নভেম্বরেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
- আপডেট সময় : ১২:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
- / 29
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। শিগগিরই তার ফেরার তারিখ ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া খুব শিগগিরই দুইশো আসনে বিএনপির একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মি.আহমদ।
আগামী নির্বাচনে দলটির প্রস্তুতি, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের পরিকল্পনা, গণভোট এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির সিনিয়র এই নেতা।
বিবিসি বাংলাকে সালাউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর জোট করার পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির।
তিনি বলছেন, অতীতে আন্দোলনের সময় যেসব দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছে, তাদেরকে জোট শরিক হিসেবে সাথে রাখতে চায় তারা। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও জানান মি. আহমদ।
নির্বাচনে জোট করলেও দলীয় প্রতীকে ভোটে লড়তে হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওতে আনা এই পরিবর্তনটি সংশোধন করতে বিএনপি সরকারকে চিঠি দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া গণভোট ইস্যুতে সরকার ও বিএনপি টালবাহানা করছে, জামায়াতে ইসলামীর এমন বক্তব্যেরও জবাব দেন মি. আহমদ। তার মতে, জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে করাই যৌক্তিক হবে।
“অনেককে বলতে শুনছি গণভোটে আমরা জবরদস্তি রাজি হয়েছি, কিন্তু সেটা তো না বরং আমাদের প্রস্তাবেই বাকি সবাই গণভোটে রাজি হয়েছে,” বলেও দাবি করেন মি. আহমেদ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা হবেন বিএনপির প্রার্থী- এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে এই আলোচনাও আরো ডালপালা মেলছে।
প্রায় সব আসনে একাধিক প্রার্থী নিয়ে দলটি বিপাকে রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নও রয়েছে। যদিও সম্প্রতি বিভিন্ন আসনের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, অন্তত দুইশ আসনে দলটির প্রার্থীদের নাম জানা যাবে খুব শিগগিরই। এরই মধ্যে দলটির নীতিনির্ধারকরা এসব আসনের সম্ভাব্য একক প্রার্থীর নাম নির্দিষ্ট করেছেন।
তিনি বলছেন, প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য যারা প্রার্থী আছেন, তাদের সাথে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে একটি প্রায়োরিটি তালিকা করেছে দলটি।
“দুইশ আসনে আমরা সিঙ্গেল প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে খুব শিগগিরই একক প্রার্থীকে সেই সিগনাল দেওয়া হবে,” জানান তিনি।
বাকি আসনগুলো শরিকদের জন্য রাখা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মি. আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “অনেক সমীকরণ আছে, শরিকদের জন্য থাকবে, কিছু আসনে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি- এরকম কিছু আসনও আছে।”
বাংলাদেশে অতীতের প্রায় সব নির্বাচনে একাধিক দলের জোট গঠনের ইতিহাস রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
মাঠের বাস্তবতাও সেই আভাসই দিচ্ছে। কয়েকটি ইসলামী দলের মধ্যে জোট গঠনের আলোচনা শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরেই।
এমন প্রেক্ষাপটে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর জোট গঠন করার পরিকল্পনা করছে বিএনপিও। এক্ষেত্রে অতীতে আন্দোলন সংগ্রামে যসব দল বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদেরকেই প্রাধান্য দিতে চায় দলগুলো।
মি. আহমদ বলছেন, “স্বৈরাচারের পতনের আগেও আমরা যে একত্রিশ দফা প্রণয়ন করেছি সেখানেও আমাদের অঙ্গীকার আছে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা আমাদের যুগপৎ সঙ্গী ছিল তাদের সঙ্গে ঐক্যমতের জাতীয় সরকার গঠনের কথা আছে, সেই জোটটিই আরো সম্প্রসারিত হবে এখন।”
“আরো অনেকে সেখানে যুক্ত হতে পারে, অনেক ইসলামী দলও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে,” বলেন তিনি।
তবে নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
তিনি বলছেন, “এনসিপির সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি, তবে একদম যে হবে না সেটাও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকারকে চিঠি দেবে বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদ আরপিওর যে সংশোধিত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতীকের ব্যবহার নিয়ে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেখানে আপত্তি রয়েছে তাদের।
আরপিওতে আগের বিধান অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনী এলাকায় এক বা একাধিক প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দে কোনো দলের প্রার্থী তার নির্ধারিত দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবে। তবে দুই বা ততোধিক দল যদি জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করে, তখন জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানাতে হতো।
তবে সম্প্রতি সংশোধিত আরপিওতে এই সুযোগটি বাতিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জোটভুক্ত হলেও কোনো নিবন্ধিত দলকে তার নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে।
মি. আহমদ বলছেন, “আরপিও সংশোধনের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে আমরা এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ছিলাম। কারণ এভাবে সংশোধিত হলে ছোট দলগুলো জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।
তিনি বলছেন, “বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটা আমাদের দেশে প্রচলিত প্রক্রিয়া। কিন্ত হঠাৎ করে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরেও সেটা রাখা হলো না।”
এমনকি এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের আলোচনায়ও বিএনপি এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বলেও জানান মি. আহমেদ।

















