ঢাকা ০৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লবের সূচনা! খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঈদের দাওয়াত দিলেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান পররাষ্ট্র নীতিতে ড. ইউনূসের কাছে হেরে গেছেন নরেন্দ্র মোদী! ৩ এপ্রিলও ছুটির প্রস্তাব, মিলতে পারে ৯ দিনের ছুটি বউয়ের টিকটকেই ধরা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ, ‘ক্লু’ ছিল গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিনের পরিচয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পরিচয় শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব প্রমাণ সরকারের কাছে আছে জেলায় জেলায় সরকারি অর্থে ‘আওয়ামী পল্লি’

হেলাল হাফিজের ১০ কবিতা

বিডি সারাদিন২৪ নিউজ
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 89
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। এই পৃথিবীর প্রেম আর সব যুদ্ধ সাঙ্গ করে কবি হেলাল হাফিজ স্থায়ী হলেন কবিতার পৃথিবীতে।

‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ।

আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

 

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

মিছিলের সব হাত

কন্ঠ

পা এক নয় ।

 

সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,

কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।

কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার

শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে

অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে

অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,

কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে

কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।

 

যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান

তাই হয়ে যান

উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।

 

 

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।

 

একটি পতাকা পেলে

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস

ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–‘পেয়েছি, পেয়েছি’।

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে

ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,

বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,

সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ

সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

 

ফেরীঅলা

 

কষ্ট নেবে কষ্ট

হরেক রকম কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট!

 

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট

পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,

আলোর মাঝে কালোর কষ্ট

‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট

দাড়ির কষ্ট

চোখের বুকের নখের কষ্ট,

একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট

অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,

ভুল রমণী ভালোবাসার

ভুল নেতাদের জনসভার

হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট

পথের এবং পায়ের কষ্ট

অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

আর কে দেবে আমি ছাড়া

আসল শোভন কষ্ট,

কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন

আমার মত ক’জনের আর

সব হয়েছে নষ্ট,

আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট।

 

ইচ্ছে ছিলো

 

ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো

ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে

শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

 

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো

সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা

পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

 

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে

রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,

জন্মাবধি আমার শীতল চোখ

তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

 

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো

তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,

আজ দেখি রাজ্য আছে

রাজা আছে

ইচ্ছে আছে,

শুধু তুমি অন্য ঘরে।

 

 

নেত্রকোনা

 

কতো দিন তোমাকে দেখি না

তুমি ভালো আছো? সুখে আছো? বোন নেত্রকোনা।

 

আমাকে কি চিনতে পেরেছো? আমি

ছিলাম তোমার এক আদরের নাগরিক নিকট-আত্মীয়

আমাদের বড়ো বেশি মাখামাখি ছিলো,

তারপর কী থেকে কী হলো

আভাইগা কপাল শুধু বিচ্ছেদের বিষে নীল হলো।

 

দোহাই লক্ষ্মী মেয়ে কোন দিন জিজ্ঞেস করো না

আমি কেন এমন হলাম জানতে চেয়ো না

কী এমন অভিমানে আমাদের এতো ব্যবধান,

কতোটা বিশৃংখলা নিয়ে আমি ছিমছাম সন্নাসী হলাম।

 

কিছু কথা অকথিত থেকে যায়

বেদনার সব কথা মানুষ বলে না, রমনী-কাতর

সবিতা সেনের সূতী শাড়িও জানে না

সোনালী অনল আর কতো জল দিদির ভেতর।

 

কেউ কি তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক দাঁড়িয়ে প্রাঙ্গণে?

কারো কি তোলপাড় ওঠে ট্রেনের হুইসেল শুনে মনে?

তোমার মাটির রসে পরিপুষ্ট বৃক্ষ ফুল।

মগড়ার ক্ষীণ কলরোল

অমল কোমল এক মানুষের প্রতীক্ষায় থাক বা না থাক,

তুমি আছো আমার মজ্জায় আর মগজের কোষে অনুক্ষণ,

যে রকম ক্যামোফ্লাজ করে খুব ওতোপ্রোতভাবে থাকে

জীবনের পাশাপাশি অদ্ভুত মরণ।

 

পরানের পাখি

 

পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,

আমার সূর্যের কথা, কাঙ্খিত দিনের কথা,

সুশোভন স্বপ্নের কথাটা বলো,–শুনুক মানুষ।

 

পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,

অলক্ষ্যে কবে থেকে কোমল পাহাড়ে বসে

এতোদিন খুঁটে খুঁটে খেয়েছো আমাকে আর

কতো কোটি দিয়েছো ঠোকর,

বিষে বিষে নীল হয়ে গেছি, শুশ্রূষায়

এখনো কী ভাবে তবু শুভ্রতা পুষেছি তুমি দেখাও না

পাখি তুমি তোমাকে দেখাও,–দেখুক মানুষ।

 

পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,

সময় পাবে না বেশি চতুর্দিক বড়ো টলোমলো

পরানের পাখি তুমি শেষবার শেষ কথা বলো,

আমার ভেতরে থেকে আমার জীবন খেয়ে কতোটুকু

যোগ্য হয়েছো, ভূ-ভাগ কাঁপিয়ে বেসামাল

কবে পাখি দেবেই উড়াল, দাও,–শিখুক মানুষ।

 

তুমি ডাক দিলে

 

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,

কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।

 

তুমি ডাক দিলে

নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে

শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো

পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব

পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।

তুমি ডাক দিলে

সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,

তুমি রাজি হলে

যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

 

একবার আমন্ত্রণ পেলে

সব কিছু ফেলে

তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,

অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে

লোকালয়ে থাকবো না আর

আমরণ পাখি হয়ে যাবো, –খাবো মৌনতা তোমার।

 

প্রস্থান

 

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো।

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা

খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো।

ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত

ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো।

কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে

কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে

পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো।

 

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই।

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?

আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হেলাল হাফিজের ১০ কবিতা

আপডেট সময় : ০৯:০৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

 

‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। এই পৃথিবীর প্রেম আর সব যুদ্ধ সাঙ্গ করে কবি হেলাল হাফিজ স্থায়ী হলেন কবিতার পৃথিবীতে।

‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ।

আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

 

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

মিছিলের সব হাত

কন্ঠ

পা এক নয় ।

 

সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,

কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।

কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার

শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে

অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে

অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,

কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে

কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।

 

যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান

তাই হয়ে যান

উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।

 

 

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।

 

একটি পতাকা পেলে

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস

ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–‘পেয়েছি, পেয়েছি’।

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে

ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,

বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

 

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,

সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ

সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

 

ফেরীঅলা

 

কষ্ট নেবে কষ্ট

হরেক রকম কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট!

 

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট

পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,

আলোর মাঝে কালোর কষ্ট

‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট

দাড়ির কষ্ট

চোখের বুকের নখের কষ্ট,

একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট

অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,

ভুল রমণী ভালোবাসার

ভুল নেতাদের জনসভার

হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট

পথের এবং পায়ের কষ্ট

অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট

কষ্ট নেবে কষ্ট।

 

আর কে দেবে আমি ছাড়া

আসল শোভন কষ্ট,

কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন

আমার মত ক’জনের আর

সব হয়েছে নষ্ট,

আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট।

 

ইচ্ছে ছিলো

 

ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো

ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে

শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

 

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো

সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা

পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

 

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে

রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,

জন্মাবধি আমার শীতল চোখ

তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

 

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো

তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,

আজ দেখি রাজ্য আছে

রাজা আছে

ইচ্ছে আছে,

শুধু তুমি অন্য ঘরে।

 

 

নেত্রকোনা

 

কতো দিন তোমাকে দেখি না

তুমি ভালো আছো? সুখে আছো? বোন নেত্রকোনা।

 

আমাকে কি চিনতে পেরেছো? আমি

ছিলাম তোমার এক আদরের নাগরিক নিকট-আত্মীয়

আমাদের বড়ো বেশি মাখামাখি ছিলো,

তারপর কী থেকে কী হলো

আভাইগা কপাল শুধু বিচ্ছেদের বিষে নীল হলো।

 

দোহাই লক্ষ্মী মেয়ে কোন দিন জিজ্ঞেস করো না

আমি কেন এমন হলাম জানতে চেয়ো না

কী এমন অভিমানে আমাদের এতো ব্যবধান,

কতোটা বিশৃংখলা নিয়ে আমি ছিমছাম সন্নাসী হলাম।

 

কিছু কথা অকথিত থেকে যায়

বেদনার সব কথা মানুষ বলে না, রমনী-কাতর

সবিতা সেনের সূতী শাড়িও জানে না

সোনালী অনল আর কতো জল দিদির ভেতর।

 

কেউ কি তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক দাঁড়িয়ে প্রাঙ্গণে?

কারো কি তোলপাড় ওঠে ট্রেনের হুইসেল শুনে মনে?

তোমার মাটির রসে পরিপুষ্ট বৃক্ষ ফুল।

মগড়ার ক্ষীণ কলরোল

অমল কোমল এক মানুষের প্রতীক্ষায় থাক বা না থাক,

তুমি আছো আমার মজ্জায় আর মগজের কোষে অনুক্ষণ,

যে রকম ক্যামোফ্লাজ করে খুব ওতোপ্রোতভাবে থাকে

জীবনের পাশাপাশি অদ্ভুত মরণ।

 

পরানের পাখি

 

পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,

আমার সূর্যের কথা, কাঙ্খিত দিনের কথা,

সুশোভন স্বপ্নের কথাটা বলো,–শুনুক মানুষ।

 

পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,

অলক্ষ্যে কবে থেকে কোমল পাহাড়ে বসে

এতোদিন খুঁটে খুঁটে খেয়েছো আমাকে আর

কতো কোটি দিয়েছো ঠোকর,

বিষে বিষে নীল হয়ে গেছি, শুশ্রূষায়

এখনো কী ভাবে তবু শুভ্রতা পুষেছি তুমি দেখাও না

পাখি তুমি তোমাকে দেখাও,–দেখুক মানুষ।

 

পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,

সময় পাবে না বেশি চতুর্দিক বড়ো টলোমলো

পরানের পাখি তুমি শেষবার শেষ কথা বলো,

আমার ভেতরে থেকে আমার জীবন খেয়ে কতোটুকু

যোগ্য হয়েছো, ভূ-ভাগ কাঁপিয়ে বেসামাল

কবে পাখি দেবেই উড়াল, দাও,–শিখুক মানুষ।

 

তুমি ডাক দিলে

 

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,

কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।

 

তুমি ডাক দিলে

নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে

শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো

পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব

পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।

তুমি ডাক দিলে

সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,

তুমি রাজি হলে

যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

 

একবার আমন্ত্রণ পেলে

সব কিছু ফেলে

তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,

অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে

লোকালয়ে থাকবো না আর

আমরণ পাখি হয়ে যাবো, –খাবো মৌনতা তোমার।

 

প্রস্থান

 

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো।

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা

খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো।

ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত

ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো।

কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে

কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে

পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো।

 

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই।

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?

আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?