ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ জানুয়ারি ২০২৩
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইতিহাস ঐতিয্য
  3. ইসলাম
  4. কর্পোরেট
  5. খেলার মাঠে
  6. জাতীয়
  7. জীবনযাপন
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. নারী কন্ঠ
  11. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  12. ফার্মাসিস্ট কর্নার
  13. ফিচার
  14. ফ্যাশন
  15. বিনোদন

আপনার ব্যয় বাড়ানোর সব আয়োজনই সম্পন্ন

শওকত হোসেন
জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ ৬:২২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আপনার ব্যয় বাড়ানোর সব আয়োজনই সম্পন্ন
সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ শতাংশ, যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারত। কিন্তু মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির ১ নম্বর শত্রু ধরে নিয়ে আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। যদিও এতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেছে, বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। আর এতে অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি (মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি) ২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে ২ শতাংশের নিচেও চলে আসতে পারে। তবে পরিস্থিতি এমনই, বিশ্ব অর্থনীতি এখন কিছু মন্দা বরণ করে নিতে প্রস্তুত, কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে কিছুতেই মানা হবে না। ৮০–এর দশকে এ পথেই যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ মূল্যস্ফীতির দশক থেকে বের হয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের নীতি যেন ঠিক উল্টো। এখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং বাড়ানোর সব আয়োজনই করা হচ্ছে। আর এ কাজটি করছে সরকার নিজেই। এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো। তা–ও করা হয়েছে সরকারের নির্বাহী আদেশে, তড়িঘড়ি করে। এর আগে বেড়েছে জ্বালানির দাম। এসবই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়ানোর প্রধান প্রধান হাতিয়ার।

গত বছরের আগস্টে সরকার হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এর প্রভাবে জুলাই মাসে দেশের যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সেই তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) লুকোচুরি কম করেনি। বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশের পথ খুঁজতে তাদের দুই মাস সময় লেগেছিল। এর পর থেকে অবশ্য বিবিএস কোনো এক জাদুবলে মূল্যস্ফীতি ক্রমেই কমিয়ে নানা রকম বাহবা নিচ্ছে। যদিও কমেছে খুবই সামান্য।

নীতি সুদহার কী: যে সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকসমূহকে ঋণ দেয়, সেটিই রেপো রেট বা নীতি সুদহার। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতেই মুদ্রানীতির এ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারটি ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে ঋণ দেয়, সেটি রিভার্স রেপো হিসেবে পরিচিত।
মূল্যস্ফীতি কী: তাত্ত্বিকভাবে দামস্তর অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়াই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। একটি নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় আরেকটি নির্দিষ্ট সময়ে সামগ্রিক দামস্তরের যে পরিবর্তন, সেটাই মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি কেন হয়, এ নিয়ে দুটি তত্ত্ব রয়েছে। একটি হচ্ছে অর্থের পরিমাণ তত্ত্ব, অন্যটি বাড়তি চাহিদা তত্ত্ব। বাজারে যদি অর্থ সরবরাহ বেড়ে যায়, তাহলে কিন্তু বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কারণ, তাতে পণ্য আগের মতোই থাকে, কিন্তু মানুষের হাতে টাকা বেড়ে যায়। এর ফলে পণ্যের দাম বাড়ে। এটাই অর্থের পরিমাণ তত্ত্ব।
আবার বাড়তি চাহিদা তত্ত্ব হচ্ছে টাকা আগের মতোই আছে, পণ্যও আছে একই রকম, কিন্তু উৎপাদন বাড়ল না। কিন্তু হয়তো মানুষ বেড়ে গেল, কিংবা যারা আছে, তারা একটু বেশি কিনতে চাইল। এতেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
কারণ হিসেবেও মূল্যস্ফীতি দুই ধরনের হয়। যেমন চাহিদা বাড়লে যে মূল্যস্ফীতি হয়, তাকে বলে চাহিদাজনিত বা ডিমান্ড পুল মূল্যস্ফীতি। আরেকটি হচ্ছে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত বা কষ্ট পুশ মূল্যস্ফীতি। অনেক সময় যেসব উপকরণ দিয়ে পণ্য উৎপাদন হয়, সেই সব উপকরণের দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। এতে পণ্যের দাম বাড়ে এবং মূল্যস্ফীতি ঘটে।
জিডিপি কী: মোট দেশজ উৎপাদন হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, সাধারণত এক বছরে কোনো দেশের অভ্যন্তরে বা ভৌগোলিক সীমানার ভেতরে বসবাসকারী সব জনগণ কর্তৃক উৎপাদিত চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের অর্থমূল্যের সমষ্টি। এতে ওই সীমানার মধ্যে বসবাসকারী দেশের সব নাগরিক ও বিদেশি ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের মূল্য অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে বিদেশে অবস্থানকারী ও কর্মরত দেশের নাগরিক, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের আয় অন্তর্ভুক্ত হবে না।

যেমন ১৭ জানুয়ারি একনেকের বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবাই জানি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে, যার ফলে সারা বিশ্বে এবং আমাদের দেশে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি বেশ বেড়ে গেছে। তবে আমরা এই দোলাচল ভালোভাবেই সামাল দিয়েছি বলে প্রতীয়মান হয়। সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতি নভেম্বর মাসের ৮.৮৫% থেকে কমে ডিসেম্বরে ৮.৭১% এ নেমেছে। বিগত বছরের আগস্ট থেকে টানা পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখিতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।’

মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। সেখান থেকে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। কমেছে মাত্র দশমিক ৩৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। তাতেই সরকারি ভাষ্যে বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির চাপ ‘ভালোভাবেই সামাল’ দিয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র একই সময়ে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে (আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়) সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেও বলছে, সংকট কাটেনি। সুতরাং মূল্যস্ফীতি কমাতে তারা আগ্রাসী মনোভাবই বজায় রাখবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, টানা পাঁচ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমানোর বিশাল এই সাফল্য ধরে রাখা যাবে কতটা। কেননা, ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। আর ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। বিশেষ করে শিল্প খাতে ব্যবহার করা হয় এমন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ৮৮ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত। এর বড় প্রভাব পড়বে শিল্প খাতে, উৎপাদন ব্যয়ে। উৎপাদন খরচ বাড়লে এর প্রভাব পড়বে উৎপাদন ব্যয়ে। পণ্য মূল্য বৃদ্ধি মানেই নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ। সুতরাং ধরেই নেওয়া যায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর আরেকটি চাপ আসছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের আরও প্রায় ৬ মাস বাকি। এই সময়ে সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য হচ্ছে সাড়ে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে গত অক্টোবরে আইএমএফেরও প্রাক্কলন ছিল ২০২৩ সালে বিশ্বে গড় মূল্যস্ফীতি আগের বছরের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ কমে হবে সাড়ে ৬ শতাংশ, আর ২০২৪ সালে আরও কমে হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু সরকার যেভাবে বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবে কি অর্জন করা যাবে—এটাই এখন বড় প্রশ্ন। অথবা এমনও হতে পারে, বাস্তবে জীবনযাত্রার ব্যয় যতই বাড়ুক, বিবিএস ঠিকই জাদুবলে মূল্যস্ফীতি ক্রমেই কমিয়ে রাখবে।

সবশেষে ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বছরের নতুন মুদ্রানীতির ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে নীতি সুদহার বা রেপো হার সামান্য বাড়ালেও তার প্রভাব পড়বে না শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে। কেননা, সুদহার আগের মতোই ৯ শতাংশ রাখা হয়েছে। মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যও বাড়ানো হয়েছে। আবার আমানত কমে যাওয়ায় সরকার টাকা ছাপিয়ে মুদ্রা সরবরাহ ঠিক রাখতে চাইলে তাতেও বাড়বে মূল্যস্ফীতি। সুতরাং বলা যায়, মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর সব আয়োজনই সরকার একের পর এক করে রাখছে

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো । বিডিসারাদিন২৪'এ প্রকাশিত নারীকন্ঠ,মতামত লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত বিডিসারাদিন২৪ 'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় বিডিসারাদিন২৪ কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। বিডিসারাদিন২৪ 'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।