ঢাকা ১২:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ইলিশ ধরায় খরচ ৮৩০ টাকা, ভোক্তার গুনতে হয় অন্তত ২ হাজার নির্বাচন কে সামনে রেখে উত্তাল ঢাকা-১ দোহার-নবাবগঞ্জ আসন আটপাড়ায় কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর কেন্দুয়ায় মানবপাচার মামলার আসামীরা রিমান্ডে মাস্টারমাইন্ডের নাম প্রকাশ করেছে ‎ ‎কেন্দুয়ায় মানবপাচারের মামলায় চীনা নাগরিকসহ দুই আসামীকে কারাগারে প্রেরণ কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা; চীনা নাগরিকসহ আটক দুইজন কেন্দুয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৫ ‎কেন্দুয়ায় প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তের সময় হাতাহাতি: ইউএনও আহত কেন্দুয়ায় প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ জাল ধ্বংস ওসমান হাদী দাবিতে ঘনিষ্ঠ ভিডিও প্রচার, সামনে এলো আসল সত্য ব্লাড মুন দেখা যাবে রোববার, চাঁদ লাল হওয়ার কারণ কী? তিন দলই প্রধান উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন চায়: প্রেস সচিব টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টধারী, রয়েছে টিআইএনও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে উপহার দেওয়া ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মোদির ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেসসচিব চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড় ড. ইউনূসকে ঈদগাহের মুসল্লিরাঃ আপনি ৫ বছর দায়িত্বে থাকুন, এটাই দেশের মানুষের চাওয়া

জুলাই সনদ: ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’!

সালেক উদ্দিন
  • আপডেট সময় : ০২:০৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • / 77
আজকের সারাদিনের সর্বশেষ নিউজ পেতে ক্লিক করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘জুলাই সনদ’ নামের বহুল আলোচিত বিষয়টি শেষ পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরে শেষ হলো। দেখলে মনে হতে পারে, দীর্ঘ বৈঠকের পর অবশেষে দেশের শ্রেষ্ঠতম মতগুলো কাগজে এসে এক জায়গায় মিলেছে। কিন্তু যে কাগজে স্বাক্ষর করা হলো, তার চারপাশে যে অচেনা আবহ তৈরি হয়েছে— সেটাই হয়তো আসল গল্প। কারণ এমন এক মুহূর্তে, যখন অনেকে বলছে ‘শেষ হলো’, বাস্তবে সেই ‘শেষ’ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করছে।

সনদের প্রস্তাবগুলো বিস্তৃত— নির্বাচন, বিচার, রাষ্ট্রধর্ম ও পররাষ্ট্রনীতির মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলোকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই ‘নতুন আকার’ যদি বাস্তবায়নের বিধি-নিষেধ, আইনগত বাধ্যবাধকতা বা রাজনৈতিক সম্মতির অভাবে কাগজেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে সনদ সমাধান না হয়ে বরং সমস্যার নতুন এক সূত্রে পরিণত হবে। এটাই আজকের বাস্তব উদ্বেগ।

সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত এসেছে “নোট অব ডিসেন্ট”-এর শক্তি থেকে। বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় দলগুলো কেবল স্বাক্ষর করেই থেমে থাকেনি— কিছু বিষয়ে লিখিত ভিন্নমতও রেখেছে; অর্থাৎ তারা আনুষ্ঠানিক সম্মতিমূলক পথে থেকেও গোপনে বা প্রকাশ্যে বিরোধের স্থান রেখেছে। কিন্তু এনসিপির অবস্থান ভিন্ন—তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি এবং বলেছে, আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করে কোনও আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর গ্রহণযোগ্য নয়। গণআন্দোলনের সাফল্যের পর সেই আন্দোলনের চেতনা নিয়ে গঠিত এনসিপির এই অনুপস্থিতি এবং তাদের আইনি ভিত্তি চাওয়া, সনদের বৈধতা ও কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

সনদ যেখানে ন্যূনতম সংবিধানগত কাঠামো স্থাপনের কথা বলছে, সেখানে ভিন্নমতগুলোই আগামী দিনের রাজনীতিকে চালিত করবে—বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে। সনদ বলছে নির্বাচন হবে সংবিধানের আওতায়, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে; কিন্তু বিএনপি বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা দাবি করছে। এই দ্বন্দ্বের মূলে যে রাজনৈতিক অবিশ্বাস রয়েছে, তা সহজে মুছা যাবে না।

রাষ্ট্র ও ধর্ম নিয়ে সনদ যে দিকনির্দেশ দিয়েছে তা হলো—রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হবে। তাতে জামায়াতসহ কিছু দল সরাসরি আপত্তি করেছে। তাদের যুক্তি, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” বাদ দেয়া জাতীয় ইতিহাস ও পরিচয়ের সঙ্গে অসঙ্গত। বাস্তবে এমন সংকটময় বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা সবসময়ই কঠিন; এই ভিন্নমতগুলো ভবিষ্যতে সাংবিধানিক বিতর্কে পরিণত হতে পারে।

বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে অনিশ্চিত দলগুলোর বক্তব্য, অতিরিক্ত স্বাধীনতা মানে জবাবদিহির অভাব; এমন যুক্তি ভবিষ্যতে কোর্ট-রাজনীতি সম্পর্কিত তীক্ষ্ণ বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। এসবই মনে করিয়ে দেয়—সনদ যেখানে কাঠামো দিতে চায়, সেখানে বাস্তবে রাজনৈতিক চাপই সেই কাঠামোর নিয়ামক হয়ে উঠবে।

এদিকে রাস্তায় নেমেছিল ‘জুলাই যোদ্ধারা’। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ইঙ্গিত করছে যে সনদ-আশ্বাস কেবল উচ্চপর্যায়ের রাজনীতি নয়; নিচু স্তরেও সহিংস প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে। তারা সনদ সংশোধন, সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি ও স্বীকৃতি দাবি করছে—যা রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সনদটি নীরবে আলোচিত হচ্ছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকরা একে গণতন্ত্রের পথে ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, তবে তারা একই সঙ্গে বাস্তবায়নের প্রশ্নে ‘আইনি নিশ্চয়তা’ চাচ্ছেন। প্রতিবেশী ভারত ও চীন দুই দেশই এখনও নীরব, কিন্তু উভয় দেশই ভবিষ্যৎ সরকারের কাঠামো ও স্থিতিশীলতা নিয়ে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করবে—এটি স্পষ্ট।

জনমতের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। একদিকে কেউ কেউ একে নতুন সূচনার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে অনেকে সন্দিহান—একে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, “এই সনদ আমাদের জীবনে কি বদল আনবে?”—এই প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারছে না।

এখন মূল প্রশ্ন—এই সনদ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা? বিধিগতভাবে ৮৪টি সংস্কারপ্রস্তাবের মধ্যে বেশিরভাগই বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন; কিছু অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব। কিন্তু যদি কোনও দল আইনগত বাধ্যবাধকতা না মানে, অথবা রাজনৈতিক সদিচ্ছা অনুপস্থিত থাকে, তবে সনদ কেবল ‘চিঠি’ হয়ে থাকার ঝুঁকি রাখে। বাস্তবায়ন রূপরেখার অনুপস্থিতি যেমন অনিশ্চয়তা বাড়ায়, তেমনি অনুপস্থিত পক্ষগুলোর অনাস্থা সনদকে প্রান্তিক করে তুলবে।

সংক্ষেপে বলা যায়—জুলাই সনদ একটি সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে বিপজ্জনক বিভেদের সূত্রও রেখে গেছে। এখানে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—আইনি ভিত্তি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। যদি এসব না থাকে, তাহলে সনদ কাগজে লিখিত ‘শেষ’ হতেই পারে; বাস্তবে তা ‘শেষ’ হয়ে উঠবে না।

বাংলাদেশের ইতিহাস আমাদের শেখায়—কোনও চুক্তি এখানে কখনও সত্যিকারের চূড়ান্ত হয়নি; প্রতিটি সমঝোতার মধ্যে নতুন বিভাজন, নতুন আন্দোলন লুকিয়ে থাকে। এই সনদ যদি সেই ধারাবাহিক ব্যর্থতার আরেক অধ্যায় হয়ে ওঠে, তবে জনগণের রাজনীতিতে আস্থা আরও ক্ষয়প্রাপ্ত হবে—আর তখন ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ বাক্যটি হয়ে উঠবে জাতির আরেক দীর্ঘশ্বাস।

লেখক: কথাসাহিত্যিক

Google News Logoবাংলা ট্রিবিউনের খবর পেতে গুগল নিউজে ফলো করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জুলাই সনদ: ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’!

আপডেট সময় : ০২:০৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

‘জুলাই সনদ’ নামের বহুল আলোচিত বিষয়টি শেষ পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরে শেষ হলো। দেখলে মনে হতে পারে, দীর্ঘ বৈঠকের পর অবশেষে দেশের শ্রেষ্ঠতম মতগুলো কাগজে এসে এক জায়গায় মিলেছে। কিন্তু যে কাগজে স্বাক্ষর করা হলো, তার চারপাশে যে অচেনা আবহ তৈরি হয়েছে— সেটাই হয়তো আসল গল্প। কারণ এমন এক মুহূর্তে, যখন অনেকে বলছে ‘শেষ হলো’, বাস্তবে সেই ‘শেষ’ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করছে।

সনদের প্রস্তাবগুলো বিস্তৃত— নির্বাচন, বিচার, রাষ্ট্রধর্ম ও পররাষ্ট্রনীতির মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলোকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই ‘নতুন আকার’ যদি বাস্তবায়নের বিধি-নিষেধ, আইনগত বাধ্যবাধকতা বা রাজনৈতিক সম্মতির অভাবে কাগজেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে সনদ সমাধান না হয়ে বরং সমস্যার নতুন এক সূত্রে পরিণত হবে। এটাই আজকের বাস্তব উদ্বেগ।

সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত এসেছে “নোট অব ডিসেন্ট”-এর শক্তি থেকে। বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় দলগুলো কেবল স্বাক্ষর করেই থেমে থাকেনি— কিছু বিষয়ে লিখিত ভিন্নমতও রেখেছে; অর্থাৎ তারা আনুষ্ঠানিক সম্মতিমূলক পথে থেকেও গোপনে বা প্রকাশ্যে বিরোধের স্থান রেখেছে। কিন্তু এনসিপির অবস্থান ভিন্ন—তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি এবং বলেছে, আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করে কোনও আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর গ্রহণযোগ্য নয়। গণআন্দোলনের সাফল্যের পর সেই আন্দোলনের চেতনা নিয়ে গঠিত এনসিপির এই অনুপস্থিতি এবং তাদের আইনি ভিত্তি চাওয়া, সনদের বৈধতা ও কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

সনদ যেখানে ন্যূনতম সংবিধানগত কাঠামো স্থাপনের কথা বলছে, সেখানে ভিন্নমতগুলোই আগামী দিনের রাজনীতিকে চালিত করবে—বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে। সনদ বলছে নির্বাচন হবে সংবিধানের আওতায়, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে; কিন্তু বিএনপি বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা দাবি করছে। এই দ্বন্দ্বের মূলে যে রাজনৈতিক অবিশ্বাস রয়েছে, তা সহজে মুছা যাবে না।

রাষ্ট্র ও ধর্ম নিয়ে সনদ যে দিকনির্দেশ দিয়েছে তা হলো—রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হবে। তাতে জামায়াতসহ কিছু দল সরাসরি আপত্তি করেছে। তাদের যুক্তি, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” বাদ দেয়া জাতীয় ইতিহাস ও পরিচয়ের সঙ্গে অসঙ্গত। বাস্তবে এমন সংকটময় বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা সবসময়ই কঠিন; এই ভিন্নমতগুলো ভবিষ্যতে সাংবিধানিক বিতর্কে পরিণত হতে পারে।

বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে অনিশ্চিত দলগুলোর বক্তব্য, অতিরিক্ত স্বাধীনতা মানে জবাবদিহির অভাব; এমন যুক্তি ভবিষ্যতে কোর্ট-রাজনীতি সম্পর্কিত তীক্ষ্ণ বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। এসবই মনে করিয়ে দেয়—সনদ যেখানে কাঠামো দিতে চায়, সেখানে বাস্তবে রাজনৈতিক চাপই সেই কাঠামোর নিয়ামক হয়ে উঠবে।

এদিকে রাস্তায় নেমেছিল ‘জুলাই যোদ্ধারা’। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ইঙ্গিত করছে যে সনদ-আশ্বাস কেবল উচ্চপর্যায়ের রাজনীতি নয়; নিচু স্তরেও সহিংস প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে। তারা সনদ সংশোধন, সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি ও স্বীকৃতি দাবি করছে—যা রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সনদটি নীরবে আলোচিত হচ্ছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকরা একে গণতন্ত্রের পথে ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, তবে তারা একই সঙ্গে বাস্তবায়নের প্রশ্নে ‘আইনি নিশ্চয়তা’ চাচ্ছেন। প্রতিবেশী ভারত ও চীন দুই দেশই এখনও নীরব, কিন্তু উভয় দেশই ভবিষ্যৎ সরকারের কাঠামো ও স্থিতিশীলতা নিয়ে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করবে—এটি স্পষ্ট।

জনমতের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। একদিকে কেউ কেউ একে নতুন সূচনার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে অনেকে সন্দিহান—একে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, “এই সনদ আমাদের জীবনে কি বদল আনবে?”—এই প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারছে না।

এখন মূল প্রশ্ন—এই সনদ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা? বিধিগতভাবে ৮৪টি সংস্কারপ্রস্তাবের মধ্যে বেশিরভাগই বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন; কিছু অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব। কিন্তু যদি কোনও দল আইনগত বাধ্যবাধকতা না মানে, অথবা রাজনৈতিক সদিচ্ছা অনুপস্থিত থাকে, তবে সনদ কেবল ‘চিঠি’ হয়ে থাকার ঝুঁকি রাখে। বাস্তবায়ন রূপরেখার অনুপস্থিতি যেমন অনিশ্চয়তা বাড়ায়, তেমনি অনুপস্থিত পক্ষগুলোর অনাস্থা সনদকে প্রান্তিক করে তুলবে।

সংক্ষেপে বলা যায়—জুলাই সনদ একটি সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে বিপজ্জনক বিভেদের সূত্রও রেখে গেছে। এখানে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—আইনি ভিত্তি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। যদি এসব না থাকে, তাহলে সনদ কাগজে লিখিত ‘শেষ’ হতেই পারে; বাস্তবে তা ‘শেষ’ হয়ে উঠবে না।

বাংলাদেশের ইতিহাস আমাদের শেখায়—কোনও চুক্তি এখানে কখনও সত্যিকারের চূড়ান্ত হয়নি; প্রতিটি সমঝোতার মধ্যে নতুন বিভাজন, নতুন আন্দোলন লুকিয়ে থাকে। এই সনদ যদি সেই ধারাবাহিক ব্যর্থতার আরেক অধ্যায় হয়ে ওঠে, তবে জনগণের রাজনীতিতে আস্থা আরও ক্ষয়প্রাপ্ত হবে—আর তখন ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ বাক্যটি হয়ে উঠবে জাতির আরেক দীর্ঘশ্বাস।

লেখক: কথাসাহিত্যিক

Google News Logoবাংলা ট্রিবিউনের খবর পেতে গুগল নিউজে ফলো করুন