয়স মাত্র ৩১ পার হলেও, ফিটনেস বেশ কমে গেছে৷ ফাইনালে বডি একটু টার্ন করলেই স্পেস বেড়িয়ে পড়ে, সেখানেও সাবিনা তা পারছিল না। সে আগের টাচে থাকলে দলটাকেও নারভাসনেস থেকে দ্রুত বের করে আনতে পারতো।

সাবিনার ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বকাপ-এশিয়া কাপ বাছাই, অলিম্পিক বাছাই ও সাফ সহ নেক্সট আরও এক সাইকেলে তাকে খেলালে আমার আপত্তি নেই। তবে তাকে প্রতি ম্যাচেই একাদশে থাকতে হবে বা প্রতি ম্যাচেই ৯০ মিনিট খেলতে হবে তা জরুরি না।

একটা ছবি দেখেছিলাম কয়েক বছর আগে, কমলাপুর স্টেডিয়ামে একসাথে অনুশীলন শেষে সাবিনার সাথে বসে আছে রীতু সহ অ১৭ দলের কয়েকজন খেলোয়াড়েরা, সবগুলা একদম পিচ্চিপিচ্চি। ছবিটা পেলাম না আর কোথাও। টাইমলাইন নিয়ে ইমোশনাল করে দেবার প্রতি একটা ফটো ছিল বটে।

সাবিনা ও তারা একে অপরের প্রতি ভালো ইনসাফ করেছে যা থেকে দল লাভবান হয়েছে৷ সাবিনা এত কিছু করেছে দলের জন্য, পুরো দল মিলে তাকে ক্যারি করতে পারলে অবশ্যই করবে। কিন্তু ক্যারি করেও যদি ভার বেশি অনুভূত হয় যা দলের খেলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তাহলে দিন শেষে দেশ ও দলের ভালোর চিন্তা করে সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সাবিনা খাতুনের বিকল্প কি তৈরী করেছি আমরা?

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

সাবিনা খাতুন কি ফুরিয়ে গেছে?

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও সাফ গেমস মিলিয়ে ২০১০-২০১৯ টাইম পিরিয়ডে মোট ৮টি আসরের ব্যাক্তিগত অর্জনের তালিকায় দেখবেন কেবল ভারতীয় ও নেপালীদের দাপট। শুধু একটি জায়গা বাদে।

২০১৪ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিল সাবিনা খাতুন। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে নেপালের বিপক্ষে রেগুলেশন টাইমের পেনাল্টিতে একমাত্র গোল হজমে হেরে বাদ পড়েছিল, কিন্তু ৪ ম্যাচে সাবিনার খেলা শুধুই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল। পুরো দলকে একাই টানছিল সে।

শুধু সেই আসরই না। সাবিনা এক যুগের ওপর প্রায় একার কাধে বহন করে এনেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলকে।

২০১০ এর জানুয়ারিতে দেশের মাঠে সাফ গেমস দিয়ে সিনিয়র আন্তর্জাতিক ফুটবলে পথচলা শুরু করেছিল নারীরা৷ সেই আসরের নানা ইভেন্ট ও পুরুষ অ২৩ দলের দাপটের মাঝেও নারী দলে মনোযোগ না দিয়ে থাকতে পারিনি। অংম্রাচিং মারমা ও সুইনু প্রু মারমা ইমেডিয়েটলি দলের তারকা খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিল। তাদের পাশাপাশি সাবিনার খেলা আলাদাভাবে নজর কেড়েছিল।

তার খেলায় শুরু থেকেই পরিপক্কতা ছিল। গোছানো খেলা খেলতে গিয়ে প্রায় ক্ষেত্রেই বিপক্ষ দলের ফিজিক্যালিটি ও অভিজ্ঞতার কাছে আটকে গেলেও বোঝা যাচ্ছিল, সুপারস্টার হবার সবরকম কোয়ালিটিই ছিল সাবিনার। সেই আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাবিনার একমাত্র গোলে পাকিস্তান কে হারিয়ে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করে নারী দল। সেই বছরই কয়েক মাস পর এএফসি অ১৯ বাছাইতে জর্ডানের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ডিফেন্স স্প্লিটিং রান নিয়ে থ্রু পাস ধরে ওয়ান টু ওয়ান থেকে গোল করেছিল সাবিনা।

ভারতের বালা দেবি বা নেপালের সাবিত্রা ভান্ডারি সাম্বা কে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা মহিলা ফুটবলার বলা হয়েছে এতকাল। কিন্তু আমার নজরে, সাবিনা সেরাদের সেরা। শুধু আমি বলছি বলে বা আমি বাংলাদেশি বলে বায়াজড এরকম কিছু না, সাবিনা সত্যিই সেরাদের সেরা। বালা দেবি বা সাম্বাদের মত ফিজিক্যাল বিস্ট না, কিন্তু ট্যাকনিক্যাল কোয়ালিটিতে সাবিনা অদ্বিতীয়।

সাবিনার খেলার গতি কোভিডের পর থেকে কমছে বলে মনে হচ্ছিলো। ২০২২ সাফে কোচ ছোটন তাকে নাম্বার নাইন থেকে শিফট করে আনলো সেন্ট্রাল এটাকিং মিড পজিশনে নাম্বার টেন রোলে। মিনিমাম রানিং করলেও সুপেরিওর ট্যাকনিক্যাল কোয়ালিটিতে ম্যাক্সিমাম আউটপুট দেয় সাবিনা। বক্সে তার লেট রানগুলো ছিল দেখার মত। সেই আসরে বাংলাদেশের এমন কোন গোল ছিল না যেখানে সাবিনার টাচ ছিল না, তা অফ দ্য বল রানিং হয়ে হলেও। ট্রুলি মাস্টারক্লাস ছিল সাবিনা পুরো আসর জুড়ে।

এবং সাফের ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একই আসর থেকে সেরা খেলোয়াড় ও সেরা স্কোরার এর পুরষ্কার জিতে নিয়েছিল সাবিনা ২০২২ এ। সাফের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে একাধিকবার টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারও জিতেছে এই সাবিনা।

এবারের আসরে দেখলাম, সাবিনার রোল আগের মতই ছিল, কিন্তু ইম্প্যাক্ট রাখবার মত মিনিমাম রানিংটাও সে করতে পারেনি। বয়স মাত্র ৩১ পার হলেও, ফিটনেস বেশ কমে গেছে৷ ফাইনালে বডি একটু টার্ন করলেই স্পেস বেড়িয়ে পড়ে, সেখানেও সাবিনা তা পারছিল না। সে আগের টাচে থাকলে দলটাকেও নারভাসনেস থেকে দ্রুত বের করে আনতে পারতো।

সাবিনার ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বকাপ-এশিয়া কাপ বাছাই, অলিম্পিক বাছাই ও সাফ সহ নেক্সট আরও এক সাইকেলে তাকে খেলালে আমার আপত্তি নেই। তবে তাকে প্রতি ম্যাচেই একাদশে থাকতে হবে বা প্রতি ম্যাচেই ৯০ মিনিট খেলতে হবে তা জরুরি না।

একটা ছবি দেখেছিলাম কয়েক বছর আগে, কমলাপুর স্টেডিয়ামে একসাথে অনুশীলন শেষে সাবিনার সাথে বসে আছে রীতু সহ অ১৭ দলের কয়েকজন খেলোয়াড়েরা, সবগুলা একদম পিচ্চিপিচ্চি। ছবিটা পেলাম না আর কোথাও। টাইমলাইন নিয়ে ইমোশনাল করে দেবার প্রতি একটা ফটো ছিল বটে।

সাবিনা ও তারা একে অপরের প্রতি ভালো ইনসাফ করেছে যা থেকে দল লাভবান হয়েছে৷ সাবিনা এত কিছু করেছে দলের জন্য, পুরো দল মিলে তাকে ক্যারি করতে পারলে অবশ্যই করবে। কিন্তু ক্যারি করেও যদি ভার বেশি অনুভূত হয় যা দলের খেলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তাহলে দিন শেষে দেশ ও দলের ভালোর চিন্তা করে সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।