ছোট বাউন্ডারিতে বিপিএল, কেন?
- আপডেট সময় : ০৪:২২:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / 35
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে এক সাংবাদিক মজা করে বলছিলেন, ‘বাউন্ডারি দেখে মনে হচ্ছে, ব্রডকাস্টার ক্যামেরাম্যান মিডঅনে দাঁড়ানো।’ তার কথাটার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় তামিম ইকবালের বক্তব্যে। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে উইকেটে ৪৮ বলে ৮৬ রানের ঝড় তুলে ম্যাচসেরা হয়ে তামিম বলেন, ‘এটা (বাউন্ডারি) খুবই ছোট। বোলারদের জন্য আরও বেশি ছোট। এখানে জায়গা আছে, তবুও কেন ৫৮-৬০ (ম্যাচ রেফারির ভাষ্যমতে ৬৫ মিটার) মিটার বাউন্ডারি রাখা হয়েছে এটা আমি জানি না।’ তার কথায় স্পষ্ট বিপিএলের এবারের আসরে রান উৎসবের মূল কারণ শুধু ভালো উইকেট নয়, বাউন্ডারি ছোট হওয়াটাও একটি কারণ!
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রেসবক্স থেকে মাঠের দূরত্ব অনেকটা বেশি হওয়ায় বাউন্ডারির আকৃতির হের-ফের করা হলে বোঝা কঠিন। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সেই অসুবিধাটা অবশ্য হয়নি। মাঠ আর প্রেসবক্সের দূরত্ব কম হওয়ায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল মাঠের বাউন্ডারি কমানো হয়েছে। প্রেসবক্স থেকে দেখে প্রথম দিকে খানিকটা ভ্রম মনে হলেও সেটা সত্যিই। মাঠের দুই প্রান্তে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে বিজ্ঞাপণ ব্যানার লাগানো হয়। এমন কী বিজ্ঞাপণ ব্যানারের শেষপ্রান্ত থেকে বাউন্ডারির দূরত্ব থাকে অন্তত ১৫-২০ গজ। তবে সিলেটে সেই দূরত্ব কমে এসেছে ১০-১২ গজে কিংবা আরও কম। তাতে ব্যাটারদের জন্য রান করাটা হয়ে উঠেছে বেশ সহজ।
আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ শিপার আমার দেশকে জানান, বাউন্ডারি ৬৫ মিটার রাখা হয়েছে। তবে খালি চোখে প্রেসবক্স থেকে বাউন্ডারি ৬০ মিটারের বেশি বলে মনে হয় না। এমন কী বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারও আমার দেশকে জানিয়েছেন, বাউন্ডারি ৬০ মিটারের চেয়ে কম। ব্রডকাস্টার প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওয়া তথ্য বলছে ম্যাচ ডে ৫ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাউন্ডারি ছিল ৬৪ মিটার এবং সর্বনিম্ন ছিল একপ্রান্তে ৫৮ মিটার এবং অন্যদিকে ৫৫ মিটার। এমন কী ৫২ মিটার দূরত্বের ছক্কা হতেও দেখা গেছে। এসব তথ্যই তৈরি করছে বেশ উইকেট থেকে বাউন্ডারির দূরত্ব নিয়ে তৈরি করছে বিভ্রান্তির।
বিপিএলে এমন ছোট বাউন্ডারি নিয়ে আছে নানা মত। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগে কাজ করা এক কোচ বলেন, ‘আয়োজকরা মূলত রান হচ্ছে এটা বোঝানোর জন্য বাউন্ডারি ছোট করেছে। কিন্তু এটা আসলে বড় কোনো ব্যাপার না। ক্রিকেটাদের আসলে নিজেদের মতো মাথা খাটিয়ে খেলতে হবে।’
বাউন্ডারি ছোট হওয়ায় ব্যাটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে মনে করেন ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘ছোট বাউন্ডারি হওয়ায় ব্যাটাররা মনে সাহস পাচ্ছেন। তারা বুঝতে পারছে ভালো মতো শট করলে ছক্কা হবে। এটা তাদেরকে আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। এই কারণে রান হচ্ছে।’ আইসিসির নিয়মানুযায়ী উইকেট থেকে বাউন্ডারির দূরত্ব সর্বোচ্চ ৮৩ মিটার ও সর্বনিম্ন ৫৯ মিটার হয়ে থাকে। সেখানে ৬৫ মিটার বাউন্ডারি থাকায় ক্রিকেটারদের অভ্যাস ও মানসিকতায় প্রভাব ফেলবে কি না সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখেন বিপিএলে যে ছক্কাগুলো হচ্ছে সবগুলোই কিন্তু বড় ছক্কা হচ্ছে। বেশিরভাগই ৮০ মিটারের উপরে। ফলে বড় মাঠ হলেও অসুবিধা হওয়ার কথা না তাদের জন্য।’
মাঠের বাউন্ডারি ছোট বা বড় হলে মানসিকতায় কেমন প্রভাব পড়ে সেই ব্যাখ্যায় অবশ্য নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ওই ক্রিকেটার। তার কথায়, ‘বাউন্ডারি ছোট দেখলেই মনে হয় সহজে ছক্কা মারতে পারব। আর বড় দেখলে মনের মধ্যে কাজ করে ছক্কাই তো মারতে পারব না। তো এই প্রভাবটা পড়তে পারে। তবে বিপিএলের মাধ্যমে অভ্যাস হওয়ায় আশা করি ক্রিকেটারদের তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। এটা পুরোপুরি নিজের ব্যাপার।’ তবে তার মতে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্য বাউন্ডারি এমন হওয়াকেই আদর্শ মনে করেন তিনি। বলেন, ‘ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দর্শকরা বড় রান দেখতে চায়। দর্শকরা বেশ উপভোগ করে এমন রান উৎসবের টুর্নামেন্ট।’
এই দিকে বাউন্ডারি কেন ছোট করা হয়েছে সেই বিষয়ে সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সিলেট পর্বের প্রথম দিনে ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আখতার আহমেদ শিপার। তিনি দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মান ঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না সেটা দেখা। আমরা সেটা করেছি। মাঠের চারপাশে গড়ে ৬৫ মিটার করে বাউন্ডারি ছিল। এটা আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে করা হয়েছে। তাই কোনো অসুবিধা নাই।’ তবে চাইলেই যে বাউন্ডারি আরও ৫-৬ মিটার বাড়ানো যেত সেটা অবশ্য মানতে অসুবিধা নেই তার। তিনি বলেন, ‘জায়গা তো আছেই। চাইলেই বাউন্ডারি বাড়ানো সম্ভব।’