আমরা কি সত্যিই আকাশ ছুঁতে পেরেছি, নাকি ১২০ বছর পিছিয়ে আছি?

- আপডেট সময় : ০৭:৪১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
- / 12
সম্প্রতি মানিকগঞ্জের এক যুবক ইউটিউব দেখে স্ব-উদ্যোগে একটি উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড্ডয়ন করাতে সক্ষম হয়েছেন। তার এই সাফল্য অনেকের কাছে বিস্ময়কর ও অনুপ্রেরণার হলেও, এটি আমাদের প্রযুক্তিগত অবস্থান ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি গভীর প্রশ্নও তৈরি করেছে—আমরা কি সত্যিই উদ্ভাবনের পথে এগোচ্ছি, নাকি ১২০ বছর পিছিয়ে আছি?
১৯০৩ সালে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় প্রথমবারের মতো আকাশে উড়ার স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন, যা আধুনিক বিমান চলাচলের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। ২০২৫ সালে এসে বাংলাদেশের একজন সাধারণ মেকানিক ইউটিউব দেখে নিজ হাতে উড়োজাহাজ তৈরি করেছেন। তিনি হয়তো বিশ্বকে নতুন কিছু দেননি, তবে আমাদের বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এই কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাতেই হয়, কারণ কোনো প্রতিষ্ঠানিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও তিনি এমন কিছু করেছেন, যা আমাদের দেশের বহু প্রকৌশল শিক্ষার্থীর পক্ষেও করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ব যেখানে মহাকাশযান পাঠিয়ে মানব বসতি স্থাপনের কথা ভাবছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে, সেখানে আমরা এখনো শত বছর আগের প্রযুক্তি কপি করে উচ্ছ্বসিত হই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যারা ১২০ বছর আগে প্রথম উড়োজাহাজ বানিয়েছিলেন, তারা ইন্টারনেট, ইউটিউব বা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য পাননি। তারা শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন, আর আমরা তাদের তৈরি পথেই হাঁটছি, নতুন কোনো দিগন্ত উন্মোচন করতে পারছি না।
বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখান থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী বের হচ্ছে, কিন্তু তারা কি সত্যিই উদ্ভাবন করছে? নাকি শুধুই বড় বড় কোম্পানিতে ‘হোয়াইট কলার’ চাকরির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে? ব্রিটিশ আমলের ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের বদলে কর্মচারী তৈরির মডেলে আটকে রেখেছে।
আমাদের দেশে গবেষণার তেমন কোনো সুযোগ নেই, বরং শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তারা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু নতুন কিছু সৃষ্টি করতে আগ্রহী না হয়। এই কারণেই হয়তো আমরা এখনো প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে আছি।
মানিকগঞ্জের যুবকের এই উদ্যোগ আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এটি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, সুযোগ থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। তবে, শুধুমাত্র ইউটিউব দেখে বা বিদ্যমান প্রযুক্তি কপি করে নয়, বরং নতুন উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার সুযোগ ও অনুপ্রেরণা বাড়াতে হবে, তরুণদের চিন্তাভাবনাকে উদ্ভাবনের দিকে ধাবিত করতে হবে।
তরুণরা যদি নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চায়, তাহলে তাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এমন কিছু করা যা আগে কেউ করেনি। কেবল অতীতের কৌশলগুলো কপি করলে আমরা বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারব না।
মানিকগঞ্জের যুবকের উদ্ভাবন প্রশংসনীয়, তবে আমাদের ভাবতে হবে—এটুকুই কি যথেষ্ট? আমরা কি শুধু শত বছর পুরনো প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার করেই খুশি থাকব, নাকি সত্যিকারের উদ্ভাবনের পথে হাঁটব? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের তরুণদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
লেখক: আলমগীর হোসেন