ঢাকা ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ত্রাণের টাকা কেন ব্যাংকে রেখেছেন সমন্বয়করা? পুলিশ ও বিশেষজ্ঞদের ঢাকার যানজট নিরসনের উপায় খুঁজতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা শাহরিয়ার কবির গ্রেফতার তিতাস গ্যাস পরিচালনা পর্ষদ থেকে মতিউর রহমান চৌধুরীর নাম প্রত্যাহার ভারতের কাছে প্রায় ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন: ১০০ কোটির স্থলে খরচ হবে ১ কোটিরও কম! ‘শেখ হাসিনা আরেকটি দেশের মুখ্যমন্ত্রীও হতে চেয়েছিলেন’ ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিল সরকার স্বার্থ হাসিলে ভোলায় গ্যাস পাওয়ার কথা চেপে যান বিপু অভিজ্ঞতা নেই তবু বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার তিতাস গ্যাসের পরিচালক হলেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী যেভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিলো ‘চৌধুরী পরিবার’ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়াদের তালিকা হচ্ছে: ফারুক-ই-আজম অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের ‘ট্রমা’ কাটবে কী করে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক কিছুরই অদৃশ্য নীতিনির্ধারক ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয় বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের ড. ইউনূসের কূটনীতিতে বিস্মিত ভারত কেমন ছিল বাফুফেতে কাজী সালাহউদ্দিনের ১৬ বছর? অর্থ লোপাটে বাপ-বেটার মহারেকর্ড

স্বপ্ন, সাহস, সক্ষমতা

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ১০:৩৩:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুন ২০২২
  • / ৫০০৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আজ সেই স্বপ্ন পূরণের দিন, সাহস প্রমাণের দিন, সক্ষমতা প্রদর্শনের দিন। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে দুই দশক আগে একটি বৃহৎ সেতু নির্মাণের যে স্বপ্ন সূচিত হয়েছিল, আজ তা চূড়ান্ত হওয়ার দিন। বস্তুত এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বাণী প্রদানের মধ্য দিয়ে গোটা জাতির গর্বই প্রকাশ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এ উপলক্ষে যে বাণী প্রদান করেছেন, তাঁর এই বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য যে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন বিশ্বদরবারে দেশ ও জনগণকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যথার্থই বলেছেন যে, আজ বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন। দেশের বিশিষ্টজনসহ আপামর জনসাধারণ কীভাবে এই দিনের অপেক্ষায় ছিল, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমেও তা স্পষ্ট। কারণ বিষয়টি নিছক আনুষ্ঠানিকতার নয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের এই বৃহত্তম সেতু যানবাহন ও রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্পষ্টতই নতুন গতি আসবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হওয়ায় সমকাল পরিবারও আনন্দিত ও আপ্লুত।

পদ্মা সেতু একই সঙ্গে সাহসেরও নাম। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো যে, বিদেশিদের আর্থিক সহায়তা ছাড়াও এ ধরনের বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণের সদিচ্ছা ও সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। আমাদের মনে আছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাজিরা প্রান্তে নদীশাসন কাজ উদ্বোধনের পর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- ‘দেশে বড় কোনো কাজ করতে গেলেই বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হবে- এ মানসিকতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ বেরিয়ে এসেছে। আমি চেয়েছিলাম, আমরা পারি, আমরা তা দেখাব। আজ আমরা সেই দিনটিতে এসে পৌঁছেছি।’ আমাদের এটাও ভুলে যাওয়া চলবে না যে, পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটি দৃশ্যমান হলেও অদৃশ্য অথচ সবচেয়ে শক্তিশালী খুঁটিটির নাম শেখ হাসিনা। দুই দশক আগে ২০০১ সালের জুলাই মাসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই যদিও তাঁর প্রথম মেয়াদে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন; পরবর্তী সময় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচে এর নির্মাণকাজ বারংবার পিছিয়ে গেছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েও দেশীয় ও বিদেশি অনেক প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে দেখেছিলাম, বৃহৎ আন্তর্জাতিক অর্থকরী সংস্থাগুলো নানা খোঁড়া অজুহাতে ও অলীক অভিযোগে কীভাবে প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়োকচিত দৃঢ়তায় আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এবং দেশীয় ও বিদেশি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। শুধু তাই নয়, এক পর্যায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ দুঃস্বপ্নেরও অবসান হয়েছে। ওই অভিযোগ ২০১৭ সালেই কানাডার একটি আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

আমরা জানি, পদ্মা সেতু বর্তমানের সক্ষমতার পাশাপাশি ভবিষ্যতের সমৃদ্ধিরও প্রতীক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক ও রেলপথ সংযুক্ত দেশের দীর্ঘতম এ সেতু চালু হলে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি বাড়বে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের প্রাপ্তিযোগ কেবল অর্থনীতিতে সীমিত থাকবে না। এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ফলে এই স্থাপনা কেবল আবেগের উৎস নয়, প্রত্যয়েরও দীপ্তশিখা। এই শুভলগ্নে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে অভিনন্দিত করার পাশাপাশি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ প্রকল্পটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি, দেশি-বিদেশি সব পক্ষকে সাধুবাদ জানাই। যেমন নির্মাণ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে সেতুটি পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তাঁদেরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আমরা বিশ্বাস করি, পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞে প্রতিফলিত স্বপ্ন, সাহস ও সক্ষমতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

স্বপ্ন, সাহস, সক্ষমতা

আপডেট সময় : ১০:৩৩:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুন ২০২২

আজ সেই স্বপ্ন পূরণের দিন, সাহস প্রমাণের দিন, সক্ষমতা প্রদর্শনের দিন। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে দুই দশক আগে একটি বৃহৎ সেতু নির্মাণের যে স্বপ্ন সূচিত হয়েছিল, আজ তা চূড়ান্ত হওয়ার দিন। বস্তুত এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বাণী প্রদানের মধ্য দিয়ে গোটা জাতির গর্বই প্রকাশ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এ উপলক্ষে যে বাণী প্রদান করেছেন, তাঁর এই বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য যে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন বিশ্বদরবারে দেশ ও জনগণকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যথার্থই বলেছেন যে, আজ বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন। দেশের বিশিষ্টজনসহ আপামর জনসাধারণ কীভাবে এই দিনের অপেক্ষায় ছিল, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমেও তা স্পষ্ট। কারণ বিষয়টি নিছক আনুষ্ঠানিকতার নয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের এই বৃহত্তম সেতু যানবাহন ও রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্পষ্টতই নতুন গতি আসবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হওয়ায় সমকাল পরিবারও আনন্দিত ও আপ্লুত।

পদ্মা সেতু একই সঙ্গে সাহসেরও নাম। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো যে, বিদেশিদের আর্থিক সহায়তা ছাড়াও এ ধরনের বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণের সদিচ্ছা ও সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। আমাদের মনে আছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাজিরা প্রান্তে নদীশাসন কাজ উদ্বোধনের পর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- ‘দেশে বড় কোনো কাজ করতে গেলেই বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হবে- এ মানসিকতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ বেরিয়ে এসেছে। আমি চেয়েছিলাম, আমরা পারি, আমরা তা দেখাব। আজ আমরা সেই দিনটিতে এসে পৌঁছেছি।’ আমাদের এটাও ভুলে যাওয়া চলবে না যে, পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটি দৃশ্যমান হলেও অদৃশ্য অথচ সবচেয়ে শক্তিশালী খুঁটিটির নাম শেখ হাসিনা। দুই দশক আগে ২০০১ সালের জুলাই মাসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই যদিও তাঁর প্রথম মেয়াদে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন; পরবর্তী সময় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচে এর নির্মাণকাজ বারংবার পিছিয়ে গেছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েও দেশীয় ও বিদেশি অনেক প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে দেখেছিলাম, বৃহৎ আন্তর্জাতিক অর্থকরী সংস্থাগুলো নানা খোঁড়া অজুহাতে ও অলীক অভিযোগে কীভাবে প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়োকচিত দৃঢ়তায় আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এবং দেশীয় ও বিদেশি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। শুধু তাই নয়, এক পর্যায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ দুঃস্বপ্নেরও অবসান হয়েছে। ওই অভিযোগ ২০১৭ সালেই কানাডার একটি আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

আমরা জানি, পদ্মা সেতু বর্তমানের সক্ষমতার পাশাপাশি ভবিষ্যতের সমৃদ্ধিরও প্রতীক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক ও রেলপথ সংযুক্ত দেশের দীর্ঘতম এ সেতু চালু হলে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি বাড়বে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের প্রাপ্তিযোগ কেবল অর্থনীতিতে সীমিত থাকবে না। এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ফলে এই স্থাপনা কেবল আবেগের উৎস নয়, প্রত্যয়েরও দীপ্তশিখা। এই শুভলগ্নে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে অভিনন্দিত করার পাশাপাশি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ প্রকল্পটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি, দেশি-বিদেশি সব পক্ষকে সাধুবাদ জানাই। যেমন নির্মাণ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে সেতুটি পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তাঁদেরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আমরা বিশ্বাস করি, পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞে প্রতিফলিত স্বপ্ন, সাহস ও সক্ষমতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে যাবে।