পাওনা টাকা আদায়ে ইনতাজ আলীর অভিনব পদ্ধতি
- আপডেট সময় : ০৮:৪৫:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
 - / 39
 
মাঈন উদ্দিন সরকার,কেন্দুয়া-নেত্রকোনাঃ
গাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন ষাটোর্ধ্ব ইনতাজ আলী ব্যাপারী। এখন বয়সের ভারে আর আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। ৫ বছর ধরে বেশ কিছু লোকের কাছে তার প্রায় ২৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা পেতে লোকের বাড়িতে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করেও টাকা আদায় করতে পারেননি ইনতাজ আলী।
এমনকি থানায় অভিযোগ করেও টাকা আদায় করতে পারেননি। এ অবস্থায় হতদরিদ্র কাঠুরে ইনতাজ ব্যাপারী স্থানীয় বাজারে ডিজিটাল ব্যানারে দেনাদারের নাম ও পাশে টাকার পরিমাণ লিখে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করায় সাধারণ লোকজন এটাকে এক ধরনের প্রতিবাদ মনে করলেও আবার কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে শত্রুতার আশঙ্কাও করছেন।
এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের টঙ্গীরচর এলাকায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই এলাকার মৃত জুম্মন খানের ছেলে ইনতাজ আলী ব্যাপারী। নিজের কোনো জমিজমা নেই। পেশায় কাঠুরে হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এ অবস্থায় এলাকার ৬ জনের কাছে গাছ কাটা বাবদ বিভিন্ন সময়ে বকেয়া রয়েছে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা উদ্ধারে তিনি গত প্রায় ৫ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এর মধ্যে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো কাজে আসেনি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি ৪ ফুট বাই ৫ ফুট একটি ডিজিটাল ব্যানারে ৬ জনের নাম লিখেছেন, নামের পাশে টাকার পরিমাণ লিখে বেশ কয়েকটি স্থানে টাঙিয়ে দিয়েছেন।
ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘ইনতাজ আলী পাওনাদার-দিলু ব্যাপারী ৬ হাজার টাকা, হুমায়ুন ব্যাপারী ২ হাজার ৬০০, সুজন ব্যাপারী ৭৫০, নজরুল ব্যাপারী ২ হাজার ৪০০, বারেক গাছের ব্যাপারী ১৩ হাজার ও রতন গাছ কাটে ২০০ টাকা।’
আর ব্যানারের নিচে লেখা রয়েছে—‘থানা থেকে অর্ডার, এই বিষয়টা এলাকাবাসীকে জানানোর জন্য। যদি এই টাকা না দেন তাহলে থানায় মামলা হবে।’
খবর পেয়ে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের টঙ্গীরচর মোড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাওনাদার ইনতাজ আলী সাঁটানো ব্যানারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আর উৎসুক মানুষকে জানান দিচ্ছেন কেন তিনি এই পদ্ধতি নিয়েছেন।
জানতে চাইলে তিনি কান্না করে বলেন, ‘আমি অহন (এখন) মরণের পথো। বাবা ভাই ডাইক্যা, পাও ধইর্যাও টেহা (টাকা) পাই না। এর লাইগ্যা হেরারে (দেনাদার) শরম দিতে ও মাইনসেরে জানানোর লাইগ্যা এই কাম করছি। অহন টেহা না দিলে মাইক লইয়া বাইর অইয়াম।’
এলাকার লোকজন জানান, ইনতাজ আলী অত্যন্ত সহজ-সরল মানুষ। সৎভাবে জীবনযাপন করেন। এরপরও তার পাওনা টাকা দিচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর একটা বিচার হওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে দেনাদার বেশ কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহবুব জানান, পাওনা টাকা না দেওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে এভাবে প্রচার না করাই ভালো। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।




